পরীক্ষা মানেই চাপ নয়
অনামিকা এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে। সে বরাবর ভালো ছাত্রী। পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে। তার হঠাৎ মনে হলো কিচ্ছু পড়া হয়নি। এই ভাবনায় সে পড়ায় মন বসাতে পারছে না। সারাক্ষণ পায়চারি করছে। বুকের ভেতরটা কেমন যেন খালি খালি লাগছে। চোখে ঝাপসা দেখছে। হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হওয়া শুরু করেছে। খেতে পারছে না, ঘুম আসছে না। চিন্তা করতে লাগল ‘ইশ্, যদি আর কটা দিন সময় পাওয়া যেত!’ আবার কখনো তার মনে হতে লাগল, ‘এ বছর পরীক্ষাটা না দিলে কেমন হয়।’
মেধাবী থেকে শুরু করে কম মনোযোগী, মাঝারি মানের যে কেউ, ছোট-বড় যেকোনো ধরনের পরীক্ষার আগে এমন সমস্যায় পড়তে পারে। পরীক্ষার আগে এমনকি লম্বা সময় ধরে চলা পরীক্ষার মাঝের যেকোনো দিনেও এই উৎকণ্ঠাজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। পরীক্ষাবিষয়ক এই উৎকণ্ঠায় বারবার মনে হতে থাকে যে ফলাফল খারাপ হবে, বুক ধড়ফড় করা, ঘুম কম হওয়া, মুখ-গলা শুকিয়ে আসা, নিশ্বাস বন্ধ হওয়ার অনুভূতি, ঘাম হওয়া, মাথা শূন্য মনে হওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
মনে রাখতে হবে যে পরীক্ষা ছাত্রজীবনের অতি স্বাভাবিক একটি ঘটনা। পরীক্ষাকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে, কিন্তু এতটা উৎকণ্ঠিত হওয়া যাবে না যে তা মনের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। পরীক্ষাজনিত চাপ পরীক্ষার ফলকে আরও খারাপ করবে। পরীক্ষার আগে মনের ওপর এ ধরনের কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত চাপ যাতে তৈরি না হয়, এ জন্য যা করণীয় তা হচ্ছে:
দিনলিপি তৈরি
পরীক্ষার আগে নিয়ম করে দৈনন্দিন কাজগুলো সাজাতে হবে। কেবল পড়া নয়, দিনের প্রতিটি কাজ এই দিনলিপিমাফিক করার চেষ্টা করতে হবে।
পর্যাপ্ত ঘুম
ঘুম খুবই প্রয়োজনীয়। পরীক্ষার আগের পরিমিত ঘুম মনোযোগ আর একাগ্রতাকে বাড়িয়ে দেবে। তাই পরীক্ষার আগে রাত জেগে পড়ার অভ্যাস ত্যাগ করে পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে।
সুষম খাদ্য
পড়ার চিন্তায় খাওয়া ভুললে হবে না। নিয়ম করে সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। বেশি ভাজাপোড়া ও তৈলাক্ত খাদ্যের বদলে সহজপাচ্য খাদ্য আর প্রচুর পানি ও ফলের রস পান করতে হবে। এতে করে প্রয়োজনীয় পুষ্টি আর শরীরে খনিজ লবণের পরিমাণ সঠিক থাকবে।
নিজের যত্ন
দাঁত পরিষ্কার থেকে শুরু করে গোসল করাসহ শরীরের যাবতীয় যত্ন নিতে হবে। চুল আঁচড়াতে হবে, দাড়ি-গোঁফ কাটুন আর পরিষ্কার পোশাক পরুন। পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে গিয়ে নিজের কোনো অযত্ন করা যাবে না।
গুছিয়ে রাখা
নিজের পড়ার বই, নোটস, খাতা, কলমসহ পরীক্ষার সব উপকরণ বেশ কদিন আগে থেকেই গোছাতে থাকুন। যাতে পরীক্ষার আগে আগে এগুলো খুঁজে পেতে হয়রান হতে না হয়।
রুটিন জানা
পরীক্ষার রুটিনগুলো ঠিকমতো জানুন। প্রয়োজনে পড়ার টেবিলের সামনে ঝুলিয়ে রাখুন।
একটানা পড়া নয়
পরীক্ষার আগে একটানা অনেকক্ষণ পড়া নয়। বেশ কিছুক্ষণ পড়ার পর ছোট ছোট সময় ধরে বিশ্রাম নিন।
থাকবে বিনোদনও
পরীক্ষা বলে সব বিনোদন বাতিল করা যাবে না। পড়ার ফাঁকে ফাঁকে ছোট বিরতিতে গান শুনতে পারেন, গল্প বা কবিতা পড়তে পারেন বা অল্পক্ষণ টিভি দেখতে পারেন। ছোট্ট একটা আড্ডা দিতে পারেন আপনার প্রিয় কারও সঙ্গে। এগুলো আপনার পরবর্তী পড়াটুকুকে আরও সতেজ করবে।
পেছন ফিরে তাকান
‘সামনে বড় পরীক্ষা’, ‘অনেক পড়া’ এটি না ভেবে ভাবতে থাকুন কয়েক বছরে অনেক লম্বা সময় ধরে অল্প অল্প করে আপনি অনেক পড়েছেন, আপনি অনেক জানেন। আপনার আগের ক্লাস টেস্ট বা ছোট ছোট পরীক্ষার ফলগুলোকে মনে করার চেষ্টা করুন। দেখবেন অনেক আত্মবিশ্বাসবোধ করছেন।
উৎকণ্ঠা সংক্রমিত করবেন না
অভিভাবকেরা তাঁদের নিজেদের উৎকণ্ঠা পরীক্ষার্থী সন্তানদের মধ্যে সংক্রমিত করেন। তাই অভিভাবকদেরও উৎকণ্ঠামুক্ত থাকতে হবে। সন্তানের প্রতি অহেতুক চাপ দেবেন না, তাঁকে নিজের মতো করে প্রস্তুতি নিতে দিন। সন্তানের পড়াগুলো আপনিই পড়ে ফেলবেন না!
গুজবে সাড়া দেবেন না
প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে, পরীক্ষা পিছিয়েছে ইত্যাদি কোনো গুজবে কান না দিয়ে প্রস্তুতির দিকে মনোযোগ বেশি দিতে হবে।
হাতে সময় নিয়ে রওনা দিন
পরীক্ষার হলে যাওয়ার আগে হাতে যথেষ্ট সময় নিয়ে রওনা দিন। পথে দেরি হয়ে গেলে উৎকণ্ঠা বাড়বে, উত্তেজনা বাড়বে, পরীক্ষা খারাপ হতে পারে। আবার খুব আগে আগে পরীক্ষার হলে উপস্থিত না হওয়াই ভালো। সেখানে আরও উৎকণ্ঠিত পরীক্ষার্থীদের উৎকণ্ঠা আপনাকেও উদ্বিগ্ন করে তুলতে পারে।
পথে বা পরীক্ষার হলে পড়া নয়
পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পথে, গাড়ি-বাস-রিকশায় বসে অথবা পরীক্ষার হলে পরীক্ষা শুরুর মিনিট কয়েক আগে পড়বেন না। তখন আপনার মনে হতে থাকবে ‘ইশ্, অনেক পড়া বাকি রয়ে গেল।’ এই ‘মনে হওয়া’টুকু আপনার পরীক্ষার ওপর প্রভাব ফেলবে।
হালকা ব্যায়াম-রিলাক্সেশন
পরীক্ষার আগে আগে হালকা ব্যায়াম বা রিলাক্সেশন করুন। লম্বা করে শ্বাস নিন। মস্তিষ্কে অক্সিজেনের প্রবাহ বাড়িয়ে তুলুন। আপনার ভেতরে সতেজতা আর আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাবে।