Career Development Centre (CDC) > Academia Lecture Series
ব্যবসার কবি আনোয়ার হোসেন, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটতে।
Noor E Alam:
মন বর্ণাঢ্য ও বর্ণিল জীবনের অধিকারীকে কাছে পেয়ে নানা প্রশ্ন করেন শিক্ষার্থীরা। সেসব প্রশ্নের উত্তর দেন আনোয়ার হোসেনের সন্তানরা। এন্ট্রাপ্রেনারশিপ বিভাগের এক শিক্ষার্থী জানতে চান আনোয়ার হোসেনের ব্যবসার কৌশল সম্পর্কে । জবাবে বড় ছেলে ও আনোয়ার ইসপাতের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোয়ার হোসেন বলেন, বাবার ব্যবসার ইতিহাস ও ধরন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় তিনি যে পণ্যের ব্যবসা করবেন বলে মনস্থির করতেন, প্রথমেই সেই পণ্যের বেচাকেনা বা ট্রেডিং দিয়ে শুরু করতেন। তারপর আস্তে আস্তে সেই পণ্যের আদ্যপান্ত জানতেন এবং সবশেষে সেই পণ্যের উৎপাদনে যেতেন। তিনি প্রায়শই বলতেন, খরিদে লাভ করতে না পারলে বিক্রিতে লাভ করা যায় না।কেমন ছিল আনোয়ার হোসেনের পণ্য নির্বাচনের সম্ভাব্যতা পরীক্ষা পদ্ধতি? এমন প্রশ্নও ছিল শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে। জবাবে ছোট ছেলে হোসেন খালেদ বলেন, চিরাচরিত পদ্ধতি হচ্ছে ফেসিবিলিটি স্টাডি, অর্থাৎ হিসাব নিকাশ করে বের করা যে কোন পণ্যটি অধিক লাভজনক। কিন্তু আনোয়ার হোসেন এই চিরাচরিত পথে হাঁটেননি। মানুষ নতুন কী পণ্য চায় অথবা সে পণ্যের প্রকৃত বাজার সম্ভাব্যতা কোথায় লুকিয়ে আছে তা খুঁজে বের করার জন্য দূরদর্শী ও বিচক্ষণতা নিয়ে নিরন্তর বাংলাদেশের গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ঘুরে বেড়াতেন।
ব্যক্তি আনোয়ার হোসেন সম্পর্কে জানার কৌতুহল ছিল শিক্ষার্থীদের মাঝে। সে রকম এক প্রশ্নের জবাবে দ্বিতীয় পুত্র হোসেন মেহমুদ জানান, আনোয়ার হোসেন শুধু ব্যবসাই করেননি। অন্য অন্যদেরকেও কাজ শিখিয়ে, পুঁজি দিয়ে এবং সাহস ও মনোবল জুগিয়ে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘বাবা ছিলেন অনেক উদার। আমাদের অনেক কর্মীই পরে ব্যবসা দাঁড় করিয়েছে। বাবা তাদের নানাভাবে সহায়তা করেছেন। যদিও তারা ছিল আমাদের প্রতিযোগী।’
অনুষ্ঠানে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এন্ট্রারপ্রেনারশিপ বিভাগের শিক্ষার্থীরা আলহাজ আনোয়ার হোসেনের হাতে নিজেদের তৈরি শুভেচ্ছা স্মারক তুলে দেন। অন্য শিক্ষার্থীরাও ছিল পরিতৃপ্ত। তাদেরই একজন তিশা খন্দকার। তিনি বলেন, জীবনে অনেক সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে অংশ নিয়েছি, কিন্তু আজকের অনুষ্ঠানটি আমার জীবনে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
আসিফ ইকবাল নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমি উদ্যোক্তা হতে চাই। আজকের অনুষ্ঠান থেকে ব্যবসা সংক্রান্ত অনেক দিকনির্দেশনা পেলাম। এটা আমার সারা জীবনের পাথেয় হয়ে থাকবে।
ঠিক এই উদ্দেশ্য নিয়েই দুই বছর আগে ইন্ডাস্ট্রি একাডেমিয়া লেকচার সিরিজ শুরু করে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় আশা করছে যে, এ লোকবক্তৃতামালা নতুন প্রজন্মের সৎ, শিক্ষিত ও মেধাবী উদ্যোক্তাদেরকে সাহস, নিষ্ঠা ও দক্ষতার সাথে সামনে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করবে। উদ্যোক্তা উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তার সম্ভাবনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ গতিতে এগিয়ে যেতে পারছে না বলে যে ধারনা চালু রয়েছে, এ লোকবক্তৃতামালা সে সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে অনেকখানি সাহায্য করবে বলে আশা করা যায়।
Noor E Alam:
আলহাজ আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে হোসেন খালেদের বক্তব্য :
আলহাজ আনোয়ার হোসেনের দ্বিতীয় ছেলে হোসেন মেহমুদের বক্তব্য :
আলহাজ আনোয়ার হোসেনের বড় ছেলে মনোয়ার হোসেনের বক্তব্য:
ডিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমানের বক্তব্য :
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খানের বক্তব্য :
আলহাজ আনোয়ার হোসেনের সহধর্মীনি বিবি আমেনার বক্তব্য :
আলহাজ আনোয়ার হোসেনের কন্যার বক্তব্য :
আলহাজ আনোয়ার হোসেনের পুত্রবধুর বক্তব্য:
সিডিসির পরিচালক আবু তাহের খানের বক্তব্য :
পুরো অনুষ্ঠানের ভিডিও দেখুন: &feature=share
Noor E Alam:
উদ্যোক্তা হিসেবে সফল হতে হলে কঠোর পরিশ্রমের বিকল্প নেই বলে মনে করেন আনোয়ার গ্রুপ অব ইন্ডাষ্ট্রিজের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন। পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের অন্তরে শেখার অদম্য আগ্রহ এবং নতুন নতুন আইডিয়া উদ্ভাবনের সক্ষমতা থাকতে হবে বলে অভিমত দিয়েছন এই সফল শিল্পোদ্যোক্তা। তিনি আরো মনে করেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উদ্যোক্তা উন্নয়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সারা দেশে বিপুলসংখ্যক উদ্যোক্তা উন্নয়নের উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। আজ শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ৭১ মিলনায়তনে আয়োজিত ‘উদ্যোক্তা উন্নয়ন বিষয়ক ডিআইইউ ইন্ডাস্ট্রি একাডেমিয়া বক্তৃতা মালা’ অনুষ্ঠানের ১২তম পর্বের বক্তৃতায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে তিনি এ অভিমত ব্যক্ত করেন। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন উপাচার্য প্রফেসর ড. ইউসুফ এম ইসলাম, আলহাজ আনোয়ার হোসেনের জ্যেষ্ঠ পুত্র মনোয়ার হোসেন, দ্বিতীয় পুত্র হোসেন মেহমুদ ও কনিষ্ঠ পুত্র হোসেন খালেদ, ঢাকা চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের পরিচালক মো. আবু তাহের খান। অনুষ্ঠান সঞ্চলনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক সৈয়দ মিজানুর রহমান।
বাবার সঙ্গে কাজ করার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে আলহাজ আনোয়ার হোসেনের জ্যেষ্ঠ পুত্র মনোয়ার হোসেনের বলেন, বাবার ব্যবসা জীবনের সফলতার কথা আপনারা অনেকেই জানেন। আমি বলতে চাই ব্যক্তি আনোয়ার হোসেনের কথা। তিনি সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে মিশতেন। দেশ-বিদেশে প্রচুর ভ্রমণ করতেন। এখন অসুস্থতার কারণে পারেন না। বাবা বলতেন, আনোয়ার গ্রুপে নিম্নস্তরে যারা কাজ করছে তাদের ছেলেমেয়েরা যেন পিতার মতো শ্রমিক হয়ে ফিরে না আসে। তাদেরকে অবশ্যই উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হতে হবে। এজন্য তিনি সব ধরনের সহযোগিতা করতেন। এসময় তিনি আরো বলেন, বাবা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করতে পারেননি বলে সারা দেশে ৩৯৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহযোগিতা করেন। এখনো আনোয়ার গ্রুপের পক্ষ থেকে সেই সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে।
আলহাজ আনোয়ার হোসেনের দ্বিতীয় পুত্র হোসেন মেহমুদ বলেন, আমি পড়াশোনা শেষ করার পর বাবা আমাকে আনোয়ার টেক্সটাইল দেখাশোনার দায়িত্ব অর্পন করেন। তখন তিনি বলেছিলেন, মানুষের জীবনে শিক্ষার কোনো শেষ নেই। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত শিখতে হবে। বাবার এই উপদেশ তিনি এখনো মেনে চলেন বলে জানান হোসেন মেহমুদ। তিনি বলেন, কীভাবে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করতে হয় তা বাবার কাছ থেকে শিখেছি।
সবশেষে কনিষ্ঠ পুত্র হোসেন খালেদ বলেন, বাবার সমগ্র জীবন অধ্যয়ন করলে দেখতে পাই, তিনি তার মাকে অসম্ভব শ্রদ্ধা করতেন, সন্তানদের স্নেহ করতেন, নিয়মতান্ত্রিক খাবার খেতেন, প্রতিদিন হাঁটতেন, গোছানো জীবনযাপন করতেন এবং সব সময় নোট রাখতেন। এই কয়টি বিষয় মেনে চললে যেকোনো মানুষ জীবনে সফল হবেন। বাবার কর্মজীবনের স্মৃতিচারণা করে তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে প্রাইভেট ব্যাংকিং থেকে শুরু করে অনেক কিছুই তার হাত দিয়ে শুরু হয়েছে। তিনি স্বপ্ন দেখতেন, ২০২০ সালের মধ্যে আনোয়ার গ্রুপে ২০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান করা। আমরা তার স্বপ্ন পূরণে কাজ করে যাচ্ছি।
স্বাগত বক্তৃতায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খান বলেন, আনোয়ার হোসেন হচ্ছেন উদ্যোক্তাদের উদ্যোক্তা। তিনি তার কর্মজীবনে অসংখ্য উদ্যোক্তা, ব্যবসায়িক নেতা, শিক্ষক এমনকি সিনেমা নির্মাতা পর্যন্ত তৈরি করেছেন। তার কাছে বাংলাদেশের অনেক ঋণ রয়েছে। আজকের তরুণ শিক্ষার্থীরা এই সফল উদ্যোক্তার গল্প শুনে উদ্যোক্তা হতে অনুপ্রাণিত হবেন বলে মনে করেন ড. সবুর খান। তিনি তার ‘এ জার্নি টুওয়ার্ডস এন্ট্রাপ্রেনারশিপ’ বই দেখিয়ে বলেন, এই বইয়ের প্রথম অধ্যায় শুরু করেছি আনোয়ার হোসেনকে দিয়ে। তিনি বাংলাদেশের ব্যবসা জগতে পথিকৃতের মর্যাদায় থাকবেন বলে অভিমত ব্যাক্ত করেন ড. মো. সবুর খান।
তিনি আরো বলেন, ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া লেকচার সিরিজের উদ্দেশ্য হচ্ছে, এসব সফল উদ্যোক্তাদের গল্প শুনে আমাদের তরুণ উদ্যোক্তারা যেন অনুপ্রাণিত হয় এবং নিজেরা উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখে। কারণ বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে প্রচুর উদ্যোক্তা তৈরি করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।’
আলহাজ আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে কর্মময় স্মৃতির কথা উল্লেখ করে ঢাকা চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, আনোয়ার ভাইয়ের সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করেছি। তার সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে দ্বিমত হতো। কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে অনেক সময় লাগত। কিন্তু দিনশেষে আমরা হাসিমুখে ঐক্যমতে পৌঁছেছি। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি, কিন্তু তিনি জীবন থেকে এত বিপুল শিক্ষা অর্জন করেছেন যে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তার কাছে নস্যি। তিনি তার সততা, দৃঢ়তা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে দেখিয়েছেন, কীভাবে শূন্য থেকে শীর্ষে ওঠা যায়, কীভাবে একটি প্রতিষ্ঠানকে একটি পরিবারে রূপান্তরিত করা যায়। আনোয়ার হোসেনের জীবন ও কর্ম অনুসরণীয় আদর্শ হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করেন মাহবুবুর রহমান।
অনুষ্ঠানে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এন্ট্রাপ্রেনারশিপ বিভাগের শিক্ষার্থীরা আলহাজ আনোয়ার হোসেনের হাতে নিজেদের তৈরি শুভেচ্ছা স্মারক তুলে দেন। এছাড়া অনুষ্ঠানে আনোয়ার হোসেনকে নিয়ে ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে দেশের শিল্প ও ব্যাবসাখাতের নেতৃবর্গ, অর্থনীতিবিদ, শিক্ষক, গবেষক ও নাগরিক সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, আমন্ত্রিত এই ১২ জন সফল উদ্যোক্তার বক্তৃতাগুলো নিয়ে পরবর্তী সময়ে একটি বই প্রকাশিত হবে, যা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ব্যবসা, অথনীতি ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর শিক্ষার্থীদের জন্য রেফারেন্স বই হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করবে। এই ১২ জন উদ্যোক্তার ওপর ডিআইইউ থেকে ১২টি প্রামাণ্যচিত্রও নির্মিত হবে।
ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় আশা করছে যে, এ লোকবক্তৃতামালা নতুন প্রজন্মের সৎ, শিক্ষিত ও মেধাবী উদ্যোক্তাদেরকে সাহস, নিষ্ঠা ও দক্ষতার সাথে সামনে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করবে। উদ্যোক্তা উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তার সম্ভাবনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ গতিতে এগিয়ে যেতে পারছে না বলে যে ধারনা চালু রয়েছে, এ লোকবক্তৃতামালা সে সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে অনেকখানি সাহায্য করবে বলে আশা করা যায়।
Navigation
[0] Message Index
[*] Previous page
Go to full version