আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির মানে কী ?
একজন বিচক্ষণ মানুষ যাচ্ছিলেন একটি শহরের পাশ দিয়ে। তিনি স্রষ্টাকে লক্ষ্য করে বলে উঠলেন কিভাবে আবার শহরটি প্রাণ ফিরে পাবে। পবিত্র কুরআনের সূরা বাকারায় ২৫৯ আয়াতে বহু আগের ঘটনাটি আল্লাহ উল্লেখ করেছেন। সেটি ছিল একটি বিরান জনশূন্য উল্টে পড়ে থাকা শহর। সেখানে আবার জনবসতি গড়ে ওঠা ওই ব্যক্তির কাছে একটি অসম্ভব ব্যাপার মনে হয়েছিল। আল্লাহ তাকে তাৎক্ষণিক মৃত্যু দিলেন, এক শ’ বছর পর আবার জীবিত করলেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, তুমি কতক্ষণ ঘুমিয়েছ? তিনি জানালেন এক দিন বা তার কিছু অংশ। মহান স্রষ্টা তাকে জানালেন, না, তুমি এভাবে এক শ’ বছর ঘুমিয়ে কাটিয়েছ। তাকে লক্ষ করতে বলা হলো, তুমি যে খাদ্য ও পানীয় নিয়ে এসেছিলে, তা পচেনি এমনকি স্বাদ সামান্যও বদলেনি।
বলা হলো, ‘তাকিয়ে দেখো, তোমার গাধাটির দিকে। সেটির আর কোনো অস্তিত্ব এখন অবশিষ্ট নেই, ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। তবে এখন আমরা এটিকে আবার কিভাবে পূর্ণরূপে ফিরিয়ে আনি সেটি দেখো।’ তিনি সামনেই দেখতে পেলেন, মাটির সাথে মিশে যাওয়া হাড়গোড় অস্তিত্ব পাওয়া শুরু করেছে। একটার সাথে আরেকটা হাড় জোড়া লাগছে। সেগুলোর ওপর পরানো হলো গোশতের পোশাক। তার ওপর মোড়ানো হলো চামড়া। তাতে লেগে গেল চুল পশম ও লোম। তার সামনে এক শ’ বছর আগের গাধাটি হুবহু আগের রূপে হাজির হয়ে গেল। এসব দেখে বিচক্ষণ ব্যক্তি মন্তব্য করেছিল, ‘ইন্নাল্লাহা আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির’। আয়াতের শেষে তার মন্তব্যটি সংযুক্ত রয়েছে।
তিনি আসলে কোনোভাবে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না, শহরটিতে আবার জনবসতি গড়ে উঠতে পারে। অথচ এ শহরটি আগে একবার শূন্য থেকে গড়ে উঠেছিল, যেখানে এর কোনো অস্তিত্ব ছিল না। এই পুরো মহাবিশ্ব এমনকি চিন্তা করা মানুষটিরও একসময় কোনো অস্তিত্ব ছিল না। আজ তার কাছেই অনেক কিছু অসম্ভব আর অবাস্তব মনে হচ্ছে। তাই তাকে দেখিয়ে দেয়া হলো সব কিছু সম্ভব। আমরা যদি খুঁটিয়ে লক্ষ করি তা হলে দেখতে পাবো, এই পথিকের কাছে থাকা খাদ্য ও পানীয়ের ওপর দিয়ে সময় প্রবাহিত হয়নি। তাই তার খাদ্য পচেনি, পানির রঙ ও গন্ধ পরিবর্তন হয়নি। অন্য দিকে গাধাটির ওপর দিয়ে এক শ’ বছর অতিবাহিত হয়েছে। সে কারণে সেটির অস্তিত্ব বিলীন হয়ে মাটির সাথে মিশে গেছে। আবার সেটিকে এক শহর পুনরুজ্জীবিত করার মতোই ফিরিয়ে আনা হয়েছে। গাধাটির বয়স ও শক্তিতেও কোনো হেরফের হয়নি। চোখের সামনে এটি পূর্ণ অস্তিত্ব ধারণ করার কারণে তিনি মন্তব্যটি করেছিলেন, ‘ইন্নাল্লাহা আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির’।
আরবি বাক্যাংশটির অর্থ হচ্ছে, নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রত্যেক বিষয়ের ওপর ক্ষমতাবান। আরো সহজ করে বলা যায়, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রতিটি ব্যাপারে তার ক্ষমতা প্রয়োগে সক্ষম।’