তথ্যপ্রযুক্তিতে শক্তিশালী দেশ কোনটি?

Author Topic: তথ্যপ্রযুক্তিতে শক্তিশালী দেশ কোনটি?  (Read 2544 times)

Offline Sultan Mahmud Sujon

  • Administrator
  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 2674
  • Sultan Mahmud Sujon, Sr. Admin Officer
    • View Profile
    • Helping You Office Operation & Automation Management
নতুন গবেষনা মতে, কোন দেশের অবকাঠামো প্রযুক্তিগতভাবে উৎকর্ষতার চেয়ে বেশি প্রয়োজন দেশটি প্রযুক্তিকে কিভাবে ব্যবহার করছে

প্রযুক্তি নিয়ে লড়াইটা কি শুধু ব্র্যান্ড, ক্রেতা কিংবা কোম্পানীর মাঝেই সীমিত? লড়াই চলছে দেশে দেশে, কোন দেশ প্রযুক্তিতে কতটুকু এগিয়ে, কতটুকু স্বয়ংসম্পূর্ণ? প্রযুক্তির ব্যবহারে কোনদেশ কতটুকু সচেতন?

একটি দেশের তথ্যপ্রযুক্তি অবকাঠামো পরিমাপে লক্ষ্য রাখা হয়ঃ কপার ওয়্যারের সংখ্যা, ফাইবার অপটিক কেবলস্‌, নেটওয়ার্কের আওতাভুক্ত কম্পিউটার, ইন্টারনেট সার্ভার, মোবাইল ফোন এবং সেলুলার ভিত্তিক স্টেশন। কিন্তু রাজ্যের সব উন্নত যন্ত্রপাতি থাকা আর এর যথার্থ ব্যবহার- দুটি সম্পুর্ণ ভিন্ন বিষয়। নোকিয়া সিমেন্স নেটওয়ার্কের দেয়া সর্বশেষ তথ্য তাই প্রমান করে। লন্ডন বিজনেস স্কুলের ইকোনমিঙ্রে অধ্যাপক লিওনার্ড ওয়েভারম্যান প্রাযুক্তিক উন্নয়নের এই স্কোরকার্ড তৈরি করেছেন। এতে একটি দেশ প্রযুক্তি খাতে কত বিনিয়োগ করেছে তা নয় বরং এটা প্রযুক্তির কতটুকু উপযুক্ত ব্যবহার করেছে এবং জনজীবনে এর প্রভাব কতটুকু তাই খুজে বের করেছেন।

ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের নির্ধারিত ১৬টি ইনোভেশন ড্রাইভেন জাতি ছিল এই গবেষনার মূল লক্ষ্য। এরা সবাই প্রযুক্তিমনা, সার্ভিস নির্ভর এবং স্বীকৃত মেধাসম্পদে বলীয়ান।

গবেষকরা কার্যদক্ষতা ও সম্পদ দ্বারা পরিচালিত ৯টি দেশকে বেছে নেন গবেষনার জন্য। এই দেশগুলো দ্রতগতিতে উন্নতি করেছে এবং বুদ্ধিকে সম্পদে পরিনত করেছে।
গবেষনার জন্য তারা প্রায় দুই ডজন ভ্যারিয়েবল ব্যবহার করেন, যেমনঃ কতগুলো বিদ্যালয় ইন্টারনেটে যুক্ত, আর্ন্তজাতিক আউটগোয়িং টেলিফোন ট্রাফিক এবং প্রতি ১০০০ জনে পিসির সংখ্যা।

রাশিয়া
স্কোরঃ ৬·১১
নোকিয়া সিমেন্স নেটওয়ার্ক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায় প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে রাশিয়া বিশ্বের ১ নম্বর দেশ।
শিক্ষা ক্ষেত্রে ভালো স্কোর, ইন্টারনেট ব্যহারের ক্ষেত্রে লিঙ্গ-সমতা এবং ব্যবসা বাণিজ্যে মোবাইল ও প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার রাশিয়াকে এই শীর্ষস্থান এনে দিয়েছে। অচিরেই রাশিয়ার দক্ষ জনশক্তি তথ্য-প্রযুক্তি খাতে এক নতুন সম্ভামনাময় দিগন্তের উম্মোচন ঘটাবে বলে আশা করেন নোকিয়ার বৈশ্বিক নীতি বিষয়ক প্রধান ইলক্কা লাকানিমি।

মালেশিয়া
স্কোরঃ ৫·৮২
শিক্ষা ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার মালয়েশিয়াকে নিয়ে এসেছে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে। পাবলিক সেক্টর বিপুলভাবে তথ্য যাগাযোগ ও প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ করছে এবং ধীরে ধীরে দেশটির অবকাঠামো মজবুত করছে। , মালয়েশিয়ার তথ্যপ্রযুক্তি অবকাঠামো গঠন হয়ে গেলে সেখানে অধিক সংখ্যক জনগোষ্ঠী তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ পাবে। লাকানিমি বিশ্বাস করেন, অচিরেই দেশটি তাদের স্কোর আরো বাড়াতে পারবে এবং ইনোভেশন-ড্রাইভেন ইকোনমির দেশ হিসেবে পরিচিতি পাবে।

মেিকো
স্কোরঃ ৪·৩৭

মেিকো ও ব্রাজিল উভয় দেশেরই টেলিকমিউনিকেশন খাতে বিনিয়োগের এক উজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে। সেই উনিশ শতক থেকে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো তারা টেলিকমুনিকেশন খাতের সাথে জড়িত। কিন্তু বিশ্বায়নের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে না পারার ব্যর্থতা, জাতীয়ভাবে অসম আয় বন্টন এবং শিক্ষার মান ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোকে অনেকাংশেই পিছিয়ে রেখেছে। দেশগুলোর পশ্চাৎপদ অবকাঠামোতে ধীরে ধীরে ভয়েস,ডাটা, ভিডিও এবং ওয়ারল্যাস প্রযুক্তি অবস্থান করে নিচ্ছে।

2_placeholder.jpg

ব্রাজিল
স্কোরঃ৪·২৮
দেশের অভ্যন্তরে সর্বোচ্চ পণ্য উৎপাদন এবং পঞ্চম বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর দেশ ব্রাজিল। ব্রাজিলের একটি শক্ত ভীত আছে প্রাযুক্তিক ক্ষমতা গঠনের। মেিকোর মতো ব্রাজিল তার অবকাঠামো আধুনিক করছে, আরো বেশি ব্রডব্যান্ড, মোবাইল সার্ভিসের ব্যবহার বাড়াচ্ছে। কিন্তু এখনো প্রযুক্তির সেবা সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে পারেনি বিধায় উন্নত বিশ্ব থেকে ব্রাজিল পিছিয়ে আছে ।



দক্ষিন আফ্রিকা
স্কোরঃ ৪·১
ক্রেতাসাধারনের সফটওয়্যার ব্যবহার, প্রমিলা ইন্টারনেট ব্যবহারকারী, সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যার ব্যবহারে সরকারের মাথাপিছু ব্যয় এবং সর্বোপরি সরকারী কম্পিউটার সেবা প্রদান দক্ষিণ আফ্রিকার উন্নয়নে লক্ষনীয় পরিবর্তন। কিন্তু দেশটির প্রতি ১০০০ জনে মাত্র ·৩৫ জন ব্রডব্যান্ড ব্যবহার করে। যেখানে মালয়শিয়াতে এর পরিমান ১৯·৩ জন। দক্ষিন আফ্রিকা এছাড়াও পার ক্যাপিটা অনুযায়ী ব্যান্ডওয়াইডথ ও ইন্টারনেট ব্যবহারের পরিমান, আন্তর্জাতিক টেলিফোন আউটগোয়িং সুবিধা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইন্টারনেট ব্যবহারসহ নানা বিষয়ে দুর্বলতা গবেষকদের হতাশ করেছে।

চীনঃ
স্কোরঃ ৩·৪২
মি· লেকেনেমি আশা করেন অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় চীন, ফিলিপাইন এবং ভারত তাদের তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তিখাতে খুব দ্রুত এগিয়ে যাবে। তাদের বর্তমান বিনিয়োগের পরিমানই তা সুস্পষ্ট করে। চাইনিজ প্রাপ্তবয়স্কদের ৯১% ভাগ শিক্ষিত এবং ৪০% ইন্টারনেট ব্যবহারকারী নারী। চীনের সরকারী সহায়তা এবং সেবা তাদের এ খাতকে আরো বেশী দক্ষ এবং সমৃদ্ধ করছে।

ফিলিপাইনঃ
স্কোরঃ ২·৩৮
ফিলিপাইন তাদের মোবাইল যোগাযোগ খাতে অনেক বেশী এগিয়ে। বিশেষ করে মোবাইল ব্যবহারকারীর দিক থেকে এ ব্যাপারটি বেশী লক্ষনীয়। কিন্তু সরকারী এবং ব্যবসায়ীক ক্ষেত্রে তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবহারের পরিমান বিচারে ইউরোপ থেকে অনেক পিছিয়ে। ফিলিপাইন যদি তাদের লিঙ্গ বৈষম্য, প্রাপ্ত বয়স্কদের শিক্ষার হার এবং বিশ্বায়নের সাথে তাল মিলিয়ে প্রযুক্তির ব্যবহারের ক্ষেত্রে উৎকর্ষ সাধন দ্রুত করতে পারে তাহলে এ খাতে তাদের উন্নয়ন সম্ভব। অন্যথায় অবস্থান শক্ত করতে দেশটিকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে।

ভারতঃ
স্কোরঃ ১·৬৮
ভারতের এত স্বল্প স্কোর দেখে চমকে উঠছেন? প্রযুক্তিগত দিক থেকে ভারত উৎকর্ষতার স্বাক্ষর রাখলেও তা দেশের অর্থনীতিতে তেমন কোন প্রভাব সৃষ্টি করতে পারেনি। তথ্যপ্রযুক্তি দেশের বেকার সমস্যা সমাধানেও কোন অবদান রাখতে পারেনি। ভারত তার পাশ্ববর্তী দেশ চীনের চেয়ে তথ্য প্রযুক্তির অবকাঠামো, ব্যবহার, সরকারি সহায়তায় কম স্কোর পেয়েছে। ভারতে ৬১% প্রাপ্ত বয়স্ক লোক শিক্ষিত এবং মাত্র ২৩ ভাগ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী নারী। আরো উন্নত অবকাঠামো প্রয়োজন এবং সাধারন শিক্ষাব্যবস্থাকে আরো বিস্তৃত করতে হবে।

নাইজেরিয়াঃ
স্কোরঃ১·০১
ভারতের মত আফ্রিকার জনবহুল অনেক দেশই তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার এবং অবকাঠামো দিক থেকে পিছিয়ে। যদিও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে দেশটি তার সর্বোচ্চ সামর্থ ব্যয় করেও অর্থনীতির উন্নয়নে তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। মি· লেকেনিয়ামি বলেন যদি দেশটির সরকার নতুন করে পরিকল্পনা করে এবং সবকিছু নতুন করে ঢেলে সাজায় তাহলে এখাতে উন্নয়ন সম্ভব হতে পারে।