Faculty of Science and Information Technology > Evening Program (FSIT)

জিপিএ–৫ না পেয়েও কেমব্রিজে

(1/2) > >>

obayed:
২০১৬ সালের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের ছাত্র সাজিদ আখতার পেয়েছিলেন জিপিএ-৪.৫০। আর এ বছর সিলেটের এমসি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে আসিফ-ই-এলাহীর অর্জন ৪.৬৭। ছেলে জিপিএ-৫ পায়নি বলে মা-বাবা আশাহত হয়েছিলেন, মন খারাপ হয়েছিল সাজিদ আর আসিফেরও। অথচ কী আশ্চর্য! গত ২৯ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যগামী একটি বিমানে চড়ে বসলেন দুজন। কমনওয়েলথ বৃত্তি নিয়ে তাঁরা ‘পিওর ম্যাথমেটিকসে’ স্নাতক পড়তে গেছেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। কেমন করে যুক্তরাজ্যের এই স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ হলো?

কলেজে পড়ার সময় উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো জিপিএ অর্জন করাই থাকে শিক্ষার্থীদের প্রধান লক্ষ্য। অথচ সাজিদ-আসিফ নাকি বোর্ড পরীক্ষার প্রস্তুতির চেয়ে কেমব্রিজে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতেই বেশি ব্যস্ত ছিলেন! কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে গণিত নিয়ে পড়ার জন্য এসটিইপি বা সিক্সথ টার্ম এক্সামিনেশন পেপার্স ইন ম্যাথমেটিকস নামের একটি পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। সঙ্গে প্রয়োজন হয় আইইএলটিএসের ভালো স্কোর। আবেদনের আরও বেশ কয়েকটি ধাপ আছে। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা নয়, এসবই ছিল আসিফ ও সাজিদের ভাবনায়। তাঁদের মনে এই আত্মবিশ্বাস গড়ে দিয়েছে গণিত অলিম্পিয়াড। স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়েছেন দুজন। আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়ে আসিফ-ই-এলাহী দুবার রৌপ্য, একবার ব্রোঞ্জ ও একবার ‘অনারেবল মেনশন’ পেয়েছেন। সাজিদ আখতার অংশ নিয়েছেন তিনবার। তাঁর ফলাফল দুটি ব্রোঞ্জ ও একটি অনারেবল মেনশন। গণিত যাঁদের শক্তি, রুখবে তাঁদের কে!
এর আগে গত কয়েক বছরে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ থেকে যেই শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছেন, তাঁরাই পথ দেখিয়েছেন আসিফ-সাজিদদের। আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ থেকে অংশ নিয়ে সামিন রিয়াসাত কেমব্রিজ থেকে গণিতে স্নাতক হয়েছেন, নাজিয়া চৌধুরী এমআইটি থেকে পড়াশোনা শেষ করে সিঙ্গাপুরে মেডিসিনে উচ্চতর ডিগ্রি নিচ্ছেন। তারিক আদনান হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করেছেন। তামান্না ইসলাম, সৌরভ দাশ, বৃষ্টি শিকদার, শিঞ্জিনি সাহা, নূর মোহাম্মদ শফিউল্লাহ, সানজিদ আনোয়ার সুযোগ পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (এমআইটি)। হক মোহাম্মদ ইশফাক স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়ছেন। আদিব হাসান এমআইটিতে পড়ার আগে ছয় মাস সময় নিয়ে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন।
সাজিদ আর আসিফও বেশ কয়েক মাস আগে থেকে প্রস্তুতি শুরু করেছিলেন। গত বছর উচ্চমাধ্যমিক পাস করে সাজিদ ভর্তি হয়েছিলেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যালয়ের কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে, তবে কেমব্রিজে যাওয়ার চেষ্টাও চলছিল। সাজিদের মা রাকিবা আফরোজ বলেন, ‘এইচএসসিতে এ প্লাস পায়নি বলে আমার ছেলের একটু মন খারাপ হয়েছিল। তবে সে ভেঙে পড়েনি। একদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা চালিয়ে গেছে, অন্যদিকে বাইরে পড়তে যাওয়ার প্রস্তুতিও নিয়েছে।’ বাবা সোহেল আখতারের বক্তব্য, ‘এ প্লাস নিয়ে এখন আর দুঃখ নেই। শেষটা ভালো হলো, এতেই আমি খুশি।’ আর সাজিদ? তাঁর কাছে জানতে চাই, কীভাবে পেলেন এই আত্মবিশ্বাস? আকাশে ওড়ার আগে মুঠোফোনে সাজিদ বলেন, ‘গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নেওয়ার কারণে একটা সমস্যার পেছনে লেগে থাকা শিখেছি। হাল ছাড়িনি। নিজের পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে পছন্দের বিষয়ে ভর্তির জন্য লেগে ছিলাম, শেষ পর্যন্ত সেখানেই যাচ্ছি।’
আসিফ-ই-এলাহী উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার মধ্যেই মালয়েশিয়ায় কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। তাঁর বাবা আজিজুর রহমান বললেন, ‘উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য আসিফ খুব একটা পড়েনি। ওর মায়েরও কেমব্রিজের প্রতিই বেশি আগ্রহ ছিল।’ আর মা হোসনে আরা বেগম বলেন, ‘এ প্লাস না পাওয়ায় মন একটু তো খারাপ হয়েছিলই। ছেলে যখন এইচএসসির ফলাফল ভুলে বিদেশে যাওয়ার জন্য পরিশ্রম শুরু করল, তখন আমিও ভরসা পেয়েছি।’ কেমব্রিজে পৌঁছে আসিফ ই-মেইলে জানিয়েছেন, ‘গণিত অলিম্পিয়াডের সুযোগে অনেক বড় ভাই-আপুদের দেখেছি, যাঁরা উচ্চশিক্ষার জন্য হার্ভার্ড, এমআইটি আর স্ট্যানফোর্ডে পড়ছেন। তাঁদের দেখেই কেমব্রিজে পড়ার স্বপ্ন দেখার সাহস পেয়েছি।’ কিন্তু যদি কেমব্রিজে সুযোগ না হতো, তখন? এমন প্রশ্নে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে আসিফের উত্তর, ‘তাহলে আমেরিকার কোনো না কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে যেতাম।’
শেষ পর্যন্ত তাঁকে বিকল্প খুঁজতে হয়নি। আসিফ-ই-এলাহী ও সাজিদ আখতার তাঁদের স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বপ্নের বিষয় নিয়েই পড়ছেন। তাঁরা যে শুধু নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করেছেন, তা নয়। দেশে জিপিএ-৫ না পাওয়া শিক্ষার্থীদের যাঁরা ‘খারাপ ছাত্র’ হিসেবে চিহ্নিত করেন, তাঁদের জন্য একটা বার্তাও দিলেন এই দুই তরুণ।
আরও সংবাদ
বিষয়:

Ms Jebun Naher Sikta:
Wow....

afrin.ns:
Thanks

Tania Khatun:
Wow

akhi:
good

Navigation

[0] Message Index

[#] Next page

Go to full version