ক্যান্সার কখনও শেষ কথা নয় প্রমাণ করেছেন অদম্য প্রদীপ

Author Topic: ক্যান্সার কখনও শেষ কথা নয় প্রমাণ করেছেন অদম্য প্রদীপ  (Read 851 times)

Offline protima.ns

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 429
  • Test
    • View Profile
ক্যান্সার কখনও শেষ কথা নয় প্রমাণ করেছেন অদম্য প্রদীপ:
৫০ বছর বয়সে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ভোকাল কর্ড হারিয়ে ফেলেছিলেন। পরের সিকি শতক ধরে সেই মারণ ক্যান্সারের বিরুদ্ধে হার না–মানা লড়াই। আরও অনেক আক্রান্ত মানুষের লড়াইটা নিজের করে নেওয়া। কারণ তিনি জানেন, কথা বলতে সক্ষম মানুষের হঠাৎ করে কথা বন্ধ হয়ে যাওয়ার অব্যক্ত যন্ত্রণা। আবার সেই হারিয়ে যাওয়া কথা ফিরে পাওয়ার তীব্র আনন্দের স্বাদও তিনি পেয়েছেন। অন্য ক্যান্সার–আক্রান্ত মানুষকে তিনি সেটাই শেখান। স্বাভাবিক জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া নয়, বরং জীবনকে আরও আঁকড়ে ধরা। চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পরও বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যুক্ত আছেন আর প্রমাণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন, ক্যান্সারই শেষ কথা বলে না। নভি মুম্বইয়ের কোপারখানেরের অধিবাসী প্রদীপকুমার লাহিড়ী।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৬২–র সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। কর্মজীবনের প্রায় সবটাই মুম্বইয়ে ভাবা অ্যাটমিক রিসার্চ সেন্টারে কেটেছে। জুনিয়র সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার হয়ে সিনিয়র প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে অবসর। জীবনের অর্ধ শতকে পৌঁছনোর মুহূর্তে ‘‌দুরারোগ্য’‌ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ভোকাল কর্ড হারিয়ে ফেলেন। তিনিই এখন ৭৬ বছর বয়সে ভোকাল কর্ড হারানো মানুষদের কথা বলা ফেরানোর জন্য ‘‌চিকিৎসকের’‌ ভূমিকায় অবতীর্ণ। প্রদীপবাবুর গর্ব, তিনি শুধু ক্যান্সারকেই জয় করেছেন তাই নয়, ভোকাল কর্ড ছাড়াই কথা বলতে নিজে পেরেছেন, অন্যকেও শেখাচ্ছেন। মুম্বইয়ে ক্যান্সার চিকিৎসার অন্যতম কেন্দ্র প্রিন্স আলি খান হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত হয়ে প্রায় আট–দশ হাজার মানুষের হারিয়ে যাওয়া কথা ফিরিয়ে দিয়েছেন। হাসপাতালের বিশিষ্ট ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ড.‌ সুলতান প্রসাদের উৎসাহে একটি ইউনিটের মূল ব্যক্তি হিসেবে কাজ করে চলেছেন। এই ইউনিটের যঁারা শিক্ষক, তঁাদের ৯ জনের মধ্যে ৬ জনই এভাবে ক্যান্সারকে জয় করে নতুন করে ‘‌কথা বলা’‌ মানুষ।

প্রদীপবাবু প্রথম জীবনে সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ভাবা অ্যাটমিকে কাজ করতেন। প্রায়ই বিভিন্ন প্রজেক্টের ৩০০–৪০০ মানুষকে নিয়ে কাজ করার সময় চিৎকার চেঁচামেচি করতে হত। তার সঙ্গে চলত প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০টি সিগারেট। একদিন গলায় ক্যান্সার ধরা পড়ে। ১৯৯২ সালে মুম্বইয়ের টাটা মেমোরিয়ালের বিশিষ্ট চিকিৎসক ড.‌ অশোক মেহতা নিখুঁত অস্ত্রোপচারে ভোকাল কর্ডটি বাদ দিয়ে দেন। প্রদীপবাবু কথা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর তিনি জানতে পারেন, খাদ্যনালি ব্যবহার করেও কথা বলা যায়। ২৫ বছর আগে, শুধুমাত্র নিজের অক্লান্ত চেষ্টা আর মনের জোরে তিনি আবার নিজের কথা নিজের কানে শুনতে পান। আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। এরপর সুযোগ পেয়ে জাপানের টোকিও চলে যান। সেখানে তিন মাস থেকে কীভাবে ভাল করে কথা বলা যায় তার প্রশিক্ষণ নিয়ে ফিরে আসেন। এবার তার অন্য প্রচেষ্টা শুরু হয়। নিজের কষ্টার্জিত জ্ঞান অন্যদের মধ্যে বিতরণ করা। যুক্ত হয়ে যান প্রিন্স আলি খান হাসপাতালে। ‘‌চিকিৎসা’‌ করতে থাকেন হঠাৎ ভোকাল কর্ড হারিয়ে ফেলা মানুষদের, যার সুনাম আজ রাজ্য, দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও পৌঁছে গেছে। এখানে যন্ত্রের সাহায্য ছাড়াই খাদ্যনালি ব্যবহার করে কথা বলতে শেখানো হয়। আর এর জন্য কোনও টাকাপয়সা লাগে না। শুধু বিনামূল্যে চিকিৎসাই নয়, অসুস্থতার কারণে বেরোজগার হয়ে পড়া মানুষের সন্তানদের পড়াশোনার খরচও বহন করেছেন প্রদীপবাবু, এমন নজিরও আছে।
এখন সরকারের উদ্দেশে তঁার একটাই প্রশ্ন। অঙ্গহানি ঘটলে তাকে শারীরিকভাবে অক্ষম মানুষের তালিকায় ফেলে বিভিন্ন সরকারি সুযোগ–সুবিধা দেওয়া হয়। অথচ কথা বলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলা লোকেরা বিকলাঙ্গ হিসেবে কোনও বিশেষ সুযোগ–সুবিধা পান না। ‌ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পাশাপাশি এই অধিকার নিশ্চিত করতেও এখন লড়ছেন প্রদীপকুমার লাহিড়ী।