Entertainment & Discussions > Animals and Pets

খোয়াই নদীতে গাং টিটি

(1/1)

rumman:

হবিগঞ্জের খরস্রোতা খোয়াই নদীর নানা রূপ। প্রকৃতির পরিবর্তনে এর চেহারায়ও আসে ভিন্নতা। একের সঙ্গে অন্যকে মেলাতে গেলে ধন্দে পড়তে হয়। বর্ষায় এই নদী থাকে পানিতে টইটম্বুর। প্রবল স্রোত যেন সব কিছু ভাসিয়ে নিতে চায়। আবার শুকনো মৌসুমের চিত্র অনেকটা মরুভূমির। পানির রাজ্যে কেবলই ধুধু বালুচর। এই খোয়াই নদীতটেই সম্প্রতি দেখা মিলেছে দুর্লভ পাখি গাং টিটি।

শীতের শেষে বসন্তের আগমনে সুন্দর প্রকৃতি ক্যামেরাবন্দি করতে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার আসামপাড়া এলাকায় গিয়েছিলেন শখের ছবিয়ালের অ্যাডমিন মাসুক আহমেদ। হঠাৎই তিনি সন্ধান পেয়ে যান গাং টিটির। ক্ষণিকের সুযোগে দুর্লভ পাখিটির ছবি ধারণ করতে অবশ্য ভুল হয়নি তাঁর। একই সঙ্গে সচল হয়েছে তাঁর সঙ্গী আশরাফুল আজিজ ওয়াফির ক্যামেরাও।

একটা সময়ে প্রমত্তা পদ্মাসহ দেশের প্রায় সব নদীচরেই দেখা পাওয়া যেত গাং টিটির। ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে বেড়াত ওরা। প্রকৃতির পরিবর্তন আর চোরা শিকারিদের নির্মমতায় পাখিটি হয়ে পড়েছে দুর্লভ। এরই মধ্যে এটির নাম উঠে গেছে মহাবিপন্ন পাখির তালিকায়। এটি বর্তমানে খুবই স্বল্প সংখ্যায় পঞ্চগড়ে পদ্মার চরে দেখতে পাওয়া যায়।

গাং টিটির ভালো নাম নদী টিটি। নদীকেন্দ্রিক বিচরণ বলে এমন নাম। যেহেতু নদীর আরেক নাম গাং, তাই গাং টিটি নামেও পাখিটিকে সবাই চেনে। ইংরেজি নাম River Lapwing বা Spur-winged Lapwing। গাং টিটি নদী ও খাঁড়ির বালুতট এবং নুড়িসমৃদ্ধ এলাকায় বাস করে। নুড়ি পাথর, বালি দিয়ে বাসা বেঁধে ডিম পাড়ে। নুড়ি পাথর আর গাং টিটির জলপাই রঙের ডিম মিলেমিশে এক ধরনের ছদ্মবেশের আবহ তৈরি করে। এভাবে শত্রুর হাত থেকে ডিম রক্ষা করে।

মূলত পায়রা আকারের পাখি গাং টিটি। লম্বায় গড়ে ২৯ থেকে ৩২ সেন্টিমিটার। ওজন ১৬০ থেকে ১৬৫ গ্রাম। পিঠের রং বেলে-বাদামি। মাথার খোঁপা, মাথা, ঘাড়, মুখমণ্ডল, ঠোঁট ও বুকের ওপরের অংশ কালো। বুক ধূসর-বাদামি। পেট সাদা ও পেটের মাঝখানটা কালো। লেজের শেষ প্রান্ত, পা, আঙুল ও নখ কালো। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম হলেও আকারে পুরুষগুলো খানিকটা বড় হয়। বাচ্চাদের মাথায় সাদা ফোঁটা এবং পিঠে হলুদ ও গাঢ় দাগ থাকে। মার্চ থেকে জুন মাস এদের প্রজনন মৌসুম।

মাসুক আহমেদ বলেন, ‘হবিগঞ্জের নদী, পাহাড় আর হাওরে অনেক রকম পাখির বসবাস। এসব প্রজাতির বড় একটা অংশ আমার ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। তবে সেদিন গাং টিটি পাখিটি দেখে প্রথমে চমকেই গিয়েছিলাম। মুহূর্তেই তৎপর হয়ে উঠি পাখিটির ছবি তুলতে। কিন্তু ক্যামেরা ফোকাস করে যে-ই না ক্লিক করি, পাখিটি উড়াল দিয়ে নদীর অন্য এলাকায় গিয়ে বসে। বহু কষ্টে কয়েকটি ছবি ধারণ করা হয় সেদিন।’

তিনি আরো বলেন, ‘হবিগঞ্জের খোয়াই নদীতে নুড়ি নেই, আছে শুধুই বালি। তাই এখানে গাং টিটির আগমনটা বিস্ময়কর। পঞ্চগড়ের নদীগুলোয় হিমালয় থেকে বালির সঙ্গে ভেসে আসে নুড়ি পাথর। তাই সেখানে এই পাখি থাকাটা স্বাভাবিক। কিন্তু এই এলাকায় সাম্প্রতিক সময়ে খুঁজে পাওয়া যায় না গাং টিটি।’

সরকারি বৃন্দাবন কলেজের সহকারী অধ্যাপক ড. সুভাষ চন্দ্র দেব জানান, স্ত্রী গাং টিটি তিন-চারটি জলপাই রঙের ডিম পাড়ে। ২২ থেকে ২৪ দিনে ডিম ফুটে বাচ্চা বেরিয়ে আসে। জন্মের ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যেই মা-বাবার সঙ্গে বাসা ছেড়ে নেমে পড়ে খাবারের খোঁজে। গায়ের রঙের জন্য এরা সহজেই প্রকৃতির সঙ্গে মিশে ছদ্মবেশ নিতে পারে। বিপদের গন্ধ বা মা-বাবার সংকেত পেলে মুহূর্তেই বাচ্চারা মাটির সঙ্গে একাকার হয়ে যায়। এরা একাকী, জোড়ায় জোড়ায় অথবা পাঁচ-ছয়টি মিলে ছোট ছোট ঝাঁকে বিচরণ করে। কীটপতঙ্গ, ছোট ব্যাঙ ও ব্যাঙাচি, কাঁকড়াজাতীয় প্রাণী খায়। ভোরবেলা ও সন্ধ্যার আগে এবং চাঁদনি রাতে বেশ সক্রিয় থাকে এরা। ডাকে ‘হা টি টি টি,  হা টি টি টি’ শব্দে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, একসময় খোয়াই নদীর কাছে গেলে শোনা যেত নানা প্রজাতির পাখির কলতান। কিন্তু নদীতে বালু উত্তোলনের নামে আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর পাখি আর নদীতে আসতে সাহস করে না।’

Navigation

[0] Message Index

Go to full version