ইউসুফ সুপ্রিয়াদি পেশায় কৃষক। চিতারুম নদীর ধারেই তাঁর ফসলি জমি। অনেক দিন ধরেই মারাত্মক চর্মরোগে ভুগছেন ইউসুফ। আর এর জন্য দায়ী চিতারুম—বিশ্বের সবচেয়ে নোংরা নদী।
ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম জাভায় চিতারুম নদীর অবস্থান। প্রায় এক দশক আগে বিশ্বব্যাংক চিতারুমকে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত নদী হিসেবে উল্লেখ করে। বর্তমানে অবশ্য চিতারুমের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি, ভারতের গঙ্গা ও চীনের ইয়োলোকে এই তালিকায় রেখেছে বিশ্বব্যাংক।
নদীর ঘোলা পানির ভেতরে তাকালে কিছুই দেখা যায় না। পানিতে প্রায়ই ভাসতে দেখা যায় বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ, গৃহস্থালি আবর্জনা ও বিভিন্ন প্রাণীর বিষ্ঠা। এই নদীর ধারেই ছয় সদস্যের পরিবার নিয়ে থাকেন ৫৪ বছর বয়সী ইউসুফ। নদীর পানি মারাত্মক দূষিত হলেও জীবনধারণের জন্য এই পানিই ব্যবহার করতে হয় তাঁকে। এর ফলে দেখা দিয়েছে চর্মরোগ। আর দূষিত পানির কারণে নষ্ট হচ্ছে ইউসুফের জমিতে জন্মানো ধান।
বার্তা সংস্থা এএফপিকে ইউসুফ সুপ্রিয়াদি বলেন, ‘বর্ষাকালে যখন বন্যা হয়, তখন চারদিকে ছড়িয়ে নদীর দূষিত পানি। এতে আমার ধান নষ্ট হচ্ছে। হাত-পা চুলকাচ্ছে। যদি এভাবেই চলতে থাকে, তবে আমি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হব। আর যদি এর পানি ব্যবহার বন্ধ করে দিই, তবে কৃষিকাজ ছেড়ে দিতে হবে। এ ছাড়া অন্য কোনো কাজ আমার জানা নেই।’
চিতারুম নদীর দূষণ এমন মারাত্মক অবস্থায় পৌঁছেছে যে কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্যঝুঁকি-সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। ইন্দোনেশিয়ার সরকারের এখন লক্ষ্য ২০২৫ সালের মধ্যে চিতারুমের পানি সুপেয় করে তোলা।
ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম জাভার চিতারুম নদীর ঘোলা পানিতে দেখা যায় না কিছুই। পানিতে প্রায়ই ভাসতে দেখা যায় বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ, গৃহস্থালি আবর্জনা ও বিভিন্ন প্রাণীর বিষ্ঠা। ছবি: এএফপি
ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম জাভার চিতারুম নদীর ঘোলা পানিতে দেখা যায় না কিছুই। পানিতে প্রায়ই ভাসতে দেখা যায় বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ, গৃহস্থালি আবর্জনা ও বিভিন্ন প্রাণীর বিষ্ঠা। ছবি: এএফপি
নদীটির দূষিত পানির ওপর প্রায় তিন কোটি মানুষের জীবন নির্ভরশীল। এসব মানুষ এই নদীর পানি সেচ ও দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করে থাকে। অনেকে এই পানি পানও করেন। ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তার প্রায় ৮০ শতাংশ অধিবাসী চিতারুমের পানির ওপর নির্ভরশীল।
চিতারুম নদীটি প্রায় ৩০০ কিলোমিটার লম্বা। জাভা ও বালি দ্বীপে সরবরাহ করা বিদ্যুৎ উৎপাদনেও ব্যবহার করা হয় এই নদীর পানি। নদীতে হাজার খানেক টেক্সটাইল কারখানার বর্জ্য পদার্থ ফেলা হয়। প্রতিদিন প্রায় ২৮০ টন বর্জ্য ফেলা হয় এই নদীতে। এক গবেষণা দেখা গেছে, নিরাপদ সুপেয় পানির যে মানদণ্ড যুক্তরাষ্ট্র নির্ধারণ করেছে, তার চেয়ে এক হাজারগুণ বেশি বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ পাওয়া গেছে চিতারুমের পানিতে।
এখন এই নদীর তীর ঘেঁষে বহু সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। মূলত কারা নদীতে বর্জ্য ফেলে, তা শনাক্ত করতেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার সমুদ্রবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জোকো হারতোয়ো বলেন, ‘আমরা এ বিষয়টি নিয়ে হেলাফেলা করছি না। আমরা আশা করছি, সামগ্রিকভাবে নেওয়া সরকারি পদক্ষেপে চিতারুমকে আবারও পরিষ্কার করতে পারব।’
ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম জাভার চিতারুম নদীর পানির দুই রং। দূষণে নদীর অর্ধেক পানি কালো রং ধারণ করেছে। ছবি: এএফপি
ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম জাভার চিতারুম নদীর পানির দুই রং। দূষণে নদীর অর্ধেক পানি কালো রং ধারণ করেছে। ছবি: এএফপি
তবে সরকার যা-ই করুক, স্থানীয় অধিবাসী ও উন্নয়নকর্মীদের খুব বেশি আস্থা নেই তাতে। স্থানীয় একটি বেসরকারি পরিবেশবিষয়ক সংস্থার কর্মী দেনি রিসবানদানি বলেন, নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষের অসুস্থ হওয়ার হার অনেক বেশি। কিন্তু এসব নিয়ে সরকারি কর্তৃপক্ষকে বারবার জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ বাস্তবায়নে দুর্নীতিকেই সবচেয়ে বড় বাধা বলে মনে করেন তিনি।