ক্যালকুলাসের সূচনা যেখান থেকে
যদিও এখানে বলা হচ্ছে যে, ক্যালকুলাস আবিষ্কার নিয়ে নিউটন এবং লিবনিজের মধ্যে বিতর্ক শুরু হয়েছে। কিন্তু তাঁরা আসলে কেউই ক্যালকুলাসকে নিজেদের বুদ্ধিমত্তার দ্বারা আবিষ্কার করেননি। কারণ ক্যালকুলাস আবিষ্কৃত হয়েছে আরো অনেক আগে। বরং বলা যায় যে, পূর্বতন গণিতবিদ, বিজ্ঞানী ও গবেষকদের কৃত কাজের শেষ পরিণতি দিয়েছেন নিউটন এবং লিবনিজ। তাঁরা ছড়ানো ছিটানো বিষয়গুলোকে একত্রিত করেছেন এবং একটি পরিপূর্ণ গণিতভিত্তিক রূপ প্রদান করেছেন।
প্রাচীনকালের অনেক গণিতবিদের চিন্তাধারাই ইন্টিগ্র্যাল ক্যালকুলাস বা সমাকলনের ধারণার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ছিলো। যদিও সেই ধারণা যথাযথ সুসঙ্গত ও নিয়মতান্ত্রিক ছিলো না। খ্রিস্টপূর্ব ১৮২০ সালের দিকে মিশরে (Egyptian Moscow Papyrus) ক্ষেত্রফল ও আয়তন নির্ণয়ের জন্য ক্যালকুলাসের মতোই পদ্ধতি ব্যবহৃত হত। কিন্তু সূত্রগুলো ছিলো গুটিকয়েক বাস্তবসংখ্যার প্রেক্ষিতে, অর্থাৎ বাস্তবিক কোনো সূত্র ছিলো না। কিছু কিছু পদ্ধতি আপেক্ষিকভাবে সঠিক ছিলো, কিন্তু সেগুলোর সঠিক প্রতিপাদনও ছিলো না। খ্রিস্টপূর্ব ৮ম শতকে ভারতীয় উপমহাদেশের গণিতবিদগণ ত্রিকোণমিতিকে অনেক সমৃদ্ধ করেছিলেন যা ‘সুল্বা সূত্র’ নামক গ্রন্থভুক্ত করা হয়। তাঁরা কয়েকটি ত্রিকোণমিতিক ফাংশনের প্রায় সঠিক ডিফারেন্সিয়েশন বা ব্যবকলন করতে সক্ষম হন।
গ্রিসে ইউডক্সাস ‘মেথড অব এক্সাশন’ বা অবসাদ পদ্ধতি ব্যবহার করে ক্ষেত্রফল ও আয়তন নির্ণয়ের জন্য লিমিট ধারণার সূত্রপাত করেন। পরবর্তীতে বিজ্ঞানী আর্কিমিডিস এই ধারণাকে আরো সুসংবদ্ধ ও উন্নত করেন এবং ‘হিউরিস্টিক’ (ন্যায়শাস্ত্রগত অনুসন্ধানবিদ্যা) প্রণয়ন করেন, যা ছিলো সমাকলনেরই প্রতিচ্ছবি। এই পদ্ধতির মাধ্যমে তিনি বৃত্তের অন্তর্গত ক্ষেত্রফল নির্ণয় করতে সক্ষম হন। আর্কিমিডিস প্রথম অনিয়মিত বক্ররেখার স্পর্শক নির্ণয়ের জন্য এমন এক পদ্ধতি ব্যবহার করেন, যা ব্যবকলনের সদৃশ। যখন তিনি সর্পিলাকার বক্ররেখা নিয়ে কাজ করছিলেন, তখন তিনি পয়েন্ট মোশন বা বিন্দুগতিকে ২টি অংশে ভাগ করেন- (১) ব্যাসার্ধ গতি এবং (২) বৃত্তীয় গতি এবং উভয় প্রকার গতিকে সংযুক্ত করতে থাকেন। এভাবে বক্ররেখাটির স্পর্শক বের করেন।