অন্তরের প্রশান্তি

Author Topic: অন্তরের প্রশান্তি  (Read 1350 times)

Offline Ms Jebun Naher Sikta

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 190
  • Test
    • View Profile
অন্তরের প্রশান্তি
« on: July 05, 2018, 07:06:48 PM »
মাঝে মাঝে কিছু সময় আসে যখন আমাদের কিছুই ভালো লাগে না। হতাশ হতাশ লাগে, কিছুতেই মন বসে না, মনে হয় যেন বুকের উপর পাহাড় সমান কিছু এসে ভর করেছে-নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এই সময়গুলোতে সাধারণত আমরা “ফ্রেশ” হওয়ার জন্য অনেককিছুই করি। গান শুনি, মুভি দেখি, বদঅভ্যাস থাকলে অনেকেই সিগারেট ফুঁকে, গাঁজা টানে, দু'এক পেগ গিলেও ফেলে। কিন্তু সত্যিকারের বাস্তবতা হলো এর কোনকিছুই আমাদের অন্তরকে শান্ত করতে পারে না, হয়তো কিছু সময়ের জন্য ‘ব্যস্ত’ রাখতে পারে মাত্র। বরং এরপর আরো ভয়ংকরভাবে বিষাদগ্রস্থতা আর অবসাদ এসে গ্রাস করে নেয়।
.
এরকম সমস্যা নিয়ে অনেক জাহিল বন্ধুবান্ধব কাউন্সেলিং চাইতে আসে। অনেকে আবার মজা করে বলে তাদের মাথায় ফুঁ দিয়ে দিতে। তাদেরকে যখন বলা হয়, আচ্ছা আমাদের ক্ষিদে পেলে আমরা কী করি? খাই!এতে আমাদের পেট শান্ত হয়। চোখের শান্তির জন্য আমরা ভালো কিছু দেখি। কানের জন্য আনন্দদায়ক কিছু শুনি। তেমনি শরীরের প্রতিটা অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কিছু স্পেসিফিক কাজ আছে, সেই অঙ্গগুলো দিয়ে যখন তার স্পেসিফিক কাজটা হয় তখন সে ভালো থাকে। কিন্তু আমাদের যখন পেটে খুব ক্ষিদে পায় তখন আমরা ভালো কিছু দেখি না কেন? যখন ভালো কিছু শুনতে ইচ্ছে করে তখন পেট ভরে খাই না কেন? কারণ আমরা জানি এতে কোন কাজ হবে না। পেটের খোরাক কান পূরণ করতে পারে না, চোখের খোরাক পূরণ করতে পারে না পেট!
.
ঠিক তেমনি আমাদের শরীরে এক টুকরা জায়গা আছে যেটা আল্লাহর স্মরণ ব্যতীত কখনো শান্ত হয় না। কারণ সে সৃষ্টই হয়েছে আল্লাহর স্মরণের জন্য। ঠিক যেভাবে চোখ সৃষ্ট হয়েছে দেখার জন্য, কান শোনার জন্য। আর সেই হৃদয়ের জায়গাটুকু যখন তার কাজ ঠিকমত করে না তখন পুরো মানবশরীরই বিদ্রোহ করে বসে। কোন কিছুই আর ঠিক মত যায় না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
.
“...সাবধান! আমাদের শরীরে এমন একটি মাংস পিণ্ড রয়েছে যা সুস্থ (পরিশুদ্ধ) থাকলে সারা শরীর সুস্থ থাকে, কিন্তু যদি তা কলুষিত হয়ে যায় সারা শরীর কলুষিত হয় এবং সেটি হচ্ছে হৃদয়।” [বুখারী]
.
আর আল্লাহ তায়ালা বলেন,
.
“আমি মানুষ ও জিন জাতিকে সৃষ্টি করেছি শুধু এই কারণেই যে, তারা আমার ইবাদত করবে”। [সূরা আয যারিয়াতঃ ৫৬]
.
আর যখন শরীরের সেই মাংশপিণ্ড তার খোরাক পায় না তখন কী হয়? তখন আল্লাহর জমীন আমাদের জন্য সংকীর্ণ হয়ে যায়। জীবন সংকীর্ণ হয়ে যায়। আল্লাহ বলেন,
.
“… যে আমার বাণী থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে তার জন্য রয়েছে সংকীর্ণ জীবন, আর বিচার দিবসে আমরা তাকে উত্থিত করবো অন্ধ করে।” [সূরা তা-হাঃ আয়াত ১২৪]
.
এক আলেম বলেছিলেন, একবার এক ব্যক্তি এসে উনাকে বলল আমাকে যাদু করা হয়েছে, আপনি আমাকে ফুঁ দিয়ে দিন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কীভাবে বুঝলে তোমাকে যাদু করা হয়েছে? সে বলল, আমার কিছুই ভালো লাগে না, কোন কাজেই মন বসে না, মনে হয় যেন বুকের উপর ভারী কিছু এসে ভর করেছে, নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। শাইখ জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহর সাথে তোমার সম্পর্ক কেমন? সে বলল, খুব খারাপ। শাইখ তাকে উপদেশ দিলেন, তুমি আগে আল্লাহর সাথে সম্পর্কটা ভালো করো, নামাজ পড়ো আর যদি কোন গোপন গুনাহে লিপ্ত থাকো তা ছেড়ে দাও! এবং এর কয়দিন পর সেই লোকের সমস্যা সত্যি সত্যি কেটে গেল। সুতরাং দিনশেষে তাই আমাদের নিজেকে প্রশ্ন করা উচিত আসলেই আল্লাহর সাথে আমাদের সম্পর্ক কেমন?
.
সাহাবীদের সাথে আমাদের মূল তফাৎ এই জায়গাতেই, আমরা আমাদের হৃদয়ের জমীনকে আল্লাহর স্মরণ দিয়ে প্রস্তুত করিনি। আমাদের ঐ জায়গাটা সবসময়ই অপূর্ণ রয়ে যায়, সে কখনো শান্ত হয় না, সে কখনো প্রশান্তির খোঁজ পায় না। অথচ আমাদের আজ সুখ শান্তি উপভোগের যত দুনিয়াবি উপকরণ আছে তার কিছুই সাহাবীদের ছিল না। তা সত্ত্বেও তারা সুখে থাকতো। তাদের কখনো হতাশ লাগতো না, তাদের হৃদয় সংকীর্ণ হয়ে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হতো না। জান্নাতের একটা খেজুর গাছের বিনিময়ে পুরো সম্পত্তি দিয়ে দিয়ে আবু দারদা আর তার স্ত্রী খুব গরীব হয়ে গিয়েছিলেন বটে, কিন্তু এরপরও তারা সবসময় আনন্দিত থাকতো, হৃদয়ে প্রশান্তি থাকতো। চারদিন উপোষ থেকে অবশেষে একটা পচা খেজুর কুঁড়িয়ে খাওয়া আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অন্তরের প্রশান্তি ছিল তার রবের ইবাদত।
.
সুতরাং আমরা আমাদের শরীরের বাহ্যিক অবয়ব সুন্দর রাখতে, ভালো রাখতে যে পরিমাণ মেহনত করি সেভাবে আমাদের হৃদয়টাকেও যেন একটু পরিচর্চা করি। তাকেও যেন একটু সময় দিই।

Source: Unknown.
« Last Edit: July 05, 2018, 07:09:31 PM by Ms Jebun Naher Sikta »