Career Development Centre (CDC) > Parents Guidance

জীবনের সবচেয়ে বড় শক্তি মায়ের দোয়া - প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক

(1/2) > >>

shaiful:
তরুণদের সঙ্গে প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের একটা সখ্য ছিল। কথার জাদুতে মানুষকে মুগ্ধ করতে জানতেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের সামনে বক্তৃতা দিয়েছেন, অনুপ্রাণিত করেছেন। গত ৩০ নভেম্বর তাঁর মৃত্যুর পর থেকে ফেসবুকে, ইউটিউবে আলোড়ন তুলছে তাঁর এই বক্তব্যগুলো। তেমনই একটি বক্তৃতা আজ থাকল স্বপ্ন নিয়ের পাঠকদের জন্য। গত বছরের ৩০ জানুয়ারি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ১৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই বক্তব্য দিয়েছিলেন তিনি

শুভ সকাল। ট্রাস্টি বোর্ডের সম্মানিত চেয়ারম্যান জনাব সবুর খান, সম্মানিত ভিসি মহোদয় জনাব ইউসুফ মাহবুবুল ইসলাম, সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ, আমার সামনে হাজারো ছাত্রছাত্রী, সুধীমণ্ডলী। মানুষের জীবনে এমন কতগুলো সময় আসে, যখন কথা গুলিয়ে যায়। যখন সমস্ত ভাবনা আগে-পরে এক হয়ে যায়। আমার মনে হয় আজকে আমার জীবনে তেমনি একটি সকাল। যে সকাল বর্তমানের সঙ্গে অনেক বছর আগেকার দিনগুলোকে এক করে ফেলে।

আজ আমরা যে বয়সে যেখানে এসে দাঁড়িয়েছি, সেই জায়গা থেকে আমরা অনেক নিচে দেখতে পাই। যে জায়গাটি ওখান থেকে তোমরা দেখতে পাও না। সেই নিচে দেখার অভিজ্ঞতা একেকজনের একেক রকম। সে জন্যই বিভিন্ন শিক্ষক, বিভিন্ন মানুষ, বিভিন্ন গুণীজন, বিভিন্ন অভিজ্ঞজন তোমাদের সামনে আসেন, তোমাদের সঙ্গে তাঁদের জীবনের কথা বলেন, তোমাদের সঙ্গে তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা বলেন। সেই অভিজ্ঞতাগুলো, সেই জীবনের কথাগুলো তোমরা মনোযোগ দিয়ে শুনবে।

যেই পরিবার বা সমাজের যে স্তর থেকে আমরা আসি, সেই স্তরে সবাই যে খুব আত্মবিশ্বাসী হয় তা নয়। আমাদের মধ্যে একধরনের হীনম্মন্যতা সৃষ্টি হয়, আমাদের মধ্যে একধরনের দুর্বলতা সৃষ্টি হয়, আমাদের মধ্যে একধরনের কম আত্মবিশ্বাসের সৃষ্টি হয়। এই প্রতিষ্ঠানগুলো সেই আত্মবিশ্বাস তৈরি করে দেয়। সেই আত্মবিশ্বাসের জায়গাগুলো কিন্তু তোমাদের ধরতে হবে।

আমি জানি, এটাই ভাবা স্বাভাবিক। অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা ভাবছে, আমার বন্ধু তো অনেক বড়লোক। আমার জীবন তো অনেক কষ্টের। ওকে দেখি ভালো ইংরেজি জানে, আমি তো ইংরেজি জানি না। ওকে দেখি ও অনেক স্মার্ট, আমি তো স্মার্ট না। ওকে দেখি আরও ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ে! কেউ নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে পড়ে, কেউ প্রিন্সটনে পড়ে, কেউ বোস্টন ইউনিভার্সিটিতে পড়ে...তাদের সঙ্গে তোমাদের প্রতিযোগিতা। অতএব, জীবনটা সহজ নয়। জীবন একটা যুদ্ধক্ষেত্র। এই জীবনযুদ্ধে কী করে বাঁচবে? এই জীবনযুদ্ধে কী করে এগোবে?

আমি একটি কথাই বলছি। সবুর সাহেব বা টিচার যাঁরা আছেন, তাঁরা যদি আজকে এইখানে এত বড় স্বপ্নদ্রষ্টা হতে পারেন, আনিসুল হকের মতো একটি মধ্যবিত্ত ঘর থেকে উঠে আসা; যে একসময় মাইলের পর মাইল হেঁটে স্কুলে গেছে, মফস্বলের স্কুলে পড়াশোনা করেছে, মফস্বলের ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেছে, তোমাদের মতো ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সুযোগ হয়নি, তোমাদের মতো এত ক্যাম্পাসে পড়ার সুযোগ হয়নি, সে-ই যদি ছোট্ট একটি মেয়র হতে পারে, তোমরা প্রত্যেকে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ছাত্র, সর্বশ্রেষ্ঠ নাগরিক হতে পারো। মনের মধ্যে আত্মবিশ্বাস রেখো।

আমি কিন্তু কোনো মিথ্যা কথা বলছি না!

জীবনে বড় বড় সংগ্রাম করে আমরা এসেছি। জীবনকে আমরা তখন দেখতে পেতাম না। তখন ইন্টারনেট ছিল না। আমাদের কাছে সারা পৃথিবী উন্মুক্ত ছিল না। আমরা জীবনকে দেখতে পেতাম না। তোমরা কিন্তু এখন জীবনকে দেখতে পাও। আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলো—আমিই পারব। মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। মানুষের জন্যই বলা হয়, মানুষ স্বপ্নের সমান বড়। মানুষ কখনো কখনো স্বপ্নের চাইতেও বড়। সেই স্বপ্ন যদি তোমাকে ধরতে হয়, সেই স্বপ্ন দেখতে হবে।

আজ থেকে তিরিশ-চল্লিশ বছর আগে আমরা বা আমাদের মতো সবুর খান সাহেবরা, আমরা যারা একটু ভালো লেখাপড়া করেছিলাম, তখনো কিন্তু আমরা বেকার ছিলাম। আমিই দেড় বছর বেকার ছিলাম। আমিই খুঁজে খুঁজে বেড়িয়েছি যে কী করব। একবার ব্যবসা করি, একবার কাজ করি, এক বছরের জন্য চাকরি করি। সেই অনিশ্চয়তা তখন যদি থাকে, এখনো আছে। এবং এখন তোমাদের প্রতিযোগিতা কিন্তু ঢাকার অন্য কোনো ইউনিভার্সিটির সঙ্গে নয়। তোমাদের প্রতিযোগিতা তোমাদেরই অনেক ভাই-বোন, তোমাদেরই অনেক বন্ধুর সঙ্গে, যারা বিদেশের আরও ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। কেউ প্রিন্সটনে পড়ছে, কেউ এমআইটিতে পড়ছে, কেউ ক্যালটেকে পড়ছে, কেউ করনেল ইউনিভার্সিটিতে পড়ছে। তাই বলে কি হারিয়ে যাব আমরা? আমরা কি প্রতিযোগিতা করে, সবুর সাহেব কি প্রতিযোগিতা করে আজকে এত বড় দুনিয়া তৈরি করেননি? আমাদের মতো সামান্য যারা মধ্যবিত্ত ঘর থেকে নিজেদের উঠিয়ে এনেছি, তারা কি সমাজে একধরনের নিজেদের পদাঙ্ক সৃষ্টি করিনি? আমরা যদি করতে পারি, তোমাদের মধ্যে যেই সুপ্ত সুযোগ আছে, তোমরা পৃথিবী জয় করতে পারো। সারা পৃথিবী জয় করতে পারো।

আমাকে যদি আজকে জিজ্ঞেস করা হয় তোমার জীবনের সবচেয়ে বড় শক্তি কী ছিল? আমি জানি না অন্য কে কী বলবে। আমি নিশ্চিত করে তোমাদের বলতে পারি, আমি যেকোনো জায়গায় বলব, যেকোনো পরিস্থিতিতে বলব, আমার জীবনের সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল আমার মায়ের দোয়া। তোমাদের কাছে আজ এটা আবেগপ্রবণ কথা মনে হতে পারে। কিন্তু জীবনে যখন আমার জায়গায় আসবে অথবা আমাদের জায়গায় আসবে, তখন দেখবে ওটা কী শক্তি!

আমার কোনো কিছু হলেই আমি মায়ের পায়ের নিচে শুয়ে বলতাম, আমার গায়ের ওপর একটা পা রাখো তো। আর আমাকে একটা ফুঁ দাও। তো আমার জীবন এখনো ফুঁর মধ্যেই চলছে। আমি যখন মেট্রিক পরীক্ষা দিই, আগের রাতে আমার অনেক জ্বর। অনেক অনেক জ্বর, ১০৪ ডিগ্রি হবে। তো আমি সকালবেলা উঠে বললাম, ‘মা, আমি তো পরীক্ষা দিতে পারব না।’ আমার মা আর দশটা মায়ের মতো খুব শিক্ষিত নন। তো আমার মা বললেন, ‘এটা কি হয় নাকিরে বাবা? তুমি যদি এবার পরীক্ষা না দাও, তুমি তো এক বছর ফেল করে যাবে।’ আমি বললাম, ‘আমার তো কোনো উপায় নেই, আমি তো চোখে কিছু দেখছি না।’ তিনি অনেক দোয়াটোয়া পড়ে আমাকে একটা ফুঁ দিলেন। দিয়ে হাত ধরে বললেন, ‘চলো যাই।’ ৩ ঘণ্টার পরীক্ষা, আমি ২ ঘণ্টা দিয়ে বেরিয়ে গেলাম। বাইরে বিপর্যস্ত মা বসে আছেন, ছেলে না জানি কী করছে ভেতরে! বাইরে বেরোলাম, মা বললেন, ‘কী, পরীক্ষা শেষ হয়েছে? সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছ?’ আমি বললাম, ‘না, মাত্র ৩৪ নম্বরের উত্তর দিয়েছি।’

মা বললেন, ‘পাস কততে?’ আমি বললাম, ‘পাস তো তেত্রিশে।’

বললাম, ‘মা, তোমার ফুঁতে আর কোনো কাজ হবে না।’

বললেন, ‘আচ্ছা কাজ না হোক, আসো একটা ফুঁ দিই। এবার ফুঁটা একটু নামাজ পড়ে দিই।’ ওখানে দুই রাকাত নামাজ পড়লেন। একটা ফুঁ দিলেন সারা গায়ে।

বিশ্বাস করো, এটা হয়তো...হয়তো একধরনের কাকতালীয় ব্যাপার হতেই পারে, কিন্তু আমি আজও বিশ্বাস করি, চৌত্রিশে চৌত্রিশই পেয়েছিলাম।

আমার বাবা, যাঁর বয়স ৯৫ বছর। গত এক মাস ধরে যিনি খাট থেকে উঠতে পারেন না, তাঁকেও আমি স্বপ্ন দেখতে দেখি। আজ সকালে আমার বাবা বলেন, একটু দেশের বাড়িতে যাওয়া যায় না? আমি বলি, আমার বাবাকে তো হেলিকপ্টারেও নেওয়ার কোনো উপায় নেই। তার মানে কী? মানুষ মৃত্যুর আগের মুহূর্তেও স্বপ্ন দেখে। আর তোমরা কত ভাগ্যবান, তোমাদের স্বপ্নের সময় মাত্র শুরু হলো।

আমার বাবা বলতেন, মুরব্বিরা বলেন, তোমাদের টিচাররা বলেন, বড় করে স্বপ্ন দেখো। জীবনের চল্লিশ বছর বয়সে কী হতে চাও, পঁয়তাল্লিশ বছর বয়সে কী হতে চাও, পঞ্চাশ বছর বয়সে কী হতে চাও, সেই স্বপ্ন দেখো। যদি হাওয়া খেতে হয় তাহলে নদীর তীরে যেতে হয়, যদি সুন্দর সাগর দেখতে হয় কক্সবাজারে যেতে হয়, যদি সুন্দর পর্বত দেখতে হয় হিমালয়ে যেতে হয়, যদি ভালো মানুষ হতে হয় ভালো মানুষের সঙ্গে মিশতে হয়, ভালো মানুষের কথা পড়তে হয়। ভালো মানুষের বই পড়ো, ভালো মানুষের জীবনী পড়ো।

http://www.prothom-alo.com/we-are/article//1383592/জীবনের-সবচেয়ে-বড়-শক্তি-মায়ের-দোয়া

SSH Shamma:
 :)

Anuz:
Parents are our heaven on Earth.

chhanda:
Heart Catching writing

sanjida.dhaka:
good post

Navigation

[0] Message Index

[#] Next page

Go to full version