নারী অধিকার
নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ (সিডও)
ভূমিকা
যুগ যুগ ধরে নারীর প্রতি যে বৈষম্য চলে আসছে তা দুর করার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই জাতিসংঘ চেষ্ট করে যাচ্ছে৷ নারীর অধিকার সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সকলকে সজাগ করে তুলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্র প্রস্তুতের প্রচেষ্টায় জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালকে "বিশ্ব নারী বর্ষ" হিসেবে ঘোষণা করে৷ এরপর নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করার জন্য আরও কার্যকর ও দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়৷ এরই প্রেক্ষাপটে ১৯৭৯ সালের ১৮ই ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয় নারীর প্রতি সব ধরণের বৈষম্য দূরীকরণ বিষয়ক সনদ বা কনভেনশন৷ ইংরেজীতে একে বলা হয়েছে Convention on the Elimination of All Forms of Discrimination Against Women বা সংক্ষেপে CEDAW (সিডও)৷ বলা যায় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে সিডও নামের এই সনদ বা কনভেনশন গৃহীত হওয়ার মধ্য দিয়ে নারীর জন্য সমান অধিকারের লক্ষ্য অর্জনের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে৷
বিভিন্ন ওয়ার্কিং গ্রুপ, নারী জাতির মর্যাদা বিষয়ক কমিশন এবং সাধারণ পরিষদের মধ্যে পাঁচ বছর ধরে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা ও পর্যালোচনার সফল পরিণতিতে এই সনদ গৃহীত হয়৷ সকল ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতার ভিত্তিতে বিবাহিতা-অবিবাহিতা নির্বিশেষে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, নাগরিক ইত্যাদি সকল বিষয়ে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সেই সাথে জাতীয় পর্যায়ে আইন প্রণয়ন করে বৈষম্যমূলক আচরণের অবসানের জন্য সনদে আহ্বান জানানো হয়েছে৷ এ ছাড়া কনভেনশনে পুরুষ ও নারীর মধ্যে সমতা স্থাপন দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য এবং প্রচলিত যেসব সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ধারা বৈষম্যকে স্থায়ী করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে, সেগুলো পরিবর্তনের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে৷
অন্যান্য ব্যবস্থার মধ্যে এই সুপারিশমালায় রয়েছে রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনে নারীর সমান অধিকার; শিক্ষায় সমান সুবিধা ও পাঠ্যক্রম অনুসরণে সমান সুযোগ; নিয়োগদান ও বেতন প্রদানের ক্ষৈত্রে বৈষম্যহীনতা; এবং বিবাহ ও মাতৃত্বের ক্ষেত্রে চাকুরীর নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধান৷ সনদে পারিবারিক জীবনে নারীর পাশাপাশি পুরুষের সমান দায়িত্বের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে৷
১৯৮০ সালের ১লা মার্চ সনদে স্বাক্ষর শুরু হয় এবং এটি ১৯৮১ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হয়৷ ইতোমধ্যে ১৫০টিরও অধিক দেশ এই কনভেনশন অনুমোদন ক'রে স্বাক্ষরদান করেছে৷ বাংলাদেশ এই দলিল অনুমোদন করে স্বাক্ষর করেছে ১৯৮৪ সালের ৬ই নভেম্বর৷
এই কনভেনশন বা সিডও দলিলের মূল মর্মবাণী হল সমাজ ও সভ্যতার ক্রমবিকাশে যুগ যুগ ধরে নারী যে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করে আসছে সেই ভূমিকার যথাযথ স্বীকৃতি এবং সার্বিকভাবে গোটা বিশ্বের শান্তি ও উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সকল ক্ষেত্রে নারী পুরুষের সমতা স্থাপন করা৷ এর জন্য আইন প্রণয়ন, প্রচলিত আইনের সংস্কার, আইন প্রয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি ইত্যাদি যা কিছু প্রয়োজন, সনদে শরীক রাষ্ট্রগুলো তার সকল ব্যবস্থা গ্রহণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷
পরিচ্ছেদ-১
অনুচ্ছেদ - ১
এই কনভেনশন, "নারীর প্রতি বৈষম্য" বলতে বুঝাবে পুরুষ নারী ভিত্তিতে যে কোন পার্থক্য, বঞ্চনা অথবা বিধি নিষেধ যার মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, নাগরিক অথবা অন্য যে কোন ক্ষেত্রে মৌলিক স্বাধীনতা স্বীকার করে নেয়া, তা ভোগ করা অথবা বৈবাহিক অবস্থা নির্বিশেষে পুরুষ ও নারীর সমতার ভিত্তিতে নারীর দ্বারা তার ব্যবহার বা চর্চা, ক্ষতিগ্রস্থ অথবা দরকার মত প্রভাব বা উদ্দেশ্য রয়েছে৷
অনুচ্ছেদ - ২
এই কনভেনশনে রাষ্ট্রপক্ষসমূহ নারীর প্রতি সকল বৈষম্যের নিন্দা করে এবং উপযুক্ত সকল উপায় ও অবিলম্বে নারীর প্রতি বৈষম্য দূরীকরণের একটি নীতি অনুসরণে সম্মত হয়৷ এই লক্ষ্যে তারা যা যা করবে বলে অঙ্গীকার করে তা হচ্ছে -
ক) পুরুষ ও নারীর সমতার নীতি তাদের জাতীয় সংবিধান অথবা অন্য কোন উপযুক্ত আইনে ইতোমধ্যেই অন্তর্ভুক্ত না হয়ে থাকলে তা অন্তর্ভুক্ত করা এবং আইনের মাধ্যমে ও অন্যান্য উপযুক্ত উপায়ে এই নীতির প্রকৃত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা;
খ) নারীর প্রতি সকল ধরনের বৈষম্য নিষিদ্ধ করে উপযুক্ত ক্ষেত্রে আইন মানতে বাধ্য করার ব্যবস্থাসহ যথোপযুক্ত আইনগত ও অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা;
গ) পুরুষের সঙ্গে সমতার ভিত্তিতে নারীর অধিকারসমূহের সুরক্ষা আইনগতভাবে প্রতিষ্ঠা করা এবং উপযুক্ত জাতীয় আদালতে ও অন্যান্য সরকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যে কোন বৈষম্য থেকে নারীকে রক্ষা কার্যকরভাবে নিশ্চিত করা;
ঘ) নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক যে কোন কর্মকান্ডে নিয়োজিত হওয়া থেকে বিরত থাকা এবং সরকারী কর্তৃপক্ষ ও প্রতিষ্ঠানসমূহ যাতে এই দায়িত্ব অনুসারে কাজ করে তা নিশ্চিত করা;
ঙ) কোন ব্যক্তি, সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান যাতে নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করতে না পারে তা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে সকল উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা;
চ) প্রচলিত যেসব আইন, বিধি, প্রথা ও অভ্যাস নারীর প্রতি বৈষম্য সৃষ্টি করে সেগুলো পরিবর্তন অথবা বাতিল করার উদ্দেশ্যে আইন প্রণয়নসহ সকল উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা;
ছ) যে সব জাতীয় দন্ড বিধান নারীর প্রতি বৈষম্য সৃষ্টি করে সেগুলো বাতিল করা৷
অনুচ্ছেদ - ৩
পুরুষের সঙ্গে সমতার ভিত্তিতে মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকারসমূহ প্রয়োগ ও ভোগে নারীকে নিশ্চয়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে এবং নারীর পূর্ণ উন্নয়ন ও অগ্রগতি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে, রাষ্ট্রপক্ষসমূহ সকল ক্ষেত্রে বিশেষ করে রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে আইন প্রণয়নসহ সকল উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে৷
অনুচ্ছেদ - ৪
পুরুষ ও নারীর মধ্যে প্রকৃত প্রস্তাবে ত্বরাম্নিত করার লক্ষ্যে, রাষ্ট্রপক্ষসমূহ কোন অস্থায়ী বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তা এই কনভেনশনে বর্ণিত সংজ্ঞা অনুযায়ী বৈষম্য হিসেবে বিবেচনা করা হবে না৷ তবে এসব ব্যবস্থা গ্রহণ কোন ভাবেই অসম অথবা পৃথক মান বজায় রাখার ফল হিসেবে যুক্ত হবে না; সুযোগ ও আচরণের সমতার লক্ষ্য অর্জিত হলে এসব ব্যবস্থা রহিত করা হবে৷
রাষ্ট্রপক্ষসমূহ মাতৃত্ব রক্ষার লক্ষ্যে এই কনভেনশনে বর্ণিত ব্যবস্থাসহ কোন বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তা বৈষম্যমূলক বলে বিবেচিত হবে না৷
অনুচ্ছেদ - ৫
রাষ্ট্রপক্ষসমূহ নিচে যেসব বিষয় বর্ণনা করা হয়েছে সেগুলোর জন্য সকল উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে :
(ক) পুরুষ ও নারীর মধ্যে কেউ উত্কৃষ্ট অথবা কেউ নিকৃষ্ট এই ধারণার ভিত্তিতে কিংবা পুরুষ ও নারীর চিরাচরিত ভূমিকার ভিত্তিতে যে সব কুসংস্কার, প্রথা ও অভ্যাস গড়ে উঠেছে সেগুলো দূর করার লক্ষ্যে পুরুষ ও নারীর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আচরণের ধরন পরিবর্তন করা;
খ) মাতৃত্বকে একটি সামাজিক কাজ হিসেবে যথাযথভাবে বিবেচনা এবং সকল ক্ষেত্রে শিশুদের স্বার্থই মূল বিবেচ্য বিষয়- এ কথা স্মরণ রেখে সন্তান-সন্তুতির লালন পালন ও উন্নয়ন এবং পুরুষ ও নারীর অভিন্ন দায়িত্বের স্বীকৃতির বিষয় যাতে পারিবারিক শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় তা নিশ্চিত করা৷
অনুচ্ছেদ - ৬
রাষ্ট্রপক্ষসমূহ নারীকে নিয়ে সব ধরনের অবৈধ ব্যবসা এবং দেহ ব্যবসার আকারে নারীর শোষণ দমন করার লক্ষ্যে আইন প্রণয়নসহ সকল উপযু্ক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে৷
পরিচ্ছেদ- ২
অনুচ্ছেদ - ৭
রাষ্ট্রপক্ষসমূহ দেশের রাজনৈতিক ও জনজীবনে নারীর প্রতি বৈষম্য দূরীকরণে সকল উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং বিশেষ করে পুরুষের সঙ্গে সমান শর্তে যে সব ক্ষেত্রে নারীর অধিকার নিশ্চিত করবে সে গুলো হচ্ছে-
ক) সকল নির্বাচন ও গণভোটে ভোটদান এবং জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সংস্থাসমূহের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উপযুক্ত বিবেচিত হওয়া;
খ) সরকারী নীতি প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নে অংশ গ্রহণ এবং সরকারী পদে অধিষ্ঠিত হওয়া ও সরকারের সকল পর্যায়ে সরকারী কাজকর্ম সম্পাদন;
গ) দেশের জনজীবন ও রাজনৈতিক জীবনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেসরকারী সংস্থা ও সমিতিসমূহের কাজে অংশ গ্রহণ৷
অনুচ্ছেদ - ৮
রাষ্ট্রপক্ষসমূহ পুরুষের সঙ্গে সমান শর্তে এবং কোন রকম বৈষম্য ছাড়াই নারীর জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজ নিজ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের কাজ কর্মে অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করতে সকল উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে৷
অনুচ্ছেদ - ৯
রাষ্ট্রপক্ষসমূহ জাতীয়তা অর্জন, পরিবর্তন অথবা তা বজায় রাখতে নারীকে পুরুষের মতই সমান অধিকার প্রদান করবে৷ রাষ্ট্রসমূহ বিশেষ করে নিশ্চিত করবে যে একজন বিদেশীর সঙ্গে বিবাহ অথবা বিবাহ চলাকালে স্বামীর জাতীয়তা পরিবর্তনের ফলে স্বাভাবিক পরিণতি হিসেবে স্ত্রীর জাতীয়তা পরিবর্তিত হবে না, তাঁকে জাতীয়তাহীন করবে না অথবা জাতীয়তা গ্রহণে তাঁকে বাধ্য করা হবে না৷
রাষ্ট্রপক্ষসমূহ নারীকে তাঁর সন্তান-সন্তুতির জাতীয়তার ক্ষেত্রে পুরুষের মতই সমান অধিকার প্রদান করবে৷
পরিচ্ছেদ - ৩
অনুচ্ছেদ - ১০
শিক্ষা ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে, বিশেষ করে পুরুষ ও নারীর সমতার ভিত্তিতে যেসব বিষয় নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রপক্ষসমূহ নারীর প্রতি বৈষম্য দূরীকরণের জন্য সকল উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, সেগুলো হচ্ছে-
ক) কর্মজীবন ও বৃত্তিমূলক নির্দেশনা, পল্লী ও শহরাঞ্চলে সকল ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা গ্রহণ ও ডিপ্লোমা লাভের সুযোগের জন্য একই শর্তাবলী;স্কুল-পূর্ব, সাধারণ, কারিগরী, পেশাগত ও উচ্চতর কারিগরী শিক্ষা, সেই সাথে সকল ধরনের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণে এই সমতা নিশ্চিত করা;
খ) সহশিক্ষা এবং পুরুষ ও নারীর ভুমিকা সম্পর্কিত চিরাচরিত ধারণা দূরীকরণের লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক অন্য ধরনের শিক্ষা উত্সাহিত করার মাধ্যমে, বিশেষ করে পাঠ্যপুস্তক ও বিদ্যালয় কর্মসূচী সংশোধন এবং উপযুক্ত শিক্ষা পদ্ধতি গ্রহণের মাধ্যমে সকল পর্যায়ে এবং সকল ধরনের শিক্ষায় পুরুষ ও নারীর ভূমিকা সম্পর্কিত চিরাচরিত যে কোন ধারণা দূরীকরণ;
গ) বৃত্তি এবং অন্যান্য শিক্ষা মঞ্জুরী লাভবান হওয়ার একই সুযোগ প্রদান;
ঘ) বয়স্ক ও কর্মমূলক শিক্ষা কর্মসূচীসহ শিক্ষা অব্যাহত রাখার কর্মসূচী, বিশেষ করে পুরুষ ও নারীর মধ্যে শিক্ষা ক্ষেত্রে বিরাজমান যে কোন দূরত্ব স্বল্পতম সম্ভব সময়ের মধ্যে কমিয়ে আনার লক্ষ্যে প্রণীত কর্মসূচীসমূহে সুযোগ লাভের একই সুবিধা প্রদান;
ঙ) ছাত্রীদের বিদ্যালয় ত্যাগের হার কমানো এবং যেসব বালিকা ও মহিলা নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বিদ্যালয় ত্যাগ করেেছন তাদের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচীর আয়োজন;
চ) খেলাধূলা ও শারীরিক শিক্ষায় সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণের জন্য একই সুযোগ প্রদান;
ছ) পরিবারের স্বাস্থ্য ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে সহায়তা করার উদ্দেশ্যে পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কিত তথ্য ও পরামর্শসহ নির্দিষ্ট শিক্ষামূলক তথ্য পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি৷
অনুচ্ছেদ - ১১
১. পুরুষ ও নারীর সমতার ভিত্তিতে তাদের একই অধিকার, বিশেষ করে নিম্নে বর্ণিত অধিকারসমূহ, নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সর্ব প্রকার নিয়োগ দানের ক্ষেত্রে শরীক রাষ্ট্রসমূহ নারীর প্রতি বৈষম্য দূরীকরণের জন্য সকল উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে-
ক) সকল মানুষের মৌলিক কর্মসংস্থানের অধিকার;
খ) কর্মে নিয়োগের ক্ষেত্রে একই বাছাই মান প্রযোগসহ একই নিয়োগ সুবিধা পাওযার অধিকার;
গ) পেশা ও চাকুরী স্বাধীনভাবে বেছে নেয়ার অধিকার; পদোন্নতি, চাকুরীর নিরাপত্তা এবং চাকুরীর সকল সুবিধা ও শর্ত ভোগ করার অধিকার এবং শিক্ষানবীস হিসেবে প্রশিক্ষণ, উচ্চতর বৃত্তিমুলক প্রশিক্ষণ পুনঃপ্রশিক্ষণ গ্রহণের অধিকার ;
ঘ) বিভিন্ন সুযোগ সুবিধাসহ সমান পারিশ্রমিক, একই মানের কাজের ক্ষেত্রে একই আচরণ, সেই সাথে কাজের মান মূল্যায়নের ক্ষেত্রে সমান আচরণ পাওয়ার অধিকার ;
ঙ) বিশেষ করে অবসর গ্রহণ, বেকারত্ব, অসুস্থতা, অক্ষমতা ও বার্ধক্য এবং কাজ করার অন্যান্য অক্ষমতার ক্ষেত্রে সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার এবং সেই সাথে সবেতন ছুটি ভোগের অধিকার;
চ) সন্তান জণ্মদান প্রক্রিয়া নিরাপদ রাখাসহ স্বাস্থ্য এবং কাজের পরিবেশে নিরাপত্তার অধিকার৷
২. বিবাহ অথবা মাতৃত্বের কারণে নারীর প্রতি বৈষম্য রোধ এবং তাঁদের কাজ করার কার্যকর অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শরীক রাষ্ট্রসমূহ যে সকল বিষয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, সেগুলো হচ্ছে-
ক) গর্ভধারণ অথবা মাতৃত্ব সংক্রান্ত ছুটির কারণে বরখাস্ত এবং বৈবাহিক অবস্থার ভিত্তিতে বরখাস্ত করার ক্ষেত্রে বৈষম্য নিষিদ্ধ করা;
খ) বেতনসহ ছুটি অথবা পূর্বেকার চাকুরী জেষ্ঠতা অথবা সামাজিক ভাতাদি না হারিয়ে তুলনাযোগ্য সামাজিক সুবিধাদিসহ মাতৃত্ব সংক্রান্ত ছুটি প্রবর্তন করা;
গ) বিশেষ করে একটি শিশু পরিচর্যা সুবিধা নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নের মাধ্যমে পিতা মাতাদেরকে তাদের কাজের দায়িত্বের সঙ্গে পারিবারিক দায়িত্ব সংযুক্ত করে নাগরিক জীবনে অংশ গ্রহণে সক্ষম করে তোলার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সহায়ক সামাজিক সার্ভিসের ব্যবস্থা উত্সাহিত করা;
ঘ) গর্ভাবস্থায় যে ধরনের কাজ নারীর জন্য ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত, গর্ভকালে তাদেরকে সে ধরনের কাজ থেকে বিশেষ ভাবে ব্যবস্থা করা;
৩. এই ধারায় বর্ণিত বিষয়াদি সম্পর্কে রক্ষামূলক আইন, বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত জ্ঞানের আলোকে সময় সময় পর্যালোচনা করা হবে এবং প্রয়োজনমত সংশোধন, বাতিল অথবা সম্প্রসারণ করা হবে৷
অনুচ্ছেদ - ১২
১. পুরুষ ও নারীর সমতার ভিত্তিতে, পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কিত সার্ভিসসহ স্বাস্থ্য পরিচর্যামূলক সার্ভিস পাওয়ার সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শরীক রাষ্ট্রসমূহ স্বাস্থ্য সেবা ক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করার জন্য সকল উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে৷
২. একই ধারার অনুচ্ছেদ ১ এর বিধান ছাড়াও রা