ভালোবাসা ঈমানের পূর্বশর্ত। ভালোবাসা না থাকলে কেউ পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারে না। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তিনটি গুণ যার মধ্যে আছে, সে ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করতে পারে। এক. আল্লাহ ও তাঁর রাসুল তার কাছে অন্য সব কিছু থেকে অধিক প্রিয় হওয়া। দুই. কাউকে একমাত্র আল্লাহর জন্যই ভালোবাসা। তিন. কুফরিতে প্রত্যাবর্তনকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মতো অপছন্দ করা। (বুখারি, হাদিস : ৬০৪১)
কোনো ব্যক্তি ততক্ষণ ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ সে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে মন থেকে ভালোবাসবে না। শুধু তা-ই নয়, যে ব্যক্তি শুধু আল্লাহর জন্য কাউকে ভালোবাসবে, আল্লাহ কেয়ামতের দিন তাকে আরশের ছায়ায় স্থান দেবেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘কিয়ামতের দিন আল্লাহ বলবেন, আমার মহত্ত্বের কারণে একে অপরের প্রতি ভালোবাসা স্থাপনকারীরা কোথায়? আজ আমি তাদের আমার বিশেষ ছায়ায় ছায়া প্রদান করব। আজ এমন দিন, যেদিন আমার ছায়া ছাড়া অন্য কোনো ছায়া নেই।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৫৬৬)
সর্বোত্কৃষ্ট ভালোবাসা হলো, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ভালোবাসা। ভালোবাসা হতে পারে মা, বাবা, ভাই, বোন, স্ত্রী, পুত্র কিংবা অন্য আত্মীয়দের জন্য। যা অবশ্যই জায়েজ পদ্ধতিতে। কিন্তু আজ আমাদের সমাজে ভালোবাসা শব্দটি অপাত্রেই বেশি ব্যবহার হচ্ছে। যার দরুন খোদ ভালোবাসা শব্দটিই কলুষিত হয়ে যাচ্ছে। অথচ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে নবী! বলে দিন, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও, তবে আমার অনুসরণ করো, তাহলে আল্লাহও তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৩১)
বর্তমান যুগে আমরা এর প্রয়োগ ভুল জায়গায় করছি। যা আমাদের ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। আমাদের ঈমান-আমল, সুখ-শান্তি সব কেড়ে নিচ্ছে। আমাদের থেকে কেড়ে নিচ্ছে লজ্জা নামের মহামূল্যবান দৌলতটিও। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ যখন কোনো বান্দাকে ধ্বংস করার ইচ্ছা করেন, তখন তার লজ্জা-শরম কেড়ে নেন।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪০৪৫)
বর্তমানে বিদেশ ও বিধর্মীদের থেকে আমদানি করা অপসংস্কৃতিতে আমরা এতটাই মত্ত যে আমরা নিজেরাই নিজেদের পরিচয় ভুলে গেছি। হয়তো এই দিনটির কথাই রাসুল (সা.) অতি আফসোসের সঙ্গে বলে গিয়েছিলেন : ‘তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তীদের পন্থা পুরোপুরি অনুসরণ করবে, প্রতি বিঘতে বিঘতে ও প্রতি গজে গজে। এমনকি তারা যদি গুইসাপের গর্তেও ঢোকে, তবে তোমরাও তাতে ঢুকবে। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কি ইহুদি ও নাসারার কথা বলছেন? মহানবী (সা.) বললেন, তবে আর কার কথা?’ (বুখারি, হাদিস : ৩৪৫৬)
আমাদের উচিত যিনি ভালোবাসা সৃষ্টি করেছেন, তাঁকে ভালোবাসা ও তাঁর বাতলানো পদ্ধতিতে সৃষ্টজীবকে ভালোবাসা। তবেই ভালোবাসা আমাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।
Source: মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা