‌'পরিবেশ রক্ষায় সকলকে সচেতন হতে হবে' দৈনিক ইত্তেফাক, তারিখ: ২৭ জানুয়ারি, ২০১৮

Author Topic: ‌'পরিবেশ রক্ষায় সকলকে সচেতন হতে হবে' দৈনিক ইত্তেফাক, তারিখ: ২৭ জানুয়ারি, ২০১৮  (Read 802 times)

Offline kekbabu

  • Jr. Member
  • **
  • Posts: 78
  • Test
    • View Profile
    • https://daffodilvarsity.edu.bd/
পরিবেশ রক্ষায় সকলকে সচেতন হতে হবে
ড. কুদরাত-ই-খুদা বাবু ২৭ জানুয়ারী, ২০১৮ ইং, দৈনিক ইত্তেফাক (পৃ.৯)

বিশ্বখ্যাত চিকিত্সাবিজ্ঞানী ইবনে সিনা গবেষণালব্ধ ফলাফল থেকে বলেছিলেন, মানুষের ভেতরে শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বা অন্য কোনোভাবে যদি ধূলি-বালি কণা না ঢুকতো, তবে মানুষ লাখ লাখ বছর বাঁচতেন। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, দীর্ঘায়ু লাভের ক্ষেত্রে ধূলি-বালি কণামুক্ত নির্মল ও বিশুদ্ধ বায়ুর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। ঠিক উল্টোদিক থেকে বিষয়টি নিয়ে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে, দূষিত বাতাস বা দূষিত পরিবেশ দীর্ঘায়ু কমানোর ক্ষেত্রে নেতিবাচকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, পৃথিবীতে প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনা, ধূমপান এবং ডায়াবেটিসে যে পরিমাণ মানুষ মারা যায়, তার চেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় বায়ু দূষণের কারণে। পরিবেশ ও চিকিত্সাবিদ্যা মতে, বায়ু দূষণ থেকে ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিস (সিওপিডি) নামে শ্বাসতন্ত্রের যে রোগ হয়, যা বিশ্বজুড়ে মানুষের মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ। ২০১২ সালে শুধুমাত্র এই রোগেই পৃথিবীতে যে পাঁচটি দেশে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষের মৃত্যু ঘটেছে, বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। কারণ, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ এদেশের বড় বড় শহরগুলোয় বায়ু দূষণের মাত্রা অত্যন্ত বেশি। ২০১৫ সালে বিশ্ব ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) বসবাসের দিক বিবেচনা করে বিশ্বের বিভিন্ন শহরের ওপর যে জরিপ চালায় তাতে দেখা যায়, বিশ্বে বসবাসের জন্য সবচেয়ে অনুপযোগী শহর হিসেবে ঢাকার অবস্থান দ্বিতীয়।

বলা হয়ে থাকে, বিপদ-আপদ, দুর্ঘটনা, ভূমিকম্প, সুনামির ওপর কারো হাত নেই এবং তা রোধ করাও সম্ভব নয়। কিন্তু একটু সচেতন হলেই জলাশয় ভরাট করে বহুতল ভবন নির্মাণ, অপরিকল্পিত ফ্যাক্টরি-কারখানা নির্মাণ করে একটি শহরের উপর অত্যধিক চাপ সৃষ্টি করা, একটি শহরকে জ্বলন্ত চুল্লিতে পরিণত করা, এক ঘণ্টার টানা বৃষ্টিতে পুরো একটি শহরকে পানির নিচে তলিয়ে দেওয়া, একই রাস্তা অসত্ উদ্দেশে বার বার খোঁড়া-খুঁড়ি করে জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলা, যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলে ভাগাড় সৃষ্টি করে দুর্গন্ধময় পরিবেশ তৈরি করা, যানজট, ধূলাবালি, ধোঁয়া আর মশার উপদ্রবকে জনগণের নিত্যসঙ্গী বানানো, পানি-বিদ্যুত্-গ্যাস সংকটে শহরবাসীকে ভোগান্তির হাত থেকে তো অন্তত রক্ষা করা যেতে পারে। দূষণের দিক থেকে ঢাকা ছাড়াও গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা এসব জনবহুল ও শিল্পঘন শহরগুলোর বাতাসে ক্ষতিকর মিহি ধূলিকণা রয়েছে। এছাড়াও এসব শহরগুলোর বাতাসে রয়েছে বিপজ্জনক মাত্রায় কার্বন মনো-অক্সাইড, সিসা, নাইট্রোজেন অক্সাইডসহ অনেক ক্ষতিকর দূষণকারী পদার্থ। ঢাকাকে আতঙ্কিত ও অপ্রস্তুত শহর হিসেবে প্রায়ই উল্লেখ করা হয়। আর এ নিয়ে লেখালেখিও কম হয় না। কিন্তু বিষয়টি ‘বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে’-অবস্থার মতো অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজধানী ঢাকার বিকেন্দ্রিকরণ ও যানজটমুক্ত করতে নানা পরিকল্পনার কথা শোনা যায়। সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে নিত্য-নতুন পরিকল্পনা তৈরি হয়, সভা-সেমিনারও অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওইসব উদ্যোগের ফলাফল অজ্ঞাতকারণে শূন্যের কোটাতেই বিরাজ করতে দেখা যায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উপাত্তের ভিত্তিতে ২০১৬ সালের ১৭ জুন যুক্তরাজ্যের দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকায় একটি খবর প্রকাশিত হয় যে, বাতাসে ভাসমান মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর মিহি ধূলিকণার মাত্রা কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে রাজশাহী শহর বিশ্বের মধ্যে সর্বাধিক সাফল্য অর্জন করেছে। সারা বিশ্বের শহরগুলোয় বায়ু দূষণ কমানোর ক্ষেত্রে রাজশাহীর এই গৌরবোজ্জ্বল দৃষ্টান্ত থেকে একটা বিষয় সুস্পষ্ট যে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সত্যিকার অর্থে আন্তরিক প্রয়াস এবং সকলের সহযোগিতা থাকলে একটি শহরের শুধু বায়ু দূষণ কমানোই নয়, ওই শহরকে ভালোভাবে বসবাস উপযোগীও করে তোলা সম্ভব। এক্ষেত্রে যদি ঘটনা উল্টোভাবে ঘটে, তাহলে এই জায়গায় রাজশাহীকে দেখতে না পেয়ে প্রথমেই দেখা যাবে ঢাকা এবং এরপর গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনার ন্যায় অন্যান্য শহরকে-যা মাত্রাতিরিক্ত দূষণে পরিপূর্ণ। এ যেন ইতিবাচক মনোভাবাপন্ন কতিপয় ব্যক্তিকে নরকে পাঠিয়ে দেওয়ার পর কয়েকদিন পর নরকটি স্বর্গে পরিণত হওয়া এবং নেতিবাচক মনোভাবাপন্ন কতিপয় ব্যক্তিকে স্বর্গে পাঠিয়ে দেওয়ার পর স্বর্গটি নরকে পরিণত হওয়ার গল্পের ন্যায়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, রাজশাহী শহর বায়ু দূষণ কমানোর ক্ষেত্রে যদি সারা বিশ্বের মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করতে সক্ষম হয়; তাহলে কেন ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ দেশের অন্য শহরগুলোতে বায়ু দূষণসহ পরিবেশ দূষণ কমানো যাচ্ছে না? নাকি ওই শহরগুলোয় বসবাসরত লোকজন পরিবেশ দূষণ পছন্দ করেন? নিশ্চয় না। দেশের অন্যান্য শহরে বায়ু দূষণ বা অন্যান্য দূষণ কমানোর ক্ষেত্রে কোনো যাদুর কাঠির প্রয়োজন নেই। এক্ষেত্রে প্রয়োজন শুধু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আন্তরিক হওয়া, প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন হওয়া, সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী নগরায়ন করা, আইনের সঠিক প্রয়োগ ঘটানো ইত্যাদি। পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে শুধু সরকার নয়, ব্যক্তি পর্যায়েও সচেতনতা তৈরি করা প্রয়োজন। পরিবেশ রক্ষায় সারা দেশে বাস্তবমুখী কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে নিশ্চয় রাজশাহীর ন্যায় সারা দেশেও বায়ু দূষণসহ অন্যান্য দূষণ কমিয়ে আনা সম্ভব, সম্ভব সারা দেশকে নির্মল পরিবেশে বাসযোগ্য করে তোলা। আর এ লক্ষ্যে এখন থেকেই আমাদের সকলকে একযোগে এগিয়ে এসে কাজ শুরু করতে হবে।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
ই-মেইল: kekbabu@yahoo.com
Link: http://www.ittefaq.com.bd/print-edition/drishtikon/2018/01/27/253106.html
Dr. Kudrat-E-Khuda (Babu).
Associate Professor (Dept. of Law), Daffodil International University;
International Member of Amnesty International;
Climate Activist of Greenpeace International; Column Writer;
Mobile Phone: +8801716472306
E-mail: kekbabu.law@diu.edu.bd