তড়িৎ ও চুম্বক: অবিচ্ছেদ্য এক সম্পর্ক আবিষ্কারের গল্প (পর্ব- ১)

Author Topic: তড়িৎ ও চুম্বক: অবিচ্ছেদ্য এক সম্পর্ক আবিষ্কারের গল্প (পর্ব- ১)  (Read 1260 times)

Offline provakar_2109

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 124
  • Test
    • View Profile
কেমন হতো আজকের পৃথিবী, যদি তড়িৎচুম্বক বিষয়ে মানুষ না জানতো? তড়িৎ ও চুম্বক সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্নভাবে মানুষ জেনেছিল অনেকদিন আগেই। কিন্তু এ দুই শক্তি যে আদতে একই অঙ্গের দুই রূপ, তা প্রথমে বুঝতে পারেনি কেউ। যদি এ সম্পর্ক আবিষ্কৃত না হতো, তবে কতটা অন্যরকম হতো আমাদের জীবনযাত্রা? প্রথমত কোনো জেনারেটর বা মোটর তো থাকতো না। এ দুটি যন্ত্রই তড়িৎচুম্বকের নীতির ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা। জেনারেটর না থাকা মানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের অধিকাংশ উৎসই বিকল হয়ে পড়া।

হয়তো কেবলমাত্র ব্যাটারি আর সৌরবিদ্যুৎ থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা সম্ভবপর হতো। কোনো ট্রান্সফরমার সম্ভব হতো না বিধায়, বিদ্যুৎ শক্তি বণ্টনের প্রশ্নই আসে না। আর সম্পূর্ণ তড়িৎচুম্বকের উপর নির্ভরশীল টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার কথা তো না বললেও চলে। আসলে এককথায় বলতে গেলে, আমরা বিদ্যুতের জগতে প্রবেশ করতেই পারতাম না। বিশালাকার মেকানিক্যাল যন্ত্রাদিই হতো আমাদের প্রযুক্তি। কিন্তু সৌভাগ্যবশত তা হয়নি। কৌতূহলী বিজ্ঞানী ও ইঞ্জিনিয়ারদের কল্যাণে মানুষ তড়িৎচুম্বক সম্পর্কে জেনেছে, নিজেদের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে পৃথিবীকে নিয়ে এসেছে আজকের পর্যায়ে। আজকের লেখায় আমরা তড়িৎ ও চুম্বকের সম্পর্ক আবিষ্কারের একদম প্রথমদিকের কাহিনী জানবো।

চুম্বকত্ব নিয়ে প্রথম বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কাজ শুরু করেন উইলিয়াম গিলবার্ট। উইলিয়াম গিলবার্ট ছিলেন রেঁনেসা পরবর্তী সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বদের মধ্যে একজন। রানী এলিজাবেথের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ছিলেন তিনি, আর ছিলেন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির একনিষ্ঠ ভক্ত। তাকে পৃথিবীর প্রথম পরীক্ষামূলক পদার্থবিজ্ঞানীও বলা চলে। পিসার হেলানো দেয়ালে গ্যালিলিওর সেই বিখ্যাত পরীক্ষার পূর্বেই, আদর্শ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে তিনি বিদ্যুৎ ও চুম্বক নিয়ে কাজ করেন।

‘বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি’ শব্দযুগল এত জোর দিয়ে বলার কারণ হচ্ছে তখনো আদর্শ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি তেমন প্রতিষ্ঠিত কিছু ছিল না। আজকে আমরা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার আদর্শ হিসেবে যা দেখি এটি রেঁনেসা পরবর্তী সময়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। এ পদ্ধতি অনুসারে পৃথিবীর যেকোনো অজানা বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসতে গবেষকদের একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এগোতে হয়। প্রথমে তারা প্রাকৃতিক কোনো ঘটনাকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন এবং কোনো একটি প্যাটার্ন খুঁজে বের করেন। এরপর এটিকে ব্যাখ্যা করার জন্য একটি অনুমানমূলক মডেল দাঁড় করান। এরপর হাতে-কলমে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখেন যে, এ মডেল কতটা অকাট্য।

গিলবার্ট তার কাজের ক্ষেত্রে এ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেন। চুম্বকত্বের প্রতি তার আগ্রহ জন্মে কম্পাস দেখে। মানুষ তখন চুম্বক সম্পর্কে বিস্তারিত না জানলেও, এর মাধ্যমে দিক নির্ধারণ করতে শিখে গিয়েছিল। তৈরি করেছিল দিক নির্ণায়ক যন্ত্র কম্পাস। সেটি দেখেই গিলবার্টের আগ্রহ জাগে চুম্বক নিয়ে। এরপর এক দশকের পরিশ্রম ও নিজের সম্পদের একটি বড় অংশ ব্যয় করে গবেষণা করার পর, গিলবার্ট চুম্বক বিষয়ে তার সিদ্ধান্তে আসেন।

১৬০০ সালের দিকে তিনি প্রকাশ করেন তার বিশালাকার ৬ ভলিউমের বই, ‘ডি ম্যাগনেট’ বা ‘অ্যাবাউট দ্য ম্যাগনেট’। তার সকল পরীক্ষার ফলাফল ও অনুমান এতে লিপিবদ্ধ ছিল। এ বিশাল গবেষণা থেকে তিনি নিচের উপসংহারগুলো টানেন,

    বিদ্যুৎ ও চুম্বকত্ব সম্পূর্ণ পৃথক দুটি বিষয়।
    চুম্বকের ধনাত্বক ও ঋণাত্বক মেরুকে আলাদা করা সম্ভব নয়।
    পানিতে বৈদ্যুতিক আদানের আকর্ষণ-বিকর্ষণ বল বিনষ্ট হয়ে যায়, কিন্তু চুম্বকের বল নষ্ট হয় না।
    উচ্চ তাপে চুম্বকীয় বল বিলুপ্ত হয়।

এছাড়া পৃথিবীর চুম্বকত্ব নিয়ে তার হাইপোথিসিসও জানিয়েছিলেন তিনি। তখন সেটি তিনি প্রমাণ না করতে পারলেও, পরবর্তীতে বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করতে সক্ষম হন। গিলবার্টের গবেষণা তখন বিজ্ঞানী মহলে বিশেষ সমাদৃত হয়েছিল। চুম্বকত্ব ও তড়িৎচুম্বক নিয়ে ভবিষ্যতে কাজ করার ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছিলেন তিনি। তার কাজের ওপর ভিত্তি করেই দু’শ বছর পর ওয়েরস্টেড, অ্যাম্পিয়াররা উন্মোচন করেছিলেন নতুন দিগন্ত। এবার একটু সেই গল্পে আসা যাক।

চুম্বকের পাশাপাশি বিদ্যুৎ নিয়ে কাজ ততদিনে অনেকটা এগিয়ে গেছে। গুয়েরিক, ম্যাশেনব্রোক, গ্যালভানি, ভোল্টা, কুলম্ব প্রমুখ বিজ্ঞানীদের কল্যাণে বিদ্যুতের জ্ঞান তখন বেশ সমৃদ্ধ। ভোল্টার তড়িৎকোষ আবিষ্কার, তা নিয়ে হামফ্রে ডেভির চমৎকার কাজের ফলে বিদ্যুৎ নিয়ে আগ্রহ বাড়ছিল অন্যান্য বিজ্ঞানীদের। নিউটনিয়ান ম্যাথমেটিক্স ও ম্যাথমেটিক্স নিয়ে ডুবে থাকা বিজ্ঞানীদের কেউ কেউ তখন এই বৈদ্যুতিক আধানের জগত নিয়েও একটু ভাবতে শুরু করছেন।

এসময় দৃশ্যপটে আসেন ওয়েরস্টেড। ১৮২০ সালের দিকের কথা, কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ে নিত্যকার মতো তার ক্লাস নিচ্ছিলেন পদার্থবিজ্ঞানী হান্স ক্রিশ্চিয়ান ওয়েরস্টেড। ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যবহারিকভাবে বিদ্যুতের কলা কৌশল দেখাচ্ছিলেন তিনি। একটি পরিবাহীর মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ পাঠানোর সময় একদমই অপ্রত্যাশিত একটি বিষয় দেখা গেল। ঠিক যখনই তিনি পরিবাহীর মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ পাঠাচ্ছিলেন, তখনই পাশের ডায়াসে রাখা একটি কম্পাস কাঁপতে শুরু করে। বিদ্যুৎ প্রবাহ বন্ধ করে দিতেই এটি আবার আগের পর্যায়ে ফিরে আসে। কিন্তু কম্পাসের কাঁপার কারণ তো চুম্বকত্বের কারণে হওয়া সম্ভব।

ওয়েরস্টেড অবাক হলেন, তবে কি বিদ্যুৎ ও চুম্বক কোনোভাবে পরস্পরের সাথে সম্পর্কিত? অন্তত এক্ষেত্রে বিষয়টি সেরকমই মনে হচ্ছিল। কিন্তু চুম্বকত্বের জনক গিলবার্ট তো বহু আগেই বলে গেছেন, বিদ্যুৎ ও চুম্বকত্ব দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ঘটনা। বিষয়টি ওয়েরস্টেড ব্যাখ্যা করতে পারলেন না। তবে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, তিনি যা দেখেছেন তা অত্যন্ত গুরুত্ববহ একটি পর্যবেক্ষণ। কম্পাসের কম্পনের সাথে বিদ্যুত প্রবাহের সংযোগ আছে এবং এর ব্যাখ্যা করাটাও জরুরি। তিনি তার এ পর্যবেক্ষণটি প্রকাশ করলেন। প্রকাশের পর বেশ দ্রুতই এটি ইউরোপের বিজ্ঞানীমহলে আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে।


Offline mdashraful.eee

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 230
  • তুমি যদি দৃশ্যমান মানুষকে'ই ভালবাসতে না পারো তাহলে
    • View Profile
Kind Regards,

Md. Ashraful Haque
Assistant Professor
Department of (EEE)
Daffodil International University, (DIU)
Permanent Campus

Offline Mousumi Rahaman

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 827
  • Only u can change ur life,No one can do it for u..
    • View Profile
Mousumi Rahaman
Senior Lecturer
Dept. Textile Engineering
Faculty of Engineering
Daffodil International University

Offline fahad.faisal

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 734
  • Believe in Hard Work and Sincerity.
    • View Profile
Fahad Faisal
Department of CSE