হিজাব বা পর্দা কী? পর্দা হচ্ছে আবরণ। যে আবরণ দিয়ে দেহ আচ্ছাদিত করা হয়। আর দেহকে শরিয়াসম্মত পদ্ধতিতে আবৃত করার মাধ্যমে অন্তর পবিত্র রাখা সম্ভব। নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাতের মতো পর্দাও একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ বিধান। এটি পালন করলে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয়। এটি লঙ্ঘন করলে অসংখ্য অপূরণীয় ক্ষতি ও কবিরা গুনাহ হয়। এর ফলে বেহায়াপনা, অশ্লীলতা, জিনা-ব্যভিচার, ধর্ষণ ইত্যাদি বিস্তার লাভ করে। এর পথ ধরে নারী নির্যাতন বেড়ে যায়। নারীদের বেপর্দায় চলা ও দেহ প্রদর্শন পুরুষদের নারীঘটিত অপরাধে প্ররোচিত করে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘... পর্দার বিধান তোমাদের (পুরুষদের) ও তাদের (নারীদের) অন্তর পবিত্র রাখার সর্বোত্তম ব্যবস্থা...। ’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৫৩)
নারীর প্রতি পুরুষের দুর্বলতা প্রাকৃতিক। ফলে নারীর দিক থেকে কোনো প্রশ্রয় পেলে পুরুষের কামুক মন অপরাধে প্ররোচিত হতে পারে। তাই কোরআনের নির্দেশনা হলো : ‘তোমরা পরপুরুষের সঙ্গে এমন কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না, যার ফলে যে ব্যক্তির অন্তরে ব্যাধি রয়েছে, সে মন্দ বাসনা করে। ’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৩২)
নারীঘটিত অপরাধ রোধে মহানবী (সা.)-এর পরামর্শ হলো, নারীদের উচিত পুরুষদের প্ররোচিত না-করা। তাই তিনি শালীন পোশাক পরিধান করতে বলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘একদল নারী পোশাক পরেও উলঙ্গ থাকে। তারা অন্যদের নিজেদের প্রতি আকৃষ্ট করে, নিজেরাও অন্যদের প্রতি আকৃষ্ট হয়। তাদের মাথা উটের পিঠের কুঁজের মতো হবে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এমনকি জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। অথচ এর ঘ্রাণ এত এত দূর থেকেও পাওয়া যায়। ’ (মুসলিম : ২/২০৫)
পর্দা নারীর মর্যাদার প্রতীক। পর্দা কখনো তাদের জন্য অপমানজনক নয়। স্বর্ণ-রুপা, হীরক খণ্ড লোকচক্ষু থেকে আড়াল করে আলমারির সিন্দুকের কুঠরিতে রাখা হয়। এতে ওই সব বস্তুর অবমাননা হয়, নাকি সেগুলোর অতি মূল্যবান হওয়া প্রমাণিত হয়? নিশ্চয়ই অতি মূল্যবান হওয়া প্রমাণিত হয়। পর্দার বিষয়টিও ঠিক অনুরূপ।
নারীদের পরস্পরের পর্দা বা সতরের পরিমাণ হলো নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত। মাহরাম পুরুষদের সামনে নারীদের সতরের পরিমাণ হলো নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত এবং পেট ও পিঠ। অপ্রাপ্তবয়স্ক বাচ্চারাও মাহরামের অন্তর্ভুক্ত। আর বেগানা পুরুষদের সামনে নারীর শরীর ঢেকে পর্দা করা জরুরি। (ফাতাওয়া মাহমুদিয়া : ৬/৩৭৪, সুরা নূর : ৩১, কিফায়াতুল মুফতি : ৫/৩৮৭, ৩৮৯)
ইসলামের প্রথম জমানায় প্রয়োজনের ক্ষেত্রে মহিলাদের মুখমণ্ডল, হাতের কবজি ও পায়ের পাতা খোলা রাখার অবকাশ ছিল। কিন্তু বর্তমান ফিতনার যুগ হিসেবে ‘উলামায়ে মুতাআখখিরিনের’ ফতোয়া অনুযায়ী পরপুরুষের সামনে মুখমণ্ডল, হাতের কবজি, পায়ের পাতাসহ সম্পূর্ণ শরীর ভালোভাবে ঢেকে রাখা জরুরি। তবে বিশেষ প্রয়োজনে মুখ খোলা যেতে পারে। যেমন—চিকিৎসক, বিচারক বা সাক্ষী, যারা কোনো ব্যাপারে নারীকে দেখে সাক্ষ্য বা ফয়সালা দিতে বাধ্য হয়। (ফাতাওয়া শামি : ১/৪০৬, ফাতাওয়া রহিমিয়া : ৪/১০৬)
ইসলামী পর্দার কয়েকটি শর্ত
(১) মাথা থেকে পা পর্যন্ত সম্পূর্ণ শরীর আবৃত করে নেওয়া। বোরকা পরা জরুরি নয়, তবে গোটা শরীর ঢেকে রাখা জরুরি। (২) পরিহিত বোরকা ফ্যাশনমূলক না-হওয়া। (৩) বোরকা মোটা হওয়া, যাতে শরীরের আকৃতি অনুধাবন করা না যায়। (৪) বোরকা ঢিলাঢালা হওয়া। (৫) কোনো আতর বা সেন্ট ব্যবহার করে বের না-হওয়া। (আবু দাউদ : ২/৫৬৭, সুরা নূর : ৩১, মুসলিম : ২/২০৫, আহসানুল ফাতাওয়া : ৮/২৮, তিরমিজি : ২/১০৭)
প্রয়োজনে সম্মানজনক জীবিকার সন্ধান করার অনুমতিও ইসলাম নারীকে দিয়েছে। তবে তা কোনোভাবেই পর্দাহীনতা ও ইজ্জত-সম্মান বিসর্জন দিয়ে নয়। (হেদায়া : ৪/৪৫৮, ফাতাওয়া মাহমুদিয়া : ১/১২৬)
Source: মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ, শিক্ষক, মাদরাসাতুল মদিনা, ঢাকা