
জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি ও ক্ষতি মোকাবিলায় সরকার বাজেটে যে বরাদ্দ দেয় সেটি পর্যাপ্ত নয়। আবার যে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে তার প্রভাব ও গুণগত বর্ণনা নেই বাজেট দলিলে। ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা কঠিন হচ্ছে বাংলাদেশের জন্য। এতে বেশি ক্ষতির মুখে পড়ছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। গতকাল রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে একশনএইড বাংলাদেশ এবং ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেইঞ্জ এন্ড ডেভেলপমেন্ট ‘জলবায়ু বাজেট’ নিয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এমন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়।
সাংবাদিক সম্মেলনের শুরুতেই ‘জাতীয় বাজেটে জলবায়ু অর্থায়নঃ আমরা কোন অবস্থানে আছি?’ শিরোনামে একটি বিশ্লেষণপত্র তুলে ধরেন একশনএইড বাংলাদেশের জলবায়ু সহনশীলতা ও ন্যায্যতা বিভাগের প্রধান তানজির হোসেন। বিশ্লেষণপত্রে বলা হয়, বাংলাদেশ দেশীয় প্রবৃদ্ধির হার স্থিতাবস্থায় রয়েছে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে এই প্রবৃদ্ধির হার হ্রাস পেতে পারে এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাঁধাগ্রস্ত হতে পারে। কারণ বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাবে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলির মাঝে প্রথমদিকে। গত বছর ভয়াবহ বন্যার কারণে দেশের অর্থনৈতিক এবং অবকাঠামোগত ক্ষতিসহ কৃষিক্ষেত্রে শস্য ও স্বাদুপানির মাছ উত্পাদনে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। এ বছর আগাম মৌসুম ও প্রবল বর্ষার জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি না থাকার কারণে কৃষি উত্পাদনে আবারো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, জলবায়ু ঝুঁকি ও ক্ষতি কমাতে তাই সরকারকে বাজেটে সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ বাড়াতে হবে। শুধু ত্রাণ দিয়ে তো আর দায়িত্ব শেষ করা যাবে না। আগাম বর্ষা ও বন্যা কেন হচ্ছে সেই বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে হবে।
আয়োজকরা বিশ্লেষণপত্রে বলেন, গবেষণা ও বিভিন্ন পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামীতে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস-এর বেশি বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। বাংলাদেশে এর ফলে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং হবে। এ কারণে সামগ্রিক ক্ষয়ক্ষতি সহনীয় পর্যায়ে রাখতে এ বিষয়ক জাতীয় কাঠামো ও প্রস্তুতি গঠন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। একইসাথে দুর্যোগ কবলিত জনগণের সুরক্ষা এবং জলবায়ু সহনশীলতা বৃদ্ধি করতে বাজেটে অর্থ বরাদ্দ করতে হবে।
ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেইঞ্জ এন্ড ডেভেলপমেন্ট-এর পরিচালক ড. সালিমুল হক বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক অর্থের উপর নির্ভর করলে চলবে না। আমাদের নিজেদের যে অর্থ এবং সম্পদ আছে সেগুলো জলবায়ু সহনশীল করতে হবে।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মিজান আর খান বলেন, জলবায়ু বিষয়ক সরকারি প্রতিবেদনে ২০০৯ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত শুধু বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কিভাবে খরচ হয়েছে তা প্রতিবেদনের কোথাও উল্লেখ করা নেই। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৫০ থেকে ৫২ শতাংশ বাজেট দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য খরচ করা হয়েছে। কিন্তু কি ধরনের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য খরচ করা হয়েছে তা কিন্তু পরিষ্কার নয়। তিনি আরো বলেন, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কিভাবে অর্থায়ন বাড়ানো যায় সেটা ভেবে দেখার সময় এসেছে। তাই জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় আমাদের এই বাজেট বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। শুধু ঢাকা ও মন্ত্রণালয়ে বসে বাজেট করলে হবে না।
সংবাদ সম্মেলনে কিছু সুপারিশ তুলে ধরে আয়োজকরা বলেন, জলবায়ু বাজেটের যথাযথ ব্যাখ্যা দেওয়ার পাশাপাশি যে সকল মন্ত্রণালয় ও প্রকল্পসমূহ জলবায়ু অর্থায়নের তালিকায় রয়েছে, তার যথাযথ বিশ্লেষণ জরুরি। তা না হলে এই বরাদ্দ বা কাজের প্রভাব বোঝা যাবে না। ভবিষ্যত্ করনীয় নির্ধারন কঠিন হবে।
সুপারিশে আরো বলা হয়, দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ত্রাণ বিতরণ, দুর্যোগে সাড়া প্রদান এবং উদ্ধার কার্যক্রমে বরাদ্দ বৃদ্ধির চেয়ে তৃণমূল পর্যায়ে প্রস্তুতিতে আরও বেশি দৃষ্টি দেয়া উচিত। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে ক্রমবর্ধমান জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় প্রতি অর্থবছরে জলবায়ু বাজেটে ৫ শতাংশ হারে বরাদ্দ বৃদ্ধির কথা বলেন আয়োজকরা।
Source:
http://www.ittefaq.com.bd/print-edition/trade/2018/05/28/280006.html