Science & Information Technology > Technology

কেমন হবে ভবিষ্যতের প্রযুক্তি?

(1/1)

nafees_research:
কেমন হবে ভবিষ্যতের প্রযুক্তি?

উড়ন্ত গাড়ি, জেটপ্যাক কিংবা দেহে আধুনিক যন্ত্রাংশ লাগিয়ে তৈরি হওয়া সাইবর্গ, সবই ছিল সাইন্স ফিকশন আর আমাদের কল্পনায়। কিন্তু আর বেশি দেরি নয়, আগামী ২৫ বছরের মধ্যেই আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে যুক্ত হওয়ার পথে এগিয়ে চলেছে এসকল প্রযুক্তির গবেষণার কাজ। চলুন, সেগুলোই আজ দেখে নেওয়া যাক।

উড়ন্ত গাড়ি (৫ বছর)
৫০ বছর ধরে অপেক্ষা করছেন উড়ন্ত গাড়ি চোখে দেখার জন্য, তারপর হঠাৎ করেই একইসাথে ৩টি উড়ন্ত গাড়ি তৈরি হওয়ার প্রজেক্ট আপনার চোখের সামনে ভেসে আসলো। প্রথমটা হলো ভাহানাতে, এয়ারবাস কোম্পানি ব্যাটারিচালিত এবং মাত্র একটি সিটের উড়ন্ত গাড়ি নিয়েই তাদের প্রজেক্ট শুরু করেছে। রানওয়ে ছাড়াই এটি উড়তে পারবে। ওড়ার সময় এর ডানা খুলে যাবে আর রাস্তায় ড্রাইভিং করার সময় সাধারণ গাড়ির মতোই একে দেখাবে। উড়ন্ত গাড়ির দ্বিতীয় প্রজেক্টটি হলো দুবাইয়ে, আরব আমিরাতের ট্রাফিক জ্যাম থেকে বাঁচতে এয়ার ট্যাক্সি হিসেবে কাজ করবে এই ভলোকপ্টারগুলো। দুই সিটের এই উড়ন্ত গাড়িগুলো দুই সিটের এবং সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণযোগ্য। মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যেই দুবাই শহরের যেকোন মাথায় চলে যাওয়া যাবে এই ডানাওয়ালা ভলোকপ্টারগুলো দিয়ে।

কিন্তু আপনি যদি সত্যি সত্যি সায়েন্স ফিকশনের উড়ন্ত গাড়িগুলোর স্বাদ পেতে চান, তবে আপনাকে উড়ে যেতে হবে ইসরায়েলে। আরবান অ্যারোনটিকস ফ্যানক্রাফটের তৈরি এই উড়ন্ত গাড়িগুলোর কোনো ডানা নেই, এমনকি হেলিকপ্টারের মতো কোনো রোটরও নেই। উল্লম্বভাবে ওঠা-নামা করা আগে শুধু হেলিকপ্টারের মাধ্যমেই সম্ভব ছিল, কিন্তু এর অসাধারণ অ্যারোডাইনামিক ডিজাইনের কারণে এর মাধ্যমেও তা সম্ভব হবে। হালকা কিন্তু অত্যন্ত শক্তিশালী ইঞ্জিনের সাহায্যে ১৬০ কিলোমিটার/ঘণ্টার চেয়েও বেশি দ্রুত গতিতে চলাচল করা যাবে এই ভবিষ্যতের বাহনে।

জেটপ্যাক (১০ বছর)
পাখির মতো আকাশে উড়তে চান? নিজের ইচ্ছামতো আকাশে ভেসে বেড়াতে চান? নিউজিল্যান্ডের মার্টিন এয়ারক্রাফট কোম্পানি আপনাকে সেই সুবিধা দিতেই গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। ছোট গাড়ির সমান আকারের এই বাহনে জেট ইঞ্জিনের বদলে রয়েছে ছোট কিন্তু অত্যন্ত শক্তিশালী পাখা। এড় সাহায্যেই আপনি অন্তরীক্ষে চরে বেড়াতে পারবেন প্রায় আধা ঘণ্টা, নেমে আসতে হলে আপনাকে ব্যবহার করতে হবে প্যারাস্যুট। এটি নিয়ে সফলভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়েছে, তবে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে আরো বেশ কয়েক বছর সময় লাগবে।

সাইবর্গ (২০ বছর)
অনেক দিক থেকেই মানুষ ইতিমধ্যেই সাইবর্গের পথে এগিয়ে গিয়েছে। ধরা যাক কন্ট্যাক্ট লেন্সের কথাই, যা নিকটদৃষ্টি বা হাইপারমেট্রোপিয়ার সমস্যা দূর করেছে। কিংবা ককলিয়ার ইমপ্লান্ট, যা কানের বধিরতা থেকে দূর করেছে। এমনকি কৃত্রিম অঙ্গের সাহায্যেও শারীরিক চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিরা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছেন। তবে এরপরের চ্যালেঞ্জটি হচ্ছে কৃত্রিম অঙ্গ তৈরি করা, যার মাধ্যমে আমরা স্বাভাবিক অঙ্গের মতোই সবকিছু অনুভব করতে পারবো। কৃত্রিম মস্তিষ্ক নিয়ে কাজ করার তালিকায় রয়েছে ফেসবুক, এলন মাস্ক এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠান DARPA। অন্যান্য অনেক প্রতিষ্ঠানই মস্তিষ্কের মধ্যে ইলেকট্রোড স্থাপন করে কৃত্রিম অঙ্গ নিয়ন্ত্রণ করতে সফল হয়েছে। পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তির সেন্সরি কর্টেক্সের সাথে একটি রোবোটিক হাত সংযুক্ত করেছে, যার মাধ্যমে সেই ব্যক্তি ঐ হাতের মাধ্যমেই বিভিন্ন বস্তু স্পর্শ করার অনুভূতি লাভ করছে!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি সেকেন্ড সাইট আবিষ্কার করেছে অরিয়ন ডিভাইস, যার মাধ্যমে অন্ধ ব্যক্তিরা ক্যামেরার মাধ্যমেই দর্শনানুভূতি লাভ করেছে। এর মাধ্যমে ক্যামেরাটিকে মস্তিষ্কের পিছনের ভিজুয়্যাল কর্টেক্সে সংযুক্ত করা হয়। অরিয়ন ডিভাইসের পূর্বসূরি ‘আর্গুস II’ ডিভাইসটির সাহায্যে অন্ধ ব্যক্তিরা সাদা-কালো ছবি দেখতে পারতেন। অরিয়ন ডিভাইসের সাহায্যেও রঙিন দৃশ্য দেখা সম্ভব হলেও তার ক্ষমতা খুবই ক্ষীণ। তবে এ প্রজেক্টের প্রধান ড. গ্রিনবার্গ আশা করছেন, আগামী ২০ বছরের মধ্যেই অন্ধ ব্যক্তিরা স্বাভাবিক মানুষদের মতোই দেখতে পারবেন। হয়তোবা তার চেয়েও বেশি, যেখানে ক্যামেরার সাহায্যে জুম আউট-জুম ইন করা সম্ভব হবে।

রোবট খানসামা (২৫ বছর)
আপনি কি বিশ্বাস করেন যে আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্স যখন মানুষের চেয়েও বুদ্ধিমান হয়ে পড়বে তখন এগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সমস্যাগুলোর সমাধান সহজেই বের করে ফেলবে, কিংবা মানবজাতি ধ্বংস করে ফেলবে? যা-ই হোক না কেন, এআই শীঘ্রই পৃথিবীতে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসতে যাচ্ছে। তবে আমরা এখনো একটি রোবট তৈরি করতে পারিনি যা এক কাপ চা তৈরি করে তা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে আমাদের হাতে তা পরিবেশন করবে।

এটা সত্যি যে এআই দাবা, রুবিকস কিউব কিংবা অন্যান্য ছোটখাট গাণিতিক সমস্যা সমাধানে ইতিমধ্যেই মানুষকে ছাড়িয়ে গিয়েছে, কিন্তু আমরা কি এই ‘এআই’কে এজিআই (আর্টিফিসিয়াল জেনারেল ইন্টেলিজেন্স)-এ রূপান্তরিত করতে পারবো, যেখানে রোবট মানুষের মতো চিন্তা-ভাবনা করতে পারবে? যেখানে রোবট একজন মানুষের মতোই ভাষা ব্যবহার করতে পারবে, জটিল চিন্তা-ভাবনা করতে পারবে, নতুন পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে পারবে, সাথে এই বস্তুকেন্দ্রিক পৃথিবীতে মানুষের আবেগ বুঝতে সক্ষম হবে?

একজন ব্যক্তি মনে করেন যে, হ্যাঁ, আমরা পারবো। আর তিনি হলেন প্রফেসর ইয়ুর্গেন স্মিডহুবার, যিনি আবিষ্কার করেছেন লং শর্ট-টার্ম মেমোরি (LSTM), যা ব্যবহারের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে গুগল ভয়েস, অ্যামাজন ইকোর মতো প্রযুক্তি। স্মিডহুবার আশা করেন, আগামী ২৫ বছরের মধ্যেই নিউরাল নেটকে আরো উন্নত করার মাধ্যমে এআইকে মানুষের সমান এজিআইয়ে রূপান্তরিত করা সম্ভব হবে, তবে সেজন্য অপেক্ষা করতে হবে ২০৫০ সাল পর্যন্ত।

কোয়ান্টাম কম্পিউটার (কমপক্ষে ২০ বছর)
আইসি চিপ আবিষ্কারের মাধ্যমেই ইলেকট্রনিকস জগতে বিপ্লব শুরু হয়, সবকিছুর আকার হয়ে আসতে থাকে আরো ছোট, আরো সস্তা এবং আরো ক্ষমতাসম্পন্ন। তার ক্ষমতা আরো বাড়াতেই গবেষণা করা হচ্ছে ‘কিউ বিট (কোয়ান্টাম বিট)’ নিয়ে। ক্যালটেকের বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যেই আলো ব্যবহারের মাধ্যমে ডেটা স্টোর করে কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ে সাফল্য লাভ করেছেন। লোহিত রক্তকণিকার সমান মেমোরি সেলে মাত্র একটি ফোটন আবদ্ধ করে রেখেছেন, কোয়ান্টাম চিপ আবিষ্কার এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু জনসাধারণের জন্য কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি এখনও কয়েক যুগের ব্যাপার।

থ্রিডি হলোগ্রাম (২৫ বছর)
থ্রিডি হলোগ্রাম বলতে আমরা অনেকেই যা বুঝে থাকি তা হচ্ছে লেজার লাইট ব্যবহার করে তৈরি দ্বিমাত্রিক তলে আবদ্ধ ত্রিমাত্রিক ছবি। এই থ্রিডি হলোগ্রামগুলো আমরা সহজেই কিছু কিট ব্যবহার করে বাসায় বসে তৈরি করে ফেলতে পারি। কিন্তু বর্তমানে বিজ্ঞানীরা থ্রিডি হলোগ্রাম বলতে যা বোঝাচ্ছেন, সেই থ্রিডি হলোগ্রাম আর এই থ্রিডি হলোগ্রাম এক নয়। আমরা যে থ্রিডি হলোগ্রামের কথা বললাম এগুলো আকারে ছোট, অল্প আলোতে দেখতে হয় এবং হাত দিয়ে ছোঁয়া যায় না। কিন্তু বর্তমানে বিজ্ঞানীরা যে থ্রিডি হলোগ্রাম তৈরি করার কথা ভাবছেন, সেগুলো আমরা স্বাভাবিক আলোতে দেখতে পাবো, চাইলে ছুঁতে পারবো, আবার এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নাড়াতেও পারবো।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায় মাইক্রোসফটের হলোলেন্সের কথা। এখানে গ্লাস ভিজরের মাধ্যমে ব্যক্তির চোখের সামনে বিভিন্ন কৃত্রিম বস্তু উপস্থাপন করা হয়, যা ব্যক্তির কাছে বাস্তব মনে হয় এবং ব্যক্তি সেগুলোকে তার নড়াচড়ার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণও করতে পারেন। মাইক্রোসফটসহ অন্যান্য অনেক কোম্পানিই বর্তমানে এই প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছে আর প্রত্যেকেরই মূল লক্ষ্য ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, অগমেন্টেড রিয়েলিটি আর মিক্সড রিয়েলিটির সমন্বয়ে এই হলোগ্রামগুলোকে বাস্তব থেকে বাস্তবতর করে তোলা। যেমনটি টম ক্রুজের মাইনোরিটি রিপোর্টে দেখা যায়, ঘরে বসে হাজার মাইল দূরের অফিসে সশরীরে কাজ করতে পারা!

তবে এত তাড়াতাড়িও এতটা খুশি হয়ে লাভ নেই, এই কল্পকাহিনী বাস্তবে রুপান্তর করার মতো প্রযুক্তি এখনো আমাদের হাতে পৌঁছায়নি। এই থ্রিডি হলোগ্রাম নিয়ে এখনও অনেকটা পথ পাড়ি দেওয়া বাকি। এর আগে হলোগ্রাম তৈরি করতে সবসময় লেজার রশ্মিই ব্যবহার করা হয়ে এসেছে, তবে টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব মিউনিখের গবেষকেরা এবার হলোগ্রাম তৈরি করতে শক্তিশালী ওয়াইফাই রাউটার থেকে নির্গত মাইক্রোওয়েভ রশ্মিও ব্যবহার করছেন। যেহেতু ওয়াইফাই দেয়াল ভেদ করে অন্য ঘরে প্রবেশ করতে পারে তাই তারা ধারণা করছেন এর সাহায্যে ঘরের বাইরে থেকে ভেতরে কী চলছে সহজেই দেখা যাবে!

Source: https://roar.media/bangla/main/science/futuristic-technologies/

Abdus Sattar:
Informative post.

tokiyeasir:
interesting and informative. Thanks..

Navigation

[0] Message Index

Go to full version