আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিল
মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র, ১৯৪৮
মুখবন্ধ
যেহেতু মানব পরিবারের সকল সদস্যের সহজাত মর্যাদা ও সম অবিচ্ছেদ্য অধিকার-সমূহের স্বীকৃতি বিশ্বে স্বাধীনতা, ন্যায়-বিচার ও শান্তির ভিত্তি;
যেহেতু মানবিক অধিকারসমূহের প্রতি অবজ্ঞা ও ঘৃণা মানবজাতির বিবেকের পক্ষে অপমানজনক বর্বরোচিত কাযর্কলাপে পরিণতি লাভ করেছে এবং সাধারণ মানুষের সর্বোচ্চ আশা-আকাঙ্খার প্রতীক হিসেবে এমন একটি পৃথিবীর সূচনা ঘোষিত হয়েছে যেখানে মানুষ বাক ও বিশ্বাসের স্বাধীনতা এবং ভয় ও অভাব থেকে নিষ্কৃতি ভোগ করবে;
যেহেতু চূড়ান্ত পদক্ষেপ হিসেবে মানুষকে অত্যাচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হতে বাধ্য করা না হলে মানবিক অধিকারসমূহ অবশ্যই আইনের শাসনের দ্বারা সংরক্ষিত করা উচিত;
যেহেতু জাতিসমূহের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের উন্নয়নে সহায়তা করা অবশ্যক; যেহেতু জাতিসংঘভুক্ত জনগণ সনদের মাধ্যমে মৌল মানবিক অধিকারসমূহ অধিকারসমূহ, মানুষের মর্যাদা ও মূল্য এবং নারী ও পুরুষের সম-অধিকারের প্রতি আস্থা পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং সামাজিক অগ্রগতি ও ব্যাপকতর স্বাধীনতা উন্নততর জীবনমান প্রতিষ্ঠাকল্পে দৃঢপ্রতিজ্ঞ;
যেহেতু সদস্যরাষ্ট্রসমূহ জাতিসংঘের সহযোগিতায় মানবিক অধিকার ও মৌল স্বাধিকারসমূহের প্রতি সার্বজনীন শ্রদ্ধা ও মান্যতা বৃদ্ধি অর্জনে অঙ্গীকারবদ্ধ;
যেহেতু সকল অধিকার ও স্বাধিকারের ব্যাপারে একটি সাধারণ সমঝোতা উক্ত অঙ্গীকার সম্পূর্ণরূপে আদায় করার জন্য সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ;
তাই সাধারণ পরিষদ সকল জাতি ও জনগোষ্ঠীর অগ্রগতির একটি সাধারণ মানদন্ড হিসেবে জারি করছে এই
মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র
ঐ লক্ষ্যে প্রত্যেক ব্যক্তি ও সমাজের প্রত্যেক অঙ্গ মানবিক অধিকারসমূহের এই সর্বজনীন ঘোষণাপত্রটিকে সর্বদা স্মরণ রেখে শিক্ষাদান ও জ্ঞান প্রসারের মাধ্যমে এ সকল অধিকার ও স্বাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাবোধে জাগ্রত করতে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রগতিশীল ব্যবস্থাদির দ্বারা সদস্য-রাষ্ট্রসমুহের জনগণ ও তাদের অধীনস্থ অঞ্চলসমূহের অধিবাসীবৃন্দ উভয়ের মধ্যে ঐগুলোর সর্বজনীন ও কার্যকর স্বীকৃতি ও মান্যতা অর্জনের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাবে৷
অনুচ্ছেদ-১
বন্ধনহীন অবস্থায় এবং সম-মর্যাদা ও অধিকারাদি নিয়ে সকল মানুষই জণ্মগ্রহণ করে৷ বুদ্ধি ও বিবেক তাদের অপর্ণ করা হয়েছে; অতএব ভ্রাতৃত্বসুলভ মনোভাব নিয়ে তাদের একে অন্যের প্রতি আচরণ করা উচিত৷
অনুচ্ছেদ- ২
যে কোন প্রকার পার্থক্য যথা জাতি, গোত্র, বর্ণ, নারী-পুরুষ, ভাষা, ধর্ম, রাজনৈতিক বা অন্য মতবাদ, জাতীয় বা সামাজিক উত্পত্তি, সম্পক্তি, জণ্ম, বা অন্য মর্যাদা নির্বিশেষে প্রত্যেকেই ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত সকল অধিকার ও স্বাধিকারে স্বত্ববান৷
অধিকন্তু, কোন ব্যক্তি যে দেশ বা অঞ্চলের অধিবাসী, তা স্বাধীন, অছিভুক্ত এলাকা, অস্বায়ত্তশাসিত অথবা অন্য যে কোন প্রকার সীমিত সার্বভৌমত্বের মধ্যে থাকুক না কেন, তার রাজনৈতিক, সীমানাগত ও আন্তর্জাতিক মর্যাদার ভিত্তিতে কোন পার্থক্য করা চলবে না৷
অনুচ্ছেদ- ৩
প্রত্যেকেরই জীবন-ধারণ, স্বাধীনতা ও ব্যক্তি নিরাপত্তার অধিকার রয়েছে৷
অনুচ্ছেদ-৪
কাউকে দাস হিসেবে বা দাসত্বে রাখা চলবে না, সকল প্রকার দাস-প্রথা ও দাস-ব্যবসা নিষিদ্ধ থাকাবে৷
অনুচ্ছেদ-৫
কাউকে নির্যাতন অথবা নিষ্ঠুর, অমানুষিক অথবা অবমাননাকর আচরণ অথবা শাস্তি ভোগে বাধ্য করা চলবে না৷
অনুচ্ছেদ-৬
আইনের সমক্ষে প্রত্যেকেরই সর্বত্র ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃতিলাভের অধিকার রয়েছে৷
অনুচ্ছেদ-৭
আইনের কাছে সকলেরই সমান এবং কোনরূপ বৈষম্য ব্যতিরেকে সকলেরই আইনের দ্বারা সমভাবে রক্ষিত হওয়ার অধিকার রয়েছে৷ এই ঘোষণাপত্রের লঙ্ঘনজনিত বৈষম্য বা এরূপ বৈষম্যের উস্কানির বিরুদ্ধে সমভাবে রক্ষিত হওয়ার অধিকার সকলেরই আছে৷
অনুচ্ছেদ-৮
যে কার্যাদির ফলে শাসনতন্ত্র বা আইন কর্তৃক প্রদত্ত মৌল অধিকারসমূহ লঙ্ঘিত হয় সে সবের জন্য উপযুক্ত জাতীয় বিচার আদালতের মারফত কার্যকর প্রতিকার লাভের অধিকার প্রত্যেকেরই রয়েছে৷
অনুচ্ছেদ-৯
কাউকে খেয়ালখুশীমত গ্রেফতার, আটক অথবা নির্বাসন করা যাবে না৷
অনুচ্ছেদ-১০
প্রত্যেকেরই তার অধিকার ও দায়িত্বসমূহ এবং তার বিরুদ্ধে আনীত যে কোন ফৌজদারী অভিযোগ নিরূপণের জন্য পূর্ণ সমতার ভিত্তিতে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার-আদালতে ন্যায্যভাবে ও প্রকাশ্যে শুনানী লাভের অধিকার রয়েছে৷
অনুচ্ছেদ-১১
কোন দন্ডযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত হলে প্রত্যেকেরই আত্নপক্ষ সমর্থনের নিশ্চয়তা দেয় এমন গণ-আদালত কর্তৃক আইন অনুযায়ী দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত নির্দোষ বলে বিবেচিত হওয়ার অধিকার রয়েছে৷
কাউকেই কোন কাজ বা ক্রটির জন্য দন্ডযোগ্য অপরাধে দোষী সাবাস্ত করা চলবে না, যদি সংঘটনকালে তা জাতীয় বা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী দন্ডযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য না হয়ে থাকে৷ আবার দন্ডযোগ্য অপরাধ সংঘটনকালে যতটুকু শাস্তি প্রযোজ্য ছিল তার চেয়ে শাস্তি প্রয়োগ চলবে না৷
অনুচ্ছেদ-১২
কাউকে তার ব্যক্তিগত গোপনীয়তা, পরিবার, বসতবাড়ি বা চিঠিপত্রের ব্যাপারে খেয়ালখুশীমত হস্তক্ষেপ অথবা সম্মান ও সুনামের ওপর আক্রমণ করা চলবে না৷
অনুচ্ছেদ-১৩
নিজ রাষ্ট্রে সীমানার মধ্যে চলাচল ও বসতি স্থাপনের অধিকার প্রত্যেকেরই রয়েছে৷
প্রত্যেকেরই নিজ দেশসহ যে কোন দেশ ছেড়ে যাওয়ার ও স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের অধিকার রয়েছে৷
অনুচ্ছেদ-১৪
নির্যাতন এড়ানোর জন্য প্রত্যেকেরই অপর দেশসমূহে আশ্রয় প্রার্থনা ও আশ্রয় লাভ করার অধিকার রয়েছে৷
অরাজনৈতিক অপরাধসমূহ অথবা জাতিসংঘের উদ্দেশ্যে ও মূলনীতি বিরোধী কার্যকলাপ থেকে সত্যিকারভাবে উদ্ভুত নির্যাতনের ক্ষেত্রে এই অধিকার নাও পাওয়া যেতে পারে৷
অনুচ্ছেদ-১৫
প্রত্যেকেরই একটি জাতীয়তার অধিকার রয়েছে৷
কাউকেই যথেচ্ছভাবে তার জাতীয়তা থেকে বঞ্চিত করা অথবা তাকে তার জাতীয়তা পরিবর্তনের অধিকার অস্বীকার করা চলবে না৷