চিয়া বীজের সঙ্গে পরিচিত নয় বাংলাদেশের মানুষ। কারণ এটি বাংলাদেশে চাষ হতো না। ফসলটির উৎপত্তি মেক্সিকোতে। চিয়া বীজে আছে শতকরা ১৫-২৫ ভাগ প্রোটিন, ৩৪ ভাগ লিপিড, ২৪ ভাগ ফাইবার অ্যাশ এবং শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এ ছাড়া এ ফসলে রয়েছে শরীরের জন্য অত্যাবশ্যকীয় ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, যা হৃদেরাগের ঝুঁকি কমায়। দেশে এর চাষ শুরু করার পরীক্ষায় সফলতা পেয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর হোসেন। তাঁর উদ্ভাবিত জাতের নাম ‘বাউ চিয়া’।
ড. আলমগীর হোসেন ২০১০ সালে মালয়েশিয়ায় পোস্ট ডক্টরেট করার সময় চিয়া বীজ সংগ্রহ করেছিলেন। সাত বছর ধরে চিয়া নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। ড. আলমগীর বলেন, “এরই মধ্যে আমরা কৃষকবান্ধব চিয়া চাষ পদ্ধতি ও বীজ উৎপাদন কৌশল উদ্ভাবন করেছি। শিগগিরই আমরা ‘বাউ চিয়া’ নামে একটি জাত অবমুক্তকরণের মাধ্যমে কৃষকপর্যায়ে চাষ সম্প্রসারণে আশাবাদী।”
অধ্যাপক আলমগীর হোসেন আরো বলেন, ‘চিয়া হলো মিন্ট প্রজাতির উদ্ভিদ। এটি প্রধানত মেক্সিকো ও দক্ষিণ আমেরিকায় জন্মায়। চিয়া বীজের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ উদ্ভিজ্জ আমিষ, চর্বি, ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড ও আঁশ থাকে, যা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে প্রয়োজন। চিয়া বীজে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড আমাদের শরীরের কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে। এ ছাড়াও চিয়া বীজের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের অপ্রয়োজনীয় উপাদান বের করে দিয়ে হৃদেরাগের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।’ দেশীয় আবহাওয়ায় চিয়ার চাষাবাদ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘২০১০ সালে চিয়া বীজ দেশে নিয়ে আসি। এরপর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগীয় মাঠে চার বছর ধরে চিয়া বীজের অভিযোজন পরীক্ষা করা হয়। অভিযোজন পরীক্ষায় সফল হওয়ার পর তিন বছর ধরে চিয়া বীজের চাষাবাদ নিয়ে গবেষণা করা হয়। ২০১৭ সালে পাবনা, বগুড়া, গাইবান্ধা, ময়মনসিংহ ও চরাঞ্চলে চিয়া চাষে ব্যাপক সফলতা আসে। রবিশস্য হিসেবে এটি বাংলাদেশে চাষ করা যায়। ফসল ঘরে উঠাতে ৯০ দিন সময় লাগে। বেশি ফলনের জন্য ১৫ নভেম্বরের মধ্যে চাষ করতে হবে। তবে অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ এবং ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেও বোনা যেতে পারে। সব রকম মাটিতে এটি চাষ করা যায়। জমি তিন থেকে চারটি চাষ দিয়ে মাটি ঝুড়ঝুড়া করে নিতে হবে। এই উদ্ভিদে পোকামাকড় ও রোগবালাই খুবই কম হওয়ায় পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও প্রতি হেক্টরে সর্বোচ্চ দুই টন উৎপাদন লাভ করা সম্ভব।’
দেশে চিয়ার সম্ভাবনা নিয়ে ফসল উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম জাকির হোসেন বলেন, চিয়া বীজ শুকনো অবস্থায়ই খাওয়া যায়। তবে চিয়া বীজ বিভিন্ন খাবার যেমন দই, পুডিং বা বিস্কুটের সঙ্গে যোগ করে এর চাহিদা বাড়ানো যেতে পারে।
‘বাউ চিয়া’ জাত উদ্ভাবন ও গবেষণা দলের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর হোসেন বলেন, খুব শিগগিরই এই জাতটি অবমুক্তকরণের মাধ্যমে কৃষকপর্যায়ে নেওয়া হবে। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় চিয়া চাষ দ্রুত সম্প্রসারিত হবে এবং পুষ্টি নিরাপত্তায় বাংলাদেশ আরো এগিয়ে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। গবেষক দলের অন্য সদস্যরা হলেন ফসল উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মাসুদুল করিম, মো. আরিফ সাদিক পলাশ ও আহাদ আলম শিহাব।
চিয়া এটি একটি তৈলজাত শস্যদানা। চিয়ার বৈজ্ঞানিক নাম ঝধষারধ যরংঢ়ধহরপধ খ. এটি একটি বর্ষজীবী, বিরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ।Source: আবুল বাশার মিরাজ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়