উচ্চ পদে নারীর সংখ্যা বাড়ছে

Author Topic: উচ্চ পদে নারীর সংখ্যা বাড়ছে  (Read 1733 times)

Offline fatemayeasmin

  • Newbie
  • *
  • Posts: 27
  • Test
    • View Profile
• ২০১৩ সালে উচ্চ পদে নারীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৫ হাজার
• ২০১৭ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজারে
• উচ্চ পদের ১৪ হাজার নারীর মধ্যে ১১ হাজার সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পর্যায়ে কর্মরত
• বাকি ৩ হাজার শিল্প খাতে কাজ করেন

একটি ব্যবসা বা করপোরেট প্রতিষ্ঠানে সবার ‘বস’ একজন নারী। প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে তিনি নিজেই প্রতিষ্ঠানটি চালানোর পুরো দায়িত্ব পালন করেন। প্রতিনিয়তই সহকর্মীদের নানা নির্দেশ-পরামর্শ দেন। প্রতিষ্ঠানটিও বেশ ভালো চলে। তারই প্রমাণ মেলে সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি-বেসরকারি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উচ্চ পদে নারীর অগ্রযাত্রার চিত্র দেখে।

গত চার বছরের ব্যবধানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদে নারীর অংশগ্রহণ তিন গুণ বেড়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, ২০১৭ সাল শেষে বাংলাদেশের প্রায় ১৪ হাজার নারী বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা কিংবা আইনপ্রণেতা হিসেবে কাজ করছেন। ঠিক চার বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৩ সালে বাংলাদেশে শিল্প ও সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কিংবা নীতিনির্ধারণী উচ্চ পদে কাজ করতেন মাত্র ৪ হাজার ৯৮৫ জন নারী।

২০১৩ ও ২০১৭ সালের দুটি শ্রমশক্তি জরিপ পর্যালোচনা করে উচ্চ পদে নারীর এগিয়ে যাওয়ার এই চিত্র পাওয়া গেছে। বাংলাদেশে এখন বার্জার, মাইক্রোসফটের মতো বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন নারী। আবার সরকারি আমলাতন্ত্রের সর্বোচ্চ সিনিয়র সচিব পদেও একজন নারী আছেন। গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবেও এ দেশে নারী কাজ করছেন। এখন অনেক নারী শীর্ষ নির্বাহী হিসেবে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও চালান।

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মাহতাব জেবিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গত কয়েক বছরে উচ্চ পদে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। তবে বড় চ্যালেঞ্জ হলো নারীরা যেখানে চাকরি করেন, সেখানে পুরুষের আধিপত্য বেশি থাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উচ্চ পদে পদোন্নতি দেওয়ার ক্ষেত্রে যোগ্যতাসম্পন্ন নারীর চেয়ে পুরুষদেরই বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। ফলে পুরুষেরা এ ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা পান। এই সামাজিক পরিস্থিতির কারণে উচ্চ পদে যাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে।

বিবিএসের সর্বশেষ ২০১৭ সালের শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, সারা দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদে যে ১৪ হাজার নারী কাজ করছেন, তার মধ্যে ১১ হাজার নারী সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পর্যায়ে কর্মরত। বাকি ৩ হাজার নারী শিল্প খাতে কাজ করেন। চার বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৩ সালে সব মিলিয়ে ৪ হাজার ৯৪২ জন নারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদে ছিলেন। তার মধ্যে ২ হাজার ৯৩৬ জন ছিলেন সেবা খাতে আর শিল্প খাতে ছিলেন মাত্র ২ হাজার ৬ জন। সেই হিসাবে চার বছরের ব্যবধানে সেবা খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৮ হাজার নারী নতুন করে উচ্চ পদে গেছেন। আর শিল্প খাতে গেছেন মাত্র ১ হাজার নারী। তবে নারীর উচ্চ পদে যাওয়ার সুযোগ শুধু শহর এলাকার শিল্প ও সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানেই সীমাবদ্ধ। গ্রামের নারীরা এখনো পিছিয়ে আছেন।

২০১৭ সালের শ্রমশক্তি জরিপের হিসাবে শীর্ষ নির্বাহী কিংবা উচ্চ পদ ছাড়াও প্রশাসনিক ও বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপনার কাজের সঙ্গে যুক্ত আছেন প্রায় ২৯ হাজার নারী। ২০১৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ১১ হাজার ৮০১। অর্থাৎ চার বছরের ব্যবধানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যম পর্যায়ের ব্যবস্থাপনা পদে নারীর অংশগ্রহণ আড়াই গুণ বেড়েছে।

জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘শীর্ষ পদে নারীর বর্তমান সংখ্যা নিয়ে আমরা খুশি নই। নারী-পুরুষের জনসংখ্যার বিভাজন অনুযায়ী এটি অপ্রতুল। তবে উচ্চ পদে নারীর সংখ্যা বাড়ছে—এটা আশার কথা। নারীদের কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে নিতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিক সংস্কৃতির পরিবর্তন করতে হবে।’

উচ্চ পদে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও এখনো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ ও নীতিনির্ধারণী পদে পুরুষদের আধিপত্য অনেক বেশি। বিবিএসের ২০১৭ সালের জরিপের তথ্য অনুযায়ী সারা দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী ও উচ্চ পদে কর্মরত পুরুষের সংখ্যা ৯৭ হাজার। অর্থাৎ ৮৭ শতাংশের বেশি উচ্চ পদ দখল করে আছেন পুরুষেরা। সেখানে নারীর অংশ মাত্র ১২ দশমিক ৩ শতাংশ। সংখ্যার দিক থেকে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও পুরুষের সঙ্গে অনুপাতের দিক থেকে ২০১৩ ও ২০১৭ সালের একই অবস্থানে রয়েছেন নারীরা।