ফেসবুকে নিজের প্রোফাইল বা পেজে নিজের মতো যা ইচ্ছা তা লিখবেন কিংবা নিজের স্ট্যাটাস যা খুশি তা লিখতেই পারেন। মত প্রকাশে আপনার স্বাধীনতা তো আছেই। এতে আবার ভাবাভাবির কী আছে? এ আবার আইনের আওতায় আসে নাকি? এর উত্তর হচ্ছে ফেসবুক কিংবা অন্য যেকোনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস বা কিংবা কারও স্ট্যাটাসে মন্তব্য, ব্লগে কোনো লেখা অর্থাৎ অনলাইনে করা কোনো মন্তব্য, মতামত কিন্তু প্রচলিত আইনের আওতায় আসে।
যা লেখা যাবে না
তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৩) অনুযায়ী অনলাইনে কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ব্লগসাইট বা অন্য কোথাও এমন কিছু লেখা যাবে না যাতে করে কারও মানহানি হয়। কোনো বিভ্রান্তিমূলক তথ্য, মানহানিকর বা বিভ্রান্তিমূলক ছবি বা ভিডিও ছাড়া যাবে না। কারও নামে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে না। মনে রাখতে হবে মানহানিকর, বিভ্রান্তিমূলক বা অশালীন স্ট্যাটাস শেয়ার বা লাইক দিলেও সাইবার অপরাধ হতে পারে। হতে পারে বিপদ।
আবার এমন কোনো কিছু লেখা যাবে না যাতে করে দেশের আইনশৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে। আবার এসব লেখায় যদি রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় তাহলে অপরাধ হবে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় এমন কিছু লেখা অপরাধ। ধর্মীয় অবমাননাকর বিষয়েও লিখলে বিপদ হতে পারে। কাউকে হুমকি দিলে, অশালীন কোনো মন্তব্য বা ছবি দিলে বা ট্যাগ করলে তা সাইবার অপরাধ হবে।
রয়েছে কঠিন শাস্তি
তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) আইন ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৩)-এর ৫৭ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে কোনো মিথ্যা বা অশ্লীল কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করে, যার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয় অথবা রাষ্ট্র বা ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় তাহলে এগুলো হবে অপরাধ। যার শাস্তি সর্বোচ্চ ১৪ বছর কারাদণ্ড এবং সর্বনিম্ন ৭ বছর কারাদণ্ড এবং ১ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা। ফেসবুক বা অন্য কোনো অনলাইন মাধ্যমের কোনো বক্তব্যে যদি এ ধরনের কোনো উপাদান থাকে তাহলে তা-ও এ আইনের আওতায় অপরাধ হবে। এ অপরাধ কিন্তু জামিন অযোগ্য। আবার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা (ওয়ারেন্ট) ছাড়াও পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারে। যদিও এ আইনের অপব্যবহার বন্ধ করার জন্য সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে বলা হয়েছে এ আইনে কোনো মামলা নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট থানাকে সদর দপ্তরের অনুমতি নিতে হবে।
শেষ কথা
বিশ্বব্যাপী অক্টোবর মাস সাইবার সচেতনতা মাস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে সাইবার জগতে সাবধানতা অবলম্বন করা। আপনার একটি ছোট স্ট্যাটাস বা মন্তব্য কিন্তু অনেক বড় বিপদ ডেকে নিয়ে আসতে পারে। আমাদের দেশসহ গোটা পৃথিবীতেই যেহেতু ফেসবুক খুবই জনপ্রিয় তাই ফেসবুকের স্ট্যাটাস নিয়ে মামলা-মোকদ্দমাও নেহাত কম হচ্ছে না। অনলাইনে কোনো মন্তব্য, লেখা বা ছবি দেওয়ার আগে বুঝেশুনেই দেওয়া উচিত। একটু ভুল কিংবা কৌতূহল জীবনে নিয়ে আসতে পারে কঠিন ভোগান্তি।
লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
Source:
http://www.prothom-alo.com/life-style/article/1346361/%E0%A6%AB%E0%A7%87%E0%A6%B8%E0%A6%AC%E0%A7%81%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%9F%E0%A6%BE%E0%A6%B8-%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%93%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%86%E0%A6%97%E0%A7%87