বাংলাদেশে শিগগিরই রাশিয়ার বাণিজ্যিক একটি ব্যাংক চালু হতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে সম্ভাব্য ব্যাংকের নামও প্রস্তাব করেছে দেশটি। তা হচ্ছে ‘স্পুটনিক ব্যাংক’।
দুই দেশের সরকার, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে চূড়ান্ত আলোচনা ও সমঝোতা চুক্তির পরপরই ব্যাংকটি কার্যক্রমে আসবে। এটি চালু হলে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার লেনদেন নির্বিঘ্নে করা সম্ভব হবে। তবে লেনদেনের মাধ্যম টাকা, রুবল না ডলার হবে-সেটি এখনও ঠিক হয়নি।
বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি সহায়তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গড়া বাংলাদেশ-রাশিয়া আন্তঃসরকার কমিশনের প্রথম বৈঠকের কার্যপত্র পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
শুধু ব্যাংক লেনদেনের সুরাহাই নয়, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, বাণিজ্য, বিজ্ঞান, কারিগরি ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে সহায়তা, সরাসরি বিমান ও সমুদ্রপথে যোগাযোগ এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধির দ্বারও উন্মোচিত হতে যাচ্ছে দুই দেশের মধ্যে। প্রথম বৈঠকে এসব বিষয়ে একমত হওয়ার পর এখন বাস্তবে রূপ দেয়ার কলাকৌশল নির্ধারণে বসতে যাচ্ছেন আন্তঃসরকার কমিশন প্রতিনিধিরা। রাশিয়ার মস্কোয় আজ থেকে শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী এই (দ্বিতীয়) বৈঠক।
এতে যোগ দিতে আন্তঃসরকার কমিশনের বাংলাদেশ কো-চেয়ার ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব শফিকুল আযমের নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের দল রোববার মস্কোয় পৌঁছেছে।
সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন কমনওয়েলথ অব ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্টেটস-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (সিআইএস-বিসিসিআই) সভাপতি মো. হাবীব উল্লাহ ডন ও ঢাকায় রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার আই ইগ্নাটভ, গ্যাজপ্রমের বাংলাদেশ প্রতিনিধি অনিরুদ্ধ কুমার রায়।
সূত্রমতে, দুই দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্কোন্নয়নের ক্ষেত্র তৈরির জন্য যে ধরনের পরিবেশ তৈরি করা দরকার সেটাই এ বৈঠক থেকে নিশ্চিত করা হবে। আর এ বিষয়ে বাংলাদেশের মতো রাশিয়া সরকারেরও আগ্রহের কমতি নেই। যে কারণে এই আন্তঃসরকার কমিশন গঠন হয়েছে এবং প্রতিবছর অন্তত একবার বৈঠক আহ্বানের বিধান রাখা হয়েছে। গত বছরের ১ মার্চ মন্ত্রী পর্যায়ে চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে এ কমিশন যাত্রা করে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার আই ইগ্নাটভ বলেন, মস্কো-ঢাকার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বিশেষ করে দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কের ভিত আরও মজবুত করতে ব্যাংকিং চ্যানেল স্থাপনে জোর দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে শিগগিরই রাশিয়ার ব্যাংক চালু হবে।
তিনি আরও বলেন, রাশিয়া বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে সাহায্য করতে অত্যন্ত আগ্রহী। প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে নির্মাণাধীন পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র তারই উদাহরণ। তবে সম্ভাবনার সদ্ব্যবহার করতে হলে দু’দেশের বেসরকারি খাতকেও একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এ ছাড়া বাণিজ্য সম্প্রসারণে কার্গোসহ এয়ার কানেক্টিভিটি ও সরাসরি সমুদ্র পথে যোগাযোগ স্থাপনেও রাশিয়া সরকারের আগ্রহের কথা জানান তিনি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, ভৌগোলিক দূরত্ব, সরাসরি যাতায়াতে প্রতিবন্ধকতা, শুল্ক সংক্রান্ত জটিলতা এবং ব্যাংক সুবিধা না থাকা সত্ত্বেও ২৬ বছরে দেশটিতে রফতানি বেড়েছে প্রায় ২০ গুণ। আমদানি বেড়েছে এর চেয়েও বেশি, ৫৩ গুণ। এর মধ্যে বর্তমান সরকারের ১০ বছরেই রফতানির পরিমাণ সোয়া ১১ গুণ এবং আমদানি দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে।
জানতে চাইলে সিআইএস-বিসিসিআই সভাপতি মো. হাবীব উল্লাহ ডন যুগান্তরকে বলেন, রাশিয়া ও সিআইএসভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে যেভাবে ব্যবসা করা উচিত সেভাবে আমরা পারি না। তা করতে পারলে দু’দেশের বাণিজ্য অনন্য উচ্চতায় পৌঁছাত। না পারার কারণ দেশটির সঙ্গে আমাদের সরাসরি ব্যাংক লেনদেন সুবিধা নেই।
ফলে তৃতীয় দেশ অর্থাৎ হংকংয়ের মাধ্যমে আমদানি-রফতানি হয়। সেখানে অর্থ বিনিময় করা হয় টেলিগ্রাফিক ট্রান্সফারের (টিটি) মাধ্যমে। এতে আস্থা-অনাস্থার বিষয় থাকে। এ বাধার কারণে রাশিয়ার সম্ভাবনার বাজার দখল করছে মিয়ানমার ও ভারত।
ইইউর ব্যবসায়ীরা মধ্যস্বত্বভোগীর সুবিধা নিচ্ছে। ফলে বাংলাদেশে রাশিয়ার ব্যাংকিং সিষ্টেম চালুর কোনো বিকল্প ছিল না। এর গুরুত্ব অনুধাবন করেই আমরা রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের কাছে প্রথম দাবিটি করি।
এক প্রশ্নে ডন বলেন, রাশিয়া আমাদেরকে স্পুটনিক ব্যাংকের কার্যক্রম চালু করার কথা বলেছে। তবে লেনদেনের মাধ্যম রুবল না টাকা হবে সেটি এখনও ঠিক হয়নি। আমরা চেয়েছি টাকাই। আর তারা রুবল। এখন আলোচনার মাধ্যমেই তা ঠিক হবে বলে বিশ্বাস করি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ মাসুকুর রহমান সিকদার এ প্রসঙ্গে যুগান্তরকে জানান, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি ব্যাংক লেনদেন চালু করার আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হয়েছে। এ লক্ষ্যে অনেক আগেই একটি কোর গ্রুপ গঠন করা হয়।
দুই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিনিধিরা এ বিষয়ে পর্যালোচনা করে দেখছে। রাশিয়া সরকারও ইতিমধ্যেই ব্যাংক প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে। পাশাপাশি বাণিজ্য-বিনিয়োগ ও কারিগরি সহায়তাসহ দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্কোন্নয়নে আন্তঃসরকার কমিশন কাজ করছে। ভবিষ্যতে এর ইতিবাচক ফলাফল অবশ্যই পাওয়া যাবে।
১৯৯১-৯২ অর্থবছরে রাশিয়ায় রফতানির পরিমাণ ছিল ২ কোটি ৬৯ লাখ মার্কিন ডলার এবং আমদানি ১ কোটি ১৮ লাখ ডলার। সেটা ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে বেড়ে রফতানি দাঁড়ায় ২৮ কোটি ৩৩ লাখ ডলার এবং আমদানি ২৮ কোটি ৬৪ লাখ ডলার, যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এসে রফতানি ৪৮ কোটি ৫২ লাখ ডলার এবং আমদানি ৬২ কোটি ৮৬ লাখ ডলারে উন্নীত হয়েছে।
Source:
https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/103440/%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6%E0%A7%87-%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A7%81-%E0%A6%B9%E0%A6%9A%E0%A7%8D%E0%A6%9B%E0%A7%87-%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%95?fbclid=IwAR3-jJscol92vAWAJeDPqtmh-7AB-emCN6f8ekCodJD2lNfCAAHlujGn0rY