আজ ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস। দিবসটি উপলক্ষে শিক্ষকদেরও বিভিন্ন দাবি-দাওয়া ও কর্মসূচি তুলিয়া ধরিতে গত সোমবার শিক্ষক নেতৃবৃন্দ জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। তাহারা বলেন বিশ্বমানের শিক্ষা নিশ্চিত করিতে হইলে বিশ্বমানের শিক্ষক তৈরিরও উদ্যোগ গ্রহণ করিতে হইবে। তাহারা শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতন স্কেল ও মহান এই পেশার মর্যাদা রক্ষায় সরকার ও সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। কিন্তু শিক্ষকদের ভাবমূর্তি রক্ষার কথা সেভাবে বলা হইতেছে না। এই দিবসে আমরা মনে করি, ইহা একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। মানুষ গড়ার কারিগরদের নৈতিকতা নিয়া কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রশ্ন দেখা দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত্ নিয়াও অনেকে বিচলিত বোধ করেন। শিক্ষকদের দ্বারা ছাত্রীর লাঞ্ছনা বা বেত্রাঘাতে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের আহত ও এমনকি নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটিতেছে। ছাত্রী লাঞ্ছনার ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতেও ঘটিতেছে। এই অভিযোগে, গতকালের খবর অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককেও সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হইয়াছে। এই ধরনের ঘটনা বন্ধ করিতে না পারিলে শিক্ষকতার পেশা মান-মর্যাদার দিক দিয়া আরও ঝুঁকির মধ্যে পড়িবে নিঃসন্দেহে।
শিক্ষকদের আর্থ সামাজিক নিরাপত্তার কথা চিন্তা করিয়া শিক্ষক দিবস পালনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এই উপলক্ষে ১৯৬৬ সালের ৫ অক্টোবর প্যারিসে অনুষ্ঠিত একটি আন্তরাষ্ট্রীয় সম্মেলনে শিক্ষকদের সামাজিক, অর্থনৈতিক অধিকার ও মর্যদাবিষয়ক একটি সনদ গৃহীত হয়। ইহার ধারাবাহিকতায় জাতিসংঘের ঘোষণা অনুযায়ী ১৯৯৪ সালের ৫ অক্টোবরকে বিশ্ব শিক্ষক দিবস হিসাবে ঘোষণা করা হয়। এবারের শিক্ষক দিবসের প্রতিপাদ্য হইতেছে টিচারস ফর জেন্ডার ইকুয়্যালিটি বা লিঙ্গ সমতায় শিক্ষকের ভূমিকা। শিক্ষকগণ যাহাতে নারী শিক্ষার্থীর প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন বা অসদাচরণ না করেন সে জন্যই এরূপ প্রতিপাদ্য বাছিয়া নেওয়া হইয়াছে। কয়েক দশক আগেও এরূপ পারিস্থিতি ছিল একেবারেই কল্পানতীত। যাহা হউক, আমাদের সর্বক্ষেত্রে যে মূল্যবোধের অভাব দেখা দিয়াছে, শিক্ষক বা শিক্ষার্থী সমাজও ইহার বাহিরে থাকিতে পারিতেছে না।
শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার। তাই ইহা নিশ্চিত করিতে সকলকে দায়িত্ববান হইতে হইবে। ইউনেস্কোর জরিপ হইতে জানা যায়, ইউরোপের দেশগুলিতে ৩০ হইতে ৩৩ শতাংশ ভাল শিক্ষকের সংকট রহিয়াছে। সেখানে ১৪ শতাংশ শিক্ষক নিয়মিত একাডেমিক কাজে অনুপস্থিত থাকেন। দক্ষিণ এশিয়ায়ও এই চিত্র ভয়াবহ। এসব দেশে প্রায় ২৫ শতাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক অনুপস্থিত থাকেন। এভাবে দেখা যাইতেছে সংকট ও সমস্যা বিশ্বের সর্বত্রই কমবেশি আছে। তবে তাহা যথাসাধ্য দূর করার চেষ্টা করিতে হইবে। আমাদের দেশে শিক্ষকদের আর্থ-সামাজিক মান বৃদ্ধি করা দরকার। ভারত ও পাকিস্তানে শিক্ষকদের যে বেতন-ভাতা দেওয়া হয়, বাংলাদেশের শিক্ষকগণ তাহার তিন ভাগের এক ভাগও পান না বলিয়া অভিযোগ রহিয়াছে। ফলে তাহাদের সংসার চালানো ও জীবন ধারণের জন্য প্রাইভেট টিউশনি, কোচিং সেন্টারসহ বিভিন্ন উপায়ে উপার্জনের চিন্তা করিতে হয়। ইহাও শিক্ষকদের ভাবমূর্তিকে কোন না কোনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করিতেছে। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষা খাতে মোট বাজেটের সাড়ে ছয় শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া প্রয়োজন। মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের এই পেশায় আকৃষ্ট করিতে হইলে শিক্ষকদের বেতনভাতা সম্মানজনক পর্যায়ে উন্নীত করার চেষ্টা করিতে হইবে।
[Source: The Daily Ittefaq, 05/10/2011]