আন্তর্জাতিক মানবিক আইন

Author Topic: আন্তর্জাতিক মানবিক আইন  (Read 6189 times)

Offline Sultan Mahmud Sujon

  • Administrator
  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 2674
  • Sultan Mahmud Sujon, Sr. Admin Officer
    • View Profile
    • Helping You Office Operation & Automation Management
আন্তর্জাতিক মানবিক আইন
« on: October 22, 2011, 06:09:59 AM »
আন্তর্জাতিক মানবিক আইন

১৯৪৯ সালের প্রথম জেনেভা কনভেনশন এবং যুদ্ধ ক্ষেত্রে আহত ও পীড়িতদের সংরক্ষণ

১৯৪৯ সালের প্রথম জেনেভা কনভেনশন এবং যুদ্ধ ক্ষেত্রে আহত ও পীড়িতদের সংরক্ষণ (THE FIRST GENEVA CONVENTION OF 1949 AND THE PROTECTION OF THE WOUNDED AND SICK IN THE BATTLE FIELD): ১৯৪৯ সালের প্রথম জেনেভা কনভেনশনে যুদ্ধের সময় আহত-পীড়িত ও রুগ্নদের সেবা সম্পর্কিত কতকগুলি বিধান গৃহীত হয়েছে৷ সেগুলো নিম্নে প্রদত্ত হল:

(১) সংরক্ষণ, চিকিত্সা ও যত্ন (অনুচ্ছেদ - ১২): যুদ্ধাচলাকালে আহত ও অসুস্থ ব্যক্তিগণ যে কোন পক্ষের অধীনেই থাকুক তারা সদয় আচরণ ও যত্ন পাবার অধিকারী৷ জরুরী চিকিত্সার কারণে প্রয়োজনে তাদেরকে স্থানান্তরিত করা যাবে এবং এরূপ ক্ষেত্রে তাদের সুচিকিত্সার বিধান করতে হবে৷ এই অনুচ্ছেদ স্পষ্টভাবে তাদের জীবনের প্রতি ও তাদের অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের প্রতি আক্রমণ নিষিদ্ধ করেছে এবং বিশেষভাবে তাদেরকে হত্যা বা নির্মূল করা, নির্যাতন বা জীববৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ব্যবহার করা যাবে না অথবা স্বেচ্ছায় ও সেবায় তাড়িয়ে দেয়া যাবে না এবং তাদের মধ্যে কোন রোগ সংক্রমন করা যাবে না৷

(২) তল্লাশী, সংগ্রহ ও তথ্য প্রেরণ (অনুচ্ছেদ-১৫): আহত ও অসুস্থ ব্যক্তিরা কোথায় পড়ে থাকে, তাদেরকে তল্লাশী ও সংগ্রহ করার জন্য সম্ভাব্য সকল পদক্ষেপ নিতে যুদ্ধমান পক্ষদেরকে বিশেষ ভাবে অঙ্গীকার করার জন্য বলা হয়েছে৷ আহত, অসুস্থ বা মৃত ব্যক্তিকে সনাক্ত করা যায় এমন যে কোন উপায় যথা সম্ভব শিগগিরই করতে হবে এবং জাতীয় তথ্য ব্যুরোতে তাহা প্রেরণ করতে হবে৷ এ ব্যুরো তথ্য বা উপাদান সেন্ট্রাল প্রিজনারস অব ওয়ার এজেন্সির মধ্যস্থতায় সেই পক্ষের নিকট প্রেরণ করবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যে পক্ষের অধীনে আছে (অনুচ্ছেদ-১৬)৷ তৃতীয় জেনেভা কনভেনশনের ১২৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নিরপেক্ষ রাষ্ট্র থেকে উক্ত গঠিত হতে হবে৷ বাস্তবে আই.সি.আর. সি- এর সেন্ট্রাল ট্রেসিং এজেন্সি এই দায়িত্ব পালন করে (জেনেভায় অবস্থিত)৷

(৩) শেষ ইচ্ছা, বত্তব্য, শেষ কৃত্যানুষ্ঠান (অনুচ্ছেদ ১৫-১৭): মৃত ব্যক্তিকে তল্লাশী ও সনাক্তকরণের জন্য সম্ভব সকল পদক্ষেপ যুদ্ধমান পক্ষ অবশ্যই নিবে৷ তাদের সর্বশেষ ইচ্ছা এবং তাদের অন্তর্নিহিত ও আবেগপূর্ণ অন্যান্যপূর্ণ অন্যান্য বক্তব্যও অবশ্যই সংগ্রহ করতে হবে৷ তাদের সম্মানজনক শেষ কৃত্যের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে৷ যুদ্ধের প্রারম্ভেই পক্ষদেরকে অবশ্যই Offical Graves Registration Service এর ব্যবস্থা করতে হবে৷ (অনুচ্ছেদ-১৭)৷ এরা কবর রেজিষ্ট্রেশন, দেখাশোনা এবং সনাক্তকরণের দায়িত্ব পালন করবে এবং নিজ দেশে সম্ভাব্য স্থানান্তরের বিষয়টিও দেখবে৷

(৪) ব্যক্তিগত উদ্যোগে সেবা (অনুচ্ছেদ-১৮): সরকারী পদক্ষেপ ছাড়াও ব্যক্তি বিশেষ আহত, রুগ্ন ব্যক্তির সেবার আয়োজন করতে পারে এবং এজন্য নিজ গৃহেও নিয়ে যেতে পারে৷ ১৮৬৪ সালের কনভেনশনে বলা হয়েছে কোন পক্ষই ঐ সকল কাজের প্রতি নিন্দা জ্ঞাপন করতে পারবে না, বরং এগুলোকে উত্‍সাহিত করবে৷ প্রথম কনভেনশন-এর ১৮ অনুচ্ছেদ জনগণের সে ভূমিকাকে পুনঃনিশ্চিত করেছে৷

(৫) শত্রুমিত্র নির্বিশেষে চিকিত্সার অগ্রাধিকার: আহত এবং রুগ্নদের বিশ্রাম ও সেবার প্রাথমিক দায়িত্ব সামরিক মেডিক্যাল সার্ভিসের৷ শক্রমিত্র নির্বিশেষে সকল যুদ্ধাহত ব্যক্তির সেবা ও মানবিক সহায়তা প্রদান করা তাদের কর্তব্য৷ শত্রু, মিত্র বিবেচনা ব্যতিরেকে জরুরী চিকিত্সার প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে চিকিত্সায় অগ্রাধিকার দেয়া উচিত৷ মিলিটারী মেডিক্যাল সার্ভিস ও ভ্রাম্যমান মেডিক্যাল ইউনিট এই দায়িত্ব পালন করতে পারে৷

(৬) মেডিক্যাল সার্ভিস, সংরক্ষণ ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন (অনুচ্ছেদ -২৪, ২৮): স্থায়ী মেডিক্যাল এবং মিলিটারী মেডিক্যাল সার্ভিসের প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গের ভোক্তার নাম, বেয়ারার প্রভৃতি এবং সশস্ত্র বাহিনীর সাথে যুক্ত পুরোহিতের প্রতি যে কোন পরিস্থিতিতে বা অবস্থাধীনে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে হবে এবং তাদেরকে সংরক্ষণ করতে হবে৷ ২৮ অনুচ্ছেদে বলা আছে যখন তারা শত্রুর হাতে পড়বে তখন তাদেরকে যুদ্ধবন্দী হিসাবে চিহ্নিত করা যাবে না৷

(৭) চিকিত্সায় প্রশিক্ষণ প্রাপ্তদের সংরক্ষণ ও নিয়োজিত করণ (অনুচ্ছেদ ২৫, ২৯): চিকিত্সা কার্যে নিযুক্ত কোন প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত সহকারীর প্রতি একইভাবে শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও সংরক্ষণ করতে হবে যদি কর্তব্যরত অবস্থায় শত্রুর হস্তগত হয়৷ ২৯ অনুচ্ছেদ অনুসারে, এরা যুদ্ধবন্দী হবে- তবে তাদেরকে চিকিত্সার কাজে নিয়োজিত রাখতে হবে৷

(৮) রেডক্রস ও রেডক্রিসেন্টর সদস্য সংরক্ষণ (অনুচ্ছেদ -২৬): যুদ্ধমান পক্ষ সমূহের জাতীয় রেডক্রস বা রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সদস্য যারা ২৪ অনুচ্ছেদে বর্ণিত অনুরূপ কাজে নিয়োজিত তারা উক্ত ২৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংরক্ষণ পাবে৷

(৯) নিরপেক্ষ রাষ্ট্রের সেবা ও চিকিত্সা সোসাইটির প্রবেশ (অনুচ্ছেদ-২৭):  নিরপেক্ষ রাষ্ট্রের স্বীকৃত কোন সোসাইটি যদি যুদ্ধমান কোন পক্ষকে চিকিত্সা সহায়তা দেয়ার জন্য মেডিক্যাল পারসোনেল ও ইউনিট দিতে চায় তাহলে নিজ দেশের সরকার ও যে পক্ষকে দিতে চায় তাদের পূর্ব সম্মতি লাগবে৷ নিরপেক্ষ রাষ্ট্র তার সম্মতির কথা বিরোধী পক্ষকে অবশ্যই জানাবে৷

(১০) নিরপেক্ষ রাষ্ট্রের মেডিক্যাল পারসোনেল সংরক্ষণ (অনুচ্ছেদ-৩২): উল্লেখিত মেডিক্যাল পারসোনেল বা ইউনিটের কেউ যদি বিরোধী পক্ষের হাতে পড়ে তাহলে তাদেরকে আটক রাখা যাবে না বরং নিজ দেশে যাবার অনুমতি দিতে হবে৷ যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে যাতায়াতের রাস্তা খোলার পর যতদূর সম্ভব শীঘ্য যে থেকে কাজ করতে এসেছে সে দেশে যাবার অনুমতি দিতে হবে৷

(১১) মেডিক্যাল ইউনিট, এম্বুলেন্স, হাসপাতাল সংরক্ষণ (অনুচ্ছেদ-১৯, ২১, ২৩): মিলিটারী মেডিক্যাল সার্ভিসের নির্দিষ্ট সংখ্যক ভ্রাম্যমান মেডিক্যাল ইউনিট প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে ১৯ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- হাসপাতাল ও এম্বুলেন্স আক্রমন করা যাবে না৷ অন্যদিকে ২১ অনুচ্ছেদে তাদের কর্তব্যের বাইরে তাদের দ্বারা এমন কোন কাজ করানো যাবে না - যাহা শত্রুপক্ষের জন্য ক্ষতিকর৷ ২৩ অনুচ্ছেদে বিশেষ একটি এলাকাকে হাসপাতাল অঞ্চল ও লোকালয় হিসাবে চিহ্নিত করার বিধান রয়েছে- আহত, রুগ্ন ও তাদের সেবায় জড়িত ব্যক্তিদের রক্ষার অভিপ্রায়ে৷ এরূপ একটি পদক্ষেপ কেবলমাত্র তখনই সফল হতে পারে যদি বিরোধী পক্ষ প্রকাশ্যে স্বীকার করে নেয় উক্ত নির্দিষ্ট এলাকায় নির্দিষ্ট মর্যাদা৷

(১২) মেডিক্যাল ট্র্রান্সপোর্ট রক্ষণাবেক্ষন (অনুচ্ছেদ-৩৬): যুদ্ধাহত, রুগ্ন বা মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট বহনকারী যানবাহনের রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কেও এই কনভেনশনে বিধান রয়েছে৷ ৩৬ অনুচ্ছেদের বিধানমতে, এসব পরিবহন নিরাপত্তা পাবার অধিকারী৷ তবে এরূপ ব্যবস্থার নির্ধারণ খুব কঠিন ব্যাপার৷ এয়ারক্রাফ্টটি সম্পূর্ণরূপে যুদ্ধাহত, রুগ্ন বা মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট (চিকিত্সা সরাঞ্জামাদি) কাজে ব্যবহৃত হতে হবে এবং ইহার বিস্তারিত (উচ্চতা, সময়, রুট) সব কিছু সংশ্লিষ্ট যুদ্ধমান রাষ্ট্রের সুনির্দিষ্ট সম্মতির মাধ্যমে নির্ধারণ করতে হবে৷ তারা শত্রু রাষ্ট্র এবং শত্রু রাষ্ট্র দখলীকৃত ভূমির উপর দিয়ে নাও যেতে পারে এবং তারা অবতরণের ক্ষেত্রে প্রতিটি সমন অবশ্যই মেনে চলবে৷ এয়ারক্রাফ্ট অপব্যবহার রোধের জন্য এটা করা হয়েছে৷

(১৩) স্বতন্ত্রধর্মী প্রতীক ব্যবহার (অনুচ্ছেদ ২৮-৪৪): পার্সোনাল সরঞ্জামাদি, হাসপাতাল, এম্বুলেস্ন, পরিবহন প্রভৃতি প্রটেকশন পাবার জন্য স্বতন্ত্রধর্মী  বিশেষ প্রতীক ব্যবহার করতে পারবে যেমন রেড ক্রস, রেড ক্রিসেন্ট প্রভৃতি৷ ৩৮ থেকে ৪৪ অনুচ্ছেদে এই প্রতীক ব্যবহারের বিস্তারিত নিয়মাবলী বর্ণিত আছে৷ ৩৮ অনুচ্ছেদে সাদা জমিনের উপর লাল সিংহ এবং সূর্য ব্যবহারের উল্লেখ আছে, অতীতে এরূপ একটি প্রতীক ইরান ব্যবহার করেছিল কিন্তু  সেটি ইতিমধ্যেই রহিত হয়ে গেছে৷ ইসরাইল সাদা জমিনের উপর ডেভিড-এর লাল তারকা (Red star of David) ব্যবহার করেছিল; কিন্তু তা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে ব্যর্থ হয় (তাই কনভেনশন উল্লেখ করা হয়নি)৷ বাস্তবে এটা অগ্রাহ্য করা হয়নি৷

(১৪) প্রতিরোধ মূলক পদক্ষেপ নিষিদ্ধ (অনুচ্ছেদ ৪৬): ১৯৪৯ সালের প্রথম জেনেভা কনভেনশনে সর্বশেষ প্রতিরোধ গ্রহণ সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, যুদ্ধাহত, রুগ্ন, পারসোনেল, বিল্ডিং বা সরঞ্জাম যা ৪৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রটেকটেড- এসবের বিরুদ্ধে কোন প্রতিরোধ গ্রহণ করা যাবে না বা প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নেয়া যাবে না৷

তাই বলা হয় একটি যুদ্ধমান পক্ষ শত্রুতে ফেরত দেয়া এবং তাদের প্রতি আইনানুগ ব্যবহার প্রসঙ্গে কনভেনশনের বিধি বাতিলের অধিকার দাবী করতে পারে না৷

Offline Sultan Mahmud Sujon

  • Administrator
  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 2674
  • Sultan Mahmud Sujon, Sr. Admin Officer
    • View Profile
    • Helping You Office Operation & Automation Management
Re: আন্তর্জাতিক মানবিক আইন
« Reply #1 on: October 22, 2011, 06:10:20 AM »
আন্তর্জাতিক মানবিক আইন

১৯৪৯ সালের দ্বিতীয় জেনেভা কনভেনশন এবং নৌবাহিনীর আহত, পীড়িত ও জাহাজডুবী সদস্যদের সংরক্ষণ

১৯৪৯ সালের দ্বিতীয় জেনেভা কনভেনশন, এবং নৌবাহিনীর আহত, পীড়িত ও জাহাজডুবী সদস্যদের সংরক্ষণ (The second Geneva Convention of 1949 and Protection of the wounded, sick and shipwrecked memebers of Armed Forces of Sea)

১৯৪৯ সালের দ্বিতীয় জেনেভা কনভেনশন নৌবাহিনীর পীড়িত, অসুস্থ্য এবং জাহাজডুবী সদস্যদের চিকিত্সার জন্য বিধান রেখেছে৷ জাহাজডুবী নাবিকদেরকে যুদ্ধ জাহাজ, হাসপাতাল জাহাজ, বাণিজ্য জাহাজ এর মাধ্যমে উত্তোলন করা যেতে পারে৷

১৪ নং অনুচ্ছেদে অনুযায়ী, একজন বিপক্ষীয় সৈনিক আহত, পীড়িত অথবা জাহাজডুবী সৈনিককে আত্নসমর্পণ করার জন্য দাবী জানাতে পারে৷ এই কনভেনশন অনুযায়ী সামরিক হাসপাতাল জাহাজ এবং রেডক্রস অথবা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি অথবা কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি কর্তৃক ব্যবহৃত হাসপাতাল জাহাজের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করেছে৷ এই জাহাজগুলি কোন অবস্থায়ই আক্রমণ বা আটক রাখা যাবে না৷ সকল অবস্থায় এদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে হবে এবং এগুলিকে সংরক্ষণ করতে হবে৷

৪৩ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, হাসপাতাল জাহাজগুলিতে সাদা রং লাগাতে হবে এবং ঘন লাল রংয়ের দ্বারা রেডক্রস অথবা রেড ক্রিসেন্টের প্রতীক লাগাতে হবে৷

হাসপাতাল জাহাজগুলি নীতিগতভাবে তাদের কার্যাবলী যে কোন স্থানে এবং যে কোন সময়ে পরিচালনা করতে পারে৷ কিন্তু তারা যুদ্ধ জাহাজগুলির গতি বিধির ক্ষেত্রে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারবে না৷ যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যদি তারা কোন কার্য পরিচালনা করে তাহলে তার জন্য তারা নিজেরা দায়ী থাকবে৷ তাছাড়া যুদ্ধমান পক্ষ হাসপাতাল জাহাজগুলির কার্যাবলীর স্বাধীনতা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে৷ তারা জাহাজগুলির গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ এবং ঐগুলিতে অনুসন্ধান চালাতে পারে৷ ঐ জাহাজগুলি থেকে কোন সাহায্য গ্রহণ প্রত্যাখান করতে পারে, তাদের গতিবিধি বন্ধ করতে পারে৷ তাদের বেতার সহ অন্যান্য যোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং তাদেরকে ৭ দিন পর্যন্ত আটক রাখতে পারে৷ ছোট ছোট জাহাজ অথবা লাইফ বোট গুলিকে সম্মান প্রদর্শন করতে হবে এবং সংরক্ষণ করতে হবে৷

৪৭ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোন ব্যক্তি বা বস্তুর প্রতি প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য নিষেধাজ্ঞা প্রদান করতে পারে৷

এভাবে দ্বিতীয় জেনেভা কনভেনশন নৌবাহিনীতে কর্মরত আহত, পীড়িত এবং জাহাজ ডুবী প্রাপ্ত সদস্যদেরকে সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করে৷

Offline Sultan Mahmud Sujon

  • Administrator
  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 2674
  • Sultan Mahmud Sujon, Sr. Admin Officer
    • View Profile
    • Helping You Office Operation & Automation Management
Re: আন্তর্জাতিক মানবিক আইন
« Reply #2 on: October 22, 2011, 06:10:49 AM »
আন্তর্জাতিক মানবিক আইন

১৯৪৯ সালের তৃতীয় জেনেভা কনভেনশন এবং যুদ্ধ বন্দীদের সংরক্ষণ

১৯৪৯ সালের তৃতীয় জেনেভা কনভেনশন এবং যুদ্ধ বন্দীদের সংরক্ষণ

(THE THIRD GENEVA CONVENTION OF 1949 AND PROTECTION OF THE PRISONERS OF WAR)

যখন কোন বিশেষ এলাকা বা ভূ-খন্ড কোন বিরোধী পক্ষের দখলে থাকে, তখন যে সকল যোদ্ধারা বা সৈনিকেরা শত্রু পক্ষের বন্দী থাকেন তাদেরকে বলা হয় যুদ্ধবন্দী বা "Prisoners of war"- যুদ্ধবন্দীর সংজ্ঞা প্রসঙ্গে Frits Kalshoven  তাঁর "Constraints on the Waging of War" নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, "Combatants who fall in to enemy hands are prisoners of war from the very moment of capture." তৃতীয় জেনেভা কভেনশনের ১২ অনুচ্ছেদে যুদ্ধবন্দী সম্পর্কে নীতিমালা বর্ণিত হয়েছে৷ অত্র অনুচ্ছেদ মোতাবেক "যুদ্ধবন্দী হলো সেই সকল ব্যক্তি যারা বিরোধী শত্রু পক্ষের হাতে বন্দী থাকেন, কিন্তু কোন অবস্থাতেই একক বা মিলিটারী ইউনিটের আওতায় আটককৃত যোদ্ধাদের যুদ্ধবন্দী বলা যাবে না৷"

১৯৪৯ সালের তৃতীয় জেনেভা কনভেনশনে যুদ্ধবন্দীদের সেবা-শুশ্রুষা এবং রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কিত বিধানবলী বর্ণিত আছে৷ অত্র কনভেনশন ঘোষনা দিয়েছে যে, "যুদ্ধবন্দীরা সকল সময়ে মানবিক সেরা পাওয়ার অধিকারী৷" তৃতীয় জেনেভা কনভেনশনের ১৩ অনুচ্ছেদে বলা আছে যে, যুদ্ধবন্দীদের কোন অবস্থাতেই স্বেচ্ছাচারীভাবে হত্যা করা যাবে না৷ যুদ্ধবন্দীরা দুষ্কর্ম, ভীতি প্রদর্শন এবং জন কৌতুহল এর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকারী৷ ১৪ অনুচ্ছেদে অনুযায়ী যুদ্ধবন্দীদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক যে কোন কার্য সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, তারা তাদের ব্যক্তিত্ব ও মর্যাদা অনুযায়ী যথাযথ সম্মান, যে কোন পরিস্থিতিতেই লাভের অধিকারী৷ তাদের সাথে এমন কোন আচরণ করা যাবে না যাহা মানবতার পরিপন্থী৷

তৃতীয় জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী আটককারী কর্ত্তৃপক্ষের কাছে যুদ্ধবন্দীরা সংবাদ প্রাপ্তির একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসাবে বিবেচিত৷ তবে তাদের বিরুদ্ধে শারীরিক, মানসিক বা অন্যকোন প্রকার দমনমূলক বা প্রতিহিংসা পরায়ন কাজ করা যাবে না৷ প্রত্যেক যুদ্ধবন্দীই তার প্রাথমিক নাম বিকল্প নাম পদমর্যাদা, জণ্মতারিখ, আর্মি-রেজিমেন্টাল, ব্যক্তিগত অথবা সিরিয়াল নম্বর এবং এতদসংশ্লিষ্ট সকল প্রকার সংবাদ করবে (অনুচ্ছেদ-১৭)৷

যুদ্ধবন্দীরা যে যুদ্ধ এলাকায় আটক হয়ে থাকেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদেরকে সেই এলাকা ত্যাগ করার সুযোগ দিতে হবে এবং এইরূপ আটক যুদ্ধবন্দীদের ক্যাম্পকে বিপদমুক্ত এলাকায় সরিয়ে নিতে হবে৷ যুদ্ধবন্দীরা প্যারোল বা প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী অন্য কোন সুবিধা পেতে পারে৷ আটককারী কর্তৃপক্ষকে যুদ্ধবন্দীদের সমস্ত খরচা বহন করতে হবে (অনুচ্ছেদ ১৫.১ঌ এবং ২১)৷

তৃতীয় জেনেভা কনভেনশনের ৩৯ অনুচ্ছেদে বলা আছে যে, যুদ্ধ বন্দীদের ক্যাম্পকে অতিসত্বর একটি দায়িত্বশীল কমিশনপ্রাপ্ত অফিসার এর অধীনে অর্পণ করতে হবে৷ এই কনভেনশনে যুদ্ধবন্দীদের রক্ষণাবেক্ষনের ব্যাপারে যে সকল নীতিমালা বর্ণিত হয়েছে তাহা যুদ্ধবন্দীদের নিজস্ব ভাষায় উপস্থাপন করতে হবে, যাতে তারা উক্ত ব্যাপারে যথাযথভাবে অবগত হতে পারে [অনুচ্ছেদ ৪১]৷

যুদ্ধবন্দীরা আটক থাকাকালীন তাদের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধাচারণমূলক সকল আচরণ বন্ধ রাখতে হবে এবং বিলম্ব না করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মুক্তিদান এবং স্ব-দেশে পুনঃ প্রেরণ করতে হবে (অনুচ্ছেদ-১১৮)৷

কতকগুলি কারণের ভিত্তিতে যুদ্ধবন্দীদের মুক্তি প্রদান করা হবে৷ প্রথমতঃ কোন যুদ্ধবন্দী মৃত্যুবরণ করলে তাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভভ স্বদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে; এরূপ ব্যবস্থা আটককারী কত্তৃপক্ষকেই করতে হবে (অনুচ্ছেদ-১২০)৷

তাছাড়া যে সকল যোদ্ধারা গুরুতরভাবে আহত বা অসুস্থ তাদেরকে নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা করতে হবে কিংবা কোন নিরপেক্ষ রাষ্ট্রে  তাদের পাঠাতে হবে যাতে খুব তাড়াতাড়ি তারা ভ্রমনের জন্য যোগ্য হয়ে উঠতে পারে (অনুচ্ছেদ-১০৯)৷আবার যে সকল যুদ্ধবন্দীরা অপেক্ষাকৃত কম অসুস্থ কিন্তু যাদের মুক্তি দিলে তারা তাদের দেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে আটককারী কর্ত্তৃপক্ষ তাদেরকে নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা করে দিবে৷

Offline Sultan Mahmud Sujon

  • Administrator
  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 2674
  • Sultan Mahmud Sujon, Sr. Admin Officer
    • View Profile
    • Helping You Office Operation & Automation Management
Re: আন্তর্জাতিক মানবিক আইন
« Reply #3 on: October 22, 2011, 06:11:17 AM »
আন্তর্জাতিক মানবিক আইন

১৯৪৯ সালের চতুর্থ জেনেভা কনভেনশন এবং বেসামরিক ব্যক্তিদের অধিকার সংরক্ষণ

   বেসামরিক জনগণের অধিকার সংক্রান্ত ১৯৪৯ সালের চতুর্থ জেনেভা কনভেনশন

(THE FOURTH GENEVA CONVENTION OF 1949 AND PROTECTION OF CIVILIAN PERSONS IN TIME OF WAR)

১৯৪৯ সালের চতুর্থ জেনেভা কনভেনশন যুদ্ধের সময় বেসামরিক ব্যক্তিদের সংরক্ষণের বিধান রেখেছে৷ এই কনভেনশন যুদ্ধ সংক্রান্ত আইন এবং দখলকৃত এলাকার যুদ্ধ বিষয়ক নিয়মসংক্রান্ত ১৯০৭ সালের গেহ কনভেনশনের তৃতীয় ভাগে বর্ণিত বিধানাবলীর সম্পুরক হিসেবে আত্নপ্রকাশ করেছে৷ বেসামরিক ব্যক্তির সংজ্ঞা প্রসঙ্গে এখানে বলা হয়েছে যে, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য নয় এমন যে কোন ব্যক্তিই বেসামরিক ব্যক্তি বলে বিবেচিত (প্রটোকল-১, অনুচ্ছেদ-৫০)৷ চতুর্থ জেনেভা কনভেনশনের ৪ অনুচ্ছেদে সংরক্ষিত ব্যক্তিদের প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, "Persons protected by the Convetion are those who...find themselves, in the case of a conflict or occupation, in the hands of a party to the conflict or Occupaing Power of which they are not nationals."

অত্র কনভেনশনের তৃতীয় ভাগে বেসামরিক ব্যক্তিদের মর্যাদা ও সংরক্ষণ সংক্রান্ত বিধানবলী বর্ণিত হয়েছে৷ এই কনভেনশনের ১১৫টি অনুচ্ছেদকে ৫টি ভাগে ভাগ করা যায়৷ যথা:

(ক) যুদ্ধমান এলাকায় এবং দখলকৃত এলাকায় প্রযোজ্য সাধারণ বিধিমালা (Provision Common to the Territories of the Parties to the Conflict and to Occupied Territories): ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংরক্ষিত ব্যক্তিরা যে কোন পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকারী এবং সর্বস্থানেই তাদের ব্যক্তিত্ব, সম্মান, পারিবারিক ও ধর্মীয় অধিকারসহ অন্যান্য সকল অধিকার ভোগের সুযোগ থাকবে৷ তারা যে কোন পরিস্থিতিতে মানবিক সাহায্য পাওয়ার অধিকারী হবে এবং ভীতি প্রদর্শন, আক্রমণ ও জনকৌতুহলের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকারী হবে৷ মহিলাদেরকে ধর্ষণ, জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তি গ্রহণ বা অন্য কোন অশালীন কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করানো যাবে না এবং তাদের ব্যক্তিগত মর্যাদা সংরক্ষণ করতে হবে৷৷ ২৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এই সমস্ত ব্যক্তির উপস্থিতিতে কোন সামরিক কার্য পরিচালনা করা যাবে না৷ সংরক্ষিত ব্যক্তিদের নিরাপত্তার বিধান করে ২৯ অনুচ্ছেদে বলা হয় যে, আটককারী কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব অনুরূপ ব্যক্তিদের সংরক্ষণ করার৷ আটককারী কর্তৃপক্ষ এবং ত্রাণ সংগঠনগুলি উক্ত ব্যক্তিদের অধিকার সংরক্ষণ করবে (অনুচ্ছেদ-৩০)৷ ৩১ অনুচ্ছেদের বিধান বিধান অনুযায়ী তথ্য সংগ্রহের জন্য সংরক্ষিত ব্যক্তিদের কোনরূপ শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করা যাবে না৷ সংরক্ষিত ব্যক্তিদের কোন ক্রমেই এমন শাস্তি প্রদান করা যাবে না যাতে তাদের অহেতুক ভোগান্তির সৃষ্টি হয় যেমন - মৃত্যু, নিষ্ঠুরতা, শারীরিক শাস্তি, অনুচ্ছেদ অথবা কোন চিকিত্সা বা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা যাহা তাদের জন্য প্রয়োজনীয় নয় (অনুচ্ছেদ-৩২)৷ আবার ৩৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংরক্ষিত ব্যক্তিরা যে সমস্ত অপরাধ তারা নিজেরা করে নাই, এরূপ কোন অপরাধের জন্য তাদের যৌথ শাস্তি দেয়া যাবে না৷ একই কারণে তাদের যৌথ শাস্তি দেয়া যাবে না কিংবা তাদের সম্পত্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা বা ভয়ভীতি প্রদর্শন বা সন্ত্রাসী পদ্ধতি অবলম্বন করা যাবে না৷ প্রতিশোধ গ্রহণের জন্যও বেসামরিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়া যাবে না৷ ৩৪ অনুচ্ছেদে চূড়ান্তভাবে জিম্মি রাখাকে সাধারণ ও মৌলিকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷

(খ) যুদ্ধমান এলাকার বিদেশী ব্যক্তিবর্গ (Aliens in the territories of parties to the conflict) : চতুর্থ জেনেভা কনভেনশনে বিদেশী ব্যক্তি বর্গের সংরক্ষনের বিধান রয়েছে৷ কনভেনশনের ৩৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংরক্ষিত বিদেশী ব্যক্তিদের শক্রপক্ষের জাতীয় এলাকা ত্যাগ করা সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, দখলকারী কর্তৃপক্ষের রাষ্টীয় স্বার্থের পরিপন্থী না হলে বিদেশীরা আটককৃত এলাকা ত্যাগ করতে পারবে৷ আটকারী কর্তৃপক্ষ যদি এরূপ ব্যক্তিদের এলাকা ত্যাগ করার অনুমতি না দেয় তাহলে বিষয়টি পূর্নবিবেচনার জন্য তারা এখতিয়ার সম্পন্ন আদালত বা প্রশাসনিক বোর্ডের নিকট আবেদন করতে পারবে৷ সংরক্ষিত ব্যক্তি যারা এলাকা ত্যাগ করবে না, তাদের কতকগুলি মৌলিক অধিকার থাকবে, যেমন ত্রাণ গ্রহণ, ধর্মচর্চা ইত্যাদি (অনুচ্ছেদ-৩৮)৷ ৩ঌ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংরক্ষিত ব্যক্তিবর্গের আত্নপক্ষ সমর্থনের সুযোগ থাকবে৷ একইভাবে রাষ্ট্র তাদের এবং তাদের অধীনস্থদের আতপক্ষ সমর্থনের সুযোগ নিশ্চিত করতে বাধ্য৷ ৪০ অনুচ্ছেদ ঘোষণা করেছে যে, সংরক্ষিত ব্যক্তিদের দ্বারা কেবলমাত্র সেই সমস্ত কাজ করানো যাবে না একান্তভাবে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, পরিবহন এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য কিন্তু সরাসরি সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হতে পারে এমন কোন কাজ তাদের দ্বারা করানো যাবে না৷ পূর্ণ নিরাপত্তার জন্য যা  প্রয়োজন যুদ্ধমান কোন পক্ষ যদি সেরূপ নিরাপত্তার বিধান করতে পারে, তাহলে সংরক্ষিত ব্যক্তিদের তার নিজস্ব এলাকায় বা নির্দিষ্ট বাসস্থানে অন্তরীন রাখা যাবে না৷ পক্ষান্তরে একজন সংরক্ষিত ব্যক্তি স্বেচ্ছায় অন্তরীনে থাকার দাবী করতে পারে [অনুচ্ছেদ-৪১, ৪২]৷

(গ) দখলকৃত এলাকা (Occupied territories) : চতুর্থ জেনেভা কনভেনশন দখলকৃত এলাকার নিরাপত্তার বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে৷ কনভেনশনের ৪৭ অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে, দখলকৃত এলাকায় কোন অবস্থাতেই সংরক্ষিত ব্যক্তিদের কনভেনশনে বর্ণিত সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত  করা যাবে না৷ ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী একক বা সমষ্টিগতভাবে সংরক্ষিত ব্যক্তিদেরকে স্থানান্তর এবং দখলকৃত এলাকা থেকে অন্য কোন রাষ্ট্রে নির্বাসন দেয়া যাবে না, তবে সামরিক কারণে যদি তাদের স্থানান্তর আবশ্যক হয়ে পড়ে, তাহলে অনুরূপ ক্ষেত্রে স্থানান্তর করা যাবে৷ ৫০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সকল শিশুদের যত্ন এবং শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে৷ দখলকারী রাষ্ট্রের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, স্বাস্থ্য ইত্যাদি প্রয়োজনে সংরক্ষিত ব্যক্তিদের দ্বারা তারা যে এলাকায় অবস্থিত সেই এলাকায় কাজ করানো যাবে এবং কোন সামরিক উদ্দেশ্যে সাধনের জন্য কোন কাজ করানো যাবে না৷ এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, কেবলমাত্র ১৮ বছরের উর্ধ্বের ব্যক্তিদের দ্বারাই অনুরূপ  কাজ করানো যাবে (অনুচ্ছেদ-৫১)৷

দখলকৃত এলাকার সরকারী কর্মকর্তা এবং বিচারকগণ তাদের দায়িত্ব স্বাধীনভাবে পালন করতে পারবে এবং ঐ সময় দখলকারী কর্তৃপক্ষ তাদের মর্যাদার পরিবর্তন ঘটাতে পারবে না কিংবা বলপ্রয়োগ করে কোন কাজ করতে বাধ্য করতে পারবে না৷ দখলকারী কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনবোধে তাদেরকে চাকুরী থেকে বরখাস্ত করতে পারবে (অনুচ্ছেদ-৫৪)৷

৫৯-৬১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অপর্যাপ্ত ত্রাণ সাহায্যের ক্ষেত্রে অন্যান্য রাষ্ট্র ও নিরপেক্ষ মানবিক সংস্থার মাধ্যমে যৌথ ত্রানকর্মসূচী পরিচালনার বিধান করা হয়েছে৷ ৬২ অনুচ্ছেদে অনুযায়ী দখলকৃত এলাকার বেসামরিক ব্যক্তিগত যৌথ সাহায্য ব্যতীত তাদের নিকট প্রেরিত ব্যক্তিগত সাহায্য গ্রহণ করতে পারবে৷ জাতীয় রেডক্রস বা রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি আহত, পীড়িত  জাহাজডুবীদের সাহায্য করতে পারবে এবং দখলকৃত এলাকায় ত্রাণ কর্মসূচী পরিচালনা করতে পারবে (অনুচ্ছেদ-৬৩)৷ ৬৪-৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, দখলকারী কর্তৃপক্ষ দখলকৃত এলাকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে৷ ৬৭ অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী দখলকারী কর্তৃপক্ষের আদালতে ফৌজদারী বিচার প্রশাসনের মান নির্ধারিত হয়েছে৷ কোন ব্যক্তিকে অন্তরীন রাখা সাধারণ কারাবাসের চেয়ে বড় শাস্তি৷ কেবলমাত্র যে ব্যক্তি দখলকারী কর্তৃপক্ষের স্বার্থের পরিপন্থী কাজ করবে, তাকেই অনুরূপ শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে তার স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া যাবে৷ (অনুচ্ছেদ-৬৮)৷

(ঘ) অন্তরীন ব্যক্তি বর্গের প্রতি ব্যবহার (Regulations for the treatment of Internees) : চতুর্থ জেনেভা কনভেনশনের ৭৯ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, তৃতীয় জেনেভা কনভেনশনে যুদ্ধবন্দীদের সংরক্ষণের যে বিধান রয়েছে, ঠিক তেমনি সংরক্ষণ বিধি অন্তরীণ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে৷

(ঙ) তথ্য ব্যুরো এবং কেন্দ্রীয় ট্রেসিং এজেন্সী (Information Bureau and central Trachin Agency) : চতুর্থ জেনেভা কনভেনশন একটি জাতীয় তথ্য ব্যুরো এবং একটি কেন্দ্রীয় এজেন্সী প্রতিষ্ঠা এবং উহার কার্যাবলী সম্পর্কে বিধান রেখেছে৷ ১৪০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সেন্ট্রাল এজেন্সী পরবর্তীকালে সেন্ট্রাল ট্রেসিং এজেন্সীতে রূপান্তরিত হয়েছে, যাহা রেডক্রস কর্তৃক সুসংগঠিত ও পরিচালিত হয়৷ এই এজেন্সী বেসামরিক ব্যক্তি এবং যুদ্ধবন্দী উভয় ক্ষেত্রেই কার্যকর৷

১৯৭৭ সালের অতিরিক্ত প্রটোকল-১ দ্বারা চতুর্থ জেনেভা কনভেনশনের উন্নয়ন:

১৯৭৭ সালে গৃহীত অতিরিক্ত প্রটোকল-১ এ বেসামরিক লোকদের সংরক্ষণের জন্য সুনির্দিষ্ট সংরক্ষণ বিধি সংযোজনের মাধ্যমে চতুর্থ জেনেভা কনভেনশনের উন্নয়ন সাধন করা হয়েছে৷ এই প্রটোকলের ৭৫ অনুচ্ছেদের দিকে দৃষ্টিপাত করলেই বুঝা যায় যে, বেসামরিক লোকদের সংরক্ষণের জন্য ইহা একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং ইহা নিজেই নিজেকে একটি মিনি কনভেনশনে পরিণত করেছে৷ যুদ্ধমান পক্ষের অধীনে আটক বেসামরিক ব্যক্তিবর্গের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এখানে মৌলিক নিশ্চয়তার বিধান করা হয়েছে এবং মৌলিক নিশ্চয়তা স্বরূপ নিম্নলিখিত কার্যাবলী সকল পরিস্থিতিতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে :

(ক) জীবন, স্বাস্থ্য এবং মানুষের শারীরিক ও মানসিক কল্যাণের প্রতি আক্রমণ বিশেষ করে হত্যা, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, দৈহিক শাস্তি, অঙ্গচ্ছেদ ইত্যাদি;

(খ) ব্যক্তিগত মর্যাদার উপর আঘাত, বিশেষ করে নিন্দনীয় এবং অবমাননাকর আচরণ, জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তি গ্রহণ এবং যে কোন প্রকার অশালীন আচরণ;

(গ) জিম্মি করে রাখা;

(ঘ) যৌথ শাস্তি;

(ঙ) পূর্বোক্ত যে কোন কাজ করার হুমকি৷

১৯৪৯ সালের চতুর্থ জেনেভা কনভেনশন বেসামরিব লোকদের সংরক্ষণের জন্য যে ব্যবস্থা করেছে তা বিপদকালীন সময়ে মানুষের অধিকার রক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ রক্ষাকবচ হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে৷