অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন : নতুন প্রস্তাবনা

Author Topic: অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন : নতুন প্রস্তাবনা  (Read 1315 times)

Offline aklima.ph

  • Jr. Member
  • **
  • Posts: 60
  • Test
    • View Profile
পৃথিবীতে অসংক্রামক রোগের বিস্তার বাড়ছে। বাংলাদেশেও অসংক্রামক রোগ বাড়ছে। বিকল কিডনি, ক্যান্সার, হৃদরোগ, চোখের ছানি, মানসিক স্বাস্থ্য ত্রুটি, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস প্রভৃতি অসংক্রামক রোগ বৃত্তের অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশে প্রায় দুই কোটি মানুষ বিভিন্ন ধরনের কিডনি রোগে ভুগছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৪৫ হাজার রোগী কিডনি রোগের শেষ সীমায় উপনীত হচ্ছে।
বিকল কিডনি রোগের প্রধান উপসর্গ * বমি বমি ভাব ও ক্ষুধামন্দ্যা * রক্তস্বল্পতা ও শ্বাসকষ্ট * প্রস্রাব কমে যাওয়া ও শরীরে পানি জমা * প্রস্রাবে প্রোটিন নির্গমনের কারণে তীব্র গন্ধ ও ফেনা * চর্মরোগ ছাড়াই শরীর চুলকানো ও অংশবিশেষ কালচে হয়ে যাওয়া * দুর্বলতা বৃদ্ধি, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস বিকল কিডনি রোগ সৃষ্টিতে প্রণোদনা জোগায়। বিকল কিডনি রোগ সৃষ্টিতে স্থূলতার দীর্ঘস্থায়ী প্রত্যক্ষ ভূমিকা আছে। স্থূল ব্যক্তিদের রক্ত পরিশোধনের জন্য কিডনির অতিরিক্ত শ্রম ব্যয় হয়। জলবায়ু ও পরিবেশের অবনতি এবং খাদ্যে ভেজাল বিকল কিডনি রোগ সৃষ্টির অন্যান্য কারণ।
বিকল কিডনি রোগের চিকিৎসা সহজলভ্য; তবে অত্যন্ত ব্যয়সাপেক্ষ এবং আইনের সঙ্কীর্ণতার কারণে চিকিৎসা সহজপ্রাপ্য নয়। হৃদরোগ আক্রমণে মৃত্যুর তুলনায় চিকিৎসাবঞ্চিত বিকল কিডনি রোগীর মৃত্যুর আশঙ্কা দশগুণ বেশি।
বিকল কিডনি রোগের চিকিৎসা ডায়ালাইসিস ও কিডনি প্রতিস্থাপনে সীমাবদ্ধ। ডায়ালাইসিস অত্যন্ত ব্যয়বহুল। হাসপাতাল ও ক্লিনিক ভেদে ডায়ালাইসিস চিকিৎসায় মাসে খরচ হয় ৪০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা। আর্থিক দীনতার কারণে ৯০ শতাংশের অধিক রোগী তিন বছরের মধ্যে চিকিৎসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন এবং এর ফলাফল বোধগম্য।
বিকল কিডনির উত্তম আধুনিক চিকিৎসা হচ্ছে, একজন সুস্থ ব্যক্তির দু’টি থেকে একটি কিডনি সহজ অপারেশনের মাধ্যমে সংগ্রহ করে রোগাক্রান্ত ব্যক্তির পেটের নিম্নদেশে স্থাপন। কিডনি প্রতিস্থাপনে পুরো অপারেশনে ২ ঘণ্টার মতো সময় লাগে। বাংলাদেশে খরচ দুই লাখ থেকে সাত লাখ টাকা, সিঙ্গাপুর ও আমেরিকায় প্রায় দুই কোটি এবং ভারত ও শ্রীলঙ্কায় ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা।
১৯৮২ সালে বাংলাদেশে আইপিজিএমআরে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়) প্রথম কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট শুরু হয়েছিল। এ হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় প্রতি বছর সরকারের কয়েক শ’ কোটি টাকা ব্যয় হয়। অথচ সেখানে বিগত ৩৪ বছরে মাত্র ৫১০টি কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছে।
ঢাকার শ্যামলীর সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজির অধ্যাপক কামরুল ইসলাম একক চেষ্টায় সরকারি অনুদান ছাড়াই ২০০৭ থেকে ৯ বছরে সফলভাবে ৩৮০টি কিডনি প্রতিস্থাপন করেছেন। তিনি ২০১৬ সালে ৮৪ জন বিকল কিডনি রোগীর দেহে কিডনি প্রতিস্থাপন করেছেন। তার বেসরকারি হাসপাতালে কিডনি প্রতিস্থাপনে রোগীর ব্যয় গড়ে দুই লাখ টাকা। ডা: কামরুল প্রতি তিন মাস অন্তর বিনা ফিতে সব কিডনিগ্রহীতার স্বাস্থ্য পর্যালোচনা করেন।
১৭ বছরে বারডেম হাসপাতালে কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছে ১২৫ জনের, ১০ বছরে কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে ৩৯১, এ্যাপোলো হাসপাতালে ২১ জনের এবং বিগত ছয় বছরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে পাঁচজন ও গত চার বছরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মাত্র দু’জনের দেহে কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
বাংলাদেশে প্রতি বছর কমপক্ষে ৯ হাজার বিকল কিডনি রোগীর শরীরে অঙ্গ প্রতিস্থাপন প্রয়োজন। দুর্ভাগ্যবশত বাংলাদেশে ১০টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে প্রতি বছর মাত্র দুই শ’-এর মতো কিডনি প্রতিস্থাপন হয়। প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও এত কম কিডনি প্রতিস্থাপনের মূল কারণ, দেশে বিদ্যমান ১৯৯৯ সালের মানবদেহে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আইনের অসঙ্গতি ও সঙ্কীর্ণতা। দ্বিতীয়ত, জনসাধারণের অঙ্গদান সম্পর্কে অজ্ঞতা ও অহেতুক ভীতি। তৃতীয়ত, দানের মতো একটি মহৎ কাজে নাগরিকদের উৎসাহিত করার জন্য সরকারের প্রণোদনা ও প্রচারণা নেই।
বাংলাদেশ থেকে প্রতি সপ্তাহে ৮-১০ জন বিকল কিডনি রোগী ভারতে এবং প্রায় সমসংখ্যক রোগী অন্যান্য দেশে যান কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য। এতে বছরে ব্যয় হয় প্রায় ৩০০ কোটি টাকা।
কোনো সুস্থ মানুষের জীবদ্দশায় বা মরণোত্তর কোনো রোগাক্রান্ত ব্যক্তিকে অঙ্গ দান করা যে প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার, তার স্বীকৃতি প্রদানে সরকারের শুধু অনীহা নয়, বরং ভুল আইন তৈরি করে জনগণের স্বাস্থ্যের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে।

মানবদেহে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন :
বৈশিষ্ট্য ও অসম্পূর্ণতা
জনগণের কল্যাণে মানবদেহে অন্যের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজন বিধান করার উদ্দেশ্যে সৃষ্ট বিধানটি ১৩ এপ্রিল ১৯৯৯ আইনে পরিণত হয়। অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজন ১৯৯৯ আইনের পরিধি অত্যন্ত সীমিত হওয়ায় রোগগ্রস্ত বৃহত্তর জনগোষ্ঠী সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিপুলসংখ্যক রোগী প্রয়োজনীয় অঙ্গ প্রতিস্থাপন সুবিধা পাচ্ছেন না। আইনটি অসম্পূর্ণ বলে কিছু মধ্যস্বত্বভোগী দালাল শ্রেণীর ব্যক্তি সরল মানুষকে প্রতারণা করে আইনের সীমাবদ্ধতার সুযোগ নিয়ে ভিন্ন দেশে নিয়ে গিয়ে অঙ্গ কেনাবেচা করছে। মানবদেহে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আইন ১৯৯৯-এর ১১টি ধারা আছে। দু’টি ধারা দেশে পর্যাপ্ত সংখ্যক কিডনি প্রতিস্থাপন না হওয়ার মূল কারণ। জীবিত ব্যক্তির অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দান-সংক্রান্ত ৩ নম্বর ধারাটি সবচেয়ে বেশি জনস্বার্থবিরোধী।
‘সুস্থ ও সাধারণ জ্ঞানসম্পন্ন যেকোনো ব্যক্তি তাহার দেহে এমন কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যা বিযুক্তির কারণে তাহার স্বাভাবিক জীবনযাপনে ব্যাঘাত সৃষ্টির আশঙ্কা নাই, তাহার কোনো নিকট আত্মীয়ের দেহে সংযোজনের জন্য দান করিতে পারিবে।’
২(গ) ধারায় নিকট আত্মীয়ের সংজ্ঞায় বলা হয়েছেÑ ‘নিকট আত্মীয় অর্থ পুত্র, কন্যা, পিতা, মাতা, ভাই, বোন ও রক্ত সম্পর্কিত আপন চাচা, ফুফু, মামা, খালা ও স্বামী-স্ত্রী।’
৬ ধারায় অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দাতা ও গ্রহীতার যোগ্যতা স্থির করা আছে। (১) : ‘মৃত দাতা ব্যক্তির ক্ষেত্রে তার বয়স দুই বৎসরের কম অথবা পঁয়ষট্টি বৎসরের ঊর্ধ্বে হবে না, জীবিত দাতা ব্যক্তির বয়স ১৮ বৎসরের ঊর্ধ্বে হতে হবে।’
(২) যে ব্যক্তির দেহে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজন করা হইবে তাহার বয়স ‘দুই বৎসর হইতে সত্তর বৎসর বয়সসীমার মধ্যে হইতে হইবে, তবে পনের বৎসর হইতে পঞ্চাশ বৎসর পর্যন্ত বয়সসীমার ব্যক্তিরা অগ্রাধিকার লাভ করিবেন।’
৮ নম্বর ধারায় প্রত্যেক মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট চিকিৎসা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট হাসপাতাল এবং গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত ও মরণাপন্ন রোগীর চিকিৎসা করা হয়, এমন চিকিৎসালয়ে প্রয়োজনীয় তথ্যাবলি সমন্বিত দাতা ও গ্রহীতার তথ্যাদি নথিভুক্ত রেজিস্টার করার নির্দেশ আছে। অথচ এসব বিশেষায়িত অঙ্গ প্রতিস্থাপন তদারকি করার জন্য কোনো কেন্দ্রীয় নিবন্ধন সংস্থার ব্যবস্থা রাখা হয়নি।
৯ নম্বর ধারায় অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে বিদেশে দাতাকে নিয়ে গিয়ে কিডনি প্রতিস্থাপনের বিষয়ে নির্দেশনা নেই। আইনের অসম্পূর্ণতার কারণে দেশে অনাত্মীয় কিডনি সংগ্রহ বেআইনি। কিন্তু বাংলাদেশের নাগরিকের বিদেশে কিডনি বেচাকেনা নিষিদ্ধ নয়।
৯ নম্বর ধারা ভঙ্গকারীদের শাস্তির বিধান করা হয়েছে ১০ নম্বর ধারায়। আইনের বিধান লঙ্ঘনকারী বা লঙ্ঘনে সহায়তাকারী ব্যক্তি ও চিকিৎসক সর্বোচ্চ সাত বছর এবং অন্যূন তিন বছর সশ্রম কারাদণ্ড অথবা তিন লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় প্রকারের দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন। চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে তাহার রেজিস্ট্রেশন বাতিল হইবে।

প্রস্তাবিত সংস্কার ও সংশোধনী
সাধারণ মানুষকে প্রতারণা থেকে রক্ষা এবং বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জন্য সংবিধান মোতাবেক অতিরিক্ত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রচলিত আইনটির সংস্কার ও সংশোধন প্রয়োজন। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন একটি বিজ্ঞানস্বীকৃত জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসাপদ্ধতি। অঙ্গ প্রতিস্থাপন জীবন রক্ষাকারী তো বটেই, এতে অভাবনীয় অর্থ সাশ্রয়ও হয়।
র. ১৮ বছর বা ততোধিক বয়সের বাংলাদেশের যেকোনো সচেতন সুস্থ নাগরিক, যিনি বুদ্ধি-বিবেচনায় অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দান বিষয়ে যুক্তিসঙ্গত বিবেচনা দিতে সক্ষম তিনিই অঙ্গদানের অধিকার রাখেন। তবে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সরাসরি অঙ্গদানে সম্মতি গ্রহণযোগ্য হবে না। যদি না তার অভিভাবক ও নিকট আত্মীয়স্বজন স্বার্থবিবর্জিত যুক্তিসঙ্গত বিবেচনায় বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তির অঙ্গদানের সম্মতি দেন।
অঙ্গদান প্রত্যেক নাগরিকের মানবিক ও মৌলিক অধিকার। নিজের অসুবিধা না করে দু’টি অঙ্গের একটি দান করতে পারেন। এটা তার নাগরিক অধিকার। এরূপ দানকে উৎসাহিত করতে হবে। একাধিক পদ্ধতিতে অঙ্গদাতাকে সম্মান ও সম্মানী দেবে রাষ্ট্র। ব্যক্তিগত পর্যায়ে অঙ্গ বেচাকেনা অবৈধ ও নিষিদ্ধ থাকবে।
রর. ৩ ধারার ‘নিকটাত্মীয়ের’ স্থলে ‘প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ নাগরিক’ সংযোজন করা প্রয়োজন।
৬ (১) ধারায় দাতার বয়সসীমা ৮০ বছর পর্যন্ত সংশোধন প্রয়োজন। অঙ্গগ্রহীতার বয়স মাতৃগর্ভস্থ নবজাতক থেকে ৯০ বছর পর্যন্ত বাড়ানো যুক্তিসঙ্গত। তবে কমবয়সীরা অগ্রাধিকার পাবেন।
মেডিক্যাল বোর্ড সংক্রান্ত ৭ ধারায় অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপকের সাথে ১০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন যেকোনো বিভাগের বিশেষজ্ঞদের জেলাপর্যায়ে মেডিক্যাল বোর্ডে সম্পৃক্ত করা হবে সময়োপযোগী সংস্কার।
৮ নম্বর ধারায় অঙ্গ প্রতিস্থাপন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় বাংলাদেশের সকল জেলা হাসপাতাল এবং উন্নত বেসরকারি হাসপাতালগুলো অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। তবে অঙ্গ প্রতিস্থাপন সক্ষম সকল হাসপাতালকে অবশ্যই কেন্দ্রীয় অঙ্গ নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের নিবন্ধিত হতে হবে।
ররর. দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষকে প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা এবং অনৈতিকভাবে কিডনি বেচাকেনা স্থায়ীভাবে বন্ধ করার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ সংক্রান্ত একটি অনুচ্ছেদ মানবদেহে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজন আইনের ৮ ধারায় যুক্ত করা অত্যাবশ্যক।

কেন্দ্রীয় অঙ্গ নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ
মানবদেহে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজন আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিতকরণ, জীবিত বা মৃতব্যক্তির অঙ্গদান, কোনো জীবিত ব্যক্তির অকেজো অংশের বিচ্ছেদ করে নতুন অঙ্গ সংযোজন সম্পর্কিত আইনের পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত সমস্যা নিরসন এবং সব অঙ্গদাতা ও গ্রহীতার পূর্ণ তথ্য সঠিকভাবে সংরক্ষণের জন্য কেন্দ্রীয় অঙ্গ নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ সৃষ্টি অত্যাবশ্যক। এই কর্তৃপক্ষের সভাপতি ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হবেন একজন অবসরপ্রাপ্ত মেডিক্যাল শিক্ষক বা অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, ভোক্তা সংগঠনের প্রধান কিংবা খ্যাতনামা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অথবা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সচিব। তিনি চার বছরের জন্য নিযুক্ত হবেন। তিনি নির্ধারিত বেতনভাতা ও গাড়ির সুবিধা পাবেন। তার একটি ছোট অফিস, লাইব্রেরি ও আধুনিক ল্যাবরেটরি থাকবে, যেখানে সব দাতা ও গ্রহীতার সব তথ্য সংরক্ষিত থাকবে। ল্যাবরেটরিতে সর্বপ্রকার পরীক্ষা ও টিস্যু টাইপিং ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিজ্ঞানী ও টেকনিশিয়ান থাকবেন।
চেয়ারপারসনকে সহায়তা করার জন্য ৯-১৩ সদস্যের একটি অবৈতনিক নির্বাহী পরিষদ থাকবে। খ্যাতিমান চিকিৎসক, মুক্তিযোদ্ধা, অবসরপ্রাপ্ত বিচারক (জেলা জজের নি¤œপদের নয়) সমাজসেবী, সাংবাদিক, আইনবিশারদ, সুশীলসমাজের প্রতিনিধি, এনজিওকর্মী এবং একজন সংসদ সদস্য দ্বারা অবৈতনিক নির্বাহী পরিষদ গঠিত হবে। নির্বাহী পরিষদে অন্যূন চারজন নারী সদস্য থাকবেন।
ওই অফিসের যাবতীয় খরচ এবং অঙ্গদাতাকে পুরস্কৃত করার জন্য, সম্মানী ভাতার জন্য, প্রয়োজনীয় তহবিল, জাতীয় স্বাস্থ্যের উন্নতিকল্পে সরকারি কোষাগার থেকে বরাদ্দ হবে। অত্র কর্তৃপক্ষকে করপোরেট সংস্থা, কোম্পানি ও ব্যক্তির দান, গ্রহণ এবং লটারি প্রভৃতি পদ্ধতির মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের অধিকার দেয়া বাঞ্ছনীয় হবে। অঙ্গদানে জনসাধারণকে উৎসাহিত করার জন্য কেন্দ্রীয় অঙ্গ নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সভার আয়োজন করবে, পত্রপত্রিকায় তথ্য প্রকাশ করবে এবং বিভিন্নভাবে জনগণকে অঙ্গদানে উদ্বুদ্ধ করবে।
কেন্দ্রীয় অঙ্গ নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ সব অঙ্গগ্রহীতার কাছ থেকে তার সামাজিক শ্রেণীগত অবস্থানের ভিত্তিতে অঙ্গ প্রতিপস্থাপন ব্যবস্থাপনার জন্য ফি ধার্য করতে পারবে। অঙ্গদাতা তার শারীরিক সুস্থতা ও পুষ্টির জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সম্মান ও নগদ অর্থ পাবেন এবং সারা জীবন যেকোনো সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা অধিকার অর্জন করবেন। নগদ অর্থের পরিমাণ পাঁচ লাখ টাকার বেশি হবে না। কোনো অঙ্গদাতা সরকারি সম্মানী ভাতা গ্রহণ না করে পুরো বা আংশিক অর্থ কেন্দ্রীয় অঙ্গ নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের তহবিলে দান করতে পারবেন। কেন্দ্রীয় অঙ্গ নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের তহবিলে সব দান আয়করমুক্ত হবে। অঙ্গগ্রহীতার নিবন্ধন ফি এবং অঙ্গদাতার সম্মানীভাতা কেন্দ্রীয় অঙ্গ নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিষদ স্থির করবে। নিবন্ধিত হাসপাতালে অঙ্গ প্রতিস্থাপন ও বিভিন্ন ল্যাবরেটরি পরীক্ষার দর কেন্দ্রীয় অঙ্গ নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ স্থির করে দেবে।

কর্তৃপক্ষের কর্মপরিধি
১. কর্তৃপক্ষের কার্যাবলি পরিচালনা করার জন্য কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় বিধিমালা তৈরি করে প্রয়োগ করতে পারবেন। অপ্রয়োজনীয় বিধি বাতিলও করতে পারবেন। ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে এ আইন সংশোধনের জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকারকে জ্ঞাত করবেন।
২. অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গ্রহণে আগ্রহী রোগাক্রান্ত ব্যক্তি নির্ধারিত ফরমে কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ এবং নিজের পছন্দমতো নিবন্ধিত হাসপাতালে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে নাম তালিকাভুক্ত করবেন।
৩. অঙ্গদানে আগ্রহী ব্যক্তি কেন্দ্রীয় অঙ্গ নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ নিজে উপস্থিত হয়ে নিজের নাম, ঠিকানা, রক্তের গ্রুপ, পেশা, আসক্তি-সংক্রান্ত তথ্য প্রভৃতি লিপিবদ্ধ করাবেন।
৪. অঙ্গ প্রতিস্থাপন উপযোগী সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করে নিবন্ধিত করবেন যেখানে অঙ্গদাতা ও গ্রহীতার সকল প্রকার তথ্য সংরক্ষিত থাকবে।
৫. নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান : অঙ্গ প্রতিস্থাপনে আগ্রহী জেনারেল বা বিশেষায়িত হাসপাতাল যেখানে বড় সার্জারির উপযোগী অপারেশন থিয়েটার, পর্যাপ্ত অ্যানেসথেসিয়া সুবিধা, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিসমৃদ্ধ আইসিইউ, ডায়াগনস্টিক প্যাথলজি ও টিস্যু-টাইপিং ল্যাবরেটরি, ডায়াগনস্টিক রেডিওলজি ও আলট্রাসনোগ্রাফি ব্যবস্থা এবং সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের ন্যূনপক্ষে সার্বক্ষণিক দু’জন করে বিশেষজ্ঞ শল্যবিশারদ সার্জন, ইউরোলজিস্ট ও অ্যানেসথেটিস্ট, সার্বক্ষণিক মেডিসিন ও কার্ডিওলজি বিশেষজ্ঞ আছেন, সেই হাসপাতালগুলো অঙ্গ প্রতিস্থাপন সার্জিক্যাল কেন্দ্র হিসেবে নিবন্ধিত হতে পারবে। সব প্রতিস্থাপন সার্জারির জন্য অঙ্গদানকারী ও অঙ্গগ্রহীতা ব্যক্তির পুরো ডাকনামসমেত পুরো নাম-ঠিকানা এবং স্বাস্থ্যসংক্রান্ত পূর্ণ বিবরণ সংরক্ষণ করার নিশ্চয়তা নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের থাকবে।
নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান ত্রৈমাসিক রিপোর্ট স্বাস্থ্য অধিদফতর ও অঙ্গদান কেন্দ্রীয় অঙ্গ নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ জমা দেবে। নিবন্ধিত হাসপাতালগুলোর তদারকির দায়িত্ব কেন্দ্রীয় অঙ্গ নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের ওপর বর্তাবে।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ট্রাস্টি, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র
ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার
Source: http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/213114
গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিক্যাল কলেজের উপাধ্যক্ষ

Offline tahmina

  • Jr. Member
  • **
  • Posts: 76
  • Test
    • View Profile

Offline aklima.ph

  • Jr. Member
  • **
  • Posts: 60
  • Test
    • View Profile

Offline hasanzilani

  • Newbie
  • *
  • Posts: 24
  • Test
    • View Profile
Government should patronize this initiative.