বিষন্নতা রোধে ইসলামের শিক্ষা

Author Topic: বিষন্নতা রোধে ইসলামের শিক্ষা  (Read 1863 times)

Offline shilpi1

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 135
    • View Profile
জীবনযাপনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো- ‘মানসিক চাপ।’ মানসিক চাপ জীবনের একটি ধ্রুব বাস্তবতা। মানবজীবনে বিচিত্র ধরনের উত্থান-পতন রয়েছে, রয়েছে অসংলগ্নতা, দু:খ-কষ্ট, অপ্রাপ্তি ও বেদনা ইত্যাদি।

এসব কিছু মানুষের ভেতরটাকে অস্থির ও বিষন্ন করে তোলে, অহেতুক বিরক্তির উদ্রেক ঘটায়। মানসিক চাপ ব্যক্তির ওপর তো বটেই পরিবেশের ওপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলে।

মানুষ যখন মানসিক চাপের সম্মুখিন হয়- তখন এক ধরনের নেতিবাচকতা তাকে পেয়ে বসে। নিজের সম্পর্কে বা নিজের দিকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে তাকাতে শুরু করে দেয়। যার ফলে আত্মবিশ্বাস নড়বড়ে হয়ে ওঠে, বিষন্নতা অবসাদ পেয়ে বসে। এমন অনাকাঙ্ক্ষিত মানসিক অবস্থার কুপ্রভাব ব্যক্তি আচরণের ওপর প্রভাব ফেলে। ফলে সে অশালীন ও অসংলগ্ন আচরণ করতে শুরু করে, অযথা উত্তেজিত হয়ে যায়।

অতএব মানসিক চাপ কীভাবে প্রতিহত করা যায়, কী করে তা মোকাবেলা করা যায়; তা জানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, ধর্মীয় বোধ ও বিশ্বাস উত্তেজনা মোকাবেলায় মানুষকে হেফাজত করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে। আধুনিক চিকিৎসাবিদরা মানসিক কষ্ট বা মর্মযাতনা দূর করার জন্য ধর্মীয় মূল্যবোধগুলোকে ব্যক্তি মনে দৃঢ়ভাবে স্থাপনের ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব লোক নিয়মিতভাবে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতে যোগ দেয় সেসব লোকের সুস্থতার পরিমাণ যারা নিয়মিতভাবে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতে যোগ দেয় না তাদের তুলনায় অনেক বেশি।

এই গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত থেকে প্রমাণ হয় যে, শারীরিক সুস্থতার সঙ্গে আধ্যাত্মিকতার শক্তিশালী সম্পর্ক রয়েছে। আর ধর্মীয় বিশ্বাস ও আচরণগুলোই প্রকৃত সুস্থতার কার্যকরী উপাদান।

পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন জায়গায় এ বিষয়ে আলোচনা রয়েছে। ওই সব আলোচনার সারমর্ম হলো- যাদের অন্তর ইমানের নূরে আলোকিত, তারা সমগ্র পৃথিবীতে সুন্দর, কল্যাণ আর ভালো ছাড়া অন্য কিছুই চোখে দেখেন না। তারা বিশ্বব্যবস্থাকে সবোর্ত্তম ব্যবস্থা বলে মনে করেন। তারা মহাপ্রজ্ঞাবান সেই স্রষ্টা ও প্রতিপালক খোদার প্রার্থনা করেন যিনি এই বিশ্ব সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়েসৃষ্টি করেছেন এবং যিনি সুন্দর ও কল্যাণ ছাড়া তার সৃষ্টিকূলের জন্য অন্য কোনো কিছুই পছন্দ করেন না। এক্ষেত্রে যদি কোনো কিছুতে ঘাটতি থাকে কিংবা জটিলতা থাকে তাহলে সেসব অসংগতি সহনীয় এবং সমাধানের পর্যায়ে পড়ে।
সূরা বাকারার ১৫৬ নম্বর আয়াতে এ সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহর ওপর বিশ্বাসী তারা যেকোনো বিপদ আপদের সময় এই সত্য ও বাস্তবতার প্রতি মনোযোগ আকৃষ্ট করে বলে যে, আমরা আল্লাহর জন্য এবং আল্লাহর দিকেই আমাদের ফিরে যেতে হবে।’

বলা হয়, ভয় মানসিক চাপের অন্যতম কারণ। আর ভয় কাটিয়ে ওঠার জন্য যত রকম উপায়ের কথা বলা হয়েছে, সেসবের মধ্যে ধর্মীয় বিশ্বাস সবচেয়ে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। ভয়ের উৎপত্তি যেখান থেকে ধর্মীয় বিশ্বাস সেই উৎপত্তিস্থলটাকেই ধ্বংস করে দেয়।

ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো, যেসব মানুষ ইসলামি শিক্ষার ছায়াতলে লালিত পালিত হয়, পবিত্র কোরআনের দৃষ্টিতে তারা মানসিক চাপ থেকে নিরাপদ। কারণ, শক্তির মূল যে উৎস তার সঙ্গে যে মানুষের সম্পর্ক সৃষ্টি হয় পৃথিবীর অন্য কোনো শক্তি তাকে আর প্রভাবিত করতে পারে না। সুতরাং আল্লাহর সঙ্গে মানে শক্তির উৎসের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনকারী মানুষ আর কোনো কিছুকেই ভয় করে না।

পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যে এক আল্লাহ ও আখেরাতের ওপর ঈমান আনবে এবং সৎকাজ করবে নি:সন্দেহে তার কোনো ভয় বা মর্ম বেদনার কারণ নেই।’

মনে রাখবেন, আপনি একজন বিশেষ মানুষ এবং নিজের সঙ্গেসবোর্ত্তম আচরণ করার যোগ্যতা রাখেন। ধর্মীয় শিক্ষাও তাই। তাই বিপদ-আপদে আল্লাহর স্মরণ, ধৈর্যধারণ, খোদাভীতি বা তাকওয়াবান হওয়া, বিপদাপদে ভেঙে না পড়ে সুস্থির থাকা, বিষন্নতা পরিহারে জন্য সৎকাজ করা এবং অপরের কল্যাণ ও সেবায় এগিয়ে যাওয়া ইসলামের শিক্ষা। কোনো মানুষ এসব অভ্যন্তরীণ বিশ্বাস দিয়ে মানসিক চাপ ও আঘাতকে সুন্দরভাবে রোধ করে দূরন্ত ঝড়ের মুখেও স্থির থাকতে পারেন।
আল্লাহতায়ালার সঙ্গে সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর উপায় হচ্ছে- দোয়া এবং নামাজ। এগুলো মানসিক অস্থিরতাকে কমিয়ে দেয়। সেইসঙ্গে ব্যক্তি মনে দৃঢ় আশার সঞ্চার করে। কারণ কোরআনে কারিমে বলা হয়েছে, ‘একমাত্র আল্লাহর জিকির বা স্মরণের মাধ্যমেই অন্তরগুলো প্রশান্তি পায়।’

Offline 710001113

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 493
    • View Profile
Many many thanks.