মহাকাশে জীবনযাত্রা: কেমন থাকেন মহাকাশচারীরা

Author Topic: মহাকাশে জীবনযাত্রা: কেমন থাকেন মহাকাশচারীরা  (Read 2262 times)

Offline Karim Sarker(Sohel)

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 521
  • Test
    • View Profile
আমরা সবাই জানি, মহাকাশে অভিকর্ষ বল কাজ করে না। তাই পৃথিবীতে আমরা যতটা স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করতে পারি, মহাকাশচারীরা ততটা করতে পারেন না। আমরা ইচ্ছে হলেই পেট ভরে পানি খাই, গরম গরম ভাত, ডাল আর আলুভর্তা, মাছ-মুরগী- যা ইচ্ছা, যত ইচ্ছা খেতে পারি। প্রাকৃতিক কাজ সারার জন্য অঢেল পানি পাই। গরমে ঘামানো শরীর নিয়ে বাসায় এসেই পানিতে ঝাঁপ দিতে পারি। এখানে যত ইচ্ছা পানি ব্যবহার করুন, কেউ কিচ্ছু বলবে না। কিন্তু মহাকাশচারীদের তেমন সুযোগ নেই। এমন কিছু করা তো দূরেই থাক, মহাকাশে তারা এধরনের কাজের কথা কল্পনাও করতে পারেন না। সেখানে সব কিছু সীমিত এবং পৃথিবী থেকে জিনিসপত্র নিতে হয় বলে বেশ ব্যয়সাপেক্ষ। চলুন আজ দেখে নেই মহাকাশচারীরা কী খান, কীভাবে খান, কী কী জিনিস ব্যবহার করেন এবং কীভাবে প্রাকৃতিক কাজ সারেন।

যেহেতু মহাকাশ স্টেশনগুলোতে একসাথে অনেকজন মহাকাশচারী কাজ করেন, তাই তাদের নিজস্ব পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা খুবই দরকার। প্রথমে আসা যাক, মহাকাশচারীরা কীভাবে নিজেদের পরিষ্কার রাখেন সে ব্যাপারে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই প্রথমে আমরা হাত-মুখ ধুয়ে দাঁত ব্রাশ করি এবং প্রাকৃতিক কাজ সেরে ফেলি। মহাকাশচারীরাও তার ব্যতিক্রম নন। স্পেস স্টেশনগুলোতে মহাকাশচারীদের ব্যবহারের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি দেয়া হয়। পানির এক বিশেষ ধরনের ব্যাগ তারা ব্যবহার করেন, যে ব্যাগের গায়ে চাপ দিলে ফোঁটায় ফোঁটায় পানি বের হয়। অর্থাৎ পরিমাণটা থাকে খুবই সীমিত, যাতে অতিরিক্ত পানি নষ্ট না হয়। যেহেতু পুরো মহাকাশযান কিংবা স্পেস স্টেশন জুড়ে নানা রকম বৈদ্যুতিক তার এবং যন্ত্র থাকে, তাই এই অতিরিক্ত পানির ফোঁটা সেসব যন্ত্রে বা তারে লেগে যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

দাঁত ব্রাশ করার জন্য তারা যেকোনো ধরনের এবং পছন্দের ব্র্যান্ডের টুথপেস্ট ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে ধরাবাঁধা কোনো নিয়ম নেই। তবে খুব সীমিত পরিমাণে সেই টুথপেস্ট ব্যবহার করতে হয়। কারণ অতিরিক্ত টুথপেস্ট ফেনার সৃষ্টি করে এবং দাঁত ব্রাশ করার সময় মুখের ভেতরে জমা হয়ে থাকে, যা খুব অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। তবে দাঁত ব্রাশের পর আমাদের মতো কুলকুচি করেন না তারা। ভেজা টিস্যু দিয়ে মুছে ফেলেন।

এবার আসা যাক প্রাকৃতিক কাজ সারার কথায়। আমাদের সবার মাথায় প্রায় একই প্রশ্নই আসে, মহাকাশচারীরা প্রাকৃতিক কাজ কীভাবে করেন? মহাকাশচারীরা আমাদের মতো সহজ স্বাভাবিকভাবে প্রাকৃতিক কাজ সারতে পারেন না। তাদের জন্য বিশেষ টয়লেট- ‘স্পেস টয়লেট’ বা ‘জিরো গ্রাভিটি টয়লেটে’র ব্যবস্থা করা হয়।

এধরনের টয়লেট আমাদের টয়লেটের চেয়ে একদমই আলাদা। পৃথিবীতে অভিকর্ষ বল কাজ করে বলেই, আমরা আরামে ছেড়ে দিলেই তা নিচে চলে যায়, বাকিটা মিউনিসিপ্যালিটির চিন্তার বিষয়। কিন্তু মহাকাশে মাইক্রোগ্র্যাভিটির জন্য একধরনের ফ্যানযুক্ত ভ্যাকুয়াম ক্লিনার টাইপের কমোড ব্যবহার করা হয়। এতে বায়ু প্রবাহের মাধ্যমে দূষিত বায়ু, কঠিন ও তরল বর্জ্য অপসারণ করা হয়। আমরা যেমন একই কমোডে কঠিন-তরল উভয় ধরনের বর্জ্য ছাড়ি, তাদের কিন্তু সেই ব্যবস্থা নয়। তারা প্রস্রাব করেন আলাদা ভ্যাকুয়াম টিউবে। মেয়েরা চাইলে সেটা মূত্রদ্বারেই লাগিয়ে নিতে পারেন। আর পুরুষদের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধার কথা না-ই বা বললাম। এসব বর্জ্য রিসাইকেল বা পুনরায় ব্যবহার করা হয়।

এবার আসা যাক খাওয়া-দাওয়ার কথায়। মহাকাশচারীরা আমাদের মতো তিন বেলা খাবার খান। তবে তাদের ক্ষেত্রে ক্যালরি হিসাব করে খাবার-দাবারের ব্যবস্থা করা হয়। কারণ সেখানে সব কিছুই সীমিত। যেমন, একজন মোটা মানুষের প্রায় ৩,২০০ ক্যালরি খাবার লাগে, যেখানে একজন ছোটো খাটো পাতলা নারীর খাবার লাগে ১৮০০ ক্যালরি। মহাকাশচারীরা তাদের চাহিদামতো খাবার পছন্দ করে খেতে পারেন, যেমন- ফলমূল, মুরগি বা গরুর মাংস, সি ফুড, চকোলেট এবং বাদাম-বাটার ইত্যাদি। মহাকাশযান কিংবা স্টেশনে কোনো রেফ্রিজারেটর দেয়া হয় না। সুতরাং খাবার যা রাখার তা শুকনা করেই সংরক্ষণ করতে হয়। তাহলে কি তারা সব শুকনা খটখটে খাবার খান? না, তারা চাইলে খাবার গরম করে কিংবা সেদ্ধ করেও খেতে পারেন। যেমন- নুডলস, ম্যাকারনি এসব। রেফ্রিজারেটর না থাকলেও মহাকাশযানে মাইক্রোওয়েভ ওভেন দেয়া হয়, যাতে মহাকাশচারীগণ খাবার গরম করে খেতে পারেন। তবে খাবার তৈরিতে তারা যে লবণ আর মরিচ ব্যবহার করেন, তা দানাদার রুপে থাকে না, তরল রুপে থাকে। দানাদার লবণ কিংবা মরিচ দিলে তা মহাকাশে ভাসতে থাকবে, যা মহাকাশচারীর চোখে-মুখে লেগে ভয়ানক দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে।

খাওয়া দাওয়া তো হলো, এখন দেখা যাক মহাকাশচারীরা স্পেস স্টেশন কিংবা মহাকাশযানে কীভাবে কাজ করেন এবং কী কাজ করেন। যারা স্পেস ক্রু এবং টেকনিশিয়ান, তারা অধিকাংশ সময়ে যন্ত্রপাতি ঠিক আছে কিনা কিংবা স্পেস স্টেশনের বাইরে যেকোনো ধরনের কাজ করে থাকেন। স্টেশনের বাইরের অংশে গেলে ক্রুকে Space Walk করতে হয় প্রায় ৭ ঘণ্টা।

প্রত্যকে ক্রুকে নিয়মিত আপডেট পাঠাতে হয় পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণ কক্ষে। অপরদিকে মহাকাশে নানা ধরনের গবেষণা করা হয়, যেমন- জিরো গ্র্যাভিটিতে মানবদেহ কীভাবে কাজ করে এবং কীভাবে সেখানে টিকে থাকা যায়- এই সংক্রান্ত। এরকম আরো অনেক গবেষণাই স্পেস স্টেশনে চলমান রয়েছে। প্রত্যেক মহাকাশচারীকে নিয়মিত তার কাজের আপডেট কিংবা ভিডিও ইন্টারভিউ দিতে হয়।

মহাকাশে ব্যায়াম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মহাকাশচারী এই পৃথিবীরই মানুষ। পৃথিবীতে অর্থাৎ অভিকর্ষের মাঝে বাস করি বলে আমাদের দেহে ৩ ধরনের পেশী অভিকর্ষের বিপরীতে কাজ করে। এদেরকে আমরা অ্যান্টি গ্র্যাভিটি পেশী বলি। এরা হলো- মেরুদণ্ডের পেশী, উরুর সামনের পেশী এবং হাঁটুর পেছনের পেশী।

পৃথিবীতে চলাফেরা করতে এই পেশীগুলো খুব সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। কিন্তু মহাকাশে জিরো গ্র্যাভিটিতে চলাফেরায় এই পেশীগুলোর সক্রিয়তার তেমন দরকার হয় না। নিয়মিত ব্যায়াম না করলে এই পেশীগুলো ধীরে ধীরে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। একে মাসল অ্যাট্রফি (Muscle Atrophy) বলে। ফলে মহাকাশচারী যখন পৃথিবীতে ফিরে আসেন, তখন অভিকর্ষের কারণে প্রচণ্ড পেশী টান (Muscle Strain) অনুভব করেন। তাই মহাকাশচারীদের দৈনিক প্রায় ২.৫ ঘন্টা সময় ব্যায়াম করতে হয়।

মহাকাশচারীরা শুধু কাজই করেন না, তারা আমাদের মতোই সহকর্মীদের সাথে হাসি-ঠাট্টা-আনন্দে মেতে উঠেন। তারা অবসর সময় কাটান গান শুনে, সিনেমা দেখে, কার্ড-দাবা খেলে কিংবা বই পড়ে। তবে তাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় বিনোদন বা আনন্দের উৎস হলো মহাকাশযানের ছোটো ছোটো জানালা দিয়ে পৃথিবীটাকে দেখা। International Space Station পৃথিবীকে ৪৫ মিনিট পর পর ঘুরে আসে বলে সেখানকার মহাকাশচারীরা ২৪ ঘণ্টায় ১৬ টি সূর্যাস্ত দেখেন! এই ব্যাপারটা তাদের অনেক ভালো লাগে। রঙ-বেরঙের আলোয় না জানি কতটা মায়াবী লাগে এই নীল গ্রহটাকে! আমাদের মতো তাদেরও সপ্তাহে দু’দিন ছুটি থাকে। ছুটিতে তারা পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেন।

সারাদিনের কাজ তো শেষ হলো, এবার ঘুমানোর পালা। মহাকাশে কোনো ‘উপর’ এবং ‘নিচ’ নেই বলে একজন মহাকাশচারী যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে ঘুমাতে পারেন। তবে ঘুমানোর আগে নিজেকে বেঁধে নিতে হয়, যাতে ওজনহীনতার দরুন মহাকাশচারী ভেসে গিয়ে কোনো কিছুতে আঘাত না করেন বা নিজে আঘাতপ্রাপ্ত না হন। সাধারণত কেবিনগুলোতে ল্যাপটপ, গান শোনার ব্যবস্থা এবং হালকা আলোর ব্যবস্থা থাকে।

মহাকাশচারীদের দৈনিক ৮ ঘণ্টা করে ঘুমানো বাধ্যতামূলক। এখন প্রশ্ন আসতেই পারে, মহাকাশে দিন-রাত বলে কিছুই নেই, তাহলে তারা কীভাবে ঘুমায়? আসলে সবারই ঘুমানোর একটা নির্দিষ্ট সময় বাঁধা থাকে। ঘুম থেকে ওঠার সময় হলে অটোমেটিক অ্যালার্ম বাজে। অনেকেই মহাকাশে থাকার উত্তেজনাবশত এবং মহাকাশযানের ঘূর্ণনের কারণে দুঃস্বপ্ন দেখেন, কেউ বা নাক ডাকেন বলেও জানা যায়।

Collected
https://roar.media/bangla/lifestyle/lifestyle-in-space/
Md. Karim Sarker (Sohel)
Administrative Officer
Daffodil International University
Uttara Campus.
Ph-58952710, Ex-201
Mob-01847140030

Offline Karim Sarker(Sohel)

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 521
  • Test
    • View Profile
Md. Karim Sarker (Sohel)
Administrative Officer
Daffodil International University
Uttara Campus.
Ph-58952710, Ex-201
Mob-01847140030

Offline Karim Sarker(Sohel)

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 521
  • Test
    • View Profile
Md. Karim Sarker (Sohel)
Administrative Officer
Daffodil International University
Uttara Campus.
Ph-58952710, Ex-201
Mob-01847140030


Offline Saba Fatema

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 304
    • View Profile
Saba Fatema
Senior Lecturer
Department of GED
FSIT, DIU