ফিরে আসছে সোনালী আঁশের সুদিন

Author Topic: ফিরে আসছে সোনালী আঁশের সুদিন  (Read 993 times)

Offline Md. Zakaria Khan

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 376
  • active
    • View Profile
ফিরে আসছে সোনালী আঁশের সুদিন
পাটকে বলা হত সোনালী আঁশ। এই পাটই ছিল এক সময়ের বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য। পাটজাত দ্রব্যই ছিল এদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান উৎস। পাটের গুরুত্ব অনুধাবন করে পাট সম্বন্ধে যাতে সবাই জানতে পারে সেজন্য পাটকে পাঠ্য বইয়ের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। আজ থেকে পনেরো বছর আগেও যিনি অন্তত পক্ষে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত অধ্যয়ন করেছে তিনি অবশ্যই পাট সম্পর্কে অধ্যয়ন করেছে। পাট সম্পর্কে একাধিকার রচনা মুখস্ত করেনি এমন ছাত্র তখন বাংলাদেশে খুঁজে পাওয়া যেত না। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পাটশিল্পের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখনো এই শিল্পে প্রায় ঢেড়লক্ষ মানুষ কর্মরত আছে। এক সময় বিশ্ব পাট বাজারের সিংহভাগই বাংলাদেশ পূরণ করত। এখানকার জমি পাট চাষের জন্য উপযোগী বিধায় এ অঞ্চলেই পাট চাষ বিকাশ লাভ করেছিল এবং এখানেই গড়ে ওঠেছিল বড় বড় পাটকল। এ অঞ্চল থেকেই উৎপাদিত পাটই সারা বিশ্বে রপ্তানি হত এবং বিশ্ববাজারের পাটের চাহিদা পূরণ করত।   সরকারের বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে বর্তমানে ১৭৭টি পাটকল রয়েছে। তন্মধ্যে সরকারি মালিকানায় ২৭টি এবং বেসরকারি মালিকানায় ১৫০টি। পাটকলগুলো মূলত দু’ধরনের। একটি হচ্ছে প্রচলিত পণ্য উৎপাদনকারী অর্থাৎ কনভেনশনাল পাটকল, যেগুলো পাটের বস্তা, হেসিয়ান ও সিবিসি উৎপাদন করে থাকে। অপরগুলো হচ্ছে পাটসুতা উৎপাদনকারী পাটকল, যেগুলো পাটসুতা উৎপাদন করে থাকে।   
 বর্তমানে রপ্তানির পরিমাণ আবার বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এই অর্থবছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে কাঁচা পাট রপ্তানি ৬০ শতাংশ বেড়েছে। এটা অবশ্যই আমাদের পাট শিল্পের জন্য সুখবর। জুট স্পিনার্স এসোশিয়েশনের তথ্য মতে দেশের ৭৭টি পাটকলে প্রায় পাঁচ লাখ টন সুতা উৎপাদিত হয়, যার ৭০ শতাংশ রপ্তানি হয় এবং বাকি ৩০ শতাংশ দেশে ব্যবহৃত হয়। 
যথাযথ পরিকল্পনার মাধ্যমে এদেশের পাট শিল্পের উন্নতি সাধন করতে হবে এবং এর সুদিন ফিরিয়ে আনতে হবে। আর এটা সম্ভব। কারণ বিশ্বব্যাপী পাটজাত পণ্যের এখনো বিশাল বাজার রয়েছে। পাটজাত দ্রব্য পরিবেশবান্ধব বিধায় এর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ভবিষ্যতে এর ব্যবহার আরো বাড়বে। সুতরাং পাটজাত পণ্যের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল এবং একই সাথে পাট শিল্পের ভবিষ্যৎও উজ্জ্বল। তাই পাট শিল্পের উন্নয়নে সরকারি উদ্দ্যোগে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং সাথে সাথে বেসরকারি উদ্দ্যোগের সমন্বয় ঘটাতে হবে। সরকার ইতোমধ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন ২০১০ বাস্তবায়ন করেছে। ফলে দেশীয় বাজারে পাটের বস্তার চাহিদা ৩০% বেড়েছে। আগে বছরে সাড়ে তিন কোটি পাটের বস্তার চাহিদা থাকলেও এখন তা সাড়ে চার কোটিতে উন্নীত হয়েছে। চলতি অর্থবছর শেষে তা ছয় কোটিতে উন্নীত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। এই আইনটি শতভাগ বাস্তবায়ন হলে বছরে ৬৯ কোটি পাটের বস্তার প্রয়োজন হবে, যা জন্য প্রায় ২২ লাখ বেল পাটের প্রয়োজন হবে। পাট শিল্পের পুনরুজ্জীবনের স্বার্থে সরকার নি¤েœাক্ত প্রস্তাবনাসমূহ বিবেচনা করতে পারে । প্রথমত যেসব পাটকল আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত তাদেরকে স্বল্পসুদে দীর্ঘমেয়াদি ব্যাংক ঋণ দিতে হবে। এইসব পাটকলের বিপরীতে যদি খেলাপি ঋণ থাকে, তাহলে সেই খেলাপি ঋণকে পুনঃতফশিলের ব্যবস্থা করে দীর্ঘমেয়াদে পরিশোধের সুযোগ দিতে হবে। সরকারি মালিকানায় যে সমস্ত পাটকল রয়েছে, এগুলোতে দক্ষ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে এবং একই সাথে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে এগুলোতে কাজের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। দ্বিতীয়ত পাটকলগুলোকে আধুনিকায়ন করতে হবে। পুরাতন মেশিনারিজসমূহ পরিবর্তন করে নতুন এবং আধুনিক মেশিনারিজ স্থাপন করতে হবে। পাট শিল্পে যে সমস্ত নতুন টেকনোলজি আবিষ্কৃত হয়েছে সেগুলোর প্রয়োগের মাধ্যমে পাটকলগুলোকে আধুনিকায়ন করতে হবে। তৃতীয়ত সরকারি মিলগুলোকে ক্রমান্বয়ে বেসরকারি মালিকানায় হস্তান্তরের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রসঙ্গত একটি কথা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, আর তা হচ্ছে সরকারি মালিকানায় শিল্পের বিকাশ সম্ভব
নয়। এটা অতীতেও যেমন কোন দেশে হয়নি, তেমনি ভবিষ্যতেও হবে না। বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মাধ্যেমেই শিল্পায়ন সম্ভব। সুতরাং সরকারি মালিকানার পাটকলগুলোকে যথাযথ উপায়ে যদি বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়া হয়, তাহলে এই শিল্প আবারো বিকশিত হবে। চতুর্থত পাটজাত দ্রব্যের অভ্যন্তরীণ ব্যবহার বাড়াতে হবে এবং এজন্য দেশে এর বাজার সৃষ্টি করতে হবে। পাটজাত দ্রব্য পরিবেশবান্ধব বিধায় এর ব্যাপক ব্যবহারের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। সরকার পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। পাটের ব্যাগ এই চাহিদা সহজেই পূরণ করতে পারে। অধিকন্তু চাল, ডাল, আলু, মরিচ, গম, ভুট্টা, ছোলা প্রভৃতি পণ্য রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সহজেই পাটের বস্তা ব্যবহার করা যায়। এছাড়া স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা পাটের তৈরি ব্যাগ ব্যবহার করতে পারে। প্রতিটি ছাত্রছাত্রী যদি স্কুল ব্যাগের জন্য পাটের তৈরি ব্যাগ ব্যবহার করে, তাহলে পাটজাত পণ্যের বিশাল বাজার সৃষ্টি হবে। এছাড়া শপিং ব্যাগ হিসেবে পাটজাত ব্যাগ সহজেই ব্যবহার করা যায়। তখন অটোমেটিক্যালি দেশে পাটজাত পণ্যের বিশাল বাজার সৃষ্টি হবে। মনে রাখতে হবে অভ্যন্তরীণ বাজার সৃষ্টি করা না গেলে কোন শিল্পকে বিকশিত করা যাবে না। এ অবস্থায় পাট শিল্পকে বিকশিত করতে হলে এর উৎপাদিত পণ্যের অভ্যন্তরীণ বাজারকে আরো বড় করতে হবে। এ জন্য সরকারকে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। পঞ্চমত পাটজাত পণ্যের রপ্তানির বিপরীতে সরকারের পক্ষ থেকে ইনসেনটিভের পরিমাণকে বাড়াতে হবে। বর্তমানে পাটপণ্য রপ্তানির বিপরীতে সরকার এফওবি মূল্যের ভিত্তিতে ১০% ইনসেনটিভ দিচ্ছে। পাট শিল্পকে বিকশিত করতে এবং এর উৎপাদিত পণ্য সমূহের রপ্তানি বাড়াতে এই ইনসেনটিভের পরিমাণ বাড়িয়ে কমপক্ষে ১৫% করা উচিত। ষষ্ঠত এই শিল্পে নতুন উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে এবং কম সুদে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে এবং পাট শিল্পকে কমপক্ষে পাঁচ বছর ট্যাক্স ফ্রি করতে হবে।
সর্বোপরি পাট শিল্পকে মনিটরিং করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করতে হবে, যেটি পাট শিল্পের সমস্যাসমূহ দূর করতে এবং একই সাথে এই শিল্পকে বিকশিত করতে কাজ করবে। আশা করা যায় এর মাধ্যমে সোনালী আঁশের সুদিনকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। এক সময় বাংলাদেশ পাট শিল্পে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছিল, যা অনেক দেশের কাছেই অসহনীয়। আমরা আবারো সোনালী আঁশের সেই সুদিন ফিরিয়ে আনতে চাই। অতএব আসুন, দেশ ও জাতির বৃহত্তর কল্যাণে পাট শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করতে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই এবং কাজ করি। আসুন, এর মাধ্যমে সোনালী আঁশের সুদিনকে আবারো ফিরিয়ে আনি এবং দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল ও শক্তিশালী করি। আর আমাদের অস্তিত্বের স্বার্থেই এটা জরুরি এবং অপরিহার্য।


Offline Shakil Ahmad

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 374
  • Test
    • View Profile
Informative