বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে আগ্রহীরা জেনে নিন (প্রথম আলো, ২৩.১২.২০১৮)

Author Topic: বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে আগ্রহীরা জেনে নিন (প্রথম আলো, ২৩.১২.২০১৮)  (Read 2491 times)

Offline kekbabu

  • Jr. Member
  • **
  • Posts: 78
  • Test
    • View Profile
    • https://daffodilvarsity.edu.bd/

বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে আগ্রহীরা জেনে নিন
কুদরাত-ই-খুদা বাবু
 
আমাদের অনেক বন্ধুই আছেন, যাঁরা বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের স্বপ্ন দেখেন। আবার অনেকেরই দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে দেশের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করা। তবে এ ক্ষেত্রে অনেক বন্ধুরই সঠিক তথ্য জানা না থাকার কারণে বহুদিনের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তাই বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সব বিষয় সম্পর্কে পরিপূর্ণ ও স্বচ্ছ ধারণা থাকা আবশ্যক। দেশের বাইরে পড়াশোনার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য বেশ আগে থেকে প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে শুধু পরীক্ষার ভালো ফল নয়, ভালো একটা গাঁথুনিরও দরকার হয়। নিচের বিষয়গুলো সম্পর্কে আগে থেকে ভালোভাবে জানা থাকলে এ ক্ষেত্রে ব্যর্থ ও প্রতারিত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

বিদেশে পড়তে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা
অনেকেই খুব অল্প বয়সেই সন্তানদের বিদেশে পাঠান লেখাপড়ার জন্য। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পড়াশোনার জন্য বিদেশে যাওয়ার ঘটনা ঘটে সাধারণত উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোনার পর। অবশ্য কেবল আন্ডারগ্র্যাজুয়েট পর্যায়েই নয়, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট বা ডক্টরেট (পিএইচডি) করতেও বিদেশে যান অনেকে। যা হোক, এ কথা সবারই জানা, শিক্ষার ক্ষেত্র সব সময়ের জন্যই সম্প্রসারণশীল। শিক্ষার ক্ষেত্র কখনোই নির্দিষ্ট গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ থাকে না। দেশ–কাল-জাতি-সংস্কৃতি প্রভৃতির মধ্যে বিস্তৃতিই শিক্ষার মৌলিক ক্ষেত্র ও সীমানা হিসেবে বিবেচিত হয়। কেউ যদি প্রসারিত দৃষ্টিভঙ্গি ও বিচিত্র দক্ষতায় নিজেকে সমৃদ্ধ করতে চান, তবে দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।

উচ্চশিক্ষার্থে বিদেশে যাওয়ার পক্ষে কয়েকটি কারণ নিচে তুলে ধরা হলো-
ক. আত্মসমৃদ্ধি: যাঁরা বিদেশে লেখাপড়া করেন, তাঁরা নানা ধরনের অভিজ্ঞতা, বুদ্ধিমাত্রা ও মননশীলতার দিক থেকে অধিকতর সমৃদ্ধ হয়ে ওঠেন। কোনো কিছু সম্পর্কে নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে ভাবতে শেখা এবং স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করার ফলে তাঁরা অধিক স্বাধীন এবং অধিক দক্ষভাবে চিন্তা ও কাজ করতে শেখেন। যেকোনো চ্যালেঞ্জিং কাজ বা পেশায় সফল হওয়ার জন্য অনেক গুণ তাঁদের মধ্যে বিকশিত হয়। তাই দেখা যায়, বিদেশে থাকার অভিজ্ঞতা অত্যন্ত মূল্যবান। এমনকি কখনো কখনো তা ব্যক্তির সামগ্রিক জীবনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। বিদেশের মাটিতে নতুন একটি সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় এবং সেখান থেকে অর্জিত জ্ঞান অবশ্যই বিদেশ পড়ুয়াকে অধিকতর আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে। ফলে স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের পর আপনার শিক্ষা ও অভিজ্ঞতার যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে।
খ. বিশ্ব সম্পর্কে তৈরি হবে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি: বিদেশে অবস্থানের ফলে আন্তর্জাতিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ইস্যুগুলো সম্পর্কে আপনার জ্ঞানভান্ডার সমৃদ্ধ হবে। ফলে বিদেশে অবস্থানের কারণে বিশ্ব সম্পর্কে আপনি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ফিরে আসবেন। একটি ভিন্ন সংস্কৃতির লোকজন, তাঁদের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রাসংশ্লিষ্ট নানা সমস্যা মোকাবিলার রীতিনীতি সম্পর্কে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অর্জনের ফলে বিশ্ব সংস্কৃতির বিষয়টি আপনি স্পষ্টভাবে অনুভব করবেন। বিদেশে বসবাস করতে গিয়ে আপনাকে বিদেশি ভাষা শিখতে হবে। ফলে নতুন ভাষা শেখা এবং এর গুরুত্বও আপনি উপলব্ধি করবেন।
গ. পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি: বিদেশে উচ্চশিক্ষা শুধু শিক্ষা এবং ব্যক্তিত্বকেই সমৃদ্ধ করবে না, আপনার পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিতেও বিশেষ সহায়তা করবে। বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্য, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি এবং চাকরির ক্ষেত্রে আপনার পেশাগত দক্ষতা খুবই মূল্যবান ভূমিকা রাখবে। চাকরির বাজারে আপনার চাহিদা ও বিশেষ গুরুত্ব থাকবে। বর্তমান সময়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটদের চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। বিদেশফেরত গ্র্যাজুয়েটরা আন্তর্জাতিক জ্ঞান ও কৃষ্টি–কালচারে সমৃদ্ধ এবং মাতৃভাষা ছাড়াও এক বা একাধিক ভাষাতে দক্ষ—মূলত এই দুটি বিষয়ের ওপর জোর দিয়ে থাকে এই প্রতিষ্ঠানগুলো। এ ছাড়া এসব গ্র্যাজুয়েট আন্তসাংস্কৃতিক যোগাযোগ, বিশ্লেষণাত্মক দক্ষতা, ভিন্ন সংস্কৃতি ও সমাজের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জ্ঞাত ও দক্ষ। এঁদের পক্ষে নতুন পরিস্থিতিতে বিকল্প উপায় ভাবা এবং ঝুঁকি নেওয়া সম্ভব হয় বলেই আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এসব গ্র্যাজুয়েটের জন্য সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধার প্রস্তাব দিয়ে থাকে নিজেদের প্রতিষ্ঠানে রাখার জন্য।
লক্ষ্য নির্ধারণ করা ও লক্ষ্যে পৌঁছবেন যেভাবে-
বিদেশে পড়তে যাওয়ার সম্ভাব্য বিষয়গুলো বিবেচনার পর নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করুন, আপনি কেন বিদেশে পড়তে যেতে চান। এর কারণগুলো খুঁজে বের করার জন্য অবশ্যই সময় নিন। কেননা, এই কারণগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আপনার ভবিষ্যৎ। হয়তো আপনি নতুন একটি সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক অথবা নতুন ভাষা শিখতে চান, কিংবা আপনি আপনার পড়ালেখার ক্ষেত্রটিকে ভিন্নমুখী করতে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন একটি ডিগ্রি অর্জন করতে চান ইত্যাদি। কারণ যাই হোক না কেন, তা ভালোভাবে লিপিবদ্ধ করে রাখুন। বিদেশে যাওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে, তবে তা যেন সার্থক ও ইতিবাচক হয়। এ ক্ষেত্রে সবাইকে স্মরণ রাখা প্রয়োজন, একটি ভিন্ন দেশের মাটিতে জীবন যাপন এবং শিক্ষা গ্রহণের প্রক্রিয়ার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়াটা অনেক সময় কঠিন ও শ্রমসাধ্য হয়ে ওঠে। তাই আপনি আপনার লক্ষ্যের ব্যাপারে যত বেশি সচেতন ও উদ্যোগী হবেন, বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে তত বেশি লাভবান হবেন।

বিদেশে উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি-
ক. আগে প্রস্তুত করুন নিজেকে: যেকোনো চ্যালেঞ্জিং পেশায় সফল হওয়ার জন্য প্রয়োজন জরুরি সৃষ্টিশীল গুণ। আর সেই গুণ কমবেশি সবার মধ্যেই থাকে। আর এ গুণগুলোকে শাণিত করার মাধ্যমে নিজেকে গড়ে তোলা সম্ভব। বিদেশে পড়তে যাওয়ার ক্ষেত্রেও দরকার হয় তেমনি কিছু গুণের। এ ক্ষেত্রে প্রথম প্রস্তুতি হতে পারে পড়াশোনার মাধ্যমে নিজেকে প্রস্তুত করা। আপনি যে প্রোগ্রাম বা কোর্সের জন্যই বিদেশে যান না কেন, আপনার সিজিপিএ যত ভালো হবে, বিদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আপনার ভর্তির সুযোগ এবং স্কলারশিপের সুযোগ তত সহজেই মিলে যাবে। শুধু পড়াশোনাই যথেষ্ট নয়, এ ক্ষেত্রে বিদেশে পড়তে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীকে এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটির সঙ্গেও জড়িত থাকা প্রয়োজন। সেটা হতে পারে নাচ, গান, আবৃত্তি, খেলাধুলায় পারদর্শী, স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করার অভিজ্ঞতা, বিতর্ক বা ডিবেট, ম্যাথ অলিম্পিয়াড, ফিজিকস অলিম্পিয়াডের মতো বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার বিষয় ইত্যাদি। এ বিষয়গুলো বাইরে পড়তে যাওয়ার জন্য বিশেষ সহায়ক হিসেবে কাজ করে। এসবের পাশাপাশি কোথাও পার্টটাইম কাজ করার অভিজ্ঞতাও একটি ভালো যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হয়।
খ. দক্ষ ও পারদর্শী হতে হবে ইংরেজি ভাষায়: বিদেশে পড়তে চাইলে অবশ্যই আপনাকে ইংরেজি ভাষায় ভালো দখল থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে GRE, SAT, GMAT, IELTS কিংবা TOFEL -এ ভালো স্কোর থাকতে হবে। ইংরেজিতে দক্ষতা যাচাই করার জন্য বিশ্বজুড়ে সাধারণত দুটি পদ্ধতি বেশি প্রচলিত। একটি হচ্ছে আইইএলটিএস এবং অন্যটি হচ্ছে টোফেল। যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোতে পড়তে যেতে চাইলে ইংরেজিতে দক্ষতার প্রমাণ হিসেবে আপনাকে আইইএলটিএস স্কোরের তথ্য দিতে হয়। আর যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা প্রভৃতি দেশে টোফেল স্কোর প্রয়োজন হয়। আবার কোনো কোনো দেশে দুটি পদ্ধতিই গ্রহণযোগ্য। আর ইংরেজি ভাষা দক্ষতার এসব স্কোরের মেয়াদ দুই বছর পর্যন্ত কার্যকর থাকে (উল্লেখ্য, আইইএলটিএস এবং টোফেলের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য দেশে বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান রয়েছে)। তবে চীন, জাপান, জার্মানি, ফ্রান্স ইত্যাদি দেশে যেতে চাইলে ওই সব দেশের ভাষা আগেভাগে শিখে নেওয়াটা ভালো (যদিও এসব দেশেও ইংরেজিতে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে)। ইংরেজিতে দক্ষতার পাশাপাশি জার্মান, ফ্রেঞ্চ কিংবা চাইনিজ ভাষা জানা থাকলে এই ভাষাভাষীর দেশগুলোতে বৃত্তি পাওয়া অনেক সহজ হয়, আবার পার্টটাইম কাজের ক্ষেত্রেও এই ভাষার দক্ষতা বিশেষ উপকারে আসে।
ভাষাগত দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি নিচের বিষয়গুলো অবশ্যই সম্পন্ন করা প্রয়োজন।
১. নিজের আপডেটেড সিভি ও কাভার লেটার
২. সব শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র ইংরেজিতে করিয়ে নেওয়া।
৩. পাসপোর্টে যেন কোনো সমস্যা না থাকে, সেদিকে লক্ষ রাখা।
৪. বিদেশের যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ইচ্ছুক, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার খরচ বহন করা সম্ভব কি না, সেটা আগে থেকেই যাচাই করা। এ ক্ষেত্রে ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো স্কলারশিপ পাওয়া যাবে কি না, এবং পাওয়া গেলেও তার পরিমাণ কত এবং কত দিনের জন্য পাওয়া যাবে, তা দিয়ে সেখানে থেকে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া সম্ভব কি না, ইত্যাদি বিষয় আগে থেকেই জানা উচিত।
গ. প্রোগ্রাম/কোর্স নির্ধারণ: পেশাগত উন্নতি ও লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য কোন ধরনের প্রোগ্রাম বা কোর্স আপনার জন্য উপযুক্ত তা আগে খুঁজে বের করুন। পেশাগত সফলতা বা আশা-আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কোর্সে/প্রোগ্রামে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ তাৎপর্যপূর্ণ। তাই বর্তমান এই বিশ্বায়নের যুগে উচ্চশিক্ষার অনেক কোর্সের মধ্যে আপনাকে এমন একটি কোর্স বেছে নিতে হবে, যা আপনার ভবিষ্যৎ পেশাগত দক্ষতার পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে গণ্য হয়। তা ছাড়া বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য আপনি একেবারে একটি নতুন বিষয়ও বেছে নিতে পারেন। আমাদের দেশে প্রচলিত নয় কিন্তু বিশ্ব প্রেক্ষাপটে তা গুরত্বপূর্ণ এবং চাহিদা সম্পন্ন এ রকম কোনো বিষয়ও আপনি পছন্দ করতে পারেন। তবে সাধারণত বিদেশের পাশাপাশি আমাদের দেশেও যথেষ্ট চাহিদা আছে, এমন কোনো কোর্সকে উচ্চশিক্ষার জন্য নির্বাচন করাই ভালো। কোর্স নির্বাচনের সময় অবশ্যই নিচের বিষয়গুলো সম্পর্কে খেয়াল রাখবেন—

ভবিষ্যতে আপনি পেশাগত জীবনে কোন পেশায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে আগ্রহী এবং সে অনুযায়ী আপনার বর্তমান যোগ্যতা সাপেক্ষে কোন কোর্সটি আপনার জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী?
ওই কোর্সের কোনো বিকল্প কোর্স আছে কি না?
আপনি যে দেশে পড়তে যেতে আগ্রহী, সেই দেশে ওই কোর্সে উচ্চশিক্ষার মান বা পদ্ধতি বিশ্বে কতটুকু গ্রহণযোগ্য বা কতটুকু সময়োপযোগী?
কাঙ্ক্ষিত কোর্সটিতে পড়াশোনা শেষে কোথায় কর্মক্ষেত্র গড়ে তুলবেন এবং সেখানে এর সুবিধা বা সম্ভাবনা ও অসুবিধা বা প্রতিবন্ধকতার মাত্রা কতটুকু?
আপনি যে দেশে পড়তে যাচ্ছেন, সেখানে ওই কোর্সটি কত বছর মেয়াদি এবং টিউশন ফি ও অন্যান্য খরচ আপনার সামর্থ্যরে মধ্যে আছে কি না?
ওই কোর্সে পড়াকালীন কোনো আর্থিক সহায়তা বা বৃত্তির ব্যবস্থা রয়েছে কি না?
উল্লেখিত প্রশ্নগুলোর সঠিক ও গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা পাওয়ার জন্য আপনি উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তথ্য ও পরামর্শকেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা নিতে পারেন। এ ছাড়া ওই কোর্সে পড়াশোনা করেছেন বা করছেন এ রকম কোনো বিদেশি বা দেশি শিক্ষার্থীর সঙ্গে পরিচয় থাকলে আগে থেকেই আলাপ করে নিতে পারেন।
ঘ. ক্রেডিট ট্রান্সফার: মনে করুন, আপনি বাংলাদেশেরই কোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি কোর্সে কিছুদিন পড়াশোনা করেছেন বা করছেন। কিন্তু এখন আপনি ওই কোর্সেই বিদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে আগ্রহী (তবে এ ক্ষেত্রে উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক বা এমওইউ থাকতে হবে)। সে ক্ষেত্রে দেশে সম্পন্ন করা কোর্সটির ক্রেডিটগুলো গ্রহণ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে এক্সামশন দাবি করতে পারেন। আপনার কৃত কোর্সটির জন্য কতটুকু ক্রেডিট পাবেন, তা নির্ধারণ করবে ওই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আপনাকে কাগজপত্রের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে যে আপনার কৃত কোর্স স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে করা এবং এই বিষয়গুলো বিদেশের ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত বিষয়েরই অনুরূপ। ক্রেডিট ট্রান্সফারের জন্য যে সনদ ও কাগজপত্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আপনার কাছে চাইতে পারে, সেগুলো হলো একাডেমিক সার্টিফিকেট, ট্রান্সক্রিপ্ট, প্রত্যয়নপত্র; কোর্সের আউটলাইন, পাঠ্যতালিকা; কোর্স লেভেল–সম্পর্কিত তথ্যাদি; কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় অনুষদ কর্তৃক সুপারিশনামা; কোর্স অ্যাসেসমেন্টের পদ্ধতি (পরীক্ষা, রচনা, প্রজেক্ট ওয়ার্ক ইত্যাদি); গ্রেডিং সিস্টেম–সংক্রান্ত তথ্য; কোর্সের মেয়াদ, লেকচার-ঘণ্টা, ল্যাবরেটরিতে কাজের ঘণ্টা, ফিল্ড-ওয়ার্ক ইত্যাদি।
ঙ. দেশ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্বাচন: বিদেশে পড়াশোনার জন্য দেশ নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই চিন্তাভাবনা করে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ, সব দেশে পড়াশোনার সুযোগসুবিধা এক রকম নয়। যেমন কোন দেশে টিউশন ফি বেশি আবার কোনো দেশে টিউশন ফি কম। আবার কোনো দেশে টিউশন ফি লাগে না। কোথাও পার্টটাইম কাজ করা যায়, কোথাও পার্ট টাইম কাজ করা যায় না। আবার কোথাও পার্টটাইম কাজ করা নিষিদ্ধ। কোনো দেশে সহজেই স্কলারশিপ পাওয়া যায়, আবার কোনো দেশে স্কলারশিপ পাওয়া বেশ কঠিন। কোনো দেশের আবহাওয়া খুবই বিরূপ, আবার কোনো দেশের আবহাওয়া ভালো ও স্বাস্থ্যকর। আবার এমনও অনেক দেশ আছে, যেখানে পড়াশোনার সময়ই নাগরিকত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং এসব বিষয় মাথায় রেখে এবং তা সময় নিয়ে ভালোভাবে বিশ্লেষণ করে দেশ নির্বাচন করুন। আপনি যে দেশে পড়ালেখার জন্য যেতে চাচ্ছেন, সেই দেশে আপনার আত্মীয়স্বজন বা বন্ধুবান্ধব বা পরিচিতজন কেউ থাকলে আপনার উচিত হবে, তাদের কাছ থেকে এসব বিষয়ে আগে থেকেই ভালোভাবে জেনে নেওয়া। বর্তমানে প্রত্যেকটি দেশেরই বিভিন্ন বিভাগের নিজস্ব সরকারি ওয়েবসাইট আছে। যদি আপনার জানা না থাকে তবে Google বা Yahoo এ রকম সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটগুলো ভিজিট করুন এবং সেখানকার শিক্ষাব্যবস্থা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, খরচ, স্কলারশিপ তথ্য, আবাসনব্যবস্থা, জীবনধারা, আবহাওয়া, সংস্কৃতি ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত জানার পর আপনার জন্য উপযুক্ত দেশ নির্বাচন করুন। এ ক্ষেত্রে দুই-তিনটি দেশ নির্বাচন করা ভালো। কারণ, একটি মাত্র দেশ পছন্দ করলে সেখানকার কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার পরও ভিসা পেতে ব্যর্থ হতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আপনার বিদেশযাত্রা বিলম্বিত হতে পারে। দেশ নির্বাচনের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্বাচনের ক্ষেত্রেও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করুন। কারণ, অধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শর্ত জানা থাকলে আপনার জন্য উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করা সহজ হবে।
যাঁরা স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে যাবেন, তাঁদের যে বিষয়গুলো ভাবতে হবে—
* স্কলারশিপের মেয়াদ কত এবং নবায়ন করা যাবে কি না, যদি যায় তবে কী ধরনের যোগ্যতার ভিত্তিতে? স্কলারশিপের অর্থে কী কী খরচ করা যাবে?
* সেখানকার জীবনযাত্রা কেমন ব্যয়বহুল এবং আপনার পক্ষে স্কলারশিপের অর্থে তা নির্বাহ করে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া সম্ভব কি না?

যাঁরা নিজ খরচে পড়াশোনা করতে যাবেন তাঁদের যে বিষয়গুলো ভাবতে হবে—
আপনার পছন্দের কোর্সটিতে সর্বমোট খরচ কত এবং তা কীভাবে পরিশোধ করতে হবে। উল্লেখ্য, আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই বিষয়ে ই-মেইল করলে তারা মোট খরচের একটি খসড়া হিসাব ও পরিশোধের পদ্ধতি আপনাকে জানিয়ে দেবে। এতে যে বিষয়গুলো সাধারণত অন্তর্ভুক্ত থাকে, তা হচ্ছে টিউশন ফি, আবাসন খরচ, খাবার খরচ, বইপত্র বাবদ খরচ, ইনস্যুরেন্স খরচ ইত্যাদি।

 খরচগুলো কমানোর কোনো বিকল্প উপায় আছে কি না। যেমন অনেক ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে না থেকে কোনো পরিবারের সঙ্গে থাকলে খরচ কম লাগে। আবার কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই সেমিস্টারের টিউশন ফি একসঙ্গে পরিশোধ করলে কিছুটা ছাড় পাওয়া যায়।
আর্থিক সহায়তা, ঋণ বা স্কলারশিপ পাওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না। যদি থাকে, তবে তা কোন যোগ্যতার ভিত্তিতে দেওয়া হবে।
দেশটির জীবনযাত্রার ব্যয় কেমন এবং আপনার পক্ষে তা নির্বাহ করে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব কি না, ইত্যাদি।
চ. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি: বিদেশে পড়তে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে অবশ্যই আপনাকে আপনার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করে রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে সব কাগজপত্র (যেমন: সার্টিফিকেট, ট্রান্সক্রিপ্ট ইত্যাদি) ইংরেজি ভাষায় হতে হবে। সাম্প্রতিককালে দেশের সব শিক্ষা বোর্ড কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই পরীক্ষার সনদপত্র বা নম্বরপত্রগুলো ইংরেজিতে করে থাকে, যা এ ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক দিক। তবে যেসব কাগজপত্র ইংরেজিতে করা নেই সেগুলো ইংরেজিতে অনুবাদ করে নিতে হবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ড বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে অথবা নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে। নোটারির ক্ষেত্রে আগের মূল কপি এবং অনুবাদ করা কপি একসঙ্গে রাখতে হয়। উল্লেখ্য, ছবি এবং প্রয়োজনীয় সব ফটোকপি অবশ্যই সত্যায়িত করে নিতে হবে। সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষ শাখা থেকে সব কাগজপত্রের মূল কপি দেখানো সাপেক্ষে বিনা মূল্যে সত্যায়িত করা যায়। এ ছাড়া নোটারি পাবলিক থেকেও সত্যায়িত করা যায়।
ছ. আবেদন এবং ভর্তি প্রসেসিং: নির্দিষ্ট দেশের বাছাই করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য প্রথমে আপনাকে ভর্তির তথ্য, প্রসপেক্টাস ও ভর্তি ফরম চেয়ে আবেদন করতে হবে। তবে বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটেই এ–সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য উল্লেখ করা থাকে। আবেদনপত্র কুরিয়ারযোগে, ফ্যাক্স বা ই-মেইলের মাধ্যমে পাঠানো যায়। তবে ই-মেইলে পাঠানোই ভালো। আপনার আবেদনপত্র সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পৌঁছালে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আপনার ঠিকানায় ভর্তির আবেদন ফরম ও প্রসপেক্টাস পাঠিয়ে দেবে। এতে সাধারণত দুই-তিন সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। তবে অনেক ক্ষেত্রে আপনার ই-মেইল আড্রেস দিলে সেখানেও তারা আবেদন ফরম দিতে পারে। আবার কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের ওয়েবসাইটে আবেদন ফরম দিয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে তা ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিতে হবে। এরপর আবেদন ফরমটি প্রয়োজনীয় সব তথ্য দিয়ে নির্ভুলভাবে পূরণ করে সঠিক নির্দেশনা অনুসারে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও আবেদন ফি/ব্যাংক ড্রাফট কোনো আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিস (ডিএইচএল বা ফিডেক্স) বা রাষ্ট্রীয় ডাকের মাধ্যমে নির্দেশিত ঠিকানায় পাঠাতে হবে। উল্লেখ্য, আবেদন ফি অফেরতযোগ্য। আর ফরম পূরণের সময় কোনো ধরনের মিথ্যা তথ্য দিলে ভর্তি অনিশ্চিত বা পরবর্তী সময়ে তা বাতিলের সম্ভাবনা থাকে এবং ভিসা পেতে সমস্যা হতে পারে। তাই ভর্তি ফরম পূরণের সময় কোনো ধরনের মিথ্যা বা অসত্য তথ্য দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। আবেদনপত্রের সঙ্গে সাধারণত নিচের কাগজপত্র পাঠাতে হয়-
১. সব একাডেমিক কাগজপত্র: মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বা তদূর্ধ্ব সব সনদপত্র ও নম্বরপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি এবং সাবেক বা বর্তমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানের সুপারিশপত্র।
২. ভাষাগত দক্ষতার প্রমাণপত্র: নির্বাচিত দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শর্তানুযায়ী যে ভাষার দক্ষতা থাকতে হবে সেই ভাষায় দক্ষতার প্রমাণস্বরূপ ভাষাশিক্ষা কোর্সের সনদপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি।
৩. উল্লেখ্য, ইংরেজি ছাড়া অন্য ভাষার ক্ষেত্রে যদি সে দেশে গিয়ে শিখতে চান তবে তার পূর্বতন ভাষা হিসেবে ইংরেজিতে দক্ষতার প্রমাণস্বরূপ IELTS/TOFEL–এর সনদপত্রের সত্যায়িত কপি পাঠাতে হবে। তবে কোনো কোনো দেশের ক্ষেত্রে ভাষাগত দক্ষতার সনদপত্র লাগে না।
৪. আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণপত্র: যিনি আপনার বিদেশে পড়াশোনাকালীন যাবতীয় খরচ বহন করবেন, তাঁর অঙ্গীকারপত্র, আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণস্বরূপ ব্যাংক গ্যারান্টিপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি। নিজ খরচে পড়ার ক্ষেত্রে আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণস্বরূপ স্পন্সরের নামে দেশভেদে বিভিন্ন অঙ্কের অর্থের ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট এবং অনেক ক্ষেত্রে এই সলভেন্সি সার্টিফিকেটের বৈধতার পক্ষে বিগত ছয় মাসের ব্যাংক লেনদেন রিপোর্টের সত্যায়িত কপি পাঠাতে হয়।
৫. আবেদন ফি-এর ব্যাংক ড্রাফট: দেশ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানভেদে আবেদন ফি বিভিন্ন পরিমাণের হয়ে থাকে। তবে তা সাধারণত ৭০০ থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে হয়ে থাকে।

জ. ভর্তির অনুমতিপত্র পাওয়ার পর আপনার করণীয়: সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভর্তির অনুমতিপত্র বা অফার লেটার পাওয়ার পর সাধারণত অফার লেটারে বা প্রসপেক্টাসে উল্লেখিত টিউশন ফির সমপরিমাণ অর্থ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক ড্রাফট করতে হবে, যা ভিসা ইন্টারভিউর সময় দূতাবাসে দেখাতে হয় এবং ভিসা পেলে পরবর্তী সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জমা দিতে হবে। কিন্তু টিউশন ফি বা এ রকম বেশি পরিমাণ অর্থ ব্যাংক ড্রাফট করতে হলে ব্যাংকে নিজের নামে একটি স্টুডেন্ট ফাইল চালু করতে হবে এবং সেখান থেকেই বিদেশে পড়াশোনাকালীন সব আর্থিক লেনদেন পরিচালনা করা যাবে। ব্যাংকে স্টুডেন্ট ফাইল খোলার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রসপেক্টাস বা ভর্তির প্রমাণপত্র বা ভর্তি ফরম, পাসপোর্ট, শিক্ষাগত সনদপত্র, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি, ছবি ইত্যাদির প্রয়োজন হয়। উল্লেখ্য, বিভিন্ন ব্যাংকের বৈদেশিক বিনিময় শাখাগুলোতেও স্টুডেন্ট ফাইল খোলার জন্য আলাদা কেন্দ্র রয়েছে।
ঝ. ভিসা প্রসেসিং: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার পর তাদের পাঠানো অফার লেটার বা ভর্তির অনুমতিপত্রে উল্লেখিত ডেডলাইনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে পৌঁছাতে হবে। অন্যথায় ভর্তি বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই নির্দিষ্ট তারিখের আগেই আপনাকে সেই দেশের ভিসা সংগ্রহ করতে হবে। ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য থাকলেও নিয়ম প্রায় একই রকম। কোনো দেশে ভিসা পেতে হলে প্রথমে সে দেশের ভিসার আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে হবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিজ উদ্যোগে ভিসার আবেদনপত্র সরবরাহ করে থাকে। তা না হলে নির্দিষ্ট দূতাবাস বা সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসের ওয়েবসাইট থেকে বা ভিসা এজেন্টের মাধ্যমে ভিসার আবেদনপত্র সংগ্রহ করে সঠিক তথ্য দিয়ে পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ দূতাবাসে জমা দিতে হবে। এরপর নির্দিষ্ট দিনে ভিসা ইন্টারভিউর জন্য সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসে গিয়ে দূতাবাস বা অ্যাম্বাসি ফেস করে ভিসা সংগ্রহ করতে হবে। ভিসার জন্য সাধারণত শিক্ষাগত যোগ্যতার কাগজপত্র যেমন: সনদপত্র, নম্বরপত্র, প্রতিষ্ঠানপ্রধানের প্রশংসাপত্রের সত্যায়িত ফটোকপিসহ মূলকপি এবং পাসপোর্ট (পাসপোর্টের মেয়াদ কমপক্ষে ছয় মাস, কোনো কোনো ক্ষেত্রে মেয়াদ কমপক্ষে এক বছর থাকতে হবে) প্রয়োজন। সে সঙ্গে পেশা, জন্মতারিখ ও অন্য সব তথ্যের সঙ্গে শিক্ষাগত যোগ্যতার কাগজপত্রের মিল থাকতে হবে। তা ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির প্রমাণপত্র বা অফার লেটার; আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণপত্র; ছবি; টিউশন ফির ব্যাংক ড্রাফট; ভাষাগত দক্ষতার প্রমাণপত্র; পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ইত্যাদি কাগজপত্র ভিসা ইন্টারভিউর সময় সঙ্গে রাখতে হবে।
ঞ. ভিসা হয়ে যাওয়ার পর দেশ ছাড়ার প্রস্তুতি: ভিসাপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর অর্থাৎ ভিসা পাওয়ার পরের পালা হচ্ছে বিদেশযাত্রা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা ভিসার ডেডলাইন যাই হোক না কেন, তার কয়েক দিন আগে দেশ ত্যাগ করাই ভালো। কারণ, অনেক সময় আবহাওয়াজনিত ও অন্য কোনো কারণে যাত্রাপথে বিলম্ব হতে পারে। সে ক্ষেত্রে হাতে সময় না থাকলে বিপদ হতে পারে। দেশ ছাড়ার আগে আপনার পাসপোর্ট, ভিসা ইত্যাদি যথাযথ অবস্থায় আছে কি না, ভালোভাবে দেখে নিন। বিদেশে অবস্থানের সময় এসব দলিলপত্র অবশ্যই আপনাকে সঙ্গে রাখতে হবে। আপনি কোন পথে বিদেশে যেতে চান, তা নির্ধারণ করবেন আগে থেকেই। বিমানযোগে ভ্রমণ করতে চাইলে অনেক সময় বিভিন্ন এয়ারলাইনস ডিসকাউন্ট রেটে টিকিট দিয়ে থাকে। আপনি নির্ধারিত দিনের টিকিট যদি আগে কেটে রাখেন, তাহলে ছাড় পেতে পারেন। বিদেশে গিয়ে কোথায় থাকবেন এবং আপনার আবাসনের বিষয়টি কেমন হবে, তা সম্পর্কেও খোঁজখবর নিন। স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাবিষয়ক ইস্যুগুলো সম্পর্কে জেনে নিন। যে দেশে যাচ্ছেন, সেই দেশের আইন অনুযায়ী কী করা যাবে, কী করা যাবে না, সে সম্পর্কে আগে থেকেই ধারণা থাকা জরুরি। সর্বোপরি, আপনি যে দেশে যাচ্ছেন সে দেশের ইতিহাস, রাজনীতি, আইনকানুন, রীতিনীতি প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে যতটুকু সম্ভব আগে থেকেই জেনে নিন।

এ ছাড়াও সংশ্লিষ্ট দেশের ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস আপনি যখন সংশ্লিষ্ট দেশের বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন, তখন আপনার সেই দেশে আসার উদ্দেশ্য এবং সম্ভাব্য অবস্থানের সময়-কাল ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে ইমিগ্রেশন অফিসার জিজ্ঞাসা করবেন। সে সঙ্গে আপনার পাসপোর্ট, ভিসা ইত্যাদি বিষয়গুলোও পরখ করবেন ইমিগ্রেশন অফিসার। এসব বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর তা সন্তোষজনক হলে আপনাকে ওই দেশে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। মনে রাখবেন, ইমিগ্রেশন অফিসার যখন আপনাকে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন, তখন নম্রভাবে ইমিগ্রেশন অফিসারের প্রশ্নের যথাযথ জবাব দিন। ইমিগ্রেশনের পর আসবে কাস্টমস। আপনার যাত্রাকালে কী কী জিনিস আপনি বহন করছেন, তার একটি তালিকা আপনাকে কাগজে লিখতে হতে পারে। এখানেও সব প্রশ্নের প্রয়োজনীয় ও সঠিক উত্তর দিতে হবে। কাস্টমস অফিসার প্রয়োজনে আপনার ব্যাগ তল্লাশি করতে পারেন।

প্রয়োজনীয় কিছু লিঙ্ক:
১. জার্মানির আন্তর্জাতিক কোর্সগুলোর বিস্তারিত তালিকার জন্য ভিজিটি করুন: http://www.daad.de/idp
২. জার্মানিতে পড়াশোনা এবং গবেষণা–সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য পাওয়ার জন্য ভিজিট করুন: http://www.daad.de/deutschland/index.en.html
৩. বৃত্তি সংক্রান্ত তথ্য পাওয়ার জন্য ভিজিট করুন: http://www.daad.org.uk/en/12703/index.html
৪. ঢাকার জার্মান দূতাবাস: http://www.dhaka.diplo.de/
৫. যুক্তরাজ্যে পড়াশোনার জন্য ভিজিটি করুন নিচের ওয়েবসাইটগুলো
http://www.ukcisa.org.uk,
http://www.ucas.com, http://www.educationuk.org
৬. অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যাবে http://studyinaustralia.gov.au সাইটে
৭. বিভিন্ন দেশে ভর্তিপ্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুন: https://studyabroad.shiksha.com
৮.বিদেশে পড়ালেখা ও স্কলারশিপের জন্য ভিজিট করুন: https://www.studyabroad.com/study-abroad-scholarships
৯.বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানের স্কলারশিপ ও ফেলোশিপের জন্য ভিজিট করুন: https://scholarship-positions.com/
১০. এ ছাড়াও আপনি https://www.google.com- গিয়ে আপনি যে দেশে যেতে ইচ্ছুক, সে দেশের বিভিন্ন ইউনিভার্সিটি সম্পর্কে জানতে চাইলে University List of .... (দেশের নাম) লিখে সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন ওই দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা। এরপর আপনি আপনার পছন্দসই বিশ্ববিদ্যালয় বেছে নিয়ে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে পারবেন ওয়েবসাইটের মাধ্যমেই।
উল্লেখ্য, বিদেশে পড়ালেখা করতে যাওয়ার ক্ষেত্রে আরও কোনো তথ্যের প্রয়োজন হলে বা জানার থাকলে ই-মেইল করুন: kekbabu@yahoo.com এই ঠিকানায়।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক (আইন বিভাগ), ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রতিনিধি, প্রথম আলো

Link: https://www.prothomalo.com/bondhushava/article/1571408/%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6%E0%A7%87-%E0%A6%89%E0%A6%9A%E0%A7%8D%E0%A6%9A%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%BE-%E0%A6%97%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%B9%E0%A6%A3-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%86%E0%A6%97%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%B9%E0%A7%80%E0%A6%B0%E0%A6%BE-%E0%A6%9C%E0%A7%87%E0%A6%A8%E0%A7%87-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%A8?fbclid=IwAR35EKJvhEIttD1tqilnbG88sdH6OROOeBKcFcvLycZZNjr1zIOE_6WhABM
Dr. Kudrat-E-Khuda (Babu).
Associate Professor (Dept. of Law), Daffodil International University;
International Member of Amnesty International;
Climate Activist of Greenpeace International; Column Writer;
Mobile Phone: +8801716472306
E-mail: kekbabu.law@diu.edu.bd

Offline Sharminte

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 352
  • Test
    • View Profile
Sharmin Akter
Lecturer
Department of Textile Engineering
Permanent Campus
Email: sharmin.te@diu.edu.bd