Faculties and Departments > Faculty Forum

অটিস্টিক সন্তান শুধু মা-বাবার নয়, সমাজেরও

(1/3) > >>

khadija kochi:

 
 

‘আজ আমার নিশ্বাস নেওয়ার মতো সময় নেই।’ এমন উক্তি একজন মায়ের মুখে প্রায়ই শোনা যায়। মনে হতে পারে এটা অতিরঞ্জন। কিন্তু বাস্তব জীবনে দেখা যায়, একজন মা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকেন। সংসারের চাকা ঠিক রাখতে তিনি সব সময় কিছু না কিছু করছেন। ঘুম থেকে ওঠার পর থেকেই শুরু হয় তাঁর ব্যস্ততা। ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত সেভাবেই চলে। এ-তো গেল সেই পরিবারের কথা, যার ছোট-বড় সব সদস্যই সুস্থ ও স্বাভাবিক। কিন্তু যে পরিবারে একটি শিশু থাকে যে কিনা অন্য দশটি শিশুর মতো নয়, যার কিনা রয়েছে কোনো না কোনো ধরনের ‘ডিজঅ্যাবিলিটি’, সেই পরিবারটি কিন্তু অন্য পরিবারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে না।
নিজের অভিজ্ঞতার কথা আগে বলি। বিয়ের পরে আমার সংসার শুরু হলো স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ননদকে নিয়ে। তখনই সারা দিন ব্যস্ত থাকতাম। পরে যখন আমার প্রথম সন্তান- মেয়ের জন্ম হলো, কাজ আরও বেড়ে গেল। একই সময়ে এল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সুযোগ। সুতরাং সারাক্ষণই ব্যস্ত। তবু সব মিলিয়ে ভালোই ছিলাম সেই সময়।
দ্বিতীয়বার মা হলাম ১৯৯৮ সালে। এবার হলো একটি ছেলে সন্তান। শুরুতে সবাই খুব আনন্দিত। সবার মতো আমিও। কিন্তু বছর ঘুরতেই এক অজানা ভয় আমাদের পুরো পরিবারকে ঘিরে ধরল। বুঝতে পারলাম, আমার ছেলে অন্য শিশুদের মতো নয়। সে আর সবার মতো আচরণ করে না। ক্রমে সেই আশঙ্কা সত্যি হলো। বুঝতে পারলাম, আমার ছেলে অটিস্টিক। ডায়াগনোসিসের পর সঠিক কারণ জেনে পুরো পরিবার বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। আমি যেন হঠাৎ করে বিষণ্নতায় ডুবে গেলাম। বুঝতে পারছিলাম না, কি হলো? আমি কি অপরাধ করলাম? সবাই যেন সন্তানের এই অবস্থার জন্য আমাকে দায়ী করছে।
এটা ঠিক যে, এই ব্যাপারে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হওয়া দরকার। একজন অটিস্টিক সন্তানের দায়িত্ব কেন শুধু একজন মায়ের হবে? যখন কোনো শিশু বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু হিসেবে চিহ্নিত হয়; অর্থাৎ তার আচরণ ও জীবনযাত্রা অন্যদের মতো নয়, তখন সেই পরিবারের প্রতি অন্যদের আচরণ কেমন যেন বদলে যায়। শারীরিক অসুস্থতাকেও সবাই মেনে নিতে পারে। কিন্তু সমস্যাটি যদি মানসিক বা আচরণগত হয়, তবে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে যায়। ওই শিশুটিসহ তার পরিবারকে অন্য চোখে দেখতে শুরু করে আত্মীয়স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশীরা।
আমার জীবনে আমি দেখেছি, একজন অটিস্টিক সন্তানের মা হওয়ায় সবাই আমাকে করুণার চোখে দেখতে শুরু করল। কিন্তু কেন? যে সময়টাতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুটির উন্নয়নে একে অন্যকে সাহায্য করার কথা, সেই সময়ে আমরা ওই শিশুর পরিবারকে ত্যাগ করি। এমনকি পরিহাসও করি কখনো কখনো।অনেক মা-বাবা সন্তানের অটিজমের কথা স্বীকার করতে সংকোচ বোধ করেন। জাতিসংঘ সদর দপ্তরে উচ্চপদে কর্মরত জল–এর বাবা-মা এখানে ব্যতিক্রম। নিউইয়র্কে সবাই অটিস্টিকদের বলে স্পেশাল। আর সৃষ্টিকর্তা যাকে বেশি ভালোবাসেন, তাকেই তো স্পেশাল সন্তান উপহার দেন। ছবির মডেল কাজী সারাফ জল। সঙ্গে তাঁর বাবা কবি কাজী জহিরুল ইসলাম, মা মুক্তি জহির ও ভাই অগ্নি।অনেক মা-বাবা সন্তানের অটিজমের কথা স্বীকার করতে সংকোচ বোধ করেন। জাতিসংঘ সদর দপ্তরে উচ্চপদে কর্মরত জল–এর বাবা-মা এখানে ব্যতিক্রম। নিউইয়র্কে সবাই অটিস্টিকদের বলে স্পেশাল। আর সৃষ্টিকর্তা যাকে বেশি ভালোবাসেন, তাকেই তো স্পেশাল সন্তান উপহার দেন। ছবির মডেল কাজী সারাফ জল। সঙ্গে তাঁর বাবা কবি কাজী জহিরুল ইসলাম, মা মুক্তি জহির ও ভাই অগ্নি।
প্রকৃতপক্ষে এ জন্য একটি বড় সামাজিক আন্দোলন হওয়া প্রয়োজন। এ জন্য প্রত্যেক মা-বাবাকে সচেতন হতে হবে। আমার যেমন আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচার অধিকার আছে, তেমনি আমার অটিস্টিক সন্তানেরও আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচার অধিকার আছে। তার অধিকার প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব প্রথমত মা-বাবার, তার সঙ্গে সঙ্গে সমাজের প্রত্যেকের।
আমার সন্তানকে নিয়ে আমি নিউইয়র্কের যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে যেতে দ্বিধাবোধ করি না। করা উচিতও নয়। যে অনুষ্ঠান সে উপভোগ করবে, সেখানে অবশ্যই তাকে নিয়ে যেতে হবে। সেই অনুষ্ঠানে অনেকেই হয়তো সেই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুটির ব্যবহার সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয়। সেই ক্ষেত্রে অভিভাবক হিসেবে আমরা তাদের জানিয়ে দিতে পারি— ‘আমার সন্তানটি অটিস্টিক বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন।’ ফলে অন্যদের বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ কমে আসবে। অটিস্টিক সন্তানের মা-বাবা হিসেবে আমাদের দায়িত্ব একটু বেশি থাকে। কারণ আমরাই পারি সচেতন করতে।
তবে শুধু সমাজের দোষ দিই কেন। অনেক মা-বাবাও পারেন না সন্তানের ডিজঅ্যাবিলিটি মেনে নিতে। তাদের নিজেদের জীবনও অনেক সময় সংঘাতময় হয়ে ওঠে এই কারণে। অটিস্টিক সন্তানের মা-বাবার প্রতি আমার একটাই কথা— ধৈর্য হারাবেন না।
যখন প্রথম নিউইয়র্কে আসি, অটিস্টিক সন্তানকে কোলে নিয়ে সাবওয়ে স্টেশনের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে দম বেরিয়ে যেত। কারণ আমার ছেলে স্ট্রলারে উঠতে চাইত না। একদিন সাবওয়ে স্টেশনের সিঁড়িতে বসে ছেলেকে কোলে নিয়ে অনেকক্ষণ কেঁদেছি। আবার চোখের পানি মুছে ঘুরে দাঁড়িয়েছি। এই দেশে পড়াশোনা করেছি। আইনি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিয়েছি। প্রতিষ্ঠা করেছি আমার মতো অটিস্টিক সন্তানের মা-বাবাদের নিয়ে সংগঠন।
একটি অটিস্টিক সন্তানের সবচেয়ে বড় অবলম্বন তার মা-বাবা। দুজনের যৌথ প্রয়াসেই সে বিকশিত হতে পারে। তার বিকাশের জন্য প্রয়োজন সমাজের অন্যদের সম্মিলিত সমর্থন। যারা সদ্য জানতে পেরেছেন, আপনার সন্তানের বিকাশজনিত সমস্যা আছে, তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই— হতাশ হবেন না। সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনই দিশেহারা হবেন না। অটিজম সমস্যা নিয়ে কোনো ভবিষ্যদ্বাণী করা কঠিন। আপনার সন্তানের ভবিষ্যৎ জীবন কেমন হতে পারে, এই নিয়ে হুট করে কোনো উপসংহারে উপনীত হবেন না। অন্য সবার মতো অটিস্টিক শিশুরও সামর্থ্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।
সব শেষে বলব, আপনার অটিস্টিক সন্তানের সঙ্গে অন্য শিশুদের তুলনা টেনে মন খারাপ করবেন না। বরং ওর ছোট ছোট অর্জনে তৃপ্তি খুঁজুন। ওকে উৎসাহিত করুন যাতে ও সামনের দিকে এগোতে পারে।

murshida:
 :)

sayma:
true..

Nusrat Jahan Bristy:
True...

murshida:
 :)

Navigation

[0] Message Index

[#] Next page

Go to full version