কর্মক্ষেত্রে যে নিয়মগুলো মেনে চলা উচিৎ সকলের:
চাকরী পাওয়া, চাকরী ধরে রাখা এবং চাকরীতে পদন্নোতি লাভ করার ক্ষেত্রে ৮৫% নির্ভর করে দক্ষতা এবং অফিসে নিজের আচরণের উপর, বাকী ১৫% টেকনিক্যাল জ্ঞান এর উপর। - হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি স্টাডিজ'
এখনকার প্রতিযোগিতা মূলক সময়ে পছন্দসই একটি ভালো মানের চাকরী পাওয়া যেন একদম সোনার হরিণের মতো দুস্প্রাপ্য হয়ে গিয়েছে। প্রতিযোগী অনেকেই, কিন্তু চাকরীর বাজারে নতুন চাকরীর অপ্রতুলতা সেই প্রতিযোগিতাকে যেন আরো বেশী কঠিন করে তুলেছে। তার মাঝে যারা নিজেদের যোগ্যতা, দক্ষতা এবং জ্ঞান দিয়ে চাকরী পেয়ে থাকেন তাদের মধ্যে অনেকেই অফিসের কিছু নিয়মকানুন সম্পর্কে সঠিকভাবে জানেন না। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে তাদের ভালো ক্যারিয়ার তৈরির ক্ষেত্রে।
অফিস একটি ফরমাল জায়গা। যেখানে কিছু নিয়ম জেনে এবং মেনে আচরণ করতে হবে এবং কাজ করতে হবে। জেনে নিন এমন দশটি খুবই গুরুত্বপুর্ণ দশটি অফিসে এটিকেট তথা অফিসের নিয়মনীতি যা মেনে চলা আবশ্যক।
১/ অফিসে নিয়মনীতি জানতে এবং বুঝতে হবে
প্রতিটি অফিসের নিয়মনীতি আলাদা এবং ভিন্ন হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে, কোন অফিসে নতুন জয়েন করলে প্রথমেই সেই অফিসের নিয়মনীতি সম্পর্কে ভালমতো জেনে নিতে হবে। এক অফিসে যে কাজ করার ক্ষেত্রে কোন বাধা নেই, অন্য অফিসে সেই কাজটি করার ক্ষেত্রে নিষেধ থাকতেই পারে।
২/ সময়মতো অফিসে পৌঁছানোর চেষ্টা করতে হবে
সবার আগে একজন চাকরিজীবীর তার কাজের এবং পারদর্শীতার ক্ষেত্রে যে ব্যপারটি খেয়াল করা হয় সেটা হলো, সে সময়মতো অফিসে পৌছাচ্ছেন কি না! সময়মতো অফিসে পৌঁছাতে না পারাটাকে অনেক অফিসে খুব নেতিবাচকভাবে দিক হসেবে ধরা হয়। যার ফলে পারফরমেন্সের খাতায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে থাকে।
৩/ মিটিং এ সময়মতো উপস্থিত হওয়ার চেষ্টা করতে হবে
ছোট অথবা বড়, অফিসের যেকোন মিটিং অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে। প্রতিটি মিটিং এ সকলের কাজ, কোম্পানীর বর্তমান অবস্থা, কোম্পানী তাদের এমপ্লয়ীদের কাছ থেকে কেমন কাজ আশা করছেন এই সকল বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। তবে, এই সকল আলোচনার ব্যাপারটি ছাড়াও আরো যে একটা ব্যাপার উঠে আসে সেটা হচ্ছে, মিটিং-এ কে কখন উপস্থিত হচ্ছেন এবং মিটিং এর মাঝে কার কতোটুকু মনোযোগ রয়েছে। তাই সবসময় চেষ্টা করতে হবে, যে কোন মিটিং এ একদম সময়মতো উপস্থিত থাকার জন্য।
৪/ মোবাইলের রিংটোন কমিয়ে রাখুন অথবা ভাইব্রেট মুডে রাখুন
অফিসে কাজ করার সময়ে খুব ছোটখাটো কোন কারণে মনোযোগ নষ্ট হয়ে গেলে কাজের গতি দারুণভাবে ব্যহত হয়। তাই সবসময় চেষ্টা করতে হবে অফিসে থাকাকালীন সময়ে নিজের মোবাইলের রিংটোন একেবারেই কমিয়ে রাখার অথবা ভাইব্রেট মুডে রাখার জন্য। যেন সামান্য একটি ফোনকলের কারণে নিজের তো বটেই, সহকর্মীদের কারোর গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজে ব্যাঘাত না ঘটে।
৫/ মোবাইল কথা বলার সময় উচ্চস্বরে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন
ব্যক্তিগত অথবা অফিসের কাজেই হোক, মোবাইলে কথা বলার প্রয়োজনীয়তা সকলেরই থাকবে। তবে, অফিসে থাকাকালীন মোবাইলে কথা বলার ক্ষেত্রে উঁচু গলায় বা স্বরে কথা বলা থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। যতই প্রয়োজনীয় কিংবা দরকারি কথা হোক না কেন, কোনভাবেই উচ্চস্বরে কথা বলা যাবে না। কারণ, অফিসে থাকাকালীন সময়ে নিজের কাজে মোবাইলে কথা বলার সময়ে পাশের টেবিলে থাকা সহকর্মী বিরক্ত হতে পারেন এবং তার কাজে মনোযোগের ব্যঘাত ঘটতে পারে- এই ব্যাপারগুলো মাথায় রাখতে হবে।
৬/ সহকর্মীদের জিনিসপত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে
হয়তো কাজের মাঝে পেন্সিল ব্যবহারের প্রয়োজন হয়েছে কিন্তু নিজের কাছে পেন্সিল নেই। সহকর্মীর টেবিল একদম পাশেই এবং টেবিলে তার পেন্সিলটি রয়েছে। তার পেন্সিল ব্যবহার করার ক্ষেত্রে অবশ্যই তার অনুমতি নিয়ে তবেই ব্যবহার করতে হবে। কোনভাবেই সহকর্মীর অনুমতি ব্যতীত কোন জিনিস ব্যবহার করা উচিৎ নয়, তা সেই জিনিসটি যতই ছোট হোক না কেন!
৭/ অফিস ক্যান্টিনের রেফ্রিজারেটর থেকে অনুমতি ব্যতীত খাবার নেবেন না
অনেক সময় অফিসের অনেক কর্মচারী তাদের সকালের কিংবা দুপুরের খাবার অফিসের ক্যান্টিনের রেফ্রিজারেটরে রেখে দেন পরে খাওয়ার জন্য। অথবা, অফিসের সকলের জন্যে কোন উপলক্ষ্যে খাবার এনে রাখা হয় রেফ্রিজারেটরে। সেক্ষেত্রে রেফ্রিজারেটরের যেকোন খাবার না জেনে এবং অনুমতি ব্যতীত খেয়ে ফেলাটা খুবই অনুচিত একটি কাজ। যে কাজটি করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।
৮/ সহকর্মীর আচরণ নিয়ে কথা বলুন আলাদাভাবে
একটা অফিসে নানা পদে নানান রকম মানুষ থাকেন। সকলের আচরণ, মানসিকতা, মত প্রকাশ করার ধরণ ভিন্ন হবে এবং এটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। হতেই পারে কোন পরিস্থিতিতে একজন সহকর্মীর আচরণ পছন্দ হয়নি। সেক্ষেত্রে নিজের অপছন্দের কথা সকলের সামনে তাকে না জানিয়ে বরং তাকে আলাদা করে ডেকে নিয়ে কথা বলুন, তাকে জানান কেন তার আচরণ পছন্দ হয়নি। চেষ্টা করুন নিজের ভাব সঠিকভাবে প্রকাশ করতে এবং তার মতামতকেও গুরুত্ব দিতে।
৯/ যেকোন পরিস্থিতিতে নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন
অফিসে কাজ করার সময়ে, নানান রকম কাজের চাপে বিভিন্ন কারণে মানসিক চাপ তৈরি হতে পারে। এই সময়গুলোকে নিজেকে এবং নিজের অযাচিত আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করতে হবে। অফিসে কোন সহকর্মী কিংবা কর্মচারীর উপরে কোন রকম রাগ, ক্ষোভ কিংবা বিরক্তি প্রকাশ যেন না হয়ে যায়, সেই বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।
১০/ পরিশেষে নিজের কাজ গুছিয়ে করুন
সবকিছুর শেষে একজন অফিস কর্মকর্তার কাজকেই সবার আগে বিচার বিবেচনা করা হবে এবং অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। আপনি যে পদে আছেন এবং আপনার উপরে যে সকল কাজের দায়িত্ব রয়েছে সবকিছু খুব পরিকল্পনা মতো গুছিয়ে এবং সুন্দর করে সময়ের মাঝে শেষ করার চেষ্টা করুন। কাজ যথাসম্ভব ত্রুটিমুক্তভাবে পরিবেশন করার চেষ্টা করুন।