দেশ পেরিয়ে মেঘের দেশে

Author Topic: দেশ পেরিয়ে মেঘের দেশে  (Read 1888 times)

Offline Sahadat Hossain

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 368
  • Test
    • View Profile
দেশ পেরিয়ে মেঘের দেশে
« on: June 05, 2018, 10:49:08 AM »
কিছুদিন আগেই বেড়াতে গিয়েছিলাম মেঘের বাড়িতে। তীব্র শীতের মধ্যেও মেঘের কি অফুরান আনাগোনা। সূর্যের সঙ্গে কানামাছি খেলে খেলে সবগুলো মেঘ ছুঁয়ে গিয়েছিল ১৫ জন ম্যাডভেঞ্চারিস্টকে। অহ্‌, বলা হয়নি, আমাদের ঘোরাঘুরির একটা গ্রুপ আছে—নাম ‘ওয়াইল্ড অ্যাডভেঞ্চার’। এখান থেকেই ১৫ জন মেঘ দেখেতে গিয়েছিলাম মেঘের দেশে। আমরা মেঘের ওপরে দৌড়েছি, পানির নিচে হেঁটেছি, পাহাড়ের ওপরে উড়েছি! বাদ রাখিনি একটি সকালও। শিলং, মেঘালয়, চেরাপুঞ্জি—সব ঘুরে আমরা দেখেছি প্রকৃতির বিস্ময় লিভিং রুট ব্রিজ। দাঁড়িয়েছি পাহাড়ের একেবারে শেষ মাথায়—স্মিতভ্যালিতে, যেখান থেকে একটু পা হড়কালেই কয়েক মাইল নিচে পড়ে যেতে হবে! ঘুরেছি এশিয়ার সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রামে। সবশেষে অবাকের চূড়ান্ত হয়েছি স্বচ্ছ পানির উমগট নদী দেখে। আমরা গিয়েছিয়াম মেঘালয়।

আমাদের সিলেটের তামাবিল সীমান্ত থেকেই ছানাবড়া চোখের শুরু। বাংলাদেশের পুরো উত্তর দিকটা দেয়াল করে দাঁড়িয়ে থাকা মেঘালয়ের সব শেষ শহর ডাউকি। এখানেই বাজারে ডলার আর টাকা ভাঙিয়ে দেশের সীমানা ছুঁয়ে ছুঁয়ে গেলাম পাংতুমাই ঝরনায়। যে ঝরনাটা বাংলাদেশ থেকে শুধু দেখা যায়। সেটার জলে গা না ভিজানোর মতো বোকামি আমরা কেউই করলাম না। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর আমাদের গাড়ি পৌঁছাল এশিয়ার রুয়াই গ্রামে। এখানে রয়েছে প্রকৃতির এক অদ্ভুত সৃষ্টি—লিভিং রুট ব্রিজ। পাহাড়ি ঝিরির দুই পাশের গাছ মিলে প্রাকৃতিকভাবেই তৈরি হয়েছে জীবন্ত এই সেতু। মাথার ওপরে জীবন্ত গাছ, পায়ের নিচে টলটলে পানি!

এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে যাওয়ার পরিবহন
এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে যাওয়ার পরিবহন
এরপরের গল্পটুকু স্রেফ অবিশ্বাসের—এরা পাহাড় কাটাকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছে! টানা আধঘণ্টা এবড়োখেবড়ো পথে চলার পর হুট করে রাস্তাটা হয়ে গেছে মসৃণ, মাখনের মতো! সে মাখনে প্রলেপ দিতে দূর থেকে ছুটে আসছে মেঘের দল, মুহূর্তের মধ্যেই তারা ঢেকে দিল পুরো রাস্তা। রাস্তার দুপাশ জুড়ে মেঘের ঘরবসতি। এ সময় কেউ নিচ থেকে তাকালে নিশ্চিত দেখত যে মেঘের ওপর দিয়ে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলে যাচ্ছে গাড়িগুলো!

মেঘালয়ের এই রাস্তাগুলো এমনই, সারাক্ষণ মেঘ পড়ে থাকে এখানে। ফুঁ দিয়ে মেঘ সরিয়ে এগোতে হয় সামনের দিকে। কখনো অপেক্ষা করতে হয় সামনের মেঘ কেটে যাওয়ার জন্য, আবার কখনো অপেক্ষা করতে করতে দেখা মিলে অসম্ভব সুন্দর রংধনুর! প্রায় আড়াই ঘণ্টার মেঘের রাস্তা পেরিয়ে আমরা চলে গেলাম শিলং শহরে। পাহাড়ের ওপর থেকে ঘুরে ঘুরে এখানে নামতে হয়। ওপরে তাপমাত্রা ১০-১১ ডিগ্রি, সেটা এই শহরে ১৬-১৮ ডিগ্রি। ছবির মতো সাজানো-গোছানো পরিকল্পিত এক শহর। আমরা ছিলাম লাবাং এলাকায়। প্রতিটা বাড়ি ফুল দিয়ে সাজানো। এখানে প্রায় সবাই বাংলাদেশি। দেশভাগের সময় যাঁরা এ দেশ থেকে চলে গিয়েছিলেন, তাঁরা সারা জীবনের জন্যই আস্তানা গেড়েছেন সেখানে। শিলং ছোট্ট শহর। এখানেই সবকিছুই পুলিশ বাজারকে ঘিরে। এলিফ্যান্ট ফলস, সুইট ফলস, উমিয়াম লেক, এশিয়ার সবচেয়ে বড় ক্যাথেড্রাল, শিলং পিক, লেডি হায়দার পার্কসহ আরও অনেক জায়গা আছে দেখার জন্য। তবে সবাইকে একধাক্কায় কাত করে দিয়েছে স্মিতভ্যালি। হুট করে দেখলে দেখা যাবে পুরো পাহাড়ে সাগরের ঢেউ লেগেছে। ঢেউ টিনের মতো ঢেউ ঢেউ এই স্মিতভ্যালি। যত দূর চোখ যায় কোনো গাছপালা নেই, সোনালি ঘাস বিছানো পুরো ভ্যালিজুড়ে। এখানের সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, পাহাড়টা হুট করে শেষ হয়ে গেছে, একেবারে কিনারায় এসে দাঁড়ালে মনে হবে দুনিয়ার শেষ মাথায় বুঝি চলে এসেছি।

পরদিন আমরা গেলাম মওকডক ভ্যালি। এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে রশি দিয়ে ঝুলে ঝুলে যেতে হবে। একেকজনের ৮০০ রুপি করে লাগল। সেদিন ওই দড়িতে না ঝুলে পড়লে জানতামই না বিশাল পাহাড়ের মাঝে একাকী হয়ে গেলে জীবনের অর্থই পাল্টে যায়। দুই পাহাড়ের ঠিক মাঝখানে যখন ঝুলে ঝুলে ছুটে যাচ্ছি, তখন আমার পায়ের নিচে বিশাল এক ঝরনা। নিজের কালো ছায়াটা দৌড়ে বেড়াচ্ছে অচিন দেশের সবুজ পাহাড়ে!


পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয় চেরাপুঞ্জিতে। এখানেই দেখা মিলে বিশ্ববিখ্যাত সেভেন সিস্টার ওয়াটার ফলসের। মেঘালয়ের সাতটা রাজ্যের পানি এখানে এসে পড়ে বলেই এর নাম সেভেন সিস্টার্স। এসব পানি সিলেটের ভোলাগঞ্জ হয়ে বাংলাদেশে ঢোকে। সেভেন সিস্টার্সের একেবারে মাথায় এসে দাঁড়ালে পরিষ্কার দেখা যায় বাংলাদেশের গোটা সুনামগঞ্জ এলাকা। এখান থেকে বের হয়ে গিয়েছিলাম নোহকালিকাই ওয়াটার ফলসে। বাঙালিরা দুষ্টুমি করে একে বলে নোয়াখালী ফলস!

ফেরার পথে পরিকল্পনা ছিল উমগট নদীর পাড়ে রাত কাটিয়ে পর দিন ঢুকে যাব বাংলাদেশে। মাঝরাতে পৌঁছালাম উমগটে, সেখানে আগে থেকেই ঠিক করে রাখা তাঁবুতে ব্যাগ রেখে অমাবস্যার আলোতে চালিয়ে দিলাম ক্যাম্প ফায়ার আর বার-বি-কিউ। সকালে চোখ মেললাম স্বচ্ছ জলের এক নদীতে। নদীর পানি এতই স্বচ্ছ যে দূর থেকে নৌকাগুলোকে দেখলে মনে হবে হাওয়ায় ভাসছে! এর অবস্থান ভারতের মেঘালয়ে। জাফলং থেকে বড়জোর ৮ কি.মি.। গাড়িতে যেতে লাগে ২০ মিনিট। কোনো ক্যামেরার লেন্সে এই সৌন্দর্য তুলে ধরা যাবে না। এখানে ঘণ্টাখানেক ঘুরে বেড়ালেই মাছেদের সংসার দেখা যায়, গোনা যায় পাথরের পরিবারের সবচেয়ে ছোট সদস্য টিকেও!

কীভাবে যাবেন

তামাবিল-ডাউকি বন্দর দিয়ে ভারতের ভিসা করিয়ে নিন। সোনালী ব্যাংকে ৫০০ টাকার ট্র্যাভেল ট্যাক্স জমা দিয়ে রাখুন। এরপর কোনো এক শুভদিন দেখে রওনা করে দিন। ডাউকি থেকে শিলং আড়াই ঘণ্টার স্বর্গীয় পথ। বাংলাদেশি টাকায় ৭ থেকে ৮ হাজার দিয়ে অনায়াসেই তিন দিন ঘুরে আসতে পারবেন। মেঘালয়ে যেকোনো সময়েই যেতে পারবেন। সারা বছর সেখানে মেঘ থাকে। এই ঈদের ছুটিতে মেঘালয় যেমন ঘুরে আসতে পারেন, তেমনি করে কম খরচে দার্জিলিং, ভুটান আর নেপালও বেড়িয়ে আসতে পারেন।

Ref: Daily Prothom Alo
Md.Sahadat Hossain
Administrative Officer
Office of the Director of Administration
Daffodil Tower(DT)- 4
102/1, Shukrabad, Mirpur Road, Dhanmondi.
Email: da-office@daffodilvarsity.edu.bd
Cell & WhatsApp: 01847027549 IP: 65379

Offline sanjida.dhaka

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 228
    • View Profile
Re: দেশ পেরিয়ে মেঘের দেশে
« Reply #1 on: June 11, 2018, 11:44:28 AM »
informative...