সফল হওয়ার আগে সৎ মানুষ হওয়া জরুরি’

Author Topic: সফল হওয়ার আগে সৎ মানুষ হওয়া জরুরি’  (Read 938 times)

Offline shawket

  • Jr. Member
  • **
  • Posts: 99
    • View Profile
একটি প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন বিভাগ-প্রধানের সাফল্যের ওপর নির্ভর করে ওই প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা সিইও’র সফলতা। সিইও সফল হলে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা বেশি হয়। খুশি হন শেয়ারহোল্ডাররা। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে সিইও’র সুনাম। প্রতিষ্ঠানের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও), কোম্পানি সচিব, চিফ কমপ্লায়েন্স অফিসার, চিফ মার্কেটিং অফিসারসহ এইচআর প্রধানরা থাকেন পাদপ্রদীপের আড়ালে। টপ ম্যানেজমেন্টের বড় অংশ হলেও তারা আলোচনার বাইরে থাকতে পছন্দ করেন। অন্তর্মুখী এসব কর্মকর্তা সব সময় কেবল প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য বাস্তবায়নে ব্যস্ত থাকেন। সেসব কর্মকর্তাকে নিয়ে আমাদের নিয়মিত আয়োজন ‘টপ ম্যানেজমেন্ট’। শেয়ার বিজের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এবার এলিট পেইন্ট অ্যান্ড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের মানবসম্পদ, প্রশাসন ও কমপ্লায়েন্স বিভাগের প্রধান (সিনিয়র জিএম) মোহাম্মদ মোরাদ হোসেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মো. হাসানুজ্জামান পিয়াস

মোহাম্মদ মোরাদ হোসেন এলিট পেইন্ট অ্যান্ড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের মানবসম্পদ, প্রশাসন ও কমপ্লায়েন্স বিভাগের প্রধান (সিনিয়র জিএম)। স্নাতক শেষে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। পরে সম্পন্ন করেছেন মানবসম্পদের ওপর এমবিএ, স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা, এলএলবি, ডিপ্লোমা ইন সোশ্যাল কমপ্লায়েন্স, চার্টার্ড হিউম্যান রিসোর্স প্রফেশনাল ডিগ্রিসহ বেশ কিছু পেশাগত কোর্স। তিনি বাংলাদেশ সোসাইটি ফর হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের (বিএসএইচআরএম) এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলর ও সম্মানিত ফেলো

শেয়ার বিজ: ক্যারিয়ারের গল্প দিয়ে শুরু করতে চাই…

মোহাম্মদ মোরাদ হোসেন: মেরিন ফিশারিজ একাডেমি থেকে দুই বছর অফিসার ক্যাডেটশিপ ট্রেনিংসহ মেরিটাইম গ্র্যাজুয়েশন শেষে গভীর সমুদ্রগামী জাহাজে আট বছরের অধিক সময় সফল ক্যারিয়ারে তিন বছর চার মাস স্কিপার (ক্যাপ্টেন) হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। গভীর সমুদ্রে দায়িত্বরত অবস্থায় করপোরেট লাইফের স্বপ্ন দেখতাম। প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবে মানবসম্পদ বিষয়ে এমবিএ করি। এরপর বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেডে যোগদানের মাধ্যমে করপোরেট লাইফের যাত্রা। ২০১১ সালে আরএকে পেইন্টস লিমিটেডের মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগ দিই। পাঁচ বছরের বেশি সময় দায়িত্ব পালন শেষে ২০১৬ সাল থেকে এলিট পেইন্ট অ্যান্ড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার (এইচআর, অ্যাডমিন অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। চাকরির পাশাপাশি মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা, এলএলবি, ডিপ্লোমা ইন সোশ্যাল কমপ্লায়েন্স, চার্টার্ড হিউম্যান রিসোর্স প্রফেশনাল ডিগ্রি নিই। এছাড়া স্কলারশিপের মাধ্যমে জাপানের ওসাকা থেকে লিডারশিপ ও টিমওয়ার্কের ওপর ‘সলভিং হিউম্যান অ্যান্ড অরগানাইজেশনাল প্রবলেম’ নামে একটি কোর্স করি। পিএইচডি করার লক্ষ্যে বর্তমানে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস থেকে এমফিল করছি। মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় দৃশ্যমান যোগ্যতা ও অবদানের জন্য ২০১৭ সালে ‘ওয়ার্ল্ড এইচআরডি কনগ্রেস’ মুম্বাই থেকে ‘হান্ড্রেড মোস্ট ইনফ্লুয়েন্সিয়াল গ্লোবাল এইচআর প্রফেশনাল অ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত হই। চাকরির পাশাপাশি গবেষণার সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছি। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক পিয়ার রিভিউ জার্নালে আমার ১০টি রিসার্চ আর্টিকেল প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণায় অবদানের জন্য ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ান একাডেমি অব বিজনেস লিডারশিপ থেকে সার্টিফিকেট অব ফেলোশিপ অর্জন করি। সাংগঠনিক মানসিকতা ও পেশাগত নেটওয়ার্কিংয়ের বদৌলতে বাংলাদেশ অরগানাইজেশন ফর লার্নিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বোল্ড) ফেলো, বাংলাদেশ সোসাইটি ফর টোটাল কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্টের (বিএসটিকিউএম) লাইফ মেম্বার, বাংলাদেশ সোসাইটি ফর অ্যাপারেল হিউম্যান রিসোর্স প্রফেশনালসের মেম্বার, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ হিউম্যান রিসোর্স অরগানাইজেশনের (এফবিএইচআরও) কার্যকরী কমিটি মেম্বার ও বাংলাদেশ সোসাইটি ফর হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের (বিএসএইচআরএম) সম্মানিত ফেলো ও এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলর
হিসেবে দায়িত্বরত।

শেয়ার বিজ: পেশা হিসেবে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনাকে কেন বেছে নিয়েছেন?

মোরাদ হোসেন: আমাদের দেশে অধিকাংশ মানুষই মেরিনের চাকরি বলতে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিংকেই বোঝেন। আসলে জাহাজে প্রধানত দুটি ডিপার্টমেন্ট থাকে-নটিক্যাল (নেভিগেশন) ও মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং। জাহাজের মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিকস ও রেফ্রিজারেশন ঠিক রাখা যেমন মেরিন ইঞ্জিনিয়ারের দায়িত্ব, তেমনি জাহাজ চালনার পাশাপাশি মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন, প্রশাসন, সেইফটি অ্যান্ড সিকিউরিটির দায়িত্ব পালন করতে হয় নেভিগেটিং অফিসারকে। একজন নেভিগেটর হিসেবে কাজের ধরন অনুযায়ী আমার জন্য মানবসম্পদ বিভাগকেই বেছে নেওয়া যুক্তিসংগত ছিল। তাছাড়া মানুষের ভালোমন্দ দেখভালের দায়িত্বটাকে অনেক পবিত্র দায়িত্ব বলে মনে করি বলে মানবসম্পদকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছি।

শেয়ার বিজ: প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য বাস্তবায়নে দক্ষ এইচআরের ভূমিকা ও গুরুত্ব সম্পর্কে কিছু বলুন…

মোরাদ হোসেন: প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য বাস্তবায়নে মানবসম্পদ বিভাগের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন মানবসম্পদ ব্যবস্থাপক কর্মীদের প্রশিক্ষণ, মূল্যায়ন ও প্রেষণাকে গুরুত্ব দেন। ফলে কর্মীরা সন্তুষ্ট থাকেন, তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। সর্বোপরি প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন বেড়ে যায়, যা প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখে।

শেয়ার বিজ: বাংলাদেশে এইচআর প্রাকটিস সম্পর্কে কিছু বলুন।

মোরাদ হোসেন: বর্তমানে আমাদের দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা অন্যান্য বিভাগ যেমন বিক্রয় ও বিপণন, হিসাববিভাগ, সাপ্লাই চেইন এর মতো সমান গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। যা গত দশ বছর আগেও কল্পনা করা যেত না। বর্তমানে মালিকদের মনোভাবের অনেক পরিবর্তন হয়েছে এবং হচ্ছে। বহি:বিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশেও মানবসম্পদ বিভাগকে কোম্পানির স্ট্রাটেজিক পার্টনার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও ট্রেনিং ইনস্টিটিউট এবং প্রফেশনাল সোসাইটি যেমন: বিএসএইচআরএম, বিসার্প, বোল্ড প্রভৃতি এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

শেয়ার বিজ: পেশা হিসেবে এইচআর ম্যানেজারকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন?

মোরাদ হোসেন: পেশা হিসেবে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা অনেক এগিয়ে গেছে। শিল্পায়নের প্রসার ও দেশের উন্নয়নের সঙ্গে এ পেশার ভূমিকা আরও বাড়বে। বর্তমানের প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজারে দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক, ছোট কিংবা বড় সব প্রতিষ্ঠানই প্রায় একই ধরনের মেশিন, টেকনোলজি, ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করে। তাই যে সব প্রতিষ্ঠান যত বেশি দক্ষতার সঙ্গে উক্ত সম্পদসমূহের সুষ্ঠু ব্যবহার করে দ্রুততম সময় ও স্বল্পমূল্যে মানসম্পন্ন পণ্য ভোক্তার কাছে পৌঁছে দিতে পারে তারাই সফলতার সঙ্গে বাজারে টিকে থাকে। বাজারে টিকে থাকা বা বের হয়ে যাওয়া দুটি ক্ষেত্রেই মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন ও তার যথাযথ সংরক্ষণের স্বার্থে প্রতিষ্ঠানে এইচআর ম্যানেজারের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

শেয়ার বিজ: প্রতিষ্ঠানে একজন এইচআরের জন্য চ্যালেঞ্জিং বিষয় কী?
মোরাদ হোসেন: নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই এগিয়ে যেতে হয়। তবে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপকের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, মালিক ও শ্রমিক উভয়ের স্বার্থের ব্যাঘাত না ঘটিয়ে একটা সুন্দর সেতুবন্ধন তৈরি করা।

শেয়ার বিজ: যারা এ পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে চান, তাদের উদ্দেশে কিছু বলুন…

মোরাদ হোসেন: মানবসম্পদ বিভাগে তরুণ-তরুণীদের স্বাগত জানাই। একই সঙ্গে বলতে চাই, নিজেকে যোগ্যতার দিক থেকে একটু ভিন্নভাবে গড়ে তুলতে হবে। একাডেমিক পড়ালেখার পাশাপাশি কিছু পেশাগত ডিগ্রি বা কোর্স করে নিলে গতানুগতিক শিক্ষার্থীদের থেকে নিজেকে একটু ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা যায়। এতে জব মার্কেটে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হবে। সব সময় লার্নিং অভ্যাসের মধ্যে থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। এটা ছাত্রজীবন থেকেই শুরু করা যেতে পারে। প্রতি শুক্রবার অবসরে নষ্ট না করে কিছু ট্রেনিং বা পেশাগত উন্নয়নের কোর্স করা যেতে পারে। তেমনি চাকরিতে প্রবেশের পরও পেশাগত কোর্স ও ট্রেনিং করে নিজের সমসাময়িক জ্ঞান বাড়াতে হবে। এতে হারানোর কিছু নেই, বরং উপকারই হবে। এছাড়া সেলফ ডিসিপ্লিন অত্যন্ত জরুরি। সফল হওয়ার আগে সৎ মানুষ হওয়া জরুরি। কারণ সততা মানুষের ব্যক্তিত্ব ও আত্মবিশ্বাস বাড়ায়, যা তাকে সামনে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে।

Source: http://sharebiz.net/সফল-হওয়ার-আগে-সৎ-মানুষ-হও/