ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখায় খুব একটা ভালো না থাকলেও নাচ গান কিংবা বিতর্কে ছিলাম অনেকটাই এগিয়ে। সে ধারাবাহিকতায় অনেক ছোট থেকেই বিভিন্ন মানুষের সাথে ছিল আমার পরিচয়। তখন না বুঝলেও এখন বুঝি ব্যাপারটা ছিল ‘নেটওয়ার্কিং’। বড়দের সাথে যোগাযোগ ছিল বলে স্কুলে আমার হাব-ভাবও ছিল সেরকম। স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে যখন কলেজে আসি, দেখি এখানে আরো বেশি সু্যোগ। কলেজের প্রোগ্রামগুলো অংশগ্রহন আমার জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে তোলে। আর বিশ্ববিদ্যালয় আমার এই শেখার গন্ডিকে আরো বড় করে তোলে।
হলের সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় আমার অংশগ্রহণ ছিল বাধ্যতামূলক। নাচে পুরষ্কার পাবো সেটাও ছিল অবধারিত। বাধ সাধলো যুখন হলের আপু ‘মুশতারি’ অনেকটা জোর করেই নির্বাচিত বক্তৃতায় আমার নাম দিয়ে দেয়! ‘এ কি আলামত! কখনোই তো অংশগ্রহণ করিনি! এ কি সম্ভব? তাছাড়া সব বড় বড় তুখোড় বক্তারা থাকবেন। আমি কি ছাড়!?’
এসব কোন কথাই কানে তুললেন না আপু। অংশগ্রহণ করলাম আর নিজের গুণের থলিতে আরেকটি গুণ যোগ করলাম। সেই থেকে এই পর্যন্ত যখনি সুযোগ পাই, হারি বা জিতি, অংশগ্রহণ করি। কিছুটা দেখে আর কিছুটা শিখে বুঝতে পারলাম এই অংশগ্রহণের মনমানসিকতা শুধু হার জিত না, আরো অনেক কিছুই শেখায়।
শিক্ষকতায় আসার পর খেয়াল করলাম এখনকার ছেলেমেয়েরা এই ধরণের অনেক প্রতিযোগিতায় সুযোগ থাকলেও অংশগ্রহণ করেনা। তাদের উদ্দ্যেশ্যেই বলি শুধু অংশগ্রহণ করলেও কি কি সুবিধা আছে!
প্রথমত, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করলে পড়ালেখার বাইরে যে একটা জগত আছে তা সম্পর্কে অনেকটা ধারণা পাওয়া যায়, নতুন বন্ধু, নতুন পরিবেশ আর নতুন কোন বিষয় হলে তো কথাই নেই। অন্যরকম এইসব অভিজ্ঞতাই দিনশেষে তোমার ঝুলিতে জমবে। সাথে সিভি-র এক্সট্রা কারিকুলার সেকশন ও কিন্তু ফাঁকা থাকবেনা!
তাছাড়া, এই সব প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ কিন্তু আরো অনেক কাজে কিংবা কাজের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ করে দেয়। যেমন, একটি বিজনেস প্ল্যান কম্পিটিশনে অংশগ্রহণ করলে সেই নেটয়ার্কে আরো একটি প্রতিযোগিতার খবর পাওয়া যায়।
এরপর থাকছে নেটওয়ার্কিং। এখন কিন্তু সিভি ভারী হলেই হয় না। আর মামা-চাচা মানেই কিন্তু সবসময় আপন মামা-চাচা নয়। না থাকলে মামা- চাচা করে নিতে হবে। প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে অনেক বড় ও নামকরা মানুষেরা আসেন। সুযোগ করে একটু নেটওয়ার্কিং করে নিলে কিন্তু মন্দ নয়। তাছাড়া প্রতিযোগিতায় যদি একটু ভালো করা যায় তাহলে তো কেল্লাফতে! নজরে পড়বেই। রেফারেন্স কিন্তু হয়ে গেল!
এবার আসি, নিজের ডেভেলপমেন্ট নিয়ে। এইসব প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণে বিভিন্ন সময়ে নতুন কিছু শেখা হয়ে যায়। কখনো সেটা মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের কোন কন্টেন্ট, পাওয়ারপয়েন্টের কোন সংযোজন কিংবা কোন কেইসের জটিল বিশ্লেষণ। নিজেকে জানার এরচে’ বড় সুযোগ আর কোথায় পাওয়া যাবে?
সবশেষে একটাই কথা, দেশে হোক, বিদেশে হোক। চোখ-কান খোলা রেখে এসব প্রতিযোগিতার খবর রাখো আর অংশগ্রহণ কর। কে জানে হয়তো আরো বড় কোন সুযোগের দরজা এর মাধ্যমেই খোলা হয়ে যেতে পারে?
বিপাশা মতিন
জ্যৈষ্ঠ প্রভাষক
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
The feature has been published in Daily Prothom Alo (SHopno Niye) on 28th October 2018