Faculties and Departments > Departments

আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম!

(1/3) > >>

Mizanur Rahman (GED):
আসলেই কী আমরা আগে সুন্দর দিন কাটাইতাম? আসলেই কী আগে গোয়াল ভরা গরু, গোলা ভরা ধান আর পুকুর ভরা মাছ ছিল? আসলেই কী আগের ছেলেমেয়েরা বেশি মেধাবী ছিল অথবা শিক্ষার মান অনেক ভালো ছিল? নাকি এগুলো সবই মায়া? নিজেকে সন্তুষ্ট রাখার সান্তনা? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া খুব কঠিন না। একটু স্থির পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যায়।

‘গোয়াল ভরা গরু, গোলা ভরা ধান আর পুকুর ভরা মাছ’ এর কথায় ধরেন। একটি গ্রামের ঠিক কয়জনের গোয়াল ভরা গরু ছিল, গোলা ভরা ধান ছিল আর পুকুর ভরা মাছ ছিল? সিনিয়র সিটিজেন যারা আছেন বলতে পারবেন। শৈশব কৈশোর গ্রামেই কেটেছে। কত অভাবী মানুষকে যে দেখেছি তার হিসেব দেয়া মুশকিল। অনেকের জন্য তিনবেলার ভাত যোগাড় করাই ছিল কঠিন ব্যাপার। আমরা নিজেরাও অনেক টানটানের মধ্যে বেড়ে উঠেছি। বিশেষ করে, আশ্বিন কার্তিক মাসে মানুষের নিদারুণ কষ্ট হতো। ধান তখনও পাকেনি, ক্ষেতে কাজ নেই, ঘরে চাল নেই। শ্রমজীবী চাষিরা পানির মত সস্তা দামে তাদের শ্রম অগ্রিম বিক্রি করত। কৃষকেরা মহাজনের কাছে সস্তা দামে আগেভাগেই তার সম্ভাব্য ধান বেচত নয়তবা চড়া সুদে নিত ঋণ। হ্যাঁ, গোলা ভরা ধান, সেটা হতো একজন বা দুইজনের। এক মহল্লায় ঐ এক-দুইজনেরই থাকত গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু। বাকী আরো শতকরা ৯০ জনই থাকত অভুক্ত, ঋণী, দরিদ্র। ঐ এক-দুইজনের বাসায় মাইক্রোবাসে চেপে মেহমান আসত, পোলাও কর্মা রান্না হতো, তার ঘ্রাণ সারা গ্রামে ছড়িয়ে যেত। শুধুই ঘ্রাণ। এক যুগ আগের কথা। ক্ষেতে কাজ করে এমন এক মাঝবয়সী লোক বলেছিল, “আমার মেয়ে ক্লাস এইটে পড়ে। অথচ এখনও তাকে এক পিস ইলিশ মাছ খাওয়াতে পারিনি!” সেই এক-দুজনের ছেলেমেয়েরা শহরে পড়তে যেত, ছুটিতে বাড়ীতে এসে আহ্লাদ করে গ্রামে ঘুড়ে বেড়াতো। তাদের সঙ্গীরও অভাব হতো না। সেই এক-দুইজনের বাসায় থাকত টেলিভিশন যা বিশেষ বিশেষ দিনে চালানো হতো আঙ্গিনায়। শত শত পাড়া প্রতিবেশি চট বা খড় পেতে বসে দেখত। তাতে দেখা যেত ‘আলিফ লায়লা।’

কিন্তু এখন কী অবস্থা? আশেপাশে তাকালেই বোঝা যায়। হতদরিদ্র কাউকে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। সারা বছরই মানুষের কিছু না কিছু আয় রোজগার হচ্ছে । অনেকেই শহরে বা বিদেশে গিয়ে রোজগার করছে। তার সুফল গ্রামে আসছে। এখন কমবেশি সবার বাসায় পোলাও মাংস রান্না হয়। সবার ছেলে মেয়ে পড়ালেখা করে। আগে সচ্ছল প্রায় সব পরিবারে ‘কাজের ছেলে বা মেয়ে’ বলে একটা ছোট্ট শিশু থাকত। তার শ্রমের কোনো মুল্য ছিল না, শুধু ‘পেটেভাতে’। যেটা এখন প্রায় নেই বললেই চলে। বড় কাজের লোক পাওয়া যায়, তবে বেতন দিতে হবে। ‘পেটেভাতে’ আর চলে না। এই জন্য টাকাওয়ালাদের আক্ষেপের শেষ নেই, ‘সবাই জমিদার হইয়া গেছে!’   

আগে যেমন গুটিকয়েক মানুষ সচ্ছল ছিল, তেমনি গুটিকয়েক মানুষই পড়ালেখা সামনের দিকে নেয়ার সাহস করত। তারপরও পাশের হার থাকত ৩০% এর কম। যেদিন বোর্ড পরীক্ষার রেজাল্ট হতো, বাড়িতে বাড়ীতে শোনা যেত কান্নার রোল। এ ফেল করছে, সে ফেল করছে। প্রায় সবাই ফেল। ঝেড়েঝুরে সেই শতকরা ৩০ জনের মত পাশ করে, তারাই ভালো জায়গায় পড়াশোনা করে, ভালো চাকরি পায়। জীবনে আর কিছু হবে না বলে বাকীরা হাল ছেড়ে দিত। বর্তমানে যাদের বয়স ২০ থেকে ৩০, তাদের অনেকেরই হয়ত এক দুইজন ফুপু বা চাচা আছেন, মেধা থাকা সত্বেও যাদের পড়ালেখা আগায়নি। কেননা, তাদের কোনো এক ভাইয়ের পেছনে পরিবারের সব সামর্থ্য আর মনোযোগ ক্ষয় হয়েছে। এখন, ৯০ থেকে ১০০ জন পাশ করে। এর মধ্যে কি ৩০ জন মেধাবী না? দিনশেষে এরাই সাফল্য পায়। বাকীরা একেবারে হাল ছেড়ে না দিয়ে বিকল্প চিন্তা করে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, কর্মমুখী প্রশিক্ষণ ইত্যাদি নানা উপায়ে নিজেদের সমৃদ্ধ করার চেষ্টা চালায় এবং সফলও হয়। মেট্রিক, ইন্টারের মধ্যেই ‘ফেল্টুস’ খেতাব পেয়ে বাকী জীবনটা ‘বাদাইম্যা’ হয়ে শেষ করে না। 

শিক্ষার মান কেমন ছিল আর কেমন হয়েছে? প্রবাদ আছে, ‘বৃক্ষ তোমার নাম কী? ফলে পরিচয়।’ অর্থাৎ আগের শিক্ষার মান কেমন ছিল, তা এখনকার বাংলাদেশ দেখলেই বোঝা যায়। কেননা, সেই শতকরা ৩০ জন মেধাবীই তো এখন বাংলাদেশ চালাচ্ছে, তাই নয় কি? এখন যা কিছু অগ্রগতি তা তাদের কর্মদক্ষতা আর বিচক্ষণতার ফল। আবার দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা বা লুটপাট যাই বলেন, সেটা তাদেরই ব্যর্থতার ফল। গ্রামের কৃষক, মজদুর, দোকানদার, রিকশাচালক বা ফেল করা সেই ৭০% তো আর দেশ কিংবা প্রশাসন চালায় না। 

তাহলে মানুষের মধ্যে ‘অতীত ভালো, বর্তমান খারাপ’ বা ‘আমরা ভালো, তোমরা খারাপ’ এই ব্যাপারগুলো কেন আসে? প্রথমত, সব মানুষের মনে এরকমটা আসে না। দ্বিতীয়ত, যারা বলছেন তারা হয়ত পরিবর্তনশীল সময় এবং বাস্তবতার সাথে খাপ খাওয়াতে পারছেন না। নির্দিষ্ট একটা কাঠামোর মধ্যেই সবকিছু ফেলে ভাবতে পছন্দ করেন। ‘সাপের ছেলে সাপ, ব্যাঙের ছেলে ব্যাঙ হবে’ এই দিন আর কী আছে? নির্দিষ্ট লক্ষ, বুদ্ধি আর পরিশ্রমের ফলে যেকেউ তার স্বপ্নে পৌছাতে পারছে। সে অনুযায়ী তাদের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আসছে। এই পরিবর্তনকে হয়ত সহজভাবে মেনে নেওয়া কঠিন। সবাই যদি সচ্ছল হয়ে যায়, সবার বাসায় টেলিভিশন ফ্রিজ আসে, সব কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে যায়, তাহলে কী হবে? মানব মন, সমতা পছন্দ করে না। সে চায় বিভাজন, উঁচু নিচু, তুমি আমি। সে তর্ক করে অতীত নিয়ে, বংশ নিয়ে, এলাকা নিয়ে, কলেজ ভার্সিটি নিয়ে, চাকরি মর্যাদা নিয়ে, ধর্ম বিশ্বাস নিয়ে। কিন্তু মানব মনের এই পছন্দ তার নিজের স্বাস্থ্যের জন্যই ক্ষতিকর। দিনশেষে কী আপনাকে তৃপ্ত করছে, মনে আনন্দ আনছে, তাই খোঁজা দরকার।

Nusrat Jahan Bristy:
 :)

Mousumi Rahaman:
 :) :)

syful_islam:
We advanced in many fields significantly including cheating and corruption!

Raisa:
good one

Navigation

[0] Message Index

[#] Next page

Go to full version