যুক্তরাজ্যের ২২ বছরের এক তরুণ ব্লগার মাত্র ১০ ডলার ৬৯ সেন্ট খরচ করে ঠেকিয়ে দিয়েছেন র্যানসমওয়্যারের বিস্তার। ছুটিতে থাকলেও গত শুক্রবার বিশ্বজুড়ে সাইবার হামলার খবর শুনে আর বসে থাকতে পারেননি তিনি। র্যানসমওয়্যারটি নিয়ে গবেষণা শুরু করে দেন। আর পেয়ে যান কাঙ্ক্ষিত ‘কিল সুইচ’।
ম্যালওয়্যারটেক ছদ্মনাম ব্যবহার করে তিনি এই ম্যালওয়্যার শনাক্ত করার কাজ করেছেন। তাঁর দাবি, এর পুরোটাই ঘটেছে ‘দুর্ঘটনাক্রমে’। ক্ষতিকর র্যানসমওয়্যারটির কোডে পাওয়া কিল সুইচ ব্যবহার করে এর বিস্তার ঠেকাতে সক্ষম হন তিনি। এতে নতুন কম্পিউটারে এটি ছড়াতে পারেনি।
র্যানসমওয়্যার হচ্ছে পরিচিত ম্যালওয়্যার বা ক্ষতিকর সফটওয়্যার প্রোগ্রাম। কম্পিউটার বা মুঠোফোনের মতো যন্ত্রের মধ্যে এই সফটওয়্যার ঢুকিয়ে দিতে পারলে যন্ত্রটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেওয়া যায়। এ কাজ করে তা থেকে মুক্তির জন্য অর্থ দাবি করে হ্যাকাররা।
বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওই গবেষক বলেন, ‘এটি পুরোটাই দুর্ঘটনাক্রমে হয়ে গেছে। সারা রাত ধরে এটি নিয়ে কাজ করেছি আমি। এক মুহূর্তের জন্যও ঘুমাইনি।’
কিন্তু ঠিক কী খুঁজে পেয়েছিলেন ওই গবেষক? তিনি প্রথমে দেখতে পান, প্রতিবার কোনো নতুন কম্পিউটারে ছড়ানোর সময় ওই ম্যালওয়্যার একটি নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে ঢোকার চেষ্টা করছে। কিন্তু যে ঠিকানার ওয়েবসাইটে তা ঢুকতে চাইছিল, সেটি ছিল একটি অনিবন্ধিত ডোমেইন।
ম্যালওয়্যারটেক ছদ্মনামের ওই তরুণ গবেষক সেই ডোমেইনটির নিবন্ধন নেন এবং মাত্র ১০ ডলার ৬৯ সেন্ট খরচ করে তা কিনে নেন। এতে করে শুক্রবারের সাইবার হামলা কী পরিসরে হয়েছে, তার একটি ধারণা পাওয়া যায়।
এ কাজ করার সময় ওই গবেষক অপ্রত্যাশিতভাবে র্যানসমওয়্যারটির কোডের এমন একটি অংশকে সক্রিয় করেন, যাতে করে এটি নতুন কম্পিউটারে ছড়ানো বন্ধ করে দেয়। এটিকেই বলা হচ্ছে কিল সুইচ।
তবে এই কিল সুইচ ব্যবহার করে র্যানসমওয়্যারটির বিস্তার রোধ করা সম্ভব হলেও যেসব কম্পিউটার বা মোবাইলকে এটি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, সেগুলো ঠিক করা সম্ভব হয়নি। সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এমন নতুন ধরনের ম্যালওয়্যারও আক্রমণ চালাতে পারে, যাতে হয়তো কিল সুইচই দেখা যাবে না।
অজ্ঞাত হ্যাকারের দল শুক্রবার বিশ্বব্যাপী এ নজিরবিহীন সাইবার হামলা করেছে। বিশ্বজুড়ে কম্পিউটার যোগাযোগব্যবস্থা সচল করতে গতকাল শনিবার থেকে উঠেপড়ে লেগেছেন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। এ হামলায় জড়িত অপরাধীদের চিহ্নিত করার চেষ্টাও চলছে।