কোম্পানির ব্যালান্সশিট কারসাজি ও বিএসইসির ভূমিকা প্রসঙ্গে

Author Topic: কোম্পানির ব্যালান্সশিট কারসাজি ও বিএসইসির ভূমিকা প্রসঙ্গে  (Read 1557 times)

Offline Repon

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 178
  • Test
    • View Profile
কোম্পানির ব্যালান্সশিট কারসাজি ও বিএসইসির ভূমিকা প্রসঙ্গে
আবু আহমেদ
| ১৮:৫৭:০০ মিনিট, জুলাই ১১, ২০১৮
http://bonikbarta.net/bangla/news/2018-07-11/163835/%E0%A6%95%E0%A7%8B%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%B8%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%9F-%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%BF-%E0%A6%93-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%8F%E0%A6%B8%E0%A6%87%E0%A6%B8%E0%A6%BF%E0%A6%B0-%E0%A6%AD%E0%A7%82%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%BE-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%B8%E0%A6%99%E0%A7%8D%E0%A6%97%E0%A7%87/

কতই তো ব্যালান্সশিট বা স্থিতিপত্র পড়লাম। লাভ-লোকসানের অংক তালাশ করতে গিয়ে ওইসব পড়েছি। ব্যবসার অ্যাসেট-লায়াবিলিটির চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছি। যে অর্থ পাওয়া যাবে বা রিসিভ্যাবলস নিয়ে অনেক মাথা ঘামিয়েছি। রেশিও অ্যানালাইসিস নামে অনুপাতগুলোকে বিশ্লেষণ করে ব্যবসা বা কোম্পানির আর্থিক অবস্থার সবলতা ও দুর্বলতা বুঝতে চেষ্টা করেছি। ব্যবসাভেদে কোম্পানির আর্থিক বিবরণীও ভিন্ন হয়। ব্যাংক কোম্পানি হলে সেই ব্যাংক কুঋণের বিপরীতে প্রভিশনিং বা প্রফিট থেকে হিসাবে অর্থ জমা রাখতে পেরেছে কিনা, কোম্পানি ট্যাক্স-দায় পরিশোধ করেছে কিনা, কোম্পানির ম্যানেজমেন্টে কারা আছেন, লোকগুলো শিক্ষিত এবং সৎ কিনা; সর্বোপরি মোট ইকুইটি মূলধনের কত অংশ কোম্পানির উদ্যোক্তাদের হাতে আছে— এসব দেখতে হয়েছে কোম্পানির ভবিষ্যৎ ব্যবসার ধরন বোঝার জন্য। অনবরত অর্জনের মধ্যে আছে এমন ব্যবসা তো অবশ্যই ভালো। কিন্তু সেই অর্জন তখনই সম্ভব হবে, যদি ম্যানেজমেন্ট দক্ষ ও গতিময় হয়। যে ম্যানেজমেন্ট প্রতিযোগিতার কাছে আত্মসমর্পণ করে, সেই কোম্পানির অর্জন কমতে থাকবে। অনেক ব্যবসা ভালো করেছে, যখন প্রতিযোগিতা ছিল না। বড় কোম্পানি যাদের ব্র্যান্ড ভোক্তা বা ব্যবহারকারীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা আছে, তাদের ব্যবসা করতে সুবিধা হয়। তবে যারা শুধু ব্র্যান্ডনির্ভর, তারা একসময় পিছিয়ে পড়ে। অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ব্র্যান্ডনির্ভর ব্যবসা করতে গিয়ে ভোক্তাকে দুর্বল পণ্য গছিয়ে দিচ্ছে। একদিন ভোক্তা পণ্যের মান সম্পর্কে ঠিকই টের পেয়ে যায়, তখন আর ব্র্যান্ডের মূল্য ধরে রাখা যায় না।

বাংলাদেশে অনেকে ব্র্যান্ডনির্ভর ব্যবসা করছেন। কেউ কেউ ফ্র্যাঞ্চাইজের মাধ্যমে বিদেশী ব্র্যান্ডের খাদ্যপণ্যও বিক্রি করছে। কিন্তু সংবাদ মাধ্যমে যখন দেখি এসব ব্র্যান্ড জরিমানা দিচ্ছে অপরিষ্কার-মানহীন ব্র্যান্ডপণ্য বেচার জন্য, তখন বুঝে নিন আসলে স্থানীয় উদ্যোক্তা অর্থ দিয়ে শুধু নামটাই ভাড়া করে এনেছেন। বাদবাকি সব নিজের মতো করে চালাচ্ছেন।

ফ্র্যাঞ্চাইজ বিক্রেতা বিদেশী কোম্পানি বাংলাদেশে তার ব্র্যান্ডের মান কোথায় যাচ্ছে, তা নিয়ে মাথা ঘামায় না। ফলে ব্র্যান্ড সম্বন্ধেও ভোক্তাদের সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন আছে। আবার ব্র্যান্ডও অহরহ নকল হচ্ছে। ভোক্তার চেনার উপায় নেই কোনটা আসল, কোনটা নকল। নতুন ব্যবসা সহজে ব্র্যান্ড ভ্যালু অর্জন করতে পারে না। ব্র্যান্ড ভ্যালু অর্জনের জন্য একটা-দুটো পণ্য বা সেবা বিক্রয় করা যথেষ্ট না-ও হতে পারে। বাংলাদেশে যারা ব্র্যান্ড ভ্যালু অর্জন করেছে, তাদের হরেক রকমের পণ্য আছে। তারা কনগ্লোমারেট গড়ে তুলেছে। একটি গ্রুপের ব্যবসার অধীনে অনেক কোম্পানি।  হোল্ডিং কোম্পানি একটি, এটার অধীনে আছে আরো অনেক কোম্পানি। বলছিলাম ব্যালান্সশিট বা স্থিতিপত্রের কথা। কোনো কোম্পানি কয়েক পৃষ্ঠার স্থিতিপত্র উপস্থাপন করে কাজ শেষ করতে চায়। তারা তাদের অন্য শেয়ারহোল্ডারদের বেশি জানাতে চায় না। বাংলাদেশে মালিকানাভেদে ব্যবসার ধরন হরেক রকম। অধিকাংশ ব্যবসা শুরু হয় সোল প্রোপ্রাইটরশিপ বা একক ব্যক্তির মালিকানার মাধ্যমে। ব্যবসা একটু বড় হলে কেউ কেউ প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি করে পরিবারের অন্য সদস্য বা জানা-পরিচিত লোকদের অংশীদারিত্ব দেয়। তবে অংশীদারিত্বের প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির মাধ্যমে ব্যবসা করার বড় অসুবিধা হলো— সময়ের বিবর্তনে অংশীদারদের মধ্যে সন্দেহ বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে ঝগড়া থেকে মামলা-মোকদ্দমা শুরু হয় এবং শেষ পর্যন্ত এ ধরনের অনেক ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ না হলেও যার জোর আছে, তার হাতে ব্যবসা চলে যায়। অংশীদারি ব্যবসার অন্য অসুবিধা হলো কেউ চাইলেই তার অংশ বেচতে পারে না। ব্যবসার অন্য শরিকরা কিনতে রাজি হয় না, আবার বাইরের কারো কাছে বেচতে চাইলে বাধা সৃষ্টি করে। অংশীদারি ব্যবসা সফল হয়, যদি ওই ব্যবসাকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তর করা যায়। সেজন্য কিছু শর্ত মানতে হয়, সেগুলো প্রচলিত কোম্পানি আইনে বর্ণিত আছে। তবে শুধু পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি করেও অতটা লাভ পাওয়া যাবে না, যদি না ওই কোম্পানিকে পাবলিক ইস্যুতে আনা না যায়। পাবলিক ইস্যু হলো জনগণের কাছে কোম্পানির ইকুইটি ক্যাপিটালের একটা অংশ বিক্রি করা। এটা করতে হলে রেগুলেটর বিএসইসির অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি পাওয়া কোম্পানি আইপিও বিক্রি করে অন্য বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ব্যবসা বৃদ্ধির জন্য অর্থ সংগ্রহ করে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা ভালো নয়। এখানেও ফাঁকিটা দেয়া হয় যারা ইকুইটি বা শেয়ার কেনে, তাদের। অতি মূল্যায়ন করে শেয়ার বিক্রি করা হয় এবং শেষ পর্যন্ত অনেক উদ্যোক্তা আইপিও বা প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের মাধ্যমে বাজার থেকে যে অর্থ সংগ্রহ করে, সেই অর্থও ব্যবসার কাজে লাগায় না। এমন বহু উদ্যোক্তা আছে, যারা আইপিও বিক্রি করে অর্থ নিয়ে ব্যবসা না করে দৃশ্যপট থেকে উধাও হয়ে গেছে। রেগুলেটর বিএসইসি কিছুই করেনি। আইপিও ইস্যু করার আগে শর্ত মানার জন্য ঋণখেলাপির তালিকা থেকে নাম কাটানোর ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু আইপিও বিক্রি শেষ হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যে ওই কোম্পানি ব্যাংকের কাছে পুনরায় ঋণখেলাপি হয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রতারণার বিচিত্র কৌশল অনেক উদ্যোক্তা গ্রহণ করে। প্রথমেই অতিমূল্যায়িত করে শেয়ার বেচেছে ৩০ শতাংশ। মাত্র দুই বছরের মধ্যে উদ্যোক্তা সাহেব বাকি ৭০ শতাংশ থেকে আরো ৪০ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছে। বিক্রি করেছে বেশ বড় দামে। ম্যানুপুলেটেড বাজারে শেয়ার বিক্রি করে উদ্যোক্তা শতকোটি টাকা নিয়ে গেছে, যে অর্থ হয়ে গেছে তার একান্তই ব্যক্তিগত। বাইরের বিনিয়োগকারীদের কাছে যখন ৭০ শতাংশ শেয়ার চলে যায়, তখনো উদ্যোক্তা কিন্তু ম্যানেজমেন্টে বসে আছে। কারণ হলো তাকে চ্যালেঞ্জ করার কেউ নেই। তাই সে মাইনরিটি শেয়ার হোল্ডিং করেও কোম্পানির ম্যানেজমেন্টে বসে আরামে বেতন-ভাতা-পরিবহন-চিকিৎসা সুবিধা সবই নিচ্ছে। তবে শেষ পর্যন্ত যা দাঁড়ায়, তা হলো ওই কোম্পানির ব্যবসা সামনে আর এগোয় না। উদ্যোক্তা বা ম্যানেজমেন্টে যারা বসে আছে, তারা কোম্পানিকে ভালোভাবে চালানোর তাগিদ বা প্রয়োজন অনুভব করে না। ভালো মুনাফা দেয়া ওই কোম্পানির ম্যানেজমেন্টের চিন্তায় আসে না। অতি অল্প সময়ে চড়া মূল্যে ৭০ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে উদ্যোক্তারা অভাবনীয় ধনী হয়েছে। কিন্তু সত্য হলো, সেই কোম্পানির শেয়ার যারা বাজার থেকে কিনেছে, তারাই ফতুর হয়ে গেছে। অনেকের কাছে আইপিও বিক্রি করে অতি অল্প সময়ে ধনী হওয়া এখন একটা কৌশল মাত্র। বিএসইসিকে বলেছিলাম, উদ্যোক্তাদের শেয়ার বিক্রি করার ওপর কমপক্ষে তিন বছরের একটা লক ইন দেয়া হোক। বিএসইসি শোনেনি। অথচ বিএসইসিকে সৃষ্টিই করা হয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য। বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের ওপর কিছুটা হলেও আস্থা ধরে রাখতে হলে উদ্যোক্তাদের শেয়ার বিক্রি বন্ধ করতে হবে। গত পাঁচ বছরে যেসব কোম্পানি আইপিও বাজারে এসেছে, সেগুলোর শেয়ারহোল্ডিং স্ট্রাকচার দেখলে দেখা যাবে উদ্যোক্তাদের খুবই সামান্য শেয়ার আছে। তারা শেয়ার বেচে অর্থ ব্যক্তিগত তহবিলে জমা করেছে। অন্যদিকে লোকসান দেখিয়ে মুনাফা বণ্টনের অবস্থান থেকে তারা সরে গেছে।

এতে সরকারও ট্যাক্স পায় না। আর যারা ওই ব্যবসার পুঁজির জোগান দিয়েছে, তারা বঞ্চিতই থেকে যায়। এ ধরনের ঠকবাজ উদ্যোক্তারা শেয়ারবাজারকে একটা অন টাইম সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করেছে ধনী হওয়ার জন্য। তারা মনে করে, ব্যবসা করে সরকারকে ট্যাক্স দিয়ে, কথিত বিনিয়োগকারীদের মুনাফা দিয়ে কী লাভ। তারা ধনী হতে পেরেছে, উদ্দেশ্য তো অর্জিত হয়েছে। এখন কে, কী বলল, সেটা কে কেয়ার করে। আফটারঅল সমাজে ধনী লোকদের তো একটা মূল্য আছে। কে খবর নেবে সম্পদটা কীভাবে এসেছে! তারাই নিজেদের চালাক মনে করে আর সমাজের অন্যদের বোকা মনে করে। এদের প্রতারণা অনেকটা আইন মেনেই সাধিত হচ্ছে, শুধু আইন সুষ্ঠুভাবে প্রয়োগ না করার কারণে। রেগুলেটর বিএসইসি উল্টো দিকে ফিরে আছে বলে। কোম্পানির ব্যালান্সশিট কিছু যোগ-বিয়োগের পরিসংখ্যান মাত্র। এ ব্যালান্সশিটে তিনটি অংশ থাকে। এক. অ্যাসেট-লায়াবিলিটি, দুই. আয়-ব্যয়, তিন. ব্যবসায় ক্যাশ ফ্লো। এ তিনটি অংশকে স্টেটমেন্ট হিসেবে দেখানো হয় এবং রেগুলেটরি শর্ত মেনে এ ব্যালান্সশিটে স্বাক্ষর করতে হয় ব্যবস্থাপনা পরিচালক, একজন পরিচালক, প্রধান অর্থ অফিসার বা সিএফও, কোম্পানি সেক্রেটারি এবং সবার পরে সই করতে হয় অডিটরকে। তিন অংশের ব্যালান্সশিটের দুই অংশ এদের কর্তৃক সই হতে হবে। এ দুই অংশ হলো স্টেটমেন্ট অব ফিন্যান্সিয়াল পজিশন এবং স্টেটমেন্ট অব প্রফিট অ্যান্ড লস অ্যাকাউন্ট। তবে ব্যালান্সশিটে দেয়া পরিসংখ্যানগুলো নিজ থেকে অতটা বোঝা যাবে না। এগুলোর অনেকটা পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায় নোটস টু অ্যাকাউন্ট পড়লে। যারা জানতে চায়, তারা নোটস টু অ্যাকাউন্ট পড়ে নেয়। ব্যালান্সশিট গুরুত্বপূর্ণ তো বটেই। তবে কোম্পানি সম্পর্কে জানতে হলে পুরো অ্যানুয়াল রিপোর্ট বা বার্ষিক প্রতিবেদন পড়তে হয়। এ প্রতিবেদনে চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের রিপোর্ট দেয়া এখন রেগুলেটরি শর্ত। ভালো কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের অনেক কিছু জানাতে চায়। মন্দ কোম্পানি হলে তথ্য দিতে চায় না, শুধু তত্ত্বীয়ভাবে রেগুলেটরের নির্দেশনা মেনে চলে। দুঃখজনক হলেও সত্য, কোম্পানির এজিএম বলতে যা বোঝায়, তা এখন অনুপস্থিত। শেয়ারহোল্ডাররা এজিএমে যেতে চায় না। কিছু লোক উপস্থিত থাকে অতি তাড়াতাড়ি এজিএমের এজেন্ডাগুলো পাস করানোর জন্য। ফলে কোম্পানির ম্যানেজমেন্টকে কোনো জবাবদিহির সম্মুখীন হতে হয় না। শেয়ারহোল্ডারদের বার্ষিক মিটিং হয়ে পড়েছে শুধুই নিয়ম রক্ষার একটি ইভেন্ট। অনেক কোম্পানিই প্রফিট বা মুনাফা কম দেখানোর জন্য পরিচালনা ব্যয়কে বাড়িয়ে দেখায়। এসব ব্যাপারে অনুসন্ধান করা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পক্ষে অসম্ভব। এক্ষেত্রে একমাত্র সহায়ক হতে পারে অডিটর, যিনি নিয়ম অনুযায়ী শেয়ারহোল্ডারদের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার কথা। কিন্তু কোনো অডিটরই পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ব্যয়গুলোকে যাচাই করে না। ম্যানেজমেন্ট যে স্থিতিপত্র অডিটরের কাছে তুলে ধরে, সেটাই অধিকাংশ সময় অডিটর সই করে আসে। একটা অডিট কমিটি আছে বটে। তবে জানি না তারা ব্যয়ের ক্ষেত্রে সব প্রশ্ন তোলে কিনা। অন্যদিকে কিছু বহুজাতিক কোম্পানি ম্যানেজমেন্ট ফির নামে বিরাট অংকের অর্থ বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। কোম্পানির পরিচালন ব্যয়ের মধ্যে এ কথিত ম্যানেজমেন্ট ফি অন্তর্ভুক্ত বলে শেষ পর্যন্ত সরকারও কম ট্যাক্স পায় এবং শেয়ারহোল্ডাররাও কম মুনাফা পায়। একটা বহুজাতিক কোম্পানি ম্যানেজমেন্ট ফি বাবদ বাইরে যে অর্থ নেয়ার প্রস্তাব রেখেছে, তা ওই কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের প্রায় সমান। এসব ব্যাপারে খোঁজ করার বা নেয়ার কেউ নেই বাংলাদেশে। কাদের অনুমোদনক্রমে এ বিশাল অংকের অর্থ বাইরে নেয়া হচ্ছে।

বাইরে যে সংস্থাকে ওই অর্থ পাঠানো হচ্ছে ম্যানেজমেন্ট ফি বাবদ, সেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক বা সুবিধাভোগী কারা, অডিটর রিপোর্টে তার কিছুই উল্লেখ থাকে না। অডিটরকে এ ব্যাপারে বললে অডিটর বলে এসব তথ্য দিতে তারা বাধ্য নয়। তারা আরো বলে, শুধু বিএসইসি বললেই তারা এসব তথ্য দিতে পারে। কী ম্যানেজমেন্ট সার্ভিস বিদেশে অবস্থিত কোম্পানি বাংলাদেশে অবস্থিত বহুজাতিক কোম্পানিকে দিচ্ছে, তারও কোনো উল্লেখ নেই বার্ষিক প্রতিবেদনে। এ অবস্থায় সাধারণ বিনিয়োগকারী ওইসব পরিচালন ব্যয়ের ব্যাপারে অন্ধকারেই থেকে যায়। শেষ পর্যন্ত ক্ষতি হচ্ছে এ দেশের সরকারের এবং এ দেশের শেয়ারহোল্ডারদের।

পুরো ব্যালান্সশিট পড়তে ও বুঝতে হলে প্রফেশনাল জ্ঞান লাগে, যেটা আমার নেই। আমাদের দেশে পাস করা এবং সনদপ্রাপ্ত অ্যাকাউন্ট্যান্টদের এক্ষেত্রে প্রফেশনাল মনে করা হয়। তারা হয়তো বুঝতে পারবে উপস্থাপিত ব্যালান্সশিট এবং তাতে দেয়া পরিসংখ্যানগুলোর ব্যাখ্যায় কোথায় ত্রুটি আছে। আমাদের মতো নন-প্রফেশনালদের পক্ষে অডিটেড ব্যালান্সশিট পড়ে ফাঁকির জায়গাগুলোকে আবিষ্কার করা প্রায় অসম্ভব। বিএসইসির উচিত অন্তত রয়্যালটি, ব্যবস্থাপনা ফি, লাইসেন্স ফি বাবদ কোনো কোম্পানি বাইরে যদি অর্থ নিতে চায়, তাহলে বার্ষিক প্রতিবেদনে কোন কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে এবং কোন হিসাবের ভিত্তিতে এবং বাইরের সুবিধাভোগী কারা, এসব তথ্য উল্লেখ করে প্রতিবেদন দিতে বাধ্য করা। এসব ক্ষেত্রে জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে বাংলাদেশ থেকে বড় অংকের অর্থ এক ধরনের মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে চলে যাবে।

 

লেখক: অর্থনীতিবিদ; অনারারি অধ্যাপক অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Senior Lecturer in Accounting
Department of Business Administration
Faculty of Business & Economics
Daffodil International University


Offline parvez.te

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 335
  • Nothing is impossible...
    • View Profile
Manik Parvez

Offline fahmidaemran

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 121
  • Test
    • View Profile
Best Regards,
Fahmida Emran
Lecturer,
Department of Business Administration
Faculty of Business & Economics
Daffodil International University