Faculty of Humanities and Social Science > Research and Publication

বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কি পথ হারাইয়াছে?

(1/1)

Md. Fouad Hossain Sarker:
বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কি পথ হারাইয়াছে?

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ৪৩তম বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে— ২০২১, ২০৩০ এবং ২০৪১ সনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করিতে হইলে শিক্ষাখাতে গবেষণায় বরাদ্দ বাড়াইবার বিকল্প নাই। দীর্ঘদিন ধরিয়াই গবেষণায় প্রত্যাশিত ভূমিকা রাখিতে পারিতেছে না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা করুণতর! গবেষণায় পিছাইয়া থাকিবার কারণ হিসাবে অপ্রতুল বরাদ্দকে দায়ী করিয়াছে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু বরাদ্দ বাড়াইলেই কি পর্যাপ্ত ও উন্নত গবেষণা হইবে? বাস্তব চিত্র কিন্তু আমাদের আশাবাদী করে না। কেননা, গবেষণা খাতে যেইটুকু বরাদ্দ দেওয়া হয়, তাহার প্রায় অর্ধেকই ব্যয় করিতে পারে না বিশ্ববিদ্যালয়গুলি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ অর্থবত্সরের বাজেটে গবেষণা খাতে বরাদ্দ দেওয়া হইয়াছিল ১৪ কোটি টাকা। বত্সর শেষে হিসাব করিয়া দেখা গিয়াছে, খাতটিতে ব্যয় হইয়াছে ৮ কোটি ৪২ টাকা। সেই হিসাবে গবেষণাখাতে বরাদ্দকৃত অর্থের ৪০ শতাংশই ব্যয় করিতে পারে নাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এইরূপ চিত্র প্রায় সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই।

অস্বীকার করিবার উপায় নাই যে, শিক্ষা ও গবেষণাখাতে সর্বনিম্ন ব্যয় করে কেবল বাংলাদেশই। এইখাতে মোট জাতীয় আয়ের দশমিক এক শতাংশও বরাদ্দ থাকে না। বিশ্বের মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলি গবেষণাকে প্রাধান্য দান করিলেও আমাদের দেশে গবেষণাখাত সবচাইতে অবহেলিত। ইউজিসি’র ২০১৬ সনের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে, দেশে বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি ১৩১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৪১টি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণার জন্য এক টাকাও বরাদ্দ রাখে নাই। ইহার মধ্যে সরকারি ১০টি আর বেসরকারি ৩১টি। আর নামেমাত্র বরাদ্দ রাখা হইয়াছে ৪০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে। মোট ১৩১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৮১টিতে গবেষণা খাতের বরাদ্দ একবারেই নগণ্য। একসময় মৌলিক গবেষণায় নেতৃত্বদান করিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলি। গবেষণায় অবদানের জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও মিলিয়াছে পুরাতন কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের। সেই ঐতিহ্য ভুলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলি এখন কেবল ডিগ্রি প্রদানের কারখানায় পরিণত হইয়াছে।

অপ্রিয় হইলেও সত্য যে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলি দিনে দিনে অজ্ঞানতার ‘ভাগাড়ে’ পরিণত হইতেছে। শিক্ষকদের অনেকেই এখন সংকীর্ণ দলীয় লেজুড়বৃত্তি, টেলিভিশনের টক-শোতে ফাঁকা জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতাবাজি আর বিদেশি কনসালটেন্সি কিংবা এনজিওগুলিতে টাকার ধান্দায় ব্যস্ত সময় কাটাইতেছেন। কিন্তু গবেষণায় বরাদ্দ বাড়াইলেই কি তাহা যথাযথভাবে ব্যয় হইবে, মান বাড়িবে? সন্দেহ থাকিয়াই যায় যখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলি যত্সামান্য গবেষণা বরাদ্দের অর্ধেকও ব্যয় করিতে পারে না। বস্তুত, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ গবেষণাবান্ধব নহে। শিক্ষক নিয়োগ ও পদায়নের ক্ষেত্রে গবেষণা ও প্রকাশনা গুরুত্ব না পাওয়ার কারণে শিক্ষকরা গবেষণায় উত্সাহিত হইতেছেন না। একজন শিক্ষক যদি মানসম্মত গবেষণা ও প্রকাশনা ছাড়াই নামমাত্র প্রকাশনা ব্যবহার করিয়া রাজনৈতিক বিবেচনায় অধ্যাপক হইয়া যান, তাহা হইলে তিনি স্বাভাবিকভাবেই গবেষণা কার্যক্রমে মনোযোগী হইবেন না। তদুপরি রহিয়াছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। একটি গবেষণা প্রস্তাব জমাদান হইতে গবেষণা প্রতিবেদন পেশ করা পর্যন্ত অর্থ বরাদ্দ ও অনুমোদন পাইতে যে পরিমাণ নাকানিচুবানি খাইতে হয় তাহাতে অনেকেই গবেষণায় উত্সাহ হারাইয়া ফেলেন এবং উন্নতির সহজ রাস্তায় হাঁটা শুরু করেন। তাই, একদিকে গবেষণা বরাদ্দ বৃদ্ধি যেমন জরুরি, তেমনি এমন এক গবেষণাবান্ধব উচ্চশিক্ষা কাঠামো ও পরিবেশ গড়িয়া তোলা প্রয়োজন যাহাতে শিক্ষকেরা স্বতঃপ্রণোদিত হইয়াই গবেষণায় মনোযোগী হইতে পারেন।

Source:
http://www.ittefaq.com.bd/print-edition/editorial/2018/06/28/285585.html
https://www.facebook.com/fouad.developmentstudies/posts/1237715563031044

Navigation

[0] Message Index

Go to full version