চিকুনগুনিয়াজনিত ব্যথা সারাতে হলে
এ রোগে আক্রান্ত রোগীরা জ্বর ও প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করে সঙ্গে মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা, মাংসপেশিতে ব্যথা ও ত্বকে র্যাশ দেখা দেয়। সংক্রমিত মশা সাধারণত ঘন বসতিপূর্ণ জায়গাগুলোতে বংশ বিস্তার করে।
সাধারণত এডিস এজিপ্টি এবং এডিস অ্যালবপিকটাস এই দুই প্রজাতির মশার মাধ্যমে চিকুনগুনিয়া ভাইরাস মানুষের দেহে ছড়ায়। মশা কামড়ানোর ৪ থেকে ৮ দিনের মধ্যে উপসর্গ দেখা দেয় এবং তা ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
রোগ নির্ণয় : রোগীর বক্তব্য অনুযায়ী শরীরে জ্বর এবং ব্যথা থাকবে। রক্তের সেরোলজিক্যাল পরীক্ষার মাধ্যমে এ রোগ নির্ণয় করা যায়।
ব্যথার সঙ্গে চিকুনগুনিয়ার সম্পর্ক : পরিসংখ্যানে দেখা গেছে চিকুনগুনিয়া জ্বরের সঙ্গে যে ব্যথা হয় এর কারণ হচ্ছে এক ধরনের ইনফ্লামেটরি সাইটোকাইনেসের উপস্থিতি। সিঙ্গাপুর ইমিউনোলজি নেটওয়ার্ক (এসআইজিএন) এবং কমিউনিকেবল ডিজিস সেন্টার (সিডিসি), এই দুই সংস্থা মিলে সিঙ্গাপুরের টিং টং সেং নামক একটি হাসপাতালে গবেষণা করেন, যার ফল হচ্ছে যার যত বেশি এ ভাইরাস অ্যাটাক করবে তার ততবেশি ব্যথা হবে।
অর্থাৎ উক্ত রোগীর ইনফ্লামেটরি সাইটোকাইনেস বেশি নিঃসৃত হয়। সাধারণত চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত রোগীর ব্যথা ২ সপ্তাহ থেকে এক মাসের মধ্যে সেরে যায়, তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যথা সারতে এক বছর সময় লাগে।
কেন ব্যথা হয় : ইমিউন সিস্টেমের মাধ্যমে চিকুনগুনিয়া ভাইরাস এজেন্ট তৈরি করে। যা পরবর্তীতে ইনফ্লামেশনের মাধ্যমে মাংসপেশি ও জয়েন্টে ব্যথার সৃষ্টি করে ফলে হাঁটু ভাঁজ করে উঠতে বসতে কষ্ট হয়, উচু স্থানে ওঠা-নামা, নামাজ আদায় করতে, হাঁটতে কষ্ট হয়। এলবো বা কনুই ব্যথা হয়।
শরীরের যেসব স্থানে বেশি ব্যথা হয়
হাঁটু ব্যথা : হাঁটু শরীরের গুরুপ্তপূর্ণ জয়েন্ট। যা শরীরের ভার বহন করে। রোগীরা সাধারণত হাঁটু ভেঙে উঠা-বসা করতে, সিঁড়ি ভাঙা, নামাজ আদায় করা এমন কি হাঁটতেও ব্যথা অনুভব করেন।
গোড়ালি ব্যথা : চিকুনগুনিয়া ভাইরাস আক্রান্ত প্রায় সব রোগী গোড়ালি ব্যথায় ভোগেন, ঘুম থেকে উঠার পর ব্যথা বেশি অনুভব হয়। কোনো কোনো রোগী হাঁটতে বা দাঁড়িয়ে থাকলে ব্যথা অনুভব করে। অনেকের আবার অ্যাংকেল জয়েন্ট বা গোড়ালি ফুলে যায়।
হাতে বিভিন্ন জয়েন্ট ও আঙুল ব্যথা : হাতের বিভিন্ন জয়েন্ট এবং আঙুল ব্যথার অভিযোগ শুনে মনে হয় বাতের সমস্যা, কিন্তুু অধিকাংশ রোগীর রক্ত পরীক্ষায় দেখা যায় বাতের সমস্যা নেই। হাত মুঠ করলে, ভারী জিনিস উত্তলনে, হাত ওপরে উঠাতে ও দৈনন্দিন কাজ করতে কষ্ট হয়।
সারা শরীরে ব্যথা : চিকুনগুনিয়ায় সারা শরীরে রোগীর ব্যথার পরিমাণ মাঝে মাঝে এমন হয়, যে শোয়া উঠা-বসা, হাঁটা সব ক্ষেত্রে বা সব সময় কষ্ট হয়। রোগীর সাধারণ দুর্বলতা অনুভব করায় কাজ করার আগ্রহ কমে যায়।
ব্যথা সারতে কতদিন লাগতে পারে
সাধারণত কারও এক মাস এমনকি এক বছরও লাগতে পারে। সুস্বাস্থ্যের অধিকারি পরিমিত খাবার এবং যথেষ্ট পরিমাণে তরলজাতীয় খাবার ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
ব্যথা হলে কী করবেন : প্রথমেই দরকার রোগীর কাছ থেকে সঠিক ইতিহাস ব্যথাটা কি চিকুনগুনিয়ার কারণে হয়েছে নাকি অন্য কারণে। একটা কথা মনে রাখা দরকার, অনেক রোগী আছে যার চিকুনগুনিয়ার আগেও জয়েন্টে বা মাংসপেশিতে ব্যথা ছিল। যা নিয়ে তারা প্রতিদিনের কাজ করতে পারতেন কিন্তু চিকুনগুনিয়া হওয়ার পর ব্যথাটা প্রকট আকার ধারণ করেছে।
করণীয়
* হালকাভাবে স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ যা মাংসপেশির নমনীয়তা বাড়াবে এবং রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করবে। এতে ব্যথার পরিমাণ কমে যাবে।
* উঁচু জায়গায় বসে (চেয়ার, টেবিল) এক পা করে হাঁটু সোজা এবং ভাঁজ করতে হবে।
* কিছু ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করতে পারেন।
* দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে বা বসে কাজ না করাই ভালো।
* সকালে ঘুম থেকে উঠে ১০-১৫ মিনিট হাঁটুন তারপর স্বাভাবিক কাজ করুন।
* ভারী জিনিস উত্তোলন থেকে বিরত থাকুন।
* অতিরিক্ত চাপ দিয়ে ব্যয়াম না করাই ভালো।
* ব্যথাযুক্ত স্থানটি গরম বা ফোলা থাকলে ঠাণ্ডা ছ্যাঁক দিন এবং স্বাভাবিক থাকলে গরম ছ্যাঁক দিন।
* ব্যথার ওষুধ খাবার আগে একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
* ব্যথার ওষুধে ব্যথা না কমলে আবার ওষুধ খেলে ব্যথা কমে এবং বন্ধ করলে ব্যথা আসে এরকম অবস্থায় অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ নিতে হবে।
Source: লেখক : কন্সালটেন্ট-ম্যানুপ্যুলেশন থেরাপি সেন্টার
পুপলার মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল, ধানমণ্ডি-২, ঢাকা