বিশ্বে প্রতি দশটি মৃত্যুর একটি হয় স্ট্রোকের কারণে। আর পঙ্গুত্বের জন্য ঘরবন্দি হয়ে বাকি জীবন কাটানোর পিছনেও একটিই কারণ, তা হল ব্রেন স্ট্রোক। একটু সতর্ক হলেই এই মারাত্মক রোগটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই প্রত্যেকেরই উচিত স্ট্রোকের কারণ ও তা প্রতিকারের উপায় সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা।
স্ট্রোকের কারণ :
মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বন্ধ হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ উচ্চ রক্তচাপ। বিশেষ করে অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ থাকলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। ওয়ার্ল্ড স্ট্রোক অর্গানাইজেশন-এর সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রতি ১০০ জন রোগীর মধ্যে ৪৮ জনেরই হাই ব্লাড প্রেশার থাকে। প্রেশারের ওষুধ নিয়ম করে না খেলে প্রেশার বেড়ে গিয়ে স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
যাঁদের সারা দিন চেয়ারে বসে কাজ করতে হয়, হাঁটাচলা-সহ কায়িক পরিশ্রম তেমন নেই বললেই চলে, তাঁদের এই রোগের ঝুঁকি অন্যদের থেকে বেশি। সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, ১০০ জন স্ট্রোকের রোগীর মধ্যে ৩৬ জনেরই তেমন কোনও নিয়ম মেনে চলেন না।
যাঁদের রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি, তাদেরও স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেশি। প্রসঙ্গত এলডিএল ও ভিএলডিএল কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রাধিক্য এবং ভাল কোলেস্টেরল এইচডিএল কম থাকলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে প্রায় ২৭ শতাংশ।
সুষম খাবারের পরিবর্তে ভাজাভুজি, জাঙ্ক ফুড বেশি খেলে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। দেখা গিয়েছে যে, স্ট্রোকে আক্রান্তদের ২৩ শতাংশ এই ধরনের খাবারে আসক্ত।
সেন্ট্রাল ওবেসিটি অর্থাৎ ভুঁড়ি থাকলে ব্রেন স্ট্রোক হতে পারে। ১৯ শতাংশ স্ট্রোকের রোগীর সেন্ট্রাল ওবেসিটি আছে।
মানসিক চাপ স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। স্ট্রেস ও ডিপ্রেশন-সহ অন্যান্য মানসিক সমস্যা থাকলেও এই সমস্যার সম্ভাবনা থাকে। স্ট্রোকের রোগীদের ১৭% মানসিক চাপের শিকার।
ধূমপানে আসক্তি অন্যান্য অনেক অসুখের সঙ্গে সঙ্গে স্ট্রোকের ঝুঁকিও বাড়ায় এবং মদ্যপানে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।
যাঁরা ডায়াবিটিসে ভুগছেন ও ডায়েট বা শরীরচর্চা করেন না, তাঁদেরও স্ট্রোকের সম্ভাবনা অনেক বেশি।
স্ট্রোকের প্রতিকার :
স্ট্রোক থেকে বাচঁতে পারেন নিজেরাই। আপনার বংশে কারো স্ট্রোক হলে একটু বেশি সাবধান হোন। আপনার বংশের কেউ স্ট্রোক করলে নিয়মিত প্রেশার, ব্লাড সুগার, কোলেস্টেরল-সহ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করাতে হবে। ব্লাড প্রেশার আর সুগার থাকলে তা তো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আর ধূমপানের সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে। একই সঙ্গে নিয়ম করে সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন আধ ঘণ্টা করে দ্রুত পায়ে হাঁটুন। ভুঁড়ি বাড়তে দেওয়া যাবে না। নিয়ম করে ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুমোতে হবে। ঘুম কম হলে ব্লাড প্রেশার বেড়ে গিয়ে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। যদি অল্প সময়ের জন্যে ব্ল্যাক আউট হয়, হাত পা বা শরীরের কোনও একদিক হঠাৎ অবশ লাগে, কিংবা চোখে দেখতে বা কথা বলতে অসুবিধে হয় অথবা ঢোক গিলতে কষ্ট হয়, কোনও ঝুঁকি না নিয়ে রোগীকে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। এমন কিছু সাধারণ নিয়ম মানলেই এড়িয়ে যেতে পারেনএমন অসুখ।