যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল থেকে আবারও এক দিন বয়সের এক নবজাতক চুরি হয়েছে। আজ রোববার দুপুর ১২টার দিকে হাসপাতালের লেবার ওয়ার্ড থেকে কৌশলে এক নারী ওই নবজাতক চুরি করে পালিয়ে গেছে। এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোতোয়ালি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। সন্দেহজনক এক নারীকে আটক করেছে পুলিশ।
সন্তানকে হারিয়ে মা রুপালী খাতুন এখন দিশেহারা। যশোর সদর উপজেলার রুপদিয়া গ্রামের সাইফুল ইসলামের স্ত্রী রুপালী খাতুন গতকাল শনিবার এক ছেলেসন্তানের জন্ম দেন।
এর আগে গত বছরের ১৯ নভেম্বর নয় দিন বয়সের এক নবজাতক হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ড থেকে চুরি হয়। এক দিনের ছেলে নবজাতক চুরি হয়েছে।
রুপালী খাতুন বলেন, ‘বোরকা পরা অপরিচিত এক নারী সকাল থেকে ওয়ার্ডে ঘোরাঘুরি করছিল। ওই নারী বারবার আমার ছেলেকে কোলে নিতে চাইছিল। আমি দিতে রাজি হইনি। সে বারবার বলেছিল, ‘আমার ছেলেমেয়ে হয় না। তোমার ছেলেটাকে কোলে নিয়ে একটু শান্তি পেতে দাও।’ তারপরও আমি ছেলেকে তার কোলে দিইনি। কিন্তু আমার শাশুড়ি বুঝতে পারেননি। কিছুক্ষণ পরে ওই নারী কৌশলে আমার শাশুড়ির কাছ থেকে ছেলেকে কোলে নিয়ে পালিয়ে গেছেন।’
যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এ কে এম কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘শনিবার রুপালী খাতুন নামে ওই প্রসূতি মায়ের অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে একটি ছেলে নবজাতক হয়। এক দিন পরেই অপরিচিত এক নারী ওয়ার্ডে গিয়ে তাদের সাথে সম্পর্ক করে নবজাতকটি চুরি করে নিয়ে গেছে। এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ওই চোরকে শনাক্ত করার সুযোগ রয়েছে। থানার ওসিকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।’
যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আজমল হুদা বলেন, ‘রোগীর স্বজনের কাছ থেকে কৌশলে এক নারী একটি নবজাতক চুরি করে নিয়ে গেছে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।’
এক বছর আগে চিকিৎসা সহায়তার জন্য ছবি তোলার কথা বলে হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ড থেকে নয় দিন বয়সের এক নবজাতককে এক নারী চুরি করে নিয়ে যায়। ওই ঘটনায়ও কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করা হয়। চুরির মাস খানেক পরে কেশবপুর উপজেলা থেকে ওই নবজাতককে উদ্ধার করে পুলিশ।
নবজাতক চুরি ঠেকাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কী পদক্ষেপ রয়েছে—জানতে চাইলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক কামরুল ইসলাম বলেন, ‘অস্ত্রোপচারের পর প্রসূতি মা ও নবজাতককে হাসপাতালের ওয়ার্ডে ভর্তি থাকে। রোগী ও স্বজনদের বারবার সতর্ক করা হয় তারা যেন অপরিচিত কারও কোলে নবজাতক না দেন। স্বজনদের দায়িত্ব নবজাতক আগলে রাখা। তারপরও হাসপাতালের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করার জন্য বেসরকারি সিকিউরিটি ব্যবস্থা চালু করা যায় কি না, সেটি ভেবে দেখা হচ্ছে।’
কামরুল ইসলাম বলেন, ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ রোগী ভর্তি থাকে হাসপাতালের প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে। যে কারণে দর্শনার্থী ঠেকানো খুব কঠিন হয়ে যায়। ঠেকাতে গেলেই রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কর্মচারীদের প্রায় হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
প্রসূতি মায়েদের যে ওয়ার্ডে রাখা হয়, সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, নির্ধারিত শয্যার বাইরে মেঝেতে (ফোর) অতিরিক্ত বিছানা ফেলে প্রসূতি মায়েদের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখা হয়েছে। একই বিছানায় বসে রোগী ও স্বজনেরা ভাত খাচ্ছেন। পান-তামাক খাচ্ছেন স্বজনদের কেউ কেউ।