যানজটে ঢাকায় দিনে ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট

Author Topic: যানজটে ঢাকায় দিনে ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট  (Read 984 times)

Offline S. M. Ashraful Alam

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 180
  • Live lifely
    • View Profile
যানজটের কারণে রাজধানী ঢাকায় প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। এই তথ্য বিশ্বব্যাংকের। আর যানজটের কারণে বছরে যে আর্থিক ক্ষতি হয়, অঙ্কের হিসাবে তা প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। গত কয়েক বছরের বিভিন্ন গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণ করে আর্থিক ক্ষতির এ আনুমানিক পরিমাণ পাওয়া যায়।

ঢাকা শহরে যানজটের কারণে আর্থিক ক্ষতির এই হিসাব যাদের আকর্ষণ করছে না, তাদের জন্য আরেকটি তথ্য আছে। এই শহরে এখন ঘণ্টায় গড়ে প্রায় সাত কিলোমিটার গতিতে চলছে যানবাহন। বিশ্বব্যাংক বলছে, এভাবে চলতে থাকলে আর কিছুদিন পর হেঁটেই গাড়ির আগে যেতে পারবে মানুষ। তীব্র যানজটের সময় গাড়ির আগে হেঁটে যাওয়ার অভিজ্ঞতা নগরবাসীর কাছে অপরিচিত নয়। যানজটের পরিস্থিতি দিন দিন যেভাবে খারাপ হচ্ছে, তাতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণও যে বাড়বে, তা বলা বাহুল্য।

যানবাহনের পরিমাণ যদি একই হারে বাড়তে থাকে এবং তা নিরসনের কোনো উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তাহলে ২০২৫ সালে এই শহরে যানবাহনের গতি হবে ঘণ্টায় চার কিলোমিটার, যা মানুষের হাঁটার গতির চেয়ে কম। মানুষের হাঁটার গড় গতি ঘণ্টায় পাঁচ কিলোমিটার বলে মনে করা হয়।

২০৩৫ সাল নাগাদ ঢাকার উন্নয়ন সম্ভাবনা নিয়ে গতকাল বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করে বিশ্বব্যাংক। সম্মেলনে উপস্থাপিত তথ্য থেকে এই চিত্র উঠে এসেছে। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, দিল্লির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত, ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক, ঢাকা দক্ষিণের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন এবং দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা এতে অংশ নেন।

দিনব্যাপী এই সম্মেলনে পাঁচটি অধিবেশন ছিল। দ্বিতীয় পর্বে ভারতের দিল্লি ও চীনের সাংহাইয়ের পুডং অঞ্চলের উন্নয়নের অভিজ্ঞতা এবং ঢাকার প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে আলোচনা হয়। তাতে অপরিকল্পিত ও যানজটে স্থবির দিল্লি কী করে বাসযোগ্য হয়ে উঠল, সে বিষয়ে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন দিল্লির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত। আর চীনের সাংহাইয়ের সাবেক ভাইস মেয়র কিঝেং ঝাও ভিডিওবার্তায় পূর্ব সাংহাইয়ের পুডং এলাকার রূপান্তরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। এ পর্বের প্যানেল আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান। তাতে অংশ নেন ঢাকার দুই মেয়র ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী।


রাজধানীর একটি হোটেলে গতকাল বিশ্বব্যাংক আয়োজিত ২০৩৫ সাল পর্যন্ত ঢাকার উন্নয়ন সম্ভাবনা নিয়ে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে (বাঁ থেকে) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক, পিপিআরসির চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান, দিল্লির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত ও ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন l ছবি: প্রথম আলো
সম্মেলনের প্রথম পর্বে ‘ঢাকাকে একটি আধুনিক নগরী বানানোর সুযোগ’ বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফান। তাতে যানজটকে ঢাকার অন্যতম প্রধান সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। প্রবন্ধে তিনি বলেন, ১০ বছর আগেও ঢাকায় যানবাহনের গতি ছিল প্রতি ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার। বর্তমানে যা ঘণ্টায় সাত কিলোমিটারের কম। যানবাহনের সংখ্যা বর্তমান হারে বাড়তে থাকলে এবং যানজট নিরসনে উদ্যোগ না নেওয়া হলে ২০২৫ সালের মধ্যে যানবাহনের গতি প্রতি ঘণ্টায় হবে চার কিলোমিটার।

চিমিয়াও ফান তাঁর প্রবন্ধে আরও বলেন, প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে, যা প্রতিবছর অর্থনীতিতে বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি করছে। যানজটের কারণে নগরায়ণের অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধার অনেকগুলোই পাওয়া যাচ্ছে না, যা দেশের এবং নগরের অর্থনৈতিক দুর্বলতার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে।

এই পর্বে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন ‘ঢাকাকে বদলাতে প্রতিশ্রুতি’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তাতে তিনি ঢাকার যানজট নিরসনে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। মন্ত্রী দাবি করেন, গণপরিবহন-ব্যবস্থার উন্নয়নে ম্যাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) এবং বাস র‍্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি) কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজও চলমান। ঢাকার চারপাশের নদীগুলো দখলমুক্ত এবং খনন করে চক্রাকার নৌপথ চালু করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

এ পর্বে ‘পূর্ব ঢাকার জন্য নতুন উদাহরণ’ শীর্ষক আরেকটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিবিদ মার্টিন রামা। তাতে রাজধানীর পূর্বাঞ্চলে পরিকল্পিত নগরায়ণের সুবিধা কাজে লাগানো হলে ঢাকার অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা ও বাসযোগ্যতা কীভাবে বাড়তে পারে সে বিষয়ে আলোচনা করেন তিনি।

বর্তমানে ঢাকার জনসংখ্যা ১ কোটি ৮০ লাখ। ২০৩৫ সালে এই জনসংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে ৩ কোটি ৫০ লাখ হবে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। এমন জনসংখ্যার একটি নগরীর উৎপাদনশীলতা বাড়ানো গেলে তা অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখতে পারে বলে সম্মেলনে বিশেষজ্ঞরা মত প্রকাশ করেন। তাঁরা বলেছেন, উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ হতে হলে বাংলাদেশকে অবশ্যই ঢাকার যানজট সমস্যার সমাধান করতে হবে।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ডিসেম্বরে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের ‘নগর পরিস্থিতি-২০১৬: ঢাকা মহানগরে যানজট‍-শাসন‍-ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিত’ শীর্ষক এক গবেষণায়ও বলা হয়, ২০০৪ সালে ঢাকার রাস্তায় প্রতি ঘণ্টায় গাড়ির গতিসীমা ছিল গড়ে ২১ দশমিক ২ কিলোমিটার। বর্তমানে তা ঘণ্টায় ৬ দশমিক ৮ কিলোমিটারে এসে দাঁড়িয়েছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ১০-১২ বছর আগে ঢাকার কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা করা হয়েছিল। সে পরিকল্পনা পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। সেটি গত বছর সংশোধন করা হয়েছে। দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির শহরে যদি সমস্যা সমাধানের পরিকল্পনা ধীরগতিতে বাস্তবায়িত হয়, তাহলে সমস্যা তীব্রতর হবে—এটাই স্বাভাবিক।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) দ্য আরবান স্পেকট্রাম: মেট্রোপলিটন টু মফস্বল নামের গবেষণাগ্রন্থ প্রকাশ করা হয়। তাতেও বলা হয়, রাজধানীতে যানবাহনের গড় গতি সাত কিলোমিটার। আবদুল্লাহপুর থেকে সায়েদাবাদ পর্যন্ত ২১ কিলোমিটার পথ যেতে সময় লাগে তিন ঘণ্টার বেশি। অথচ বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) ব্যবস্থায় এই দূরত্ব ৩৫-৪৫ মিনিটের।

মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ও দ্য চার্টার্ড ইনস্টিটিউট অব লজিস্টিকস অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট ২০১০ সালে গবেষণা করে বলেছিল, রাজধানীতে যানজটের কারণে বছরে আর্থিক ক্ষতি ২১ হাজার কোটি টাকার বেশি। গত ছয় বছরে এটা বেড়ে ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে হোসেন জিল্লুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে মোট জিডিপির ৩৭ শতাংশ জোগান দিচ্ছে ঢাকা। যানজট না থাকলে এটা আরও বাড়তে পারত। যানজটের কারণে একদিকে শ্রমঘণ্টা ও উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে, বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে ঢাকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাচ্ছে।

নগর পরিকল্পনাবিদেরা বলছেন, রাজধানীতে যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ ব্যক্তিগত ছোট গাড়ি (প্রাইভেট কার)। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে বাস ও মিনিবাসের চেয়ে সাত গুণ বেশি ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ শামসুল হক প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন বলার পরও গণপরিবহন-ব্যবস্থাকে উপেক্ষা করায় এখন পুরো ঢাকা স্থবির হয়ে পড়েছে। সরকার পরিকল্পনা করছে, কিন্তু কাজ সেভাবে হচ্ছে না, এটি দুঃখজনক। তিনি বলেন, ঢাকা ও দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে হলে গণপরিবহনভিত্তিক দ্রুতগতির পরিবহনব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
S. M. Ashraful Alam
Lecturer
Department of Business Administration
Faculty of Business and Economics
Daffodil Tower
Room No-906
4/2, Sobhanbag, Dhanmondi, Dhaka-1207
01515-299907
ashraful.bba@diu.edu.bd
Daffodil International University