১২ হাজার কোটি টাকা আমানত হারিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ৪ ব্যাংক

Author Topic: ১২ হাজার কোটি টাকা আমানত হারিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ৪ ব্যাংক  (Read 2566 times)

Offline Anuz

  • Faculty
  • Hero Member
  • *
  • Posts: 1988
  • জীবনে আনন্দের সময় বড় কম, তাই সুযোগ পেলেই আনন্দ কর
    • View Profile
আগস্ট শেষে সোনালী ব্যাংকের আমানত ছিল ১ লাখ ৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। গত সপ্তাহে তা নেমে এসেছে ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকায়। অর্থাৎ শুধু সেপ্টেম্বরেই প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার আমানত হারিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটি। যদিও ১ লাখ ৬ হাজার ৪২২ কোটি টাকার আমানত নিয়ে ২০১৮ সাল শুরু করেছিল সোনালী ব্যাংক। আরেক রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের জুন শেষে আমানত ছিল ৩৬ হাজার কোটি টাকা। এ সপ্তাহে ব্যাংকটির আমানত ৩৩ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে। এ হিসাবে মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা আমানত কমেছে রূপালী ব্যাংকের।

সোনালী ও রূপালী ব্যাংকের মতো রাষ্ট্রায়ত্ত আরো দুই ব্যাংক জনতা ও অগ্রণীরও আমানতে টান পড়তে শুরু করেছে। ঋণ ও আমানতের সুদহারে নৈরাজ্যের কারণে গত তিন মাসে ২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার আমানত হারিয়েছে জনতা ব্যাংক। রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকও রয়েছে একই কাতারে। সব মিলিয়ে গত তিন মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রধান চারটি ব্যাংক ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি আমানত হারিয়েছে। আমানতের স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধির হিসাব গণনায় ধরলে চলতি বছরে ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি আমানত হারিয়েছে ব্যাংকগুলো। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে গিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো আমানত হারিয়েছে। বিএবি ও সরকারের যৌথ সিদ্ধান্ত ছিল, তিন মাস মেয়াদি আমানতের সুদহার ৬ শতাংশের বেশি হবে না। যদিও বেসরকারি ব্যাংকগুলো এ সিদ্ধান্ত মানেনি। সরকারি প্রতিষ্ঠানের ৫০ শতাংশ আমানত বেসরকারি ব্যাংকে রাখার সিদ্ধান্তও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের বিরুদ্ধে গেছে।

জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আব্দুছ ছালাম আজাদ এ প্রসঙ্গে বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে আমরা ৬ শতাংশের বেশি সুদে আমানত নিইনি। এ সুযোগে বেসরকারি ব্যাংকগুলো সুদহার বেশি দিয়ে আমাদের আমানতে টান দিয়েছে। সুদহার নিয়ে বিতর্ক ওঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত জনতা ব্যাংক ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকার আমানত হারিয়েছে। আইন সবার জন্য সমান হওয়া দরকার। তিনি বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানের আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখার সিদ্ধান্তেও আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। হিসাব করলে দেখা যাবে, সরকারি প্রতিষ্ঠানের আমানতের অর্ধেকের বেশি বেসরকারি ব্যাংকে চলে গেছে। কোনোভাবেই এটি প্রত্যাশিত নয়। ৬৪ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা আমানত নিয়ে ২০১৮ সাল শুরু করেছিল জনতা ব্যাংক। গত জুন শেষে আমানতের এ পরিমাণ ৬৬ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। এর পর থেকেই ব্যাংকটির আমানত কমতে শুরু করে। গত সপ্তাহে জনতা ব্যাংকের আমানত ৬৩ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে। অথচ চলতি বছরের মধ্যেই ব্যাংকটির আমানত ৭০ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল।

জনতা ব্যাংকের হিসাবে গত তিন মাসে তারা ২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার আমানত হারিয়েছে। বেসরকারি ব্যাংকের পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত অন্য ব্যাংকেও জনতা ব্যাংকের আমানত গেছে। আমানতের স্বাভাবিক প্রবাহ থাকলে সেপ্টেম্বর মাসেই ব্যাংকটির আমানত ৬৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা। গত সপ্তাহ শেষে জনতা ব্যাংকের ঋণ ও অগ্রিম ছিল ৪৮ হাজার কোটি টাকা। ৩১ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকার আমানত নিয়ে ২০১৮ সাল শুরু করেছিল রূপালী ব্যাংক। ছয় মাস পর গত জুনে ব্যাংকটির আমানত বেড়ে ৩৬ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। এরপর থেকে আমানত কমতে শুরু করে। গত সপ্তাহে রূপালী ব্যাংকের আমানত ৩৩ হাজার ৮৭৮ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। একই সময়ে ব্যাংকটির ঋণ ও অগ্রিম দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আতাউর রহমান প্রধান বলেন, সুদহারে বিশৃঙ্খলার কারণে গত তিন মাসে রূপালী ব্যাংকের ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকার আমানত কমেছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলো বেঁধে দেয়া সুদহার মানেনি। এ কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো থেকে আমানত বেরিয়ে গেছে।

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের আমানত ছিল ১ লাখ ৬ হাজার ৪২২ কোটি টাকা। এরপর বছরের প্রথম ছয় মাসে হ্রাস-বৃদ্ধির মধ্যেই ছিল ব্যাংকটির আমানত। গত আগস্টে সোনালী ব্যাংকের আমানত ছিল ১ লাখ ৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। চলতি মাসের মধ্যেই প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার আমানত হারিয়ে চলতি সপ্তাহে তা ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে। একই সময়ে ব্যাংকটির বিনিয়োগ ছিল ৪২ হাজার ২০০ কোটি টাকা। সুদহারে অস্থিরতার কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার আমানত হারিয়েছে বলে জানান ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. শামস-উল-ইসলাম। তিনি বলেন, বিএবি ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত সবাই মেনে চললে আমানত নিয়ে অস্থিরতা তৈরি হতো না। গভর্নরও চান, তিন মাস মেয়াদি আমানতের সুদহার ৬ শতাংশের বেশি না হোক। সবার সিদ্ধান্ত মেনে চলা দরকার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকই শুধু নয়, চলতি বছরের জুনের তুলনায় জুলাই মাসে পুরো ব্যাংকিং খাতেই আমানত কমেছে। যদিও দেশের ব্যাংকিং খাতে সবসময়ই ধারাবাহিকভাবে আমানত বেড়ে আসছিল। জুন শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে আমানতের পরিমাণ ছিল (আন্তঃব্যাংক আমানত ছাড়া) ৯ লাখ ৬৯ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। জুলাই শেষে তা ৯ লাখ ৬৮ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে দেশের ব্যাংকিং খাতে আমানত কমেছে দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ।আমানতের পাশাপাশি গত জুলাই মাসে ব্যাংকিং খাতের বিতরণকৃত ঋণও কমেছে। জুন শেষে ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ৯৯ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা। জুলাই শেষে এর পরিমাণ ৮ লাখ ৯৩ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে ব্যাংকিং খাতে ঋণ কমেছে শূন্য দশমিক ৬১ শতাংশ।

আমানত ও ঋণের সুদহার যথাক্রমে ৬ ও ৯ শতাংশ ঘোষণার পর থেকেই ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ কমিয়ে এনেছে বলে অভিযোগ ছিল। কোনো কোনো ব্যাংক ঋণ বিতরণ বন্ধ রেখে আমানতের পেছনে ছুটছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ পরিসংখ্যান সে অভিযোগেরই সত্যতা নিশ্চিত করছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের আমানত অন্তত আমার ব্যাংকে আসেনি। সরকারি প্রতিষ্ঠানের ৫০ শতাংশ আমানত বেসরকারি ব্যাংকে রাখার সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছিল। এ সিদ্ধান্তের পরও আমরা খুব বেশি আমানত পাইনি। ব্যাংক আমানতের তুলনায় সঞ্চয়পত্রের সুদহার প্রায় দ্বিগুণ হওয়ায় মানুষ গণহারে সঞ্চয়পত্র কিনছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের আমানত সঞ্চয়পত্র কেনায় ব্যয় হতে পারে। ব্যাংকগুলোর হাতে বিনিয়োগ করার মতো পর্যাপ্ত আমানত না থাকায় বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত ১ জুলাই থেকে ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদে ঋণ পাওয়া যাবে— এমন ঘোষণা ছিল অর্থমন্ত্রী, বিএবি, এবিবিসহ ব্যাংকসংশ্লিষ্টদের। এরপর ঘোষিত সুদহার বাস্তবায়নের সময়সীমা কয়েক দফায় পিছিয়েছে। সর্বশেষ ২ আগস্ট অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ৯ আগস্ট থেকে নতুন সুদহার কার্যকর হবে। যদিও এখন পর্যন্ত ঋণের সুদহার ৯ ও আমানতের ৬ শতাংশ সুদ বাস্তবায়ন ঘোষণাতেই থেকে গেছে।
Anuz Kumar Chakrabarty
Assistant Professor
Department of General Educational Development
Faculty of Science and Information Technology
Daffodil International University


Offline tokiyeasir

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 905
  • Test
    • View Profile


Offline drrana

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 325
  • Test
    • View Profile

Offline drrana

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 325
  • Test
    • View Profile