নবীপ্রেম ঈমানের অংশ। নবীপ্রেম ছাড়া কেউ খাঁটি ঈমানদার হতে পারে না। নবীপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর অন্যতম মাধ্যম হলো মহানবী (সা.)-এর ওপর দরুদ ও সালাম পাঠ করা। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা তাঁর [রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর] ওপর দরুদ ও সালাম পাঠ করো।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৫৬)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে আমার ওপর বেশি বেশি দরুদ পড়ে, সে কিয়ামতের দিন আমার সবচেয়ে কাছে থাকবে।’ আর ‘যে ব্যক্তি আমার ওপর দরুদ পড়ে না, সে বেহেশতের পথ থেকে দূরে সরে গেল।’ (তিরমিজি : ১/১১০, ইবনে মাজাহ : ৬৫)
প্রসিদ্ধ কয়েকটি দরুদ শরিফ
(১) ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিউ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ।’ (২) ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিউ ওয়া সাল্লিম আলাইহি।’ (৩) ‘জাযাল্লাহু আন্না মুহাম্মাদাম মা হুয়া আহলুহু।’ (৪) ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিনিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া আলা আলিহি ওয়া সাল্লিম তাসলিমা।’ (৫) ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিউ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ, কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহিম, ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিউ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ, কামা বারাকতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহিম, ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ।’
মহানবী (সা.)-এর নাম উচ্চারণের সময় সর্বদা ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।’ (আল্লাহ তাঁর ওপর রহমত ও শান্তি বর্ষণ করুন) বলা হয়। এটিও একটি দরুদ। (বুখারি : ২/৯৪০, আবু দাউদ : ৮০, নাসাঈ : ১/১৪৫, তিবরানি : ৮/২৭, আল কাউলুল বাদি : ২৮৪)
মহান আল্লাহ মহানবী (সা.)-এর ওপর দরুদ পড়ার নির্দেশ দেওয়ার কারণে সারা জীবনে কমপক্ষে একবার দরুদ পাঠ করা ফরজ। চাই নামাজে হোক বা নামাজের বাইরে। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নাম কোনো মজলিসে একবার উচ্চারণ করলে বা শুনলে একবার দরুদ পড়া ওয়াজিব। একই মজলিসে কয়েকবার তাঁর নাম উচ্চারণ করলে বা শুনলে, প্রথমবার দরুদ পড়া ওয়াজিব এবং পরবর্তী প্রত্যেকবার মুস্তাহাব। একই মজলিসে কয়েকবার তাঁর নাম লিখলে, প্রথমবার দরুদ লেখা ওয়াজিব এবং পরবর্তী প্রত্যেকবার মুস্তাহাব।
বিনা অজুতে এমনকি হাঁটতে হাঁটতেও দরুদ পড়া যায়।
দুনিয়াবি কোনো উদ্দেশ্য সামনে নিয়ে দুই রাকাত সালাতুশ শোকর (কৃতজ্ঞতা প্রকাশের নামাজ) পড়ে নেওয়াই যথেষ্ট। দরুদের আয়োজন করার প্রয়োজন নেই। (দুররে মুখতার : ১/৫১৪-৫১৮)
যেসব স্থানে দরুদ শরিফ পড়া মুস্তাহাব
(১) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নাম উচ্চারণ করলে, লিখলে বা শুনলে। (২) কোনো মজলিস থেকে ওঠার আগে। (৩) দোয়ার শুরুতে, মাঝে ও শেষে। (৪) মসজিদে প্রবেশকালে ও বের হওয়ার সময়। (৫) মুয়াজ্জিনের আজানের জবাব দেওয়ার পর আজানের দোয়ার আগে। (৬) অজু শেষ করে। (৭) নবী করিম (সা.)-এর রওজা মোবারক জিয়ারতের সময়। (৮) কোনো বই-পুস্তক বা চিঠিপত্র লেখার শুরুতে। (৯) বিপদ-আপদ, বালা-মসিবত, ভূমিকম্প ইত্যাদির অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। (১০) সকাল ও সন্ধ্যা। (১১) সাফা ও মারওয়া সাঈ করার সময়। (১২) জুমা ইত্যাদির খুতবায়। (১৩) ইকামতের সময় ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ’ বলার পর। (১৪) তালবিয়া থেকে অবসর হওয়ার পর। (১৫) কোনো কিছু ভুলে গেলে। (১৬) রাগান্বিত হলে। (১৭) হাদিস পাঠের শুরুতে ও শেষে। (১৮) কোনো বিষয়ে ইসলামী সমাধান লেখার শুরুতে। (১৯) পরস্পর একত্র হওয়া ও বিচ্ছিন্ন হওয়ার সময়। (২০) বৈধ সব গুরুত্বপূর্ণ কাজের শুরুতে। (রদ্দুল মুহতার : ২/২৮১-২৮২, দুররে মুখতার : ১/৫১৬, আল কাউলুল বাদি : ২৭, ১৭৪-১৭৫)
যেসব স্থানে দরুদ শরিফ পড়া মাকরুহ
(১) স্বামী ও স্ত্রীর বিশেষ সম্পর্কের সময়। (২) মানুষের প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণের সময়। (৩) ব্যবসায়িক পণ্যের পরিচিতির জন্য। (৪) কোনো স্থানে হোঁচট খেয়ে পড়ে যাওয়ার পর। (৫) খুতবা শ্রবণকালে। (৬) আশ্চর্য হলে। (৭) হাঁচি দেওয়ার পর। (৮) জবাইয়ের সময়। (রদ্দুল মুহতার : ২/২৮২)
কোরআন শরিফ তিলাওয়াতের মাঝে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নাম এলে, তিলাওয়াত বন্ধ করে দরুদ না পড়ে; তিলাওয়াত শেষে দরুদ পড়ে নেওয়া উত্তম। যদিও তিলাওয়াত বন্ধ করে দরুদ পড়ে নেওয়াও জায়েজ। যদি এমন ‘সর্বনাম’ আসে, যা দিয়ে নবী করিম (সা.)-এর কথা বোঝানো হয়ে থাকে, সেখানেও দরুদ পড়া বা লেখা উচিত। যে তিন সময় নামাজ পড়া নিষেধ, সে সময় কোরআন পড়ার তুলনায় দরুদ পড়া উত্তম। নবী মুহাম্মদ (সা.) ছাড়া অন্য কারো ওপর দরুদ পড়া মাকরুহ। তবে তাঁর নামের সঙ্গে অন্য কারো নাম এলে, তাঁর ওপর দরুদ পড়ে পাশাপাশি অন্যদের ওপর দরুদ পড়া মাকরুহ নয়। যেমন—‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিউ ওয়া আলা আলিহি ওয়া আসহাবিহ।’ (ফাতাওয়া আলমগিরি : ৫/৩১৫-৩১৬)
Source: লেখক : শিক্ষক, জামিয়া আম্বরশাহ আল ইসলামিয়া, কারওয়ান বাজার।