টানা দরপতনের পর সাপ্তাহের শুরুতে পুঁজিবাজারের কিছুটা পরির্বতন এসেছে। সাধারণ মূল্য সূচকের পাশাপাশি বৃদ্ধি পেয়েছে লেনদেনের পরিমাণও। সমন্বিত উদ্যোগই এ পরিবর্তনের সাফল্য বলে মনে করা হচ্ছে।
সাধারণ বিনিয়োগকারী ও বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি), দুই স্টক এক্সচেঞ্জ ও মার্চেন্ট ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশন, লিস্টেড কোম্পানি অব বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সমন্বিত উদ্যোগের কারণে বাজারে পরির্বতন ঘটতে শুরু করেছে। যার ফসল হিসাবে রোববার পুঁজিবাজারে লেনদেনের পাশাপাশি বৃদ্ধি পেয়েছে সাধারণ মূল্য সূচকও।
তবে তাদের মতে, এ অবস্থা ধরে রাখার জন্য এখনই এসব প্রতিষ্ঠানকে দীর্ঘমেয়াদে বাজার স্থিতিশিল রাখতে উদ্যোগ বা পরিকল্পনা নিতে হবে। তা না হলে বাজার আবারও অস্থীর হয়ে পড়তে পারে।
তারা বলেন, বাজারে এখন কোম্পানিগুলোর শেয়ার মূল্য যা রয়েছে তা তিন বছরে আগেও ছিলো। এছাড়া বর্তমান পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার এর ইপি অনুপাত অনেক নিচে রয়েছে।
শেয়ারের দামের এ অবস্থা প্রতিফলিত হচ্ছে তাদের মূল্য-আয় অনুপাতে (প্রাইস আর্নিং বা পিই রেশিও)। বাজারের বর্তমান মূল্য-আয় অনুপাত গত তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে অবস্থান করছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গড় মূল্য-আয় অনুপাত ১৫ দশমিক ১৩-এ নেমে আসে। এটি ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসের চেয়েও কম। ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি ডিএসইর গড় পিই অনুপাত ছিল ১৮ দশমিক ৩১।
এদিকে বাজারের বর্তমান অবস্থায় বিনিয়োগ করার উপযুক্ত সময় বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
তাদের মতে, অস্বাভাবিক দরপতনের পর বাজার যে পর্যায়ে চলে এসেছে তাতে এখানে বিনিয়োগ করা অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত।
এদিকে গত সপ্তাহেও এসইসিসহ বাজার সংশ্লিষ্টদের পক্ষে বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিষেশ করে এসইসির পাশাপাশি ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমান বাজারকে স্বাভাবিক করার জন্য বিভিন্ন মহলে আলোচনা করেছেন। এছাড়া বাজারকে সার্পোট দেওয়ার জন্য নিজ কোম্পানি শেয়ার কেনার জন্য উদ্যোক্তাদের আহ্বান জানিয়েছেন।
এসইসি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পদক্ষেপগুলো হচ্ছে- মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগের কিছু বিধান শিথিল করা, অভিন্ন অভিহিত মূল্যের প্রজ্ঞাপন জারি ও শেষ পর্যন্ত উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা।
অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকও সাবসিডিয়ারি কোম্পানির অতিরিক্ত ঋণ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিধিবহির্ভূত বিনিয়োগ সমন্বয়ের সময় এক বছর বাড়িয়েছে।
এছাড়া লেনদেনের সময় কমিয়ে আনা, সিডিবিএলের চার্জ কমানো, জীবন বীমা কোম্পানির অর্থ বিনিয়োগসহ কিছু বিষয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছে এসইসি।
তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালকরা শেয়ার কেনার ঘোষণা দিয়েছেন। মার্জিন ঋণের টাকা সমন্বয়ের একটি ইতিবাচক প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। ব্যাংকিং আইনের সংশোধনীর বিষয়েও ব্যাখ্যা এসেছে। সব মিলিয়ে কোন পক্ষ থেকেই বাজারের প্রতিকুল কোন সিদ্ধান্ত নেই। বরং সবকিছুই বিনিয়োগকারীদের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক।
নিয়ন্ত্রণ সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সেচঞ্জ কমিশনের (এসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বাংলানিউজকে বলেন, ‘সমন্বিত উদ্যোগের কারণেই বাজার কিছুটা ঘুঁরেছে। তবে এটাকে দীর্ঘমেয়াদী করতে হলে এ উদ্যোগ স্থায়ীভাবে নিতে হবে। শেয়ার বাজার এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে এসইসির সমন্বয় বাড়াতে হবে। পাশাপাশি মার্চেন্ট ব্যাংক ও স্টকহোল্ডাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এসইসির মনিটরিং টিমকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। তবেই বাজার দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল হবে।’
এসইসির বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম খায়রুল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাজার পরিস্থিতি উন্নয়নে সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে। বাজারের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে এসইসি কাজ করছে। এসইসি এর জন্য সমন্বয় কমিটিও গঠন করেছে। এখন থেকে প্রতিমাসে একবার সমন্বয় কমিটির বৈঠক করা হবে।’
সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ও সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) চেয়ারম্যান ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাজারের সার্বিক অবস্থা দেখে বলা যায়, বিনিয়োগকারীদের বর্তমান আস্থার সংকট রয়েছে। বাজারকে স্বাভাকি অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হলে তাদের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।’
বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে এলে বাজার দীর্ঘমেয়াদী করতে অন্য কোন উদ্যোগ নিতে হবে না বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার অবমূল্যায়িত (আন্ডার প্রাইস) অবস্থায় রয়েছে। এই পর্যায়ে বিনিয়োগ করলে লোকসানের আশঙ্কা নেই বললেই চলে।’
মির্জ্জা আজিজ বলেন, ‘ঋণ সমন্বয়ের সীমা বাড়ানো, উদ্যোক্তাদের শেয়ার বিক্রি বন্ধ করা, মিউচুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগ সুযোগ বাড়ানো-এসব সিদ্ধান্ত পুঁজিবাজারের জন্য বেশ ইতিবাচক। তাছাড়া পিই অনুপাত বর্তমানে অনেক কম থাকায় বিনিয়োগকারীরা পুরোপুরি আস্থা রেখে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারেন।
Source :
http://www.banglanews24.com/detailsnews.php?nssl=35d3a3f153a5dfb0e85d69dcfefea315&nttl=2011092505122659581&toppos=7