সাক্ষাতকারঃ মাহমুদুল হাসান সোহাগ

Author Topic: সাক্ষাতকারঃ মাহমুদুল হাসান সোহাগ  (Read 2952 times)

Offline mushfiq.swe

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 109
    • View Profile
টিউন্টারভিউ গেস্ট: মাহমুদুল হাসান সোহাগ, উদ্দ্যোগতা, পাইল্যাবস, অন্যরকম গ্রুপ
টিউন্টারভিউ হোস্ট: আরিফ নিজামী
সময়: ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১২ । রবিবার । সন্ধ্যা ৬টা ।
স্থান: কাওরান বাজার, অন্যরকম গ্রুপ অফিস । ঢাকা ।
ব্যাপ্তি: প্রায় ৫৮ মিনিট ।

চাকচিক্যের এই যুগে একটু অন্যরকম একজন তরুণ মাহমুদুল হাসান সোহাগ। দেশের চিরচেনা ব্যবসা জগতকে বদলে দিতেই যিনি গড়ে তুলেছেন বেশকিছু প্রতিষ্ঠান। ব্যবসায়ী নয়, সত্যিকারের উদ্দ্যোগতা হতেই আগ্রহ তার। আজ শুনবো  EVM - Electronic Voting Machine নিমার্তা প্রতিষ্ঠান পাইল্যাবস সহ আরো বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা মাহমুদুল হাসান সোহাগের।

টেকটিউনস: প্রথমেই নিজের ও আপনার পরিবার সম্বন্ধে কিছু বলুন।
মাহমুদুল হাসান সোহাগ: আমি মাহমুদুল হাসান সোহাগ। নিজের কথা বললে, আমি স্বপ্ন দেখতে পছন্দ করি এমন একটা মানুষ। আমার শিক্ষাজীবন শুরু জামালপুর জেলার সরিষাবাড়িতে। সেখানে প্রথমে নাসিরউদ্দিন কিন্ডারগার্ডেন তারপর রিয়াজউদ্দিন তালুকদার উচ্চবিদ্যালয়ে পড়ি এসএসসি পূর্যন্ত। এর আগে হাইস্কুলে, ক্লাস ফাইভ , ক্লাস এইটের বৃত্তি মোটামুটি সব জায়গাতেই ফাস্ট হয়েছিলাম। এসএসসিতে ঢাকা বোর্ডে পঞ্চম হই। এরপর ভর্তি হই ঢাকা কলেজে। সেখানে এইচএসসিতে চতুর্থ হই। তারপর বুয়েটের ইলেকট্রিকাল ডিপার্টমেন্ট। ওখানেও রেজাল্ট ভাল ছিল, টিচার হবার কাছাকাছি ছিল। পাস করার আগে থেকেই বুয়েটের আইআইসিটিতে (IICT) রিসার্চ এসিস্টটেন্ট হিসেবে ছিলাম। পাস করার পর রিসার্চ ইন্জিনিয়ার হিসেবে কিছুদিন জব করেছিলাম। সেটাই ছিল আমার প্রথম এবং শেষ চাকরী। আমার লক্ষ্যই ছিল উদ্দ্যোগতা হবার।
আমার বাবা হাইস্কুলে শিক্ষকতা করতেন। মা চাকরী করতেন পোষ্ট অফিসে। এখন উনারা সরিষাবাড়িতেই আছেন। আমরা তিন ভাইবোন। আমি সবার ছোট। বড় দুই বোনেরই বিয়ে হয়ে গেছে। ছোট আপু বগুড়ায় থাকেন। যেহেতু বিয়ে করিনি তাই এখন আমি বড় আপুর সাথেই থাকি 🙂 ।

টেকটিউনস: বুয়েট বা প্রকৌশল বিদ্যা বেছে নেবার কারণ কি ছিল ?
মাহমুদুল হাসান সোহাগ: আমার আম্মার ইচ্ছা ছিল আমি ডাক্তার হই। কিন্তু জীববিজ্ঞানের সাথে কখনও কমফোর্টেবল ছিলাম না। আমি কোন জিনিষ সহজে বুঝতে পারি, কিন্তু মুখস্ত করা আমার জন্য অনেক কষ্টের একটা ব্যাপার। যে কারণ প্রথমে এসএসসিতে জীববিজ্ঞান নিলেও পরে বাদ দিয়ে দেই। বাসায় অনেক বোঝাতে হয়েছে যে জীববিজ্ঞান আমার বিষয় না।
যেহেতু গাণিতিক বিষয়ের উপর একটু বেশী আর্কষণ ছিল তাই ইন্জিনিয়রিংয়ে আসা। তাছাড়া দেশের সেরা ছাত্ররা যেহেতু বুয়েটকে টার্গেট করে, ওটাও অনুপ্রেরণা থাকতে পারে।


টেকটিউনস: ট্রেডিশনাল জব মার্কেট ছেড়ে ইন্ট্রেপ্রেনিয়রশীপে আশার কারণ কি ?
মাহমুদুল হাসান সোহাগ: ছোটবেলা থেকেই যেটা ট্রেডিশনাল ওটা করতে চাইতাম না। সবসময়ই মনে হতো আমি অন্যরকম কিছু করতে চাই। আমি যে গ্রুপ অফ কম্পানিজ চালাই "অন্যরকম গ্রুপ"। এই নামটা মনে হয় সে জায়গা থেকেই এসেছে। ওই আলাদা কিছু করার ইচ্ছাটা ছিল। বাংলাদেশেতো সবাই পাশ করেই চাকুরীতে ঢুকে যায়। সেখানে আমার আলাদা কিছু করার ইচ্ছা ছিল।
দ্বিতীয়ত, নিজে কিছু করলে আমি যেটা চিন্তা করি সেটা বাস্তবায়নের সম্ভাবনা থাকে। নিজের মধ্যে যেটা সৃষ্টিকর্তা দিয়েছেন তা পুরোটা এক্সপ্লোরের সুযোগ থাকে। চাকরীতে গেলে সীমাবদ্ধতা চলে আসে। যেমন এখন আমার কোন ছুটি নেই। প্রতিদিন প্রায় সকাল ৯টায় বাসা থেকে বের হই। রাত ১২টায় বাসায় ফিরি। কোন ছুটি বা বিশ্রাম ছাড়াই এটা আমি করছি। চাকরী করলে যেটা মনে হয় না সম্ভব ছিল।


টেকটিউনস: আপনার এই উদ্দ্যোগগুলোর পিছনে অনুপ্রেরণা কি ?
মাহমুদুল হাসান সোহাগ: আমি অনেকবার নিজেকে জিজ্ঞেস করে দেখেছি আমার অনুপ্রেরণা টাকা কি না। অনেক কিছু বিচার বিশ্লেষন করে নিজের কাছে এই সেটিসফেকশনটা পেয়েছি যে আমার অনুপ্রেরণা টাকা না। আমার হাতে এই মূহুর্তে সহজে টাকা বানানোর অনেক উপায় আছে। আমার অনুপ্রেরণা টাকা হতো তাহলে আমি হয়ত সেসব কাজই করতাম। কিন্তু না, আমার কাছে উদ্দ্যোগক্তা আর ব্যবসায়ী হওয়া এক বিষয় নয়। ব্যবসায়ী বলতে বণিকশ্রেণি বোঝায় যারা একটা পণ্য কিনবে আর অন্যজনের কাছে বিক্রি করে মাঝে কিছু লাভ করবে। আমি সেটা করতে চাই না। আমি চেয়েছি মানুষের কর্মসংস্থান হবে, দেশে যা পরিবর্তন দরকার তার জন্য চেষ্টা করে যাব।
বাংলাদেশে বিভিন্ন জায়গায় নানান সমস্যা। কেউ চাইলে সেগুলো এড়িয়ে যেতেই পারে। যেমন কোন মেয়েকে কেউ উক্তত্য করল, তার প্রতিবাদ করায় তার বাবাকেই হয়ত জীবন দিতে হলো। একজনের জমি অন্যজন দখল করে বসল, ইত্যাদি। এইসব জিনিষ আমাকে অনুপ্রানিত করে কিছু করার জন্য।


টেকটিউনস: আপনার ইন্ট্রেপ্রেনিয়রশীপের শুরু কিভাবে হয় ?
মাহমুদুল হাসান সোহাগ: আপনার ইন্ট্রেপ্রেনিয়রশীপের শুরু বুয়েটে ভর্তি হবার পরই। শুরুতেই একটা এডুকেশনাল ইনস্টিটিউশন চালাতাম। ওখানেও ভিন্ন কিছু করার চেষ্টা করেছি। বাংলাদেশে যেখানে নোটস, সাজেশন ভিত্তিক পড়ালেখা হয়, পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়াই বড় করে দেখা হয় সেখানে ভিন্ন কিছু করতে চেয়েছি। আমি বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার বড় সমালোচক। আমার মনে হয়, যেভাবে শিক্ষাব্যবস্থা চলছে তার থেকে কোন শিক্ষাব্যবস্থা না থাকলেই বোধ হয় ভালো হত। যদি সবাইকে ছাড় দাওয়া হতো যে যার যা ইচ্ছা পড়ো তাহলে মানুষ আরো যোগ্য হয়ে উঠত। এই শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের যোগ্যতাকে নষ্ট করছে। সে জন্য একটা ভেন্চার করেছিলাম যে সবাই যা পড়বে বুঝে পড়বে। এখনও চলছে।
আমাদের টেকনোলজি রিলেটেড ভেন্চারগুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম সফটওয়্যার নিয়ে কাজ শুরু করি ফাস্ট ইয়ার সেকেন্ড টার্ম থেকেই। সাথে আমার বন্ধু মাসুম হাবিব ছিল, ও এখন পিএইচডি করছে। আমরা আউটসোর্সিং করতাম । দেশের মধ্যে একাউন্টিং সফটওয়্যারের কাজ করি। চর্তুথ বর্ষে এসে নতুন একটা জিনিষ শিখলাম, তা হলো মাইক্রোকন্ট্রলার। ওটা তখন বুয়েটে পড়ানো হত না। আমরা নিজের ইচ্ছাতেই তা শিখি। তখন পত্রিকার বিজ্ঞাপন দেখে একটা কাজও পেয়ে গেলাম। তখন পাইল্যাবস নাম দিয়ে শুরু করি। ওখান থেকেই শুরু। তারপর একজনের কাজ করার পর তার সূত্রে আরেকজনের কাজ। তার থেকে আরেকজনের । এভাবেই কাজ করা হয় তখন।
ইন্ট্রেপ্রেনিয়রশীপের আরেকটা বড় পার্ট হচ্ছে সোসিয়্যাল ইন্ট্রেপ্রেনিয়রশীপ। আমি বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির একাডেমিক কাউন্সিলর। গণিত অলিম্পিয়াডের প্রায় শুরু থেকেই এর সঙ্গে আছি। জাফর ইকবাল স্যার, কায়কোবাদ স্যার, মুনির হাসান ভাই আমরা অলমোস্ট শুরু থেকেই ছিলাম। এখনও আছি । আমাদের গণিত অলিম্পিয়াডে কিন্তু সবাই ভলেন্টিয়ার। জাফর ইকবাল স্যার থেকে শুরু করে যে ছেলেটা রুমে রুমে গিয়ে নাস্তা দিয়ে আসত সেও ভলেন্টিয়ার। এটা ইন্ট্রেপ্রেনিয়রশীপের একটা বড় জায়গা যে ওখানে আমরা সংগঠিত করার চেষ্টা করেছি পুরো অনুষ্ঠানটাকে। এখন বাংলাদেশের বেশীর ভাগ মানুষ গণিত অলিম্পিয়াডকে জানে, চিনে।
এছাড়া KIDS বা Knowledge and Information Diversification Society নামে একটা প্রজেক্ট চালাতাম। ওটার বর্তমান নাম অন্যরকম পাঠশালা। থার্ড ইয়ারের দিকে স্যারকে বলে একটা রুম নিয়ে আমরা যে যেটা পারি ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ম্যাথ সেটা ভিডিও রেকর্ড করতাম। সেটা রেকর্ড করে সিডিতে রাইট করে ছড়িয়ে দিতাম। ওটা ওপেন সোর্স ছিল। আমরা বিক্রি করতাম না, কিন্তু একটা শর্ত ছিল যে একটা নেবে সে আরো দুটা অন্যকে দিবে। তখন দেশের নেট স্পিড ভাল ছিল না তাই ইউটিউবে আপলোড করা হয় নি। পরে দেখলাম সালমান একাডেমীও প্রায় একই ধরণের কাজ করছে। আমরা এটা তারও অনেক আগে করেছিলাম।

টেকটিউনস: আমাদের দেশে সফটওয়্যার স্টার্টআপ দেখা গেলেও হার্ডওয়্যার স্টার্টআপ প্রায় দেখাই যায় না; এর কারণ কি ?
মাহমুদুল হাসান সোহাগ: সফটওয়্যার স্টার্টআপ করা সহজ । অফিস দরকার নাই শুধু কম্পিউটার আর নিজ মেধা থাকলেই কাজ শুরু করা যায়। কিন্তু হার্ডওয়্যার স্টার্টআপের জন্য ল্যাবতো দিতেই হবে। অনেক যন্ত্রপাতি কিনতেই হবে । প্রতিটি প্রডাক্ট বানাতে কম্পনেন্ট কিনতে হবে। সফটওয়্যারর ক্ষেত্রে সুবিধা হচ্ছে একটা প্রডাক্ট বানিয়ে ফেললে ১ কোটি কপি বিক্রি করতেও বাড়তি কিছু লাগবে না। শুধু কপি করলেই চলবে। কিন্তু হার্ডওয়্যার প্রডাক্টের জন্য পরবর্তি প্রতিটি প্রডাক্টের জন্য আবার র'ম্যাটেরিয়ালস কিনতে লাগবে।
বাইরের দেশে হলেও আমাদের দেশে এর জন্য হয় না যে বাইরে অনেক ভেন্চার ক্যাপিটাল আছে। আমাদের দেশে কিছু থাকলেও তাতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা অনেক। যাদের দরকার সাধারণত তারা পায় না। ব্যাংকগুলোও ইন্টেলেকটুয়াল প্রপারটিকে ভ্যালু দেয় না, তারা বলে ফিজিক্যাল কি আছে।
এছাড়া হার্ডওয়্যার বিক্রি করাও কঠিন। সফটওয়্যার যেমন ইন্টারনেটে বাইরে পাঠানো যায়, হার্ডওয়্যারের ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের মার্কেটে কোন ইলেক্ট্রিকাল প্রডাক্ট তৈরী করে বিক্রি করার যে মার্কেটিং খরচ তা যোগান দেয়া অনেক কষ্টকর।
এছাড়া আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থার সমস্যা যে এটা আমাদের ধৈর্যহীন করে দেয়। আমরা কোন কিছু একটা করেই দ্রুত টাকা আয় করতে চাই। কোন কিছুর পিছে লেগে থাকা আমাদের দ্বারা হয় না।

টেকটিউনস: বর্তমানে অন্যরকম গ্রুপে আপনাদের প্রডাক্টগুলো কি কি ?
মাহমুদুল হাসান সোহাগ: অন্যরকম গ্রুপের প্রথম ভেন্চার হচ্ছে পাইল্যাবস বাংলাদেশ লিমিটেড। এটা এমবেডেড সিস্টেম নিয়ে কাজ করে। এখানে দুটা গ্রুপ কাজ করে, একটা মাইক্রোকন্ট্রোলার নিয়ে আরেকটা এফপিজিএ নিয়ে । এফপিজিএ মাইক্রোকন্ট্রোলার থেকেও আপডেটেড একটা টুল। আর প্রডাক্টের মধ্যে আছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন, যেটা আমরা স্টুডেন্ট অবস্থায় তৈরী করি। পাইল্যাবস ফর্ম করার পর বুয়েটের সাথে একটা চুক্তি হয়। সেই অনুযায়ী আমরা যৌথভাবে এটা করছি। এর বাইরে সোলার চার্জ কন্ট্রলার, সোলার ইনভার্টার, ভেহিকাল ট্রেকিং সিস্টেম, ইনডাস্ট্রি অটোমেশনের কাজ অনেক হয়েছে। এছাড়াও আরো অনেক প্রডাক্ট আছে।
অন্যরকম সফটওয়্যার থেকে বাংলাদেশ সংসদের কাজ, প্রথম আলো, অফিসার্স ক্লাবের কাজ করা হয়েছে। দেশের বাইরেও সফটওয়্যার রপ্তানির কাজ করি। শেয়ার মার্কেটে আমাদের কিছু ইউনিক প্রডাক্ট আছে। এছাড়া ইনভেন্ট্রি, এইচার, অনলাইনবেসড স্কুল ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যারের কাজ করেছি। শ্রীমঙ্গল, নারায়ণগন্জ সিটি কর্পোরেশনে আমাদের সফটওয়্যার ইউজ হচ্ছে।
তারপর আমাদের আরেকটা কম্পানি হচ্ছে অন্যরকম ওয়েব সার্ভিসেস। এর প্রথম প্রডাক্ট ছিল ক্রিকপল, বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সময় প্রথম আলোর আয়োজন ছিল। কিউবি ও টেলিটক স্পন্সর করেছিল। সাইটটা মাত্র ৪০দিন চলেছিল। এরই মাঝে প্রায় ৮০ হাজার ইউনিক ভিজিটর ছিল এবং ৩০ হাজার ইউজার ছিল। শুধু বাংলাদেশে ৪০দিন চলা সাইটের জন্য মনে হয় সেটা একটা রেকর্ড। বর্তমানে রকমারি ডট কম মার্কেটে এসেছে। এটা অনলাইনে বই কেনার জন্য। মাত্র ত্রিশ টাকা ডেলিভারি চার্জে দেশের যেকোন স্থানে যেকোন পরিমান বই পৌছে দেয়া হয়। মানুষ বই হাতে নিয়ে তারপর পে করে। বর্তমানে দেশের প্রায় সব প্রকাশকের সাথে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে।
এরপর শীঘ্রই আসবে ক্যারিয়ার ক্লাব ডট কম ডট বিডি। এই সাইটটার আকার লিংকইডইনের প্রায় সমান বা কিছুক্ষেত্রে তার বেশী হবে । এটা খুব বড় একটা কাজ হবে। আমাদের অন্যরকম প্রকাশনী নামে প্রকাশনী সংস্থা একটা আছে। ধানমন্ডির ওয়েস্টার ইন্টারন্যাশনাল স্কুলকে কিছু দিন আগে আমরা টেকওভার করেছি। ওখানে আমরা অন্যধরণের কিছু করব বাচ্চাদের ক্রিয়েটিভ করে তোলার জন্য।
এর বাইরে ইনট্রেক্ট নামে একটা কোম্পানি আছে যেটা অন্যরকম গ্রুপের প্রতিষ্ঠান নয়। কিন্তু আমি নিজে জড়িত। আমরা স্পেশাল ইফেক্ট ও এনিমেশনের কাজগুলো করে থাকি। গ্রামীনফোন, এয়ারটেল, ওলোও এর কাজ করেছি। একটা ট্রাভেল শো করছি, Badventure (ব্যাডভেন্চার)। ইমিতিয়াজ রবি ও রস+আলোর বি.স. সিমু নাসের হোস্ট করেছেন। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কাজ হয়েছে।
এছাড়াও আরো কিছু কোম্পানি ও সোসিয়্যাল ভেন্চার আছে।


টেকটিউনস: ইভিএম তৈরীর সাথে কিভাবে জড়ালেন ?
মাহমুদুল হাসান সোহাগ: আমি, মাসুম আর মিকাইল, তিন বন্ধু ইলেক্ট্রিকালে ছিলাম। আমাদেরতো একাডেমিক অনেক প্রজেক্ট বা থিসিস থাকে। কিন্তু আমাদের ইচ্ছা ছিল বাড়তি কিছু করব। বুয়েটের লুৎফুর কবির স্যারের সাথে দেখা করলাম। এক সময় আইডিয়া আসল ভোটিং মেশিন বানাবো। তখন ভারতে ইভিএম শুরু হয়েছিল। আমাদের লক্ষ্য ছিল যদি বাংলাদেশে কখনও ইভিএমে নির্বাচন হয় তবে আমাদেরটা দিয়েই হবে। বুয়েটের আইআইসিটি আমাদের ল্যাব ফ্যাসিলিটি দেয়, ব্যাকআপটা দেয়।
২০০৭-এ এসে সংবাদ সম্মেলন করে এটা সামনে আনা হয়। তারপর অফিসার্স ক্লাব অফ ঢাকা এতে আগ্রহ দেখায়। তাদের ২০০৭ এর নিবার্চন আমাদের ইভিএম দিয়েই হয়। ২০০৯ সালে পাইল্যাবসের সাথে বুয়েটের চুক্তি হয়। একসাথে এটা নিয়ে কাজ করার জন্য। তারপর নির্বাচন কমিশন এটাতে আগ্রহ দেখায়। আমরা তখন তাদের পরামর্শ মত এটা প্রেজেন্ট করলাম। প্রথম পাইলট প্রজেক্ট হয় চট্টগ্রামের জামালখান ওয়ার্ডে। ওটা আমাদের প্রত্যাশার চেয়েও অনেক ভালো হয়েছিল। এরপর নারায়নগন্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হলো, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হলো।
তবে এখন পর্যন্ত আমারা ১০০% সন্তুষ্ট কারণ আমাদের যে লক্ষ্য ছিল হলে আমাদের মেশিনে হবে বিদেশী মেশিনে নয়। সেই জায়গায় আমরা পৌছাতে পেরেছি।


টেকটিউনস: ইভিএমের বিস্তারিত আমাদের পাঠকদের একটু জানান।
মাহমুদুল হাসান সোহাগ: ই-ভোটিং আর ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন কিন্তু আলাদা। উন্নত দেশগুলোতে যেটা চালু করার চেষ্টা করা হয়েছিল সেটা ই-ভোটিং, যা নিয়ে যথেষ্ঠ সমালোচনা আছে। এটার কনসেপ্ট হচ্ছে মানুষজন ফোন, SMS বা ইন্টারনেট দিয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে ভোট দিবে সেটা এক জায়গায় এসে জমা হবে। এটার বড় সমালোচনা যেটা, যখনই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কিছু হয় তখনই হ্যাকিংয়ের সম্ভাবনা থাকে সেটা যত ভালো নিরাপত্তা বিশিষ্টই হোক।
আমাদের আইডিয়াটা ছিল আমরা ওটাতে যাব না। আমাদেরটা হবে স্ট্যান্ড-এলোন (standalone) ডিভাইস। মেশিনটা হবে এককভাবেই। ওটা পৃথিবীর কিছুর সাথেই যুক্ত থাকবে না, যুক্ত করার কোন সুযোগও থাকবে না। সেইভাবেই আমরা তৈরী করি। পরে জানলাম ইন্ডিয়ানরাও একই আইডিয়া এগুচ্ছে। তারা প্রায় ১৯৮৫ থেকে অল্প কিছু স্থানে ইভিএম ব্যবহার শুরু করে এবং ধীরে ধীরে পুরো ভারতে তা ছড়িয়ে দেয়।
আমদেরটা খুব সিম্পল, কোন জটিলা নেই এবং বিশ্বাসযোগ্যতার দিক থেকে অনেক ভালো । পরে পত্রিকায় দেখেছি অনেকেই অভিযোগ করেছে ডাটা যখন সার্ভারে আসবে তখন হ্যাক হবে। আসলে আমাদের কোন সার্ভারই নেই, হ্যাক হবারতো প্রশ্নই নেই । কেউ যে ডাটা চেন্জ করবে তার জন্যতো ডিভাইসটা এক্সেস করতে হবে । কিন্তু আমাদের এই মেশিনে এক্সেস করার কোন উপায়ই নাই । কম্পিউটার বা কিছুর সাথে যুক্ত করার অপশনই নাই । ভোট ওটাতেই দেয়া হয় এবং তখনই বাটন চেপে চেপে রেজাল্ট শো করবে । সেই রেজাল্ট হাতে লেখে ম্যানুয়ালী কাউন্ট করা হয় । কাজেই এটা নিয়ে বিতর্ক করার কছু নেই ।

টেকটিউনস: ইভিএমে আর কি কি উন্নয়নের সুযোগ আছে বা ভবিষ্যতে আর কি কি প্রযুক্তি আসতে পারে ?
মাহমুদুল হাসান সোহাগ: আমাদের শুরুর ইভিএমটা ছিল ফিঙ্গারপ্রিন্টসহ। এখন আবার অনেকেই বলছে ফিঙ্গারপ্রিন্ট থাকলে ভাল হয়। কিন্তু আমরা জানি ফিঙ্গারপ্রিন্টে প্রবলেম আছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ভোটের গোপনীয়তা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কোনভাবে যদি ট্রেক করা যায় কে কাকে ভোট দিল তাহলে সেই ব্যবস্থা গ্রহনযোগ্য হবে না। যদি মেশিন দিয়ে আমাকে সনাক্ত করা হয় আমি জাল ভোটার কিনা তাহলে কিন্তু প্রোগ্রামারের পক্ষে বের করে ফেলা সম্ভব যে কে কাকে ভোট দিল। যদি এটা কোনভাবেও ওভারকাম করা যায় তাহলেও আরো সমস্যা আছে। যেসব অফিসে আমরা ফিঙ্গারপ্রিন্ট মেশিন দিয়েছি সেখানে দেখা যায় কিছুক্ষণ পর একই লোকের ফিঙ্গারপ্রিন্ট আর ম্যাচ হয় না। অনেক সময় হাতের চামড়া উঠে বা ইনজুরড হয়। আমাদের দেশে শ্রমজীবি মানুষের সংখ্যা বেশী। ফলে দেখা যাবে ভোটের দিন অনেকেই ভোট দিতে পারবে না। তাই ফিঙ্গারপ্রিন্ট যোগ করা ঠিক হবে না।
তবে একটা প্রিন্টারযোগ করলে এটা প্রশ্নের উর্ব্ধে চলে যাবে। যেভোট দিবে সে প্রিন্টও দেখে নিতে পারবে কাকে ভোট দিল, যাওয়ার সময় সেটা একটা বাক্সে ফেলে যাবে। আবার ম্যানুয়ালী দরকার হলে দুটো থেকে ক্রসচেকও করা যাবে। এটাতে কিছু সমস্যা আছে। পুরো ইভিএমের জন্য যেটুকু পাওয়ার লাগবে, প্রিন্টারের জন্য তার চেয়েও বেশী পাওয়ার লাগবে। বাংলাদেশে অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ নেই, তাই বিদ্যুৎ দিয়ে করা সম্ভব না। আবার ব্যাটারী দিয়ে করলেও অনেক বড় ব্যাটারী লাগবে যার ম্যানেজমেন্ট কষ্টকর। তাছাড়া ব্যাটারী খরচ, প্রিন্টারের খরচ মিলে মোট খরচ অনেক বেড়ে যাবে। পৃথিবীতে এমন কোন প্রিন্টার নাই যেটা জ্যাম হয় না। কেউ ভোট দিতে যেয়ে ভোট প্রিন্ট নেবার সময় যদি আটকে যায় তাহলে আবার সেই ব্যাক্তির ভোটের গোপনীয়তা নষ্ট হবে। এটা নিয়ে কাজ চলছে, এই সমস্যাগুলো মোকাবেলা করার। নির্বাচন কমিশন যদি অনুমতি দেয় তাহলে এটা যোগ হতেও পারে ভবিষ্যতে।


টেকটিউনস: আপনার এই পর্যন্ত আসার পিছনে কোন জিনিষের অবদান বেশী বলে মনে করেন ?
মাহমুদুল হাসান সোহাগ: সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মোটিভেশন আর পজিটিভ মেন্টালিটি। মোটিভেশনের পিছনে থাকে তীব্র ফিলিংস। এর বাইরে অনেক জায়গায় অনেক মানুষের হেল্প পেয়েছি। সেগুলো না হলে হয়ত এতদূর আসা হতো না। এছাড়া পরিশ্রম একটা বড় বিষয়। মেধা যতই থাকুক পরিশ্রম না করলে সফলতা পাওয়া যাবে না। ফাইনেন্সিয়াল দিকটা এমন ছিল যে একটা কাজের টাকা দিয়ে আরেকটা কাজ করেছি। তাই হয়ে গেছে। সবসময় সবকিছু পজিটিভলি নিয়েছি। দুটা জিনিষ বলতে আমি খুব লজ্জা পাই। এক. আমি হেরে গেছি এটা বলতে। আমি হেরে গেছি এটা কখনও স্বীকার করি। হয়ত সফল হয়নি কিন্তু শেখাতো অনেক কিছু গেছে। দ্বিতীয়ত আমি ক্লান্ত এটা বলতে আমি খুব লজ্জা পাই। যেমন গত মাসেই (জানুয়ারী) এমন তিনদিন গেছে যে আমরা সারারাত জেগে কাজ করেছি। এই মাসেও (ফেব্রুয়ারী) এমন আরো রাত জেগে কাজ করতে হবে।


টেকটিউনস: ভবিষ্যতে আর কি কি করার ইচ্ছা আছে ?
মাহমুদুল হাসান সোহাগ: শিক্ষা নিয়ে কাজ করার আমাদের বিশাল পরিকল্পনা আছে। আমরা চাই আমাদের ছেলেদের গবেষণা ও দেশে কাজ করার জন্য প্লাটফরম করে দিতে। সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি। বিদেশে যারা আছে তারা যাতে দেশে ফিরে আসতে মোটিভেটেড হয় সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। ঢাকা ভার্সিটির যে অ্যরকম বায়োইনফরমেটিকস ল্যাবটা আছে তা আমাদের অন্যরকম গ্রুপ থেকে ডোনেট করা।


টেকটিউনস: আপনিতো গানের সাথেও জড়িত আছেন।
মাহমুদুল হাসান সোহাগ: গান গাইতাম কিছুটা ছোটবেলায়। জাতীয় পর্যায়েও অনেক সার্টিফিকেট আছে আমার। ক্লাস সেভেনে গলায় একটু সমস্যা সমস্যা হবার পর আর সেভাবে গাওয়াও হয়নি। এছাড়াও বেশ এক্সট্রা কারিকুলাম করেছি। তেলাওয়াত, বির্তক, বক্তৃতা ইত্যাদি করেছি।

টেকটিউনস: আপনাদের একটা কোচিং সেন্টারও আছে উদ্ভাস নামে...
মাহমুদুল হাসান সোহাগ: উদ্ভাস আমার অনেক ফিলিংসের একটা জায়গা। আমি ওটাকে কোচিং সেন্টার বলব না। এটার পিছনে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সেকরিফাইস ও ডেডিকেশন গেছে। এটা জেদ ছিল শিক্ষাব্যবস্থায় উন্নয়ন আনতে। কোচিং বলতে আমরা বুঝি সামনে একটা ইমিডিয়েট লক্ষ্য থাকবে তা পূরণে সে যে কোন পন্থা অবলম্বন করবে। আর টিচিং হচ্ছে এবিলিটি গ্রো করা।
শুরু থেকেই আমরা চেয়েছি অন্যকিছু করতে আমরা নোট দেইনি, সাজেশন দেইনি। তাই শুরুতে আমাদের ছাত্রসংখ্যা কম ছিল। আমাদের কাছে কনসেপ্টই হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ। কনসেপ্ট যার ভালো আলটিমেটলি সে পরীক্ষাতেও ভালো করবে, যোগ্য মানুষ হবে । পাঁচ ছয় বছর এর জন্য আমাদের অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। এক সময় আমাদের চার পাঁচজন ছাত্র ছিল। পরে যখন আমরা বুঝাতে পেরেছি যে আমরা বুঝিয়ে পরাতে চাই, মূল্যবোধ সৃষ্টি করতে চাই তখন সবাই আসতে আসতে এসেছে । এখন প্রায় আমাদের দশ হাজার ছাত্র-ছাত্রী।

টেকটিউনস: আমরা প্রায় শেষে দিকে এসে পড়েছি । টেকটিউনস কি ভিজিট করেন ?
মাহমুদুল হাসান সোহাগ: আমি টেকটিউনসের অনেক বড় ফ্যান। শুরুতে আমি টেকটিউনস নিয়মিত ভিজিট করতাম। আমিও বোধ হয় টেকটিউনসে দুই এক বার লিখেছিলাম (টেকটিউনস টিউনার পাতার লিংক) । তখন অনেকেই অনেক ভালো লিখত। এখন ব্যস্ততার জন্য মাঝে মাঝে ভিজিট করি। মাঝে প্রচুর ইউজারের জন্য সাইট স্লো হয়ে যায় সম্ভবত তখন একটা গ্যাপ পড়ে যায়।


টেকটিউনস: আপনার উদ্দ্যোগগুলোর জন্য আমাদের শুভ কামনা। টেকটিউনসকে সময় দেয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
মাহমুদুল হাসান সোহাগ: আপনাকে এবং টেকটিউনস পাঠকদেরও ধন্যবাদ।

https://www.techtunes.com.bd/featured/tune-id/117714
Muhammad Mushfiqur Rahman
Lecturer, Dept. of SWE,
FSIT, DIU.

Offline tokiyeasir

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 905
  • Test
    • View Profile
Thanks for sharing