কবিগুরুর পছন্দের কয়েক পদ
দেশে ও বিদেশে নানা ধরনের খাবার খেয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শেষ পাতে িমষ্টান্ন খেতে ভালোবাসতেন। রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী সাদী মহম্মদ বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাতিজি প্রজ্ঞা সুন্দরী দেবী খুব ভালো রান্না করতেন। তাঁর রান্না খেয়ে গুরুদেব অনেক প্রশংসা করেছেন। আজ আমি এঁচোড় দিয়ে খাসির যে মাংসটা রান্না করেছি, সেটা প্রজ্ঞা সুন্দরী দেবী গুরুদেবকে রান্না করে খাইয়েছিলেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে শান্তিনিকেতনের আশ্রমে থাকা শিক্ষকদের স্ত্রীরা অনেকটা প্রতিযোগিতা করে তাঁর জন্য রান্না করতেন।’
প্রতিদিন সকালে উঠে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এক গ্লাস নিমপাতার রস খেতেন। আশ্রমের শিক্ষক অনিল চন্দের স্ত্রী রানী চন্দ প্রায়ই রান্না করে আনতেন তাঁর জন্য। পায়েশ বা বাদামজাতীয় মিষ্টি রবীন্দ্রনাথ ভালোবাসতেন। সাদী মহম্মদ বলেন, ‘কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি তো রান্নার জন্য বিখ্যাত। এই বাড়ির নানা ধরনের খাবার পরবর্তী সময়ে বাঙালির ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে। আমি যখন শান্তিনিকেতনে পড়ি তখন খাবারের বেশ অসুবিধা হতো। তবে দেশে ফেরার পর নিজেই রান্না করতে শুরু করি।’
সময় পেলেই রান্না করেন সাদী মহম্মদ। এটা তাঁর শখেরও কাজ। রান্না নিয়ে নিরীক্ষা করেছেন প্রচুর। সাধারণত মাছ ও সবজিজাতীয় খাবারের রান্না বেশি করেন।
এঁচোড় মাংস
উপকরণ: খাসির মাংস ২ কেজি, এঁচোড় অর্ধেকটা (মাঝারি কাঁঠাল), পেঁয়াজ কুচি ৪টা ও বাটা ২টা, রসুনবাটা ২ টেবিল চামচ, মরিচের গুঁড়া, হলুদের গুঁড়া, জিরা গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, জায়ফল-জয়ত্রী অল্প, লবণ স্বাদমতো ও তেল ৫০০ গ্রাম।
প্রণালি: খাসির মাংস স্বাভাবিক নিয়মে ঝালে রান্না করে নিন। এবার এঁচোড়ে লবণ ও হলুদ দিয়ে ভাপিয়ে জল ঝরিয়ে নিন। এবার রান্না করা মাংস ও ভাপানো এঁচোড় একসঙ্গে ঢেলে চুলায় নাড়ুন। ১০ মিনিট নেড়ে নামিয়ে পরিবেশন করুন।
ছানার চপ
উপকরণ: ছানা ২ লিটার দুধে তৈরি অথবা ২ মগ, পেঁয়াজ ২টা কুঁচি করা, কাঁচা মরিচ ২টা, লবণ আন্দাজমতো, তেল ২ টেবিল চামচ।
প্রণালি: ছানা, পেঁয়াজ, লবণ, মরিচ দিয়ে হাতে মাখাতে হবে। তারপর দুই হাতে সামান্য তেল দিয়ে হাতে চপ গড়ে নিন। এবার অল্প তেলে নন-স্টিক ফ্রাই প্যানে ভেজে বাদামি করে নামিয়ে নিন।
শজনে সোনা মুগ ডাল
উপকরণ: সোনা মুগ ডাল ৫০০ গ্রাম, শজনে ৫টা, কাচা আম সেদ্ধ খামির দেড় টেবিল চামচ, তেল (সরষের) ১ কাপ, শুকনা মরিচ গোটা ৭টা, সাদা সরষে ১ চা-চামচ, আদা ছেঁচা ২ চা-চামচ, তেজপাতা ২টা ও লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: ডাল ধুয়ে সেদ্ধ করে নিন। এবার কড়াইতে তেজপাতা, সরষে ফোড়ন, আদা ছেঁচা দিয়ে তেলে নেড়ে ছোট করে কাটা শজনে দিন। নাড়ুন। কিছুটা নেড়ে ডাল ঢেলে দিন। কিছুক্ষণ নেড়ে আম দিয়ে দিন। ঘন হয়ে গেলে ১ কাপ গরম পানি দিন। লবণ দিন। ঘন হলে নামান।
ঠাকুরবাড়ির নিরামিষ
উপকরণ: আলু ২টা (মাঝারি), মিষ্টিকুমড়া ১ ফালি, কাঁচা পেঁপে ছোট ১টা, পটোল ৫টা, ঝিঙা ৫টা, বরবটি ৮টা, বেগুন ২টা, পুঁইপাতা কয়েকটা, পাঁচফোড়ন ২ টেবিল চামচ, শুকনা মরিচ ৭/৮টা, আদা ছেঁচা ১০০ গ্রাম, তেল ২৫০ গ্রাম, চালের গুঁড়া ১ কাপ ও দুধ ২ কাপ।
প্রণালি: সবজি ধুয়ে ডুমো ডুমো করে কেটে নিন। যেগুলো সেদ্ধ হতে সময় লাগে সেগুলো আলাদা করে রাখুন। তেলে প্রথমে মরিচ, পাঁচফোড়ন, আদা ছেঁচা দিয়ে নাড়ুন। একটু নেড়েই বেছে রাখা সবজিগুলো দিয়ে নাড়ুন। এরপর বাকি সবজি দিয়ে আস্তে আস্তে নাড়ুন। সব সেদ্ধ হলে নামিয়ে রাখুন। আরেকটি কড়াইতে এবার দুধে চালের গুঁড়া মিশিয়ে ঢেলে দিন। অন্য প্যানে ২ চামচ ঘি দিয়ে গরম করে একটু পাঁচফোড়ন ভেজে সবজিতে ঢেলে দিন। ব্যস তৈরি।