Educational > You need to know

শিশু রোগ

(1/3) > >>

Sultan Mahmud Sujon:
নবজাতক

আপনার যদি স্বাভাবিকভাবে প্রসব হয় তবে জণ্মের প্রায় সঙ্গে সঙ্গে নবজাতককে আপনার কাছে নিয়ে আসবে আপনার ডাক্তার, নার্স বা দাই৷ এটা খুবই জরুরী৷ এর ফলে বাচ্চার সাথে মায়ের নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে৷বাচ্চা জণ্মানোর সঙ্গে সঙ্গেই আপনার হয়তো জানতে ইচ্ছা করবে আপনার ছেলে হয়েছে না মেয়ে হয়েছে, দেখতে কার মতো হয়েছে ইত্যাদি৷ কিন্তু সবার আগে আনপার জানা উচিত বাচ্চা স্বাভাবিক কিনা৷ এখানে স্বাভাবিক নবজাতকের কিছু কিছু বৈশিষ্ট্যের কথা আপনাকে জানানো হচ্ছে৷ জণ্মের পর হতে একমাস সময়কালকে নবজাতক বলা হয়৷

 
0005.jpg
চিত্র- নবজাতক
চিত্র সূত্র- © ডি.নেট

 



নবজাতকের শরীরের বৈশিষ্ট্য :
ওজন : নবজাতকের ওজন সাধারণভাবে ৩ কিলোর কম বা বেশি হয়ে থাকে৷

লম্বা : স্বাভাবিক শিশু জণ্মের সময় মোটামুটিভাবে ৫০ সেন্টিমিটার বা ২০ ইঞ্চির মতো লম্বা হয়৷

শরীরের অনুপাত : শিশুর মাথা শরীর হাত-পা-এর অনুপাত বড়দের শরীরের তুলনার অন্যরকম হয়৷ নবজাতকের মাথার মাপ দেহের মাপের এক চতুর্থাংশ হয়ে থাকে৷ দু�বছরে সেটা গিয়ে দঁাড়ায় এক পঞ্চমাংশ এবং আঠারো বছর লাগে বড়দের মতো মাথার মাপ দেহের এক অষ্টমাংশ হতে৷

মাথা:নবজাতকের মাথার মাপ দেহের তুলনায় বেশি হয়, এ সময়ে মাথার মাপ ৩৫ সেন্টিমিটার এর মতো হয়৷নবজাতকের মাথার গঠন নানান রকমের হতে পারে৷ কিছু কিছু গঠন একটু অস্বাভাবিক দেখালেও তা কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই স্বাভাবিক হয়ে যায়৷ এনিয়ে চিন্তার কোন কারণ নাই৷

চামড়া:জণ্মের সময়ে বাচ্চার সারা শরীর ভার্নিক্স বলে এক ধরণের মোমের মতো জিনিস দিয়ে ঢাকা থাকে৷ এটা স্বাভাবিক, কখনও তুলো বা অন্য কোনও জিনিস দিয়ে এটাকে তুলবার চেষ্টা করবেন না৷ এগুলো ধীরে ধীরে উঠে যাবে৷ ভার্ণিক্স উঠে যাওয়ার কয়েকদিন পর দেখা যায় হাত পায়ের চামড়ার পাতলা খোসার মতো  আবরণ আলগা হয়ে উঠে উঠে যাচ্ছে৷ এতে ভয় পাওয়ার কিছু নাই৷ এটাও খুব স্বাভাবিক৷

চোখ : জণ্মের সময় চোখের পরিমাপ বড়দের এক তৃতীয়াংশের মতো হয়৷ জণ্মের পরে অনেক শিশুরই চোখের পাতা একটু ফোলা লাগে৷ এটা সাধারণত জণ্মের সময়ে যে চাপ পড়ে তার ফলে হয়৷ কয়েকদিনের মধ্যে দেখবেন ফোলা একদম মিলিয়ে গেছে৷ নবজাতকের চোখে যদি পিচুটি দেখেন অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন৷ নিজে থেকে কোনও সময়েই চোখে মলম বা ড্রপ দেবেন না৷

কান : নবজাতকের কান নিয়ে চিন্তার কিছু নেই৷

মুখ : অনেক বাচ্চার জণ্মের সময়ই দঁাত দেখা যায়৷ এতে ঘাবড়ে যাবেন না৷ এই দঁাত কিছুদিনের মধ্যেই পড়ে যাবে৷অতিরিক্ত দুধ টানার ফলে নবজাতকের ঠেঁাটে ফোস্কার মতো ফুলে উঠতে পারে৷ এজন্য কখনো দুই খাওয়ানো বন্ধ করবেন না৷ নবজাতকের গাল দুটো বেশ ফোলা-ফোলা হয়৷ এর কারণ ওদের গালে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট বা চর্বি থাকে৷ যাকে আমরা বলি সাকিং প্যাড্স৷ এ সময়ে যেহেতু শিশু প্রচুর পরিমাণে বুকের দুধ চুষে থাকে সেই জন্যেই এই সাকিং প্যাড বা চোষক গদির দরকার৷ পরে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই এই চর্বির পরিমাণ কমতে থাকে এবং গাল ফোলার ভাবটাও কমে আসে৷

গলা : নবজাতকের গলা প্রায় থাকেই না বলা যায়৷ ওদের গলা এতই ছোট থাকে যে মনে হতে পারে মাথাটা সরাসরি ঘাড়ের সঙ্গে লাগানো৷ পরে আস্তে আস্তে গলা লম্বা হতে থাকবে এবং বড়দের মতো স্বাভাবিক হয়ে যাবে৷

বুক : বুকের ভিতরে ফুসফুস বা হার্ট নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নেই৷ এগুলোর চিন্তা ডাক্তারদের উপরেই ছেড়ে দিন৷

নাভি : আসলে মায়ের শরীর হতে খাদ্য এবং অক্সিজেন ইত্যাদি শিশুর শরীরে নিয়ে যায় একটা গোল ফিতের মতো লম্বা জিনিস দিয়ে৷ এটাকেই আমরা বলি আমবিলিকাল কর্ড বা সাধারণ বাংলায় নাড়ি৷ জণ্মের পরে শিশুর এই নাড়ির আর কোনও প্রয়োজন থাকে না৷ তাই জণ্মের সঙ্গে সঙ্গেই ডাক্তার বা নার্সরা নবজাতকের নাভি থেকে কয়েক ইঞ্চি উপরে থেকে এই নাড়ি কেটে দিয়ে ভালো করে বেঁধে দেন৷ আর সাত-দশ দিনের মধ্যে এই কাটা নাড়ির অংশটা আস্তে আস্তে কালো হয়ে শুকিয়ে নাভি থেকে খসে পড়ে যায়৷ মনে রাখবেন নাভিতে লাল-নীল ঔষধ লাগালে উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি হয়৷

যৌনাঙ্গ : সারা শরীরের তুলনায় নবজাতকের যৌনাঙ্গ একটু বড়ই থাকে৷ সেটা স্বাভাবিক৷

কন্যা নবজাতক : অনেক সময় নবজাতক কন্যা সন্তানের যৌনাঙ্গ দিয়ে সাদাটে এক ধরনের তরল পদার্থ বের হয়৷ অনেক সময় আবার ওতে রক্তের ছিঁটেও থাকতে পারে৷ ভয় নাই এটা মায়ের শরীর হতে ইস্ট্রোজেন হরমোন গর্ভস্থ অবস্থায় শিশুর শরীরে ঢোকার ফল, কয়েকদিনের মধ্যেই এসব ঠিক হয়ে যাবে৷

ছেলে নবজাতক : অনেক সময় অন্ডকোষের থলি (স্ক্রোটাম) একটু বেশি ফোলা থাকে৷ এটা হয়তো জণ্মের সময় ব্যথা লাগার বা ক্ষনস্থায়ী পানি জমার ফল৷ এর কোনও চিকিত্‌সার দরকার হয় না৷

শিশুর কিছু সাধারণ রোগের নাম নিচে দেওয়া হলো-

    ১. প্রতিষেধক টিকা কেন দিবেন
    ২. নবজাতকের যত্ন
    ৩. শিশুর আদর্শ খাদ্য
    ৪. মানসিক প্রতিবন্ধী শিশু
    ৫. শিশুর জ্বর
    ৬. শিশুর নিউমোনিয়া
    ৭. শিশুদের হৃদরোগ
    ৮. অপুষ্টিজনিত রোগ
    ঌ. ধনুষ্টংকার
    ১০. পোলিও
    ১১. ডিপথেরিয়া
    ১২. শিশুর হাম
    ১৩. হুপিংকাশি

Sultan Mahmud Sujon:
কেন দিবেন প্রতিষেধক টিকা

শিশুদের জন্য অবশ্য প্রয়োজনীয় কয়েকটি ভ্যাকসিন-এর কথা আলোচনা করা হল৷

বি.সি.জি : শিশু জণ্মাবার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই প্রতিষেধক টিকাটি দিতে হয়, যক্ষ্না রোগের প্রতিষেধক হিসাবে৷ ফলে যক্ষ্না হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না৷ বা হলেও অসুখটি বেশিদুর গড়াবে না৷ আমাদের দেশে টিকাকরণ আবশ্যক করে দেওয়া হয়েছে৷ টিকা দেওয়ার ৩-৬ সপ্তাহ পর শরীরের যেখানে টিকা দেওয়া হয়েছে (বঁা হাতের ওপরের দিকে) সেখানে একটা ছোট ফুস্কুড়ির মতো দেখা দেয়৷ সেটা ফেটে গিয়ে ঘা হয়৷ পরে সেটা শুকিয়ে গিয়ে একটা ছোট দাগ থেকে যায়৷ এই দাগ থেকেই বোঝা যায় টিকা দেওয়াটা কার্যকরী হয়েছে৷

 
bcg-vaccination-01_final.jpg

 
চিত্র- শিশুকে বিসিজি টিকা দেওয়া হচ্ছে
চিত্র সূত্র- © ডি.নেট


পোলিও : পোলিও রোগ এমন একটি মারাত্মক অসুখ যা মৃতু্যর হাত থেকে বেঁচে গেলেও শরীরের অঙ্গ-প্রতঙ্গ বিশেষ করে হাত ও পা বিকলাঙ্গ হয়ে যেতে পারে৷ এই ভ্যাকসিন ফেঁাটা হিসেবে চালু আছে৷ এই ভাকসিন দেবার ফলে প্রায় ১০০ ভাগ সফল হয় পোলিও রোগ প্রতিষেধক হিসাবে৷ শিশু জণ্মাবার সঙ্গে সঙ্গে এই টিকা চালু করতে হয়৷ তারপর দ্বিতীয় ডোজ ৬ সপ্তাহের মাথায় এবং আরও ২টি ডোজ ৪ সপ্তাহ পর পর৷ অবশেষে দেড় বছর এবং পঁাচ বছরের মাথায় বুস্টার ডোজ দেওয়া হয়৷ আমাদের সরকার এই পোলিও টিকাকরণ আবশ্যিক করেছে৷

polio_vaccine.jpg

 
চিত্র- শিশুকে পোলিও ভ্যাকসিন খাওয়ানো হচ্ছে
চিত্র সূত্র-©ডি.নেট


ডিপিটি : শিশুদের তিনটি মারাত্মক রোগের ভ্যাকসিন ৷ এই তিনটি রোগ হল ডিপথেরিয়া, হুপিং কাশি ও ধনুষ্টংকার৷ এই তিনটি রোগের মিশ্রিত ভ্যাকসিন (DPT) একসঙ্গে একটি ইনজেকশনের মাধ্যমে দেওয়া হয়৷ এর চালু নাম হল �ট্রিপল অ্যান্টিজেন�৷ শিশুর বয়স ৬ সপ্তাহ হলেই এই ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হয়৷ ইনজেকশন দেবার পর শিশুর ২/৩ দিন জ্বর ও ব্যথা হতে পারে৷ এই ভ্যাকসিন ডিপথেরিয়া এবং ধনুষ্টংকারের ক্ষেত্রে শতকরা প্রায় ১০০ ভাগ প্রতিষেধক হিসাবে সফল৷ কিন্তু হুপিং কাশির ক্ষেত্রে সফলতা ৭০-৮০ ভাগ৷ দেড় বছরের মাথায় একটি বুস্টার ডোজ দেওয়া হয়৷ এরপর দ্বিতীয় বুস্টার ৫ বছরের মাথায় দেওয়া হয়৷ কিন্তু তখন ওই ডোজটিতে হুপিং কাশির ভ্যাকসিন বাদ থাকে৷

dpt-vaccination-03_final.jpg

 
চিত্র- শিশুকে ডিপিটি টিকা দেওয়া হচ্ছে
চিত্র সূত্র-©ডি.নেট


হামের টিকা : এই টিকা মিজিলস ভ্যাকসিন নামে চালু৷ শিশুর ঌ মাস বয়সে দিতে হয়৷ এর ফলে শিশুটির হাম হয় না বা হলেও জটিলতা কম হবে৷ ঌ মাস বয়সের আগে দিলে  এই ভ্যাকসিন কার্যকরী নাও হতে পারে৷ এই টিকা অবশ্যই দেওয়া উচিত কারণ এই রোগ থেকে অনেক জটিল রোগ দেখা দিতে পারে যেমন-নিউমোনিয়া, এনকেফালইটিস, ব্রস্কাইটিস ইত্যাদি৷

 

ঔষুধ সেবনের ক্ষেত্রে রেজিষ্টার চিকিত্‌সকের পরামর্শ নিন৷ অন্যথায় কোন সমস্যার জন্য ডি.নেট দায়ী থাকবে না৷

তথ্যসূত্র :
ডা: তাহিরা নাসরীন

Sultan Mahmud Sujon:
 নবজাতকের যত্ন

গর্ভাবস্থায় মায়ের কোন প্রকার জটিলতা দেখা দিলে অবশ্যই কোনও দক্ষ ডাক্তার, নার্স বা দাইয়ের কাছে  প্রসব করানোর ব্যবস্থা করতে হবে এবং কোনও জরুরি সমস্যা দেখা দিলে তার তাত্‌ক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ যেন থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে৷
স্বাভাবিক জণ্মের পর শিশুকে একটি শুকনো কাপড়ে ভাল করে মুছে নিয়ে আর একটি শুকনো কাপড়ে জড়িয়ে রাখতে হবে৷ নাভি দুই ইঞ্চি পরিমাণ রেখে কমপক্ষে ২টি শক্ত বঁাধন দিয়ে নতুন ব্লেড বা পরিষ্কার চাকু দিয়ে কাটতে হবে৷ মায়ের ফুল পড়তে দেরি হলে বা শিশুর কঁাদতে দেরি হলেও নাভি কাটা বন্ধ রাখা চলবে না৷

জণ্মের সঙ্গে সঙ্গে শিশু কেঁদে না উঠলে পিঠে ও পায়ে একটু ঘষা দিয়ে তাকে উজ্জীবিত করার চেষ্টা করতে হবে৷ এতে ফল না হলে শিশুকে চিত্‌ করে শুইয়ে ঘাড়ের নিচে এক ইঞ্চি পরিমাণ কাপড় দিয়ে তার ওপরে হাল্কাভাবে মিনিটে ৩০-৪০ বার শ্বাস দিয়ে শিশুর বুক ফুলয়ে দেবার চেষ্টা করতে হবে৷ এমনিভাবে অল্পক্ষণ শ্বাস দিলেই শিশু নিজে থেকে শ্বাস নেয়া শুরু করতে পারে৷ কখনোই শিশুর পা উঁচু করে উল্টো করে ধরে পিঠ থাপড়ানো উচিত না৷

শিশু কঁাদার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শালদুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করতে হবে৷ নবজাতকটির ওজন নিতে হবে৷ ওজন জানা থাকলে পরবর্তী সময়ে তার সঠিক বৃদ্ধি নির্ণয় করা যায়৷

 
newborn.jpg

 
চিত্র- নবজাতক
চিত্র সূত্র-©ডি.নেট


জণ্মের কয়েকদিনের মধ্যেই কিছু কিছু স্বাভাবিক সমস্যা হয়৷ যেমন -

১) প্রস্রাব হতে দেরি হওয়া
বেশিরভাগ নবজাতকের জণ্মের সঙ্গে সঙ্গে একবার প্রস্রাব হয় এবং পরে প্রায় ২৪ ঘণ্টা আর প্রস্রাব নাও হতে পারে৷ এটি স্বাভাবিক৷ জণ্মের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সাধারণত পায়খানা হয় এবং তা কালো রঙের৷

২) বুকের দুধ আসতে বিলম্ব হওয়া
প্রথম ২/৩ দিন মায়ের দুধ কম আসে এবং এ সময় শিশুর কম দুধেরই প্রয়োজন থাকে৷ অন্য কোন খাবার না দিয়ে বারবার দুধ টানাতে থাকলে সাধারণত তৃতীয় দিনে দুধের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং এ সময় শিশুর পায়খানা একটু পাতলা ও দিনে আট দশ বারও হতে পারে৷ শিশু বুকের দুধ যখনই খেতে চাইবে তখনই তাকে খেতে দিতে হবে৷ সময় বেঁধে বা ঘুম থেকে জাগিয়ে খাওয়ানো ঠিক নয়৷ দুধ খাওয়ানোর সময় মায়ের স্তনের বেঁাটা-সহ কালো অংশের যতটুকু সম্ভব শিশুর মুখের ভেতর দিতে হবে৷ এক স্তন থেকে দুধ খাওয়া শেষ হলে অপর স্তনের দুধ খাবে৷

৩) নবজাতকের জন্ডিস
জণ্মের তিন-চার দিন পর প্রায় সকল নবজাতকের শরীরই কমবেশি হলদে দেখায় বা জন্ডিস হয়৷ এটি স্বাভাবিক৷ এক সপ্তাহ থেকে দশ দিনের মধ্যে তা স্বাভাবিক হয়ে যায়৷ কিন্তু নিচের লক্ষণগুলো থাকলে তাকে অস্বাভাবিক জন্ডিস ভাবতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে৷

    *      যদি জণ্মের পরের দিন জন্ডিস ভালভাবে বোঝা যায়৷
    *      যদি কোনও সময় জন্ডিসের মাত্রা অনেক বেশি মনে হয় যেমন- চোখ-মুখ শরীর ছাড়াও হাত ও পায়ের তালু পর্যন্ত হলুদ মনে হয়৷
    *      শিু কম খেতে চায় বা তাকে নিস্তেজ মনে হয়৷
    *      যদি শিশুর পায়খানার রঙ ফেকাসে বা সাদা সাদা হয়৷
    *      যদি জন্ডিসের সঙ্গে শিশুর জ্বর/বমি ইত্যাদি থাকে৷
    *      দুই সপ্তাহ বয়সের পরও যদি বেশ স্পষ্ট জন্ডিস থাকে৷
    *      যদি মায়ের রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ হয়৷

৪) গায়ে লাল লাল দানা
প্রথম সপ্তাহে অনেক শিশুর গায়ে লাল দানা ওঠে, একে অনেকে মাসিসিপি বলেন, যা স্বাভাবিক এবং কয়েকদিনের মধ্যে আপনা থেকেই তা ভাল হয়ে যায়৷ এ সময় শিশুর গায়ে কোনও তেল বা লোশন লাগানো ঠিক নয় তাতে এটি আরো বাড়তে পারে৷ নবজাতকের ত্বকের যত্নে সরিষার তেল ব্যবহার না করাই ভাল৷ অলিভ ওয়েল, বেবি ওয়েল দেয়া উত্তম৷

৫) নাভির যত্ন
নাভিতে কোনও কিছু না লাগিয়ে শুকনো রাখতে হবে৷ যদি নাভির চারপাশ লাল হয় অথবা পঁুজের মতো রস আসে, তখনই ওষুধ ব্যবহার করতে হবে৷ নাভিতে কোনও প্রকার সেঁক দেবার প্রয়োজন নেই৷

৬) চোখ ওঠা
যদি চোখে ময়লা আসে বা ভোরবেলা চোখ এঁটে থাকে তাবে চোখে রোজ চারবেলা চোখের ড্রপ (ক্লোরামফোনিকল আই ড্রপ) সপ্তাহখানেক দিতে হবে, কিন্তু অবশ্যই তা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী৷

৭) গোসল করানো
জণ্মের সঙ্গে সঙ্গে শিশুকে গোছল না করিয়ে পরিষ্কার নরম কাপড় দিয়ে ভাল করে মুছে শিশুকে আরএকটি পরিষ্কার কাপড়ে দিয়ে পেঁচিয়ে রাখা উচিত৷ শিশুর গায়ে ও হাত-পায়ের ভঁাজে যে সাদা অঁাঠাল প্রলেপ থাকে (শণরভধস) তা কিন্তু খারাপ কিছু না৷ অপরিণত শিশুদের বেলা এটি বেশি থাকে৷ এই প্রলেপ শিশুর ত্বককে রক্ষা করে৷ জণ্মের সঙ্গে সঙ্গে তা মুছে ফেলার প্রয়োজন নেই৷ শিশু পরিণত ও সঠিক ওজনের হলে ২/১ দিন পর গোছল করানো যায় তবে নাভি শুকানো না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা যেতে পারে৷ প্রতিদিন উষ্ঞ গরম পানিতে ভাল করে সমস্ত শরীর মুছে দেয়া উচিত৷ শিশু যদি অপরিণত ও কম ওজনের হয় তবে অন্তত প্রথম দুসপ্তাহ গোসল না করানোই ভাল৷

৮) চুল কাটা
জণ্মের অল্প দিনের মধ্যেই মাথার চুল না কেটে কিছু দেরিতে কাটা উত্তম৷ চুলগুলো পরিষ্কার ও শুকনো রাখতে হবে৷ এগুলো শিশুকে ঠাণ্ডা থেকে রক্ষা করে৷

অপরিণত ও কম ওজনের শিশু
শিশু যদি ৩৬ সপ্তাহ পূর্ণ হবার পূর্বেই জণ্ম নেয় তবে তাকে অপরিণত নবজাতক এবং শিশুর ওজন যদি ২.৫ কেজি ওজনের কম হয় তবে তাকে কম ওজনের নবজাতক বলে৷দুই কেজির বেশি ওজন হলে সাধারণত তেমন কোন অসুবিধা হয় না তবে তার কম হলে নানাবিধ সমস্যা হতে পারে - যেমন ঠিকমত খেতে না পারা, সহজে রোগ সংক্রমিত হওয়া, অতিরিক্ত জন্ডিস হওয়া ইত্যাদি৷ এসব শিশুর যত্নের ব্যাপারে আরো বেশি খেয়াল রাখতে হবে৷ এসব শিশুকে ভালভাবে উষ্ঞ রাখার চেষ্টা করতে হবে৷ মায়ের দুধ ভালমতো টেনে খেতে না পারলে হাতে গালিয়ে চামচে বা ড্রপারে বারেবারে অল্প অল্প করে খাওয়াতে হবে৷ নবজাতক যদি খুব কম ওজনের (১.৫ কেজির কম) হয় তবে তাদেরকে ঘরে উষ্ঞ রাখা কঠিন হয় এবং চামুচেও তারা দুধ গিলতে পারে না সেক্ষেত্রে তাদেরকে হাসপাতালে বা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিতে হবে৷

অপরিণত ও কম ওজনের শিশু জণ্ম প্রতিকারের জন্য গর্ভধারণের আগে ও গর্ভকালীন সময়ে মায়ের সুস্বাস্থ্য রক্ষার দিকে নজর রাখতে হবে ৷ এ ব্যাপারে চিকিত্‌সক ও স্বাস্থ্যকমীর পরামর্শ নেওয়া উচিত৷ বিশেষ করে গর্ভকালীন সময়ে মায়ের খাবারের প্রতি বিশেষ যত্ন নিতে হবে৷ যেহেতু মায়ের খাবারেরই একটি অংশ বাচ্চা গ্রহণ করে থাকে৷ একসময় একটা ভুল ধারণা চালু ছিল যে, মা পর্যাপ্ত খাবার খেলে পেটের বাচ্চা আকারে বড় হবেÐ এতে বাচ্চা প্রসবে অসুবিধা হবে৷ ধারণাটা মোটেই ঠিক নয়৷ গর্ভকালীন সময়ে অন্য সময়ের তুলনায় মায়ের ২০%-২৫% খাবার বেশি খাওয়ার প্রয়োজন হয়৷ এ সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে ফলমূল, শাক-সবজি ও পানিসহ পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে৷ কম আয়ের লোকদের জন্য এরকম একটা সাধারণ হিসাবে হতে পারে যেÐ বাচ্চা পেটে এলে মাকে প্রতিদিন এক মুঠ চাল, এক মুঠ ডাল, কিছু শাক-সবজি, অর্ধেক কলা ও এক চামচ তেল বাড়তি খেতে হবে৷

তাছাড়া কিছুরোগ আছে যাতে পূর্ণ মেয়াদের আগেই বাচ্চা প্রসব হয়ে যেতে পারে৷ সেক্ষেত্রেও বাচ্চা কম ওজনের হতে পারে৷ এক্লামশিয়া, প্রস্রাব ইনফেকশন, প্রজননতন্ত্রের ইনফেকশন, জণ্মনালি থেকে রক্তক্ষরণসহ বিভিন্ন কারণে পূর্ণতা প্রাপ্তির আগেই বাচ্চা প্রসব হয়ে যেতে পারে৷ এসব ক্ষেত্রে চিকিত্‌সকের পরামর্শাধীন থাকতে হবে৷

নবজাতকের টিকা
নবজাতক অবস্থায় টিকা শুরু করতে হবে৷ এ সময় বিসিজি, প্রথম ডোজ পলিও ও জন্ডিসের প্রথম টিকা দিতে হবে৷

একটি সুস্থ নবজাতকের যদি কখনও নিচের যে কোন সমস্যা দেখা দেয় তবে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে৷ যেমন -

    - যদি হঠাত্‌ করে শিশু খাওয়া কমিয়ে দেয় বা দুধ টানতে না পারে,

    - যদি জন্ডিস বেশ বেড়ে যায়,

    - অনেক বমি বা ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হয়,

    - হঠাত্‌ একদিকে চোখ ঘুরিয়ে রাখা,

    -চোখ-মুখের মাংসপেশী হঠাত্‌ কেঁপে ওঠা,

    -কোন হাত বা পা হঠাত্‌ একদিকে ঝঁাকানো বা সোজা করে রাখা, মাঝে মধ্যে শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি৷

সকল নবজাতকের যত্নে একটি জিনিস ভাল করে খেয়াল রাখতে হবে যে, সব সময় পরিষ্কার হাতে তাকে ধরতে হবে এবং তার কাপড় চোপড় বিছানা যেন শুকনো ও পরিষ্কার থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে৷আসুন আমরা সবাই আমাদের এই অবুঝ সোনামণিদের যত্নের ব্যাপারে আও সচেতন হই এবং তাদের সুস্থ সবল হয়ে গড়ে উঠতে সাহায্য করি৷

 

ঔষুধ সেবনের ক্ষেত্রে রেজিষ্টার চিকিত্‌সকের পরামর্শ নিন৷ অন্যথায় কোন সমস্যার জন্য ডি.নেট দায়ী থাকবে না৷

তথ্য সূত্র:
দৈনিক প্রথম আলো

Sultan Mahmud Sujon:
শিশুর আদর্শ খাদ্য


জণ্মের পর শিশুর প্রথম খাবার: জণ্মের পর যত তাড়াতাড়ি সম্বভ (আধাঘন্টার মধ্যে) শিশুকে স্তন দান করতে হবে৷ অনেকে জণ্মের পর পরই স্তন দান করতে বলেন৷ তবে এত তাড়াতাড়ি সম্বভ না হলে, জণ্মের তিন-চার ঘন্টার ভেতর, অর্থাত্‌ মা যখন প্রসবের ধকল কাটিয়ে ওঠেন এবং শিশু বেশ ভালভাবে চুষতে পারে, তখন তাকে অবশ্যই খেতে দিতে হবে৷ শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর জন্য উত্‌সাহ দিন৷

 
breast-feeding_final.jpg
চিত্র- শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানো হচ্ছে
চিত্র সূত্র-ডি.নেট


শালদুধ:শিশু জণ্মের পর যে হলুদাভ ঘন দুধ বেরিয়ে আসে তাকে বলা হয় শালদুধ বা কোলস্ট্রাম-যা শিশুর জন্য খুবই প্রয়োজনীয়৷ এ দুধ ফেলে না দিয়ে অবশ্যই খেতে দিবেন৷শালদুধ পরিমাণে কম হলেও নবজাতকের জন্য তা যথেষ্ট৷জণ্মের পর শিশুর যা যা প্রয়োজন তার সব কিছুই শালদুধে আছে৷ শালদুধে অনেক বেশি রোগ-প্রতিরোধ ইপাদান ও শ্বেতকণিকা থাকে৷ এসব উপাদান শিশুকে বিভিন্ন রোগজীবাণু থেকে রক্ষা করে৷ তাই শালদুধকে বলা হয় শিশুর প্রথম টিকা৷ শালদুধে যে সব উপাদান আছে তা শিশুর অপরিণত অন্ত্রকে পরিপক্ক হতে সাহায্য করে৷ এসব গ্রোথ ফ্যাক্টর শিশুর অন্ত্রনালীকে দুধ হজম করতে সাহায্য করে৷শালদুধ একটি রেচকের মতো কাজ করে ও শিশুর পেটের প্রথম কালো পায়খানা বা মিকোনিয়াম বের করে দিতে সাহায্য করে৷ মিকোনিয়াম বেশিক্ষণ পেটে থাকলে নবজাতকের জন্ডিস হওয়ার আশংকা থাকে৷

মধু বা অন্যান্য মিষ্টি জাতীয় খাবার:বহুদিন থেকে আমাদের দেশে প্রচলিত আছে শিশু জণ্মের পরই তার মুখে মিষ্টি জাতীয় খাবার, যেমন-মধু বা চিনির পানি দেয়া৷ কিন্তু যেহেতু এগুলো জীবাণুমুক্ত নয় তা খাওয়ানোর পর শিশুর বমি, পাতলা পায়খানা বা অন্যান্য পেটের পীড়া দেখা দিতে পারে৷ তাই নবজাতক শিশুকে চিনির পানি বা মধু খাওয়ানো মোটেই উচিত নয়৷

১ঌঌ২ সাল হতে প্রতি বছর আগষ্টের প্রথম সপ্তাহ বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালিত হয়ে আসছে ৷ বিশ্বব্যাপী এক সপ্তাহব্যাপী শিশুর জন্য আদর্শ খাদ্য তথা মাতৃদুগ্ধের গুণাগুণ নিয়া আলোচনা চলে৷ ১ঌঌ২ সাল হতে প্রতি বছর িশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালিত হয়ে আসছে৷ শিশুকে মায়ের দুধ পান করানো সামাজিক, অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যগত সুফলের সঠিক চিত্র তুলে  ধরে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ইতিবাচক সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং মাতৃদুগ্ধের ব্যাপারে জনসাধারণের মাঝে দায়িত্ববোধ সৃষ্টি করাই ঘটা করে এই সপ্তাহ পালনের প্রকৃত উদ্দেশ্য৷

মায়ের বুকের দুধ শিশুদের জন্য সঠিক, উপযোগী তথা সর্বশ্রেষ্ঠ খাবার এই সত্য আজ সুপ্রতিষ্ঠিত৷ মায়ের দুধে শিশুর জন্য সর্বপ্রকার অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদান সঠিক পরিমাণে বিদ্যমান থাকে৷ মায়ের দুধ স্বতঃস্ফূর্তভাবে রোগ-প্রতিরোধক উপাদান সরবরাহ করে৷ শাল দুধের রোগ-প্রতিরোধক বিশেষ ক্ষমতার জন্য তো ইহাকে শিশুর জীবনে প্রথম টিকা বলা হয়ে থাকে৷ গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারেঃ যেসব শিশু মায়ের দুধ খায় তাদের আইকিউ (I.Q) সেসব শিশুর তুলনায় তিন হইতে পঁাচ পয়েন্ট বেশী যেসব শিশু মায়ের দুধ হতে বঞ্চিত হয়৷

গবেষকরা আরো লক্ষ্য করেছেন যে, বুকের দুধ হতে বঞ্চিত শিশুরা সমাজে সহজে (তুলনামূলকভাবে) খাপ খাইয়ে চলতে পারে না৷ গবেষণা হতে বেড়িয়ে আসা আরেকটি সত্যি হচ্ছে ঃ শিশুরা যত বেশীদিন মায়ের দুধ খাবে, ততই মঙ্গল৷ অন্যদিকে ইউনিসেফের এক হিসাব মতে ঃ তৃতীয় বিশ্বের সব মা যদি তাদের শিশুদের সঠিক নিয়মে বুকের দুধ খাওয়ান, তবে ফি বছর ১০ লক্ষেরও বেশী শিশুর জীবন বঁাচানো সম্ভব৷
একটা সময় ছিল, যখন মনে করা হত যে, বুকের দুধ খাওয়ালে মায়েদের শারীরিক ক্ষতি হয়৷ আজ এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত  হয়েছে৷ বিজ্ঞান বলছে বরং উল্টা কথা৷ যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা গবেষণা হতে প্রাপ্ত ফলাফল ঘেঁটে বলছেন যে, যেসব মা শিশুদের বুকের দুধ নিয়মিত খাওয়ান তাহাদের ব্রেষ্ট (স্তন)ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ কম৷ অনেক চিকিত্‌সকের মতে এতে ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার হবার সম্ভাবনাও অনেক হ্রাস পায়৷

মোদ্দাকথা, শুধু শিশুর মঙ্গলের জন্য নয়, মায়ের মানসিক ও শারীরিক কল্যাণের জন্যও শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত নিয়মিতভাবে৷ আর স্বাভাবিকভাবেই শিশু ও মায়ের কল্যাণ মানেই সমাজের কল্যাণ৷ শিশুর ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ানো হলে শিশু খাদ্য বাবদ বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হয় না৷ অন্যদিকে শিশু ও মা যেহেতু বুকের দুধ খাওয়া ও খাওয়ানোর মাধ্যমে অনেক ধরনের অসুখ-বিসুখ হতে রক্ষা পায়, সেহেতু চিকিত্‌সার জন্যও সেক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে কম অর্থ খরচ হবার সম্ভাবনা৷ অর্থাত্‌ বুকের দুধ পরিবার তথা সমাজকে আর্থিক দিক দিয়াও লাভবান করতে পারে৷
মাতৃদুগ্ধের এত গুণের পরও বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশী শিশুকে কমবেশী বঞ্চিত করা হচ্ছে৷ আদর্শ খাদ্য হতে বঞ্চিত শিশুদের কথা ভেবেই বিশ্বে মাতৃদুগ্ধ দিবস পালনের আয়োজন৷ অনেকে বলেন, যেহেতু বাংলাদেশের মায়েরা এমনিতেই শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ান, সেহেতু এই দেশে মাতৃদুগ্ধের পক্ষে প্রচারণা চালানোর প্রয়োজন নাই৷ কিন্তু তঁারা ঠিক বলেন না৷ বাংলাদেশ ব্রেষ্ট ফিডিং ফাউন্ডেশনের এক জরিপ মতে, বাংলাদেশে মাত্র ৩২.১ শতাংশ মা শিশুকে ছয় মাস পর্যন্ত শুধু বুকের দুধ খাইয়ে থাকেন৷ অর্থাত্‌ বাংলাদেশেও মাতৃদুগ্ধের ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টিকারী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা দরকার৷

 

ঔষুধ সেবনের ক্ষেত্রে রেজিষ্টার চিকিত্‌সকের পরামর্শ নিন৷ অন্যথায় কোন সমস্যার জন্য ডি.নেট দায়ী থাকবে না৷


তথ্য সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক

শিশুর সুস্থতায় মায়ের দুধ(ডা.সুমন চৌধুরী)
 

Sultan Mahmud Sujon:
মানসিক প্রতিবন্ধী শিশু

আমাদের আশপাশে একটু লক্ষ করলেই দেখা যাবে যে অনেক পরিবারেই মানসিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি রয়েছে৷ মানসিক প্রতিবন্ধীদের নিয়ে পরিবারের চিন্তার শেষ নেই৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, গড় হিসাবে পৃথিবীর শতকরা যেকোন দেশের ৩ শতাংশ মানুষ মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী৷

মানসিক প্রতিবন্ধী কী?
মানসিক প্রতিবন্ধীত্বের অর্থ হলো, বয়স অনুপাতে শিশুটির যে বুদ্ধি থাকার কথা ছিল তা থাকে কম মাত্রায়৷ বুদ্ধি বা আইকিউর(IQ) পরিমাণ কতটুকু কম তার ওপর ভিত্তি করে প্রতিবন্ধিত্বকে মৃদু, মাঝারি ও তীব্র এই তিন ভাগে ভাগ করা যায়৷

মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুর লক্ষণ:

    *

      জণ্মের পর থেকে মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের হামাগুড়ি দিয়ে হঁাটা, বসতে শেখা, দঁাত ওঠা, কথা বলা ইত্যাদি কিছুটা দেরিতে শুরু হয়৷ একটু বয়স হয়ে গেলেও তারা নিজেদের পোশাক নিজেরা পড়তে পারে না, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে পারে না, আকস্মিক বিপদ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে না৷ কখনো কখনো আগুন শব্দ বলতে পারে না, পানি শব্দ বলতে পারে না, একটু দূরে ছেড়ে দিলে বাড়িতে একা একা ফিরে আসতে পারে না, রাস্তাঘাটে ঠিকঠাকমতো চলাচল করতে পারে না৷
    *

      মানসিক প্রতিবন্ধীদের মানসিক গঠন, মস্তিষ্কের গড়ন, মস্তিষ্ক বা ব্রেনের কাজ ইত্যাদি ধীর গতিতে হয়৷ অন্য সাধারণ দশটি শিশু থেকে মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের কথাবর্তা, চলাফেরা, শারীরিক গঠন, আচার-আচরণ ও ব্যবহার দ্বারা সহজেই পৃথক করা যায়৷
    *

      মানসিক প্রতিবন্ধী অল্প থেকে মাঝারি বা তীব্র মাত্রায় হতে পারে৷

মানসিক প্রতিবন্ধীত্বের কারণগুলো হলো -
সংক্রমণ -
শিশুর শৈশবকালীন বয়সে যে সংক্রমণ হয় তা যদি শশুর ওপর ভয়াবহ প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে তবে তা শিশুকে মানসিক প্রতিবন্ধী করে ফেলতে পারে৷ সংক্রমণের মধ্যে রয়েছে নানা ধরণের সংক্রমণ৷ যেমন -

মেনিনজাইটিস:
মানবমস্তিষ্কে এবং স্পাইনাল কর্ড বা সুষুম্নাকাণ্ডকে ঘিরে এক ধরণের আবরণী পর্দা রয়েছে, একে বলা হয় মেনিনজেস৷ ব্যাকটেরিয়াল, ভাইরাল এবং প্রোটোজোয়াজনিত সংক্রমণের কারণে মানবমস্তিষ্কের সেই পর্দা আক্রান্ত হতে পারে৷ এভাবে মানবমস্তিষ্কের স্নায়ুকোষের স্থায়ী ক্ষতি হয়ে গেলে শিশু মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী হয়ে যেতে পারে৷

অপুষ্টি:
আমাদের দেশের অধিকাংশ লোকই দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে থাকে৷  পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টি, যা মস্তিষ্ক বা নার্ভাস সিস্টেম গঠন করার জন্য এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজন, তা থেকে এক বিশাল জনগোষ্ঠী বঞ্চিত৷ সে হিসেবে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ আমিষ, শর্করা ও স্নেহজাতীয় খাবারের স্বল্পতার জন্য অল্প বয়সে অনেক শিশুই মানসিক প্রতিবন্ধীত্বের শিকার হয়ে থাকে৷

বংশগত কারণে:
বংশগত বা জেনেটিক কারণেও ব্যক্তির মাঝে মানসিক প্রতিবন্ধীত্ব দেখা দিয়ে থাকে৷ এগুলো হলো-উইলসন্স ডিজিজ,ক্রমোজোমাল ডিজঅর্ডার, যেমন- ডাউন সিনড্রোম,ফিনাইল কেটোনইউরিয়া,নিউরাল টিউবের সমস্যা, যেমন- পলিজেনিক ডিজঅর্ডার,ক্লিনফেলটার্স সিনড্রোম,রুবেলা/সিফিলিস বা টক্সোপ্লাজমোসিসজণিত কারণে স্নায়ুতন্ত্র সম্পর্কীয় সমস্যা, যেমন- হাইড্রোকেফালাস, মাইক্রোকেফালি ইত্যাদি৷

প্রসবকালীন জটিলতা:
মায়ের গর্ভ থেকে বাচ্চা জণ্ম নেয়ার সময় মস্তিষ্কে কোন ধরনের আঘাত পেলে বাচ্চা মানসিক প্রতিবন্ধী হতে পারে৷ আবার অনেক বাচ্চা রয়েছে, যারা পূর্ণতা পাওয়ার আগেই পৃথিবীর আলো দেখে৷ এ ধরনের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে শারীরিক বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়৷ যেসব শিশু এ সমস্যায় ভোগে তাদের স্নায়ুতন্ত্র সম্পূর্ণভাবে বিকাশ লাভ করে না৷ ফলে এরা পরে মানসিক প্রতিবন্ধীত্বের শিকার হয়৷

রাসায়নিক পদার্থ (ফিজিক্যাল ও রাসায়নিক এজেন্ট):
বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের কারণে শিশুর মানসিক প্রতিবন্ধিত্বের সৃষ্টি হতে পারে৷

সমাজ থেকে বঞ্চিত হওয়া:
সমাজ থেকে বঞ্চিত হওয়ার ফলেও কোনও কোনও মানুষের মানসিক প্রতিবন্ধিত্বের সৃষ্টি হতে পারে৷

অজানা কারণ:
এমন অনেক কারণ রয়েছে, যা জানা নেই৷

মানসিক প্রতিবন্ধিদের মূল্যায়ন
বিভিন্ন প্রক্রিয়া, ইতিহাস ইত্যাদির মাধ্যমে মানসিক প্রতিবন্ধীত্বের মূল্যায়ন করা যায়৷ যেমন-

    *

      শিশুর কর্মদক্ষতার বিশ্লেষণ
    *

      আইকিউ বা বুদ্ধ্যন্ক
    *

      পেশি-চলত্‌শক্তির বিকাশ
    *

      শিশুর ভাষা ব্যবহারের ক্ষমতা
    *

      কানে কম শোনা
    *

      দৃষ্টিশক্তিহীনতা
    *

      সামাজিক বিকাশ এবং ব্যক্তিগত ও অন্যান্য শারীরিক ও সাইকিয়াট্রিক সমস্যার সামঞ্জস্য বিধান৷
    *

      শরীরের বিকলাঙ্গতা বের করতে পূর্ণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন৷
    *

      মেডিকেল ইতিহাস

    শিশুর মা-বাবার কাছ থেকে বিভিন্ন মেডিকেল ইতিহাস নিতে হবে৷ এগুলো হলো -

        *

          প্রসবকালীন কোন জটিলতা হলো কি না
        *

          গর্ভাবস্থায় মেডিকেল ইতিহাস
        *

          বাচ্চার শারীরিক ও মানসিক বিকাশে ধাপ
        *

          বাচ্চা হওয়ার সময় মস্তিষ্কে আঘাত পেয়েছে কি না
        *

          শিশুর সংক্রামক ব্যাধি, যেমন - মেনিনজাইটিস
        *

          রক্তের সম্পর্ক রয়েছে এমন আত্মীয়স্বজনের মাঝে বৈবাহিক সম্পর্ক ইত্যাদি৷

চিকিত্‌সা ব্যবস্থা
অপ্রিয় হলেও সত্য, মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের মা-বাবার অবগত হওয়া প্রয়োজন যে, পৃথিবীতে কোথাও এখনো কোন ওষুধ বা চিকিত্‌সা পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়নি, যা দ্বারা এই মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের বুদ্ধি বাড়ানো যেতে পারে৷ তবে আশ্বস্ত হওয়ার মতো সংবাদ হলো, বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের মানসিক ও শারীরিক উন্নতি করা সম্ভব৷

 

ঔষুধ সেবনের ক্ষেত্রে রেজিষ্টার চিকিত্‌সকের পরামর্শ নিন৷ অন্যথায় কোন সমস্যার জন্য ডি.নেট দায়ী থাকবে না৷


তথ্য সূত্র :

দৈনিক প্রথম আলো

Navigation

[0] Message Index

[#] Next page

Go to full version