পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়

Author Topic: পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়  (Read 1211 times)

Offline azad.ns

  • Jr. Member
  • **
  • Posts: 60
  • Test
    • View Profile
পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়
« on: June 11, 2017, 09:19:00 AM »
‘বাংলাদেশের একজন নায়ক দরকার ছিল। তারা দুজন পেয়ে গেল!’
ধারাভাষ্য দিতে থাকা সাবেক নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককালাম যখন কথাটা বলছিলেন, সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ প্রায় শূন্য থেকে বাংলাদেশের জয়ের স্বপ্নটাকে আবার বাঁচিয়ে তুলেছেন। কার্ডিফে স্টেডিয়ামে আসা ‘বাংলাদেশ’, ‘বাংলাদেশ’ স্লোগানে উচ্ছ্বসিত কয়েক হাজার সমর্থক আবার জয়ের স্বপ্ন দেখছেন। স্বপ্নে রঙিন হাজার পাঁচেক মাইল দূরে থাকা প্রায় সতেরো কোটি চোখও—কার্ডিফে ২০০৫ রূপকথার মতো আরেকটি রূপকথা লেখা হবে!
স্বপ্নটা সত্যি হলো। দুই মহানায়কের মহাকাব্যিক দুই ইনিংসে জিতে গেল বাংলাদেশ। স্টেডিয়ামে আসা দর্শক নাচলেন, গাইলেন। আনন্দাশ্রু ঝরল ওই সতেরো কোটি চোখে। বাকি বিশ্ব তাকিয়ে রইল অবাক চোখে। বাংলাদেশ সত্যিই মহাকাব্য লিখেছে! বছর তিনেক ধরে যে উন্নতির সুর শোনাচ্ছিল লাল-সবুজ জার্সির দলটি, সেটি পরশু কার্ডিফে আরেকবার তুলল ঝংকার।
সে সুরে সবচেয়ে বিমোহিত যাঁরা হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে সম্ভবত ওপরের দিকেই থাকবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের বেসুরো দিনগুলোরও সাক্ষী হার্শা ভোগলের নাম। বাংলাদেশ জিতে যাওয়ার পরই এই ধারাভাষ্যকারের টুইট, ‘একটা সময় ছিল যখন দলগুলো বাংলাদেশে গিয়ে চাইত, যেন স্বাগতিক দলটি আগে ব্যাটিং করে। তাতে ম্যাচ তাড়াতাড়ি শেষ হবে। (বাংলাদেশের) পালাবদলের কী দুর্দান্ত গল্প!’
পেশাগত প্রয়োজনেই হোক আর আগ্রহের কারণে, ম্যাচজুড়েই বাংলাদেশের খেলার খুঁটিনাটি, সাকিব-মাহমুদউল্লাহ জুটির প্রশংসা করে টুইট করেছেন ভোগলে। ২৬৬ রানের লক্ষ্যে নেমে ৩৩ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলা বাংলাদেশ যখন মাহমুদউল্লাহ-সাকিবে চড়ে একটু একটু করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, তখন লিখেছেন, ‘স্বীকার করতেই হবে, ভেবেছিলাম বাংলাদেশ ভজকট পাকিয়ে ফেলবে। কিন্তু এখন ওদের এই মনোভাবটাই বুঝিয়ে দিচ্ছে দল হিসেবে ওরা কতটা এগিয়েছে।’ আলাদা করে প্রশংসা করেছেন সাকিব ও মাহমুদউল্লাহরও। ২০১৫ বিশ্বকাপে টানা দুই সেঞ্চুরি করা মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের সবচেয়ে দুর্দান্ত দুই জয়েই (অন্যটি গত বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে) তাহলে মাহমুদউল্লাহর সেঞ্চুরিটা কমন ব্যাপার হয়ে গেল। দুর্দান্ত খেলোয়াড়।’ আর সাকিবকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন এভাবে, ‘বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিগুলোর একটি এল দেশটির সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়ের হাতে।’
আসলে কে মুগ্ধ হননি পরশু বাংলাদেশের পারফরম্যান্সে, মাহমুদউল্লাহ-সাকিবে? সম্ভাবনার প্রায় শূন্য থালাটা বাংলাদেশের ওভাবে পূর্ণ করা নাড়িয়ে দিয়েছে কুমার সাঙ্গাকারাকেও। শ্রীলঙ্কান কিংবদন্তির টুইট, ‘দুর্দান্ত খেলেছে বাংলাদেশ। সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ, দুর্দান্ত ব্যাটিং!’ সাবেক পাকিস্তান অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদি লিখেছেন, ‘দারুণভাবে রান তাড়া করেছে বাংলাদেশ। অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তন, মাহমুদউল্লাহ ও সাকিবের দুর্দান্ত জুটি। চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জীবন্ত হয়ে উঠেছে।’
পেছনে ফিরে ভাবলে হয়তো এখনো শিহরণ জাগায় মাহমুদউল্লাহ ও সাকিবের ওই জুটি। কী চাপে শুরু করেছিলেন, কিন্তু ব্যাটিংটা দুজনে করলেন কী দুর্দান্ত নিয়ন্ত্রণে! ২২৪ রানের জুটিটা বাংলাদেশের যেকোনো উইকেটে সর্বোচ্চ। ২০৯ বলের জুটিতে ওভারপ্রতি রান নিয়েছেন ছয়ের বেশি করে (৬.৪৩)। চার-ছক্কা যেমন মেরেছেন, তেমনি ১১৯ রানও নিয়েছেন সিঙ্গেল-ডাবলসে। ধ্রুপদি জুটিটা একটু ধন্দেই ফেলে দিয়েছে মাইকেল ভনকে। হ্যাশট্যাগে ‘বেস্ট এভার’ লিখে সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়কের টুইট, ‘ওয়ানডেতে এর চেয়ে ভালো জুটি আর দেখেছি কি না মনে করতে পারছি না। জিততেই হবে এমন ম্যাচ, ৩৩ রানে ৪ উইকেট পড়ে গিয়েছিল, বল সুইং করছিল...!’ আর ভারতের কিংবদন্তি অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলীর চোখে জুটিটি বাংলাদেশের তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য শিক্ষা, ‘চাপের মধ্যে কীভাবে জুটি গড়তে হয়, সাকিব-মাহমুদউল্লাহ তা দারুণভাবেই দেখিয়েছে।’ টুইটার।